একসময় নৌযান চলতো, ভেসে আসতো পণ্যভর্তি পালতোলা নৌকা— সে নদী আজ প্রায় নিঃশেষ। সিলেট বিভাগের পর্যটন নগরী ও চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের ঐতিহাসিক বিলাস নদী আজ শুধু স্মৃতির নদী। একসময় এটি ছিল এ অঞ্চলের প্রধান নৌপথ ও বাণিজ্যকেন্দ্র।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি এলাকা থেকে উৎপন্ন বিলাস নদী বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলের রাজঘাট ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গোপলা নদীতে মিশেছে। উনিশ শতক ও বিংশ শতকের শুরুর দিকে এই নদীই ছিল শ্রীমঙ্গলের প্রাণ।
১৯১২ সালের আগে প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল নদীতীরবর্তী মতিগঞ্জে। নদীপথে কলকাতাসহ দূরবর্তী স্থানে পালতোলা জাহাজ ও লঞ্চ চলাচল করতো। চা শিল্পের বিকাশেও নদীটির ভূমিকা ছিল অপরিসীম চা পাতা, কাঠ ও অন্য পণ্য পরিবহন হতো এই নদীপথে।
১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প বদলে দেয় নদীর ভূপ্রকৃতি। নদীর নাব্যতা কমে গিয়ে নৌ চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯০২ সালে শ্রীমঙ্গলে রেলস্টেশন স্থাপনের পর প্রশাসনিক কেন্দ্র মতিগঞ্জ থেকে স্থানান্তরিত হয় শহরে। রেলপথ আসার সঙ্গে সঙ্গে নদীপথের গুরুত্ব দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে।
আজ বিলাস নদী কেবল অতীতের গল্প। শুকনো মৌসুমে নদীর অনেক অংশে পানি থাকে না বললেই চলে। নদীর দুই তীর দখল করে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি ও চাষাবাদ। কোথাও চলছে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন। এতে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল করিম বলেন, ‘এই নদীই ছিল আমাদের শ্রীমঙ্গলের প্রাণ। এখন শুধু দখল আর ময়লা।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিলাস নদীকে বাঁচাতে এখনই নিতে হবে সমন্বিত উদ্যোগ। উৎসস্থল থেকে গোপলা নদী পর্যন্ত পুনঃখনন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও মৌসুমি পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলে নদীটি আবারও জীবন্ত হয়ে উঠতে পারে।
একসময় বিলাস নদী ছিল প্রশাসন, বাণিজ্য ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু। এখন এটি হারানো ঐতিহ্যের প্রতীক। সময় থাকতে সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপ না নিলে এ নদীর নামই হয়তো একদিন মানচিত্র থেকে মুছে যাবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
একসময় নৌযান চলতো, ভেসে আসতো পণ্যভর্তি পালতোলা নৌকা— সে নদী আজ প্রায় নিঃশেষ। সিলেট বিভাগের পর্যটন নগরী ও চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের ঐতিহাসিক বিলাস নদী আজ শুধু স্মৃতির নদী। একসময় এটি ছিল এ অঞ্চলের প্রধান নৌপথ ও বাণিজ্যকেন্দ্র।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি এলাকা থেকে উৎপন্ন বিলাস নদী বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলের রাজঘাট ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গোপলা নদীতে মিশেছে। উনিশ শতক ও বিংশ শতকের শুরুর দিকে এই নদীই ছিল শ্রীমঙ্গলের প্রাণ।
১৯১২ সালের আগে প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল নদীতীরবর্তী মতিগঞ্জে। নদীপথে কলকাতাসহ দূরবর্তী স্থানে পালতোলা জাহাজ ও লঞ্চ চলাচল করতো। চা শিল্পের বিকাশেও নদীটির ভূমিকা ছিল অপরিসীম চা পাতা, কাঠ ও অন্য পণ্য পরিবহন হতো এই নদীপথে।
১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প বদলে দেয় নদীর ভূপ্রকৃতি। নদীর নাব্যতা কমে গিয়ে নৌ চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯০২ সালে শ্রীমঙ্গলে রেলস্টেশন স্থাপনের পর প্রশাসনিক কেন্দ্র মতিগঞ্জ থেকে স্থানান্তরিত হয় শহরে। রেলপথ আসার সঙ্গে সঙ্গে নদীপথের গুরুত্ব দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে।
আজ বিলাস নদী কেবল অতীতের গল্প। শুকনো মৌসুমে নদীর অনেক অংশে পানি থাকে না বললেই চলে। নদীর দুই তীর দখল করে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি ও চাষাবাদ। কোথাও চলছে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন। এতে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল করিম বলেন, ‘এই নদীই ছিল আমাদের শ্রীমঙ্গলের প্রাণ। এখন শুধু দখল আর ময়লা।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিলাস নদীকে বাঁচাতে এখনই নিতে হবে সমন্বিত উদ্যোগ। উৎসস্থল থেকে গোপলা নদী পর্যন্ত পুনঃখনন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও মৌসুমি পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলে নদীটি আবারও জীবন্ত হয়ে উঠতে পারে।
একসময় বিলাস নদী ছিল প্রশাসন, বাণিজ্য ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু। এখন এটি হারানো ঐতিহ্যের প্রতীক। সময় থাকতে সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপ না নিলে এ নদীর নামই হয়তো একদিন মানচিত্র থেকে মুছে যাবে।