alt

সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ২০ বনদস্যু বাহিনী

প্রতিনিধি, শরণখোলা (বাগেরহাট) : মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫

সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণার ৬ বছরের মাথায় আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বনদস্যুরা। নতুন করে বনদস্যুদের তৎপরতায় অশান্ত হয়ে উঠেছে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। পুরনো আত্মসমর্পণকারী এবং নতুনভাবে সংগঠিত দল মিলে অন্তত ২০টি বনদস্যু বাহিনী এখন সক্রিয়। এসব বনদস্যু দল জেলেদের অপহরণ করে আদায় করছে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ। এতে জেলে, বনজীবীদের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। ফলে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর উপকূলজুড়ে বনদস্যু ভয়ে বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। গোটা সুন্দরবন বনদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় সামপ্রতিক সময়ে এদের আধিপত্য বেশি।

সুন্দরবনে ২০১৮ সালে আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে বনদস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর থেকে সুন্দরবনে ফিরে আসে শান্তির সুবাতাস। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে ধীরে ধীরে পাল্টে যেতে থাকে সেই দৃশ্যপট। ফের বনদস্যুদের রাজত্বে পরিণত হয় সুন্দরবন। শান্ত সুন্দবনের সেই নদ-নদী, খাল গত এক বছরে আবার ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। দস্যুদের অস্ত্রের ঝংকারে দীর্ঘদিন শান্ত থাকা সুন্দরবন এখন পরিণত হয়েছে আতঙ্কের বনে। এ অবস্থায় বনে যেতে ভয় পাচ্ছেন জেলেরা। এর ফলে অর্থনীতিতে পড়ছে বিরূপ প্রভাব।

২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য ৪৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪টি গোলাবারুদসহ র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষনা করে সরকার। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যান আত্মসর্ম্পণকারী দস্যুরা। শান্তি ফিরে আসে গোটা সুন্দরবনে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর তারা সরকারি সহায়তা থেকে অনেকটা বঞ্চিত। যারা এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছিলেন তাদেরকেও এখন চাঁদা দিচ্ছে হয়। স্বাভাবিক জীবনে ফিরেও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের দস্যু নামের সেই পুরনো অপবাদ। সাবেক দস্যু নাম শুনলেই ভয়ে আর কেউ তাদের কাজে নেয় না। এমনকি নিজ এলাকার বাইরে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে সেখানেও তাদের সম্পৃক্ততা দেখিয়ে মিথ্যা মামলা এবং প্রশাসনিক হয়রানি করা হয়। যে কারণে অনেকটা ক্ষোভ ও হতাশায় অস্ত্র হাতে তুলে আবার সেই অপরাধ জগতে ফিরেছেন অনেকেই।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন আত্মসমর্পণ করা জাহাঙ্গীর বাহিনীর প্রধান জাহাঙ্গীর শেখ, দাদা ভাই বাহিনী প্রধান জয়নাল আবেদীন ওরফে রাজন এবং মানজুর বাহিনীর প্রধান মানজুর সরদার। তারা বলেন, দস্যুতা তাদের ভালো লাগে না। বাধ্য হয়ে এসেছেন। তবে সামাজিক মর্যাদা, নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পেলে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন তারা।

বনবিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জেলে ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, বনদস্যুরা বিভিন্ন নামে দল (বাহিনী) গঠন করে অপরাধ কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। পূর্বের আত্মসমর্পণকারীসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ব্যক্তি এবং বিভিন্ন মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত দাগি আসামীদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে বাহিনীগুলো।

এসব বাহিনীর মধ্যে জাহাঙ্গীর বাহিনী, মানজুর বাহিনী এবং দাদাভাই বাহিনী অস্ত্র ও সদস্যসংখ্যায় বেশি এবং দুর্র্ধষ। এই তিন বাহিনী পূর্বে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গিয়েছিল। এছাড়া করিম শরীফ বাহিনী, আসাবুর বাহিনী, দয়াল বাহিনী, রবি বাহিনী, দুলাই ভাই বাহিনী, রাঙ্গা বাহিনী, সুমন বাহিনী, আনারুল বহিনী, হান্নান বাহিনী ও আলিফ বাহিনীর নাম উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যেও পুরনো অনেকেই নতুন বাহিনী নাম দিয়ে করছেন দস্যুবৃত্তি। এর বাইরেও ছোট ছোট আরো ৭-৮টি দস্যুবাহিনী রয়েছে বলেও জানা গেছে। এদের একেক বাহিনীতে ১৫-২০ জন থেকে ৪০ জন পর্যন্ত সদস্য রয়েছে। এসব বাহিনীর প্রত্যেকের হাতে রয়েছে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র। এরা গহীন বনে আস্তানা গড়ে জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে আসছে।

সুন্দরবন নিয়ে কাজ করা পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশণের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম ও সুন্দরবন রক্ষায় আমরা সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মো. নূর আলম শেখ জানান, ৫ আগস্টে পট পরিবর্তনের পর সুন্দরবনে দস্যুদের আধিপত্য বেড়ে গেছে। সুন্দরবন সেই পূর্বের ভয়াবহ অবস্থায় ফিরেছে। বনজীবীরা বনে যেতে ভয় পাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরাও আছেন আতঙ্কে। এমন পরিস্থিতিতে উপকূলের অর্থনীতি ও জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বনদস্যুরা শুধু যে বনজীবী বা ব্যবসায়ীদের কাছে আতঙ্ক তা নয়, এরা বনের জীববৈচিত্র্যের জন্যও হুমকি। কারণ দস্যুতার পাশাপাশি তারা বাঘ, হরিণ শিকার করে তার মাংস, চামড়া ও কঙ্কাল পাচার করে থাকে। এছাড়া বনের মূল্যবান কাঠ কেটেও তা পাচার করে। পূর্বের বনদস্যুরাও এমনইটাই করেছে। এসব বনদস্যু বাহিনী নিয়ন্ত্রণে রয়েছে গডফাদার ও সোর্স। লোকালয়ে বসবাস করে এসব গডফাদাররা। বনদস্যু ও তাদের গডফাদারদের দমন করতে না পারলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা উচিৎ।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করীম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বনজীবিদরে নিরাপত্তায় বনরক্ষীদের টহল জোরদার করা হয়েছে। দস্যুদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করছি আমরা। বনদস্যুদমনে সম্মিলিত অভিযান পরিচালনার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ চলছে।

ছবি

বরুড়ায় ৫ বছরেও শেষ হয়নি ব্রিজ নির্মাণ, ২০ গ্রামবাসীর দুর্ভোগ

ছবি

সিংগাইরে শারফিন হত্যা মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

জামালপুরে জমিতে প্রবেশে বাঁধা দেয়ার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

ছবি

সিলেটে ইয়াবা বিক্রির টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে হত্যা

ছবি

উপজেলা প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দের সাথে ইউএনও’র মতবিনিময় সভা

ছবি

নওগাঁর লিটন ব্রিজের নিচ মিললো অজ্ঞাত মরদেহ

ছবি

বুধবার বরগুনা হানাদারমুক্ত দিবস

ছবি

শীতের আগমনে শাহজাদপুরে ব্যস্ততা বাড়ছে লেপ-তোষক কারিগরদের

ছবি

ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন অফিস ভাঙচুর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

ছবি

সুন্দরবনের গল্পের সিনেমা ‘নাভা’য় শ্বেতা

ছবি

ডোমারে অভ্যন্তরীণ আমন ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন

ছবি

রায়গঞ্জে নিখোঁজের চার দিন পর মিলল শিশুর লাশ

শিবপুরে মোটরসাইকেল ও সিএনজির সংঘর্ষে প্রাণ গেলো দুই বন্ধুর

ছবি

দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে অর্থ প্রদান

বোয়ালখালীতে মাইক্রোবাস চালকের মরদেহ উদ্ধার

জয়পুরহাটে ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে একই পরিবারে ৩ মৃত্যু

ছবি

সৈয়দপুরে ভবন নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

ছবি

দশমিনায় আমন ধানের বাম্পার ফলন কৃষকের মুখে হাসি

ছবি

নিখোঁজের দুই মাস পরে কিশোরের কঙ্কাল মিলল জঙ্গলে

ছবি

পদ্মার ১ কাতল ৪৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি

ছবি

শেরপুরে বাঙালী নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে তিনটি গ্রাম

ছবি

ঝুঁকিপূর্ণ চার বেইলি ব্রিজে জনদুর্ভোগ, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

ছবি

ইজিবাইক-প্রাইভেটকার মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত ৮

ছবি

কক্সবাজার থেকে শুরু হলো সেন্টমার্টিন যাত্রা, ছেড়ে গেছে ৩টি জাহাজ

ময়মনসিংহে নির্যাতনবিরোধী সনদ ও প্রোটোকল বিষয়ে আলোচনা সভা

ছবি

খুঁটির জায়গা বাদে সড়কের কাজ সম্পন্ন থেমে গেছে

ছবি

বরগুনার বিষখালীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বিদ্যালয়, ঝুঁকিতে শতাধিক পরিবার

ছবি

ভোমরাকে কাস্টমস হাউজ ঘোষণা দিলেও অবকাঠামো সংকটে থেমে আছে বন্দরের উন্নয়ন

ছবি

সিংড়ায় বেলজিয়াম জাতের হাঁস পালনে লাখপতি

সান্তাহারে প্যানেল চেয়ারম্যানের পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে প্রায় ৬০ মণ মাছ নিধন

ছবি

শান্তি চুক্তির পর বদলেছে পাহাড়ের দৃশ্যপট, স্থায়ী শান্তি আসেনি

শরণখোলায় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে চর্ম রোগ

শাহরাস্তিতে খাদ্য শস্য সংগ্রহ অভিযান কার্যক্রম উদ্বোধন

ছবি

শাহজাদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষিকা নিহত

ছবি

পটিয়া ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি, অসহায় পরিবহন শ্রমিকরা

ছবি

রায়গঞ্জে পুকুরে অজ্ঞাত শিশুর মরদেহ উদ্ধার

tab

সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ২০ বনদস্যু বাহিনী

প্রতিনিধি, শরণখোলা (বাগেরহাট)

মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫

সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণার ৬ বছরের মাথায় আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বনদস্যুরা। নতুন করে বনদস্যুদের তৎপরতায় অশান্ত হয়ে উঠেছে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। পুরনো আত্মসমর্পণকারী এবং নতুনভাবে সংগঠিত দল মিলে অন্তত ২০টি বনদস্যু বাহিনী এখন সক্রিয়। এসব বনদস্যু দল জেলেদের অপহরণ করে আদায় করছে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ। এতে জেলে, বনজীবীদের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। ফলে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর উপকূলজুড়ে বনদস্যু ভয়ে বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। গোটা সুন্দরবন বনদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় সামপ্রতিক সময়ে এদের আধিপত্য বেশি।

সুন্দরবনে ২০১৮ সালে আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে বনদস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর থেকে সুন্দরবনে ফিরে আসে শান্তির সুবাতাস। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে ধীরে ধীরে পাল্টে যেতে থাকে সেই দৃশ্যপট। ফের বনদস্যুদের রাজত্বে পরিণত হয় সুন্দরবন। শান্ত সুন্দবনের সেই নদ-নদী, খাল গত এক বছরে আবার ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। দস্যুদের অস্ত্রের ঝংকারে দীর্ঘদিন শান্ত থাকা সুন্দরবন এখন পরিণত হয়েছে আতঙ্কের বনে। এ অবস্থায় বনে যেতে ভয় পাচ্ছেন জেলেরা। এর ফলে অর্থনীতিতে পড়ছে বিরূপ প্রভাব।

২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য ৪৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪টি গোলাবারুদসহ র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষনা করে সরকার। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যান আত্মসর্ম্পণকারী দস্যুরা। শান্তি ফিরে আসে গোটা সুন্দরবনে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর তারা সরকারি সহায়তা থেকে অনেকটা বঞ্চিত। যারা এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছিলেন তাদেরকেও এখন চাঁদা দিচ্ছে হয়। স্বাভাবিক জীবনে ফিরেও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের দস্যু নামের সেই পুরনো অপবাদ। সাবেক দস্যু নাম শুনলেই ভয়ে আর কেউ তাদের কাজে নেয় না। এমনকি নিজ এলাকার বাইরে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে সেখানেও তাদের সম্পৃক্ততা দেখিয়ে মিথ্যা মামলা এবং প্রশাসনিক হয়রানি করা হয়। যে কারণে অনেকটা ক্ষোভ ও হতাশায় অস্ত্র হাতে তুলে আবার সেই অপরাধ জগতে ফিরেছেন অনেকেই।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন আত্মসমর্পণ করা জাহাঙ্গীর বাহিনীর প্রধান জাহাঙ্গীর শেখ, দাদা ভাই বাহিনী প্রধান জয়নাল আবেদীন ওরফে রাজন এবং মানজুর বাহিনীর প্রধান মানজুর সরদার। তারা বলেন, দস্যুতা তাদের ভালো লাগে না। বাধ্য হয়ে এসেছেন। তবে সামাজিক মর্যাদা, নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পেলে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন তারা।

বনবিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জেলে ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, বনদস্যুরা বিভিন্ন নামে দল (বাহিনী) গঠন করে অপরাধ কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। পূর্বের আত্মসমর্পণকারীসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ব্যক্তি এবং বিভিন্ন মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত দাগি আসামীদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে বাহিনীগুলো।

এসব বাহিনীর মধ্যে জাহাঙ্গীর বাহিনী, মানজুর বাহিনী এবং দাদাভাই বাহিনী অস্ত্র ও সদস্যসংখ্যায় বেশি এবং দুর্র্ধষ। এই তিন বাহিনী পূর্বে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গিয়েছিল। এছাড়া করিম শরীফ বাহিনী, আসাবুর বাহিনী, দয়াল বাহিনী, রবি বাহিনী, দুলাই ভাই বাহিনী, রাঙ্গা বাহিনী, সুমন বাহিনী, আনারুল বহিনী, হান্নান বাহিনী ও আলিফ বাহিনীর নাম উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যেও পুরনো অনেকেই নতুন বাহিনী নাম দিয়ে করছেন দস্যুবৃত্তি। এর বাইরেও ছোট ছোট আরো ৭-৮টি দস্যুবাহিনী রয়েছে বলেও জানা গেছে। এদের একেক বাহিনীতে ১৫-২০ জন থেকে ৪০ জন পর্যন্ত সদস্য রয়েছে। এসব বাহিনীর প্রত্যেকের হাতে রয়েছে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র। এরা গহীন বনে আস্তানা গড়ে জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে আসছে।

সুন্দরবন নিয়ে কাজ করা পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশণের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম ও সুন্দরবন রক্ষায় আমরা সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মো. নূর আলম শেখ জানান, ৫ আগস্টে পট পরিবর্তনের পর সুন্দরবনে দস্যুদের আধিপত্য বেড়ে গেছে। সুন্দরবন সেই পূর্বের ভয়াবহ অবস্থায় ফিরেছে। বনজীবীরা বনে যেতে ভয় পাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরাও আছেন আতঙ্কে। এমন পরিস্থিতিতে উপকূলের অর্থনীতি ও জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বনদস্যুরা শুধু যে বনজীবী বা ব্যবসায়ীদের কাছে আতঙ্ক তা নয়, এরা বনের জীববৈচিত্র্যের জন্যও হুমকি। কারণ দস্যুতার পাশাপাশি তারা বাঘ, হরিণ শিকার করে তার মাংস, চামড়া ও কঙ্কাল পাচার করে থাকে। এছাড়া বনের মূল্যবান কাঠ কেটেও তা পাচার করে। পূর্বের বনদস্যুরাও এমনইটাই করেছে। এসব বনদস্যু বাহিনী নিয়ন্ত্রণে রয়েছে গডফাদার ও সোর্স। লোকালয়ে বসবাস করে এসব গডফাদাররা। বনদস্যু ও তাদের গডফাদারদের দমন করতে না পারলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা উচিৎ।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করীম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বনজীবিদরে নিরাপত্তায় বনরক্ষীদের টহল জোরদার করা হয়েছে। দস্যুদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করছি আমরা। বনদস্যুদমনে সম্মিলিত অভিযান পরিচালনার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ চলছে।

back to top