এক অনন্য সাহস, অধ্যবসায় ও আত্মপ্রত্যয়ের জ্বলন্ত প্রদীপ শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. আব্দুর রহিম। জন্মগতভাবে সুস্থ্য থাকলেও দুর্ঘটনার কারণে-দুই পা আজ সম্পূর্ণ অচল। নেই কোন পৈত্রিক সম্পত্তি কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধীতা তাঁকে জীবনের লক্ষ্য থেকে এক মুহূর্তের জন্যও পিছিয়ে দিতে পারেনি। বরং প্রতিদিনের সংগ্রামই তাঁকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। এখন সে কিডনী রোগে আক্রান্ত। শরীরের দুই পা নিস্তেজ হলেও মনোবল তাঁর অদম্য। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে শুরু করেন কর্মদিবসের প্রস্তুতি। নিজের ওপর নির্ভর করে চলছে পুরো পরিবারের সংসার-এ দৃঢ় বিশ্বাস তাঁকে আরও অনুপ্রাণিত করে। চলাফেরার জন্য হুইলচেয়ার বা অন্যের সহায়তা নিতে হলেও, তিনি কখনোই কর্মস্থলে যেতে দেরি করেন না। সময়মতো উপস্থিত হওয়াটা তাঁর কাছে শুধু দায়িত্ব নয়, সম্মানেরও বিষয়। কিন্তু বর্তমান কিডনী সমস্যার থাকার কারনে ঠিকমত কর্মস্থলে আসতে পারছে না। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রহিমের বাবা মৃত ঘুতু মন্ডল ২০১২ সালে মারা যাওয়ার পর থেকেই সে সংসার জীবনে দায়িত্বভার কাঁধে নেন। উপজেলার মহাশ্বসানের দক্ষিণ পার্শ্বে টিনের ঘরে তাঁর মা, স্ত্রী, দুই কন্যা ও এক ছেলে নিয়ে রহিম বসবাস করে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কম্পিউটার অপারেটর অস্থায়ীভাবে চাকুরী করতেন। দু’পা অচল হওয়ায় গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করলেও এখন কিডনী সমস্যায় ভুগছেন।
বগুড়া পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কিডনী স্পেশালিষ্ট ডা. আহসান হাবিব এর পারামর্শে আছেন, সেখানে প্রতিমাসে ঔষধ ছাড়া ডাক্তার ভিজিট ও রিপোট বাবদ গুনতে হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা। উপজেলার সামনে হোচিমিন পাইলট প্রিন্টিং হাউজে বসেই তিনি ব্যানার, পোস্টার, লোগো, বিজনেস কার্ডসহ বিভিন্ন ডিজাইনের কাজ। আধুনিক সফটওয়্যারে দক্ষতা, সৃজনশীল চিন্তা ও নির্ভুল কাজে তিনি স্থানীয়ভাবে ইতোমধ্যেই পরিচিত একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। গ্রাহকদের সঙ্গে তাঁর আচরণ, সময়মতো কাজ সরবরাহ এবং কাজের মান—সবকিছুর সমন্বয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন সবার আস্থার জায়গা। আব্দুর রহিম বলেন, দুই পা অচল হয়ে জীবনযুদ্ধে লড়াই করা হামার জন্য সহজ আছলনা। তবুও ভাগ্যবান হামি, কারণ হামার কর্মস্থলে হোচিমিন ভাই ও পাইলট ভাইয়ের মতো মানুষ আছিলো। তারা শুধু হামাক বেতনই দেন না—বরং নানা সময় নানাভাবে আর্থিক সহায়তা ও মানসিক সমর্থন দিয়ে পাশে দাঁড়াছে। (তার ভাষে দুই পা অচল হয়ে জীবনযুদ্ধে লড়াই করা তার জন্য সহজ ছিল না। তবুও ভাগ্যবান সে, কারণ তার কর্মস্থলে হোচিমিন ও পাইলটের মতো মানুষ ছিল। তারা শুধু তাকে বেতনই দেন না—বরং নানা সময় নানাভাবে আর্থিক সহায়তা ও মানসিক সমর্থন দিয়ে পাশে দাড়িয়েছে। দোকান মালিক পাইলট বলেন, রহিম শুধু আমার কর্মী নয়, পরিবারের একজন সদস্য। অসুস্থতার মধ্যেও সে দায়িত্ব পালনে চেষ্টা কওে এটা আমাদের সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়। আমরা সব সময় তাকে সম্মান করি ও পাশে থাকার চেষ্টা করি। বৃত্তবান মানুষরা যদি একটু সহযোগিতা করে, রহিমের মতো হাজারো রহিম আরও সাবলিম ভাবে এগিয়ে যেতে পারবে। উপজেলার সমাজসেবা অফিসার মো. সাজেদুর রহমান বলেন, রহিমের সংগ্রাম ও প্রতিভা সত্যিই প্রশংসনীয়। মানুষ ইচ্ছা করলে কিনা করতে পারে বর্তমানে তিনি প্রতিবন্ধি ভাতা পাচ্ছেন । দুই পা অচল হয়েও নিজের সাহস, মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে তিনি শুধু নিজের পরিবারের হালই ধরেননি, বরং সমাজের হাজারো প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য হয়ে উঠেছেন অদম্য অনুপ্রেরণা।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
এক অনন্য সাহস, অধ্যবসায় ও আত্মপ্রত্যয়ের জ্বলন্ত প্রদীপ শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. আব্দুর রহিম। জন্মগতভাবে সুস্থ্য থাকলেও দুর্ঘটনার কারণে-দুই পা আজ সম্পূর্ণ অচল। নেই কোন পৈত্রিক সম্পত্তি কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধীতা তাঁকে জীবনের লক্ষ্য থেকে এক মুহূর্তের জন্যও পিছিয়ে দিতে পারেনি। বরং প্রতিদিনের সংগ্রামই তাঁকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। এখন সে কিডনী রোগে আক্রান্ত। শরীরের দুই পা নিস্তেজ হলেও মনোবল তাঁর অদম্য। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে শুরু করেন কর্মদিবসের প্রস্তুতি। নিজের ওপর নির্ভর করে চলছে পুরো পরিবারের সংসার-এ দৃঢ় বিশ্বাস তাঁকে আরও অনুপ্রাণিত করে। চলাফেরার জন্য হুইলচেয়ার বা অন্যের সহায়তা নিতে হলেও, তিনি কখনোই কর্মস্থলে যেতে দেরি করেন না। সময়মতো উপস্থিত হওয়াটা তাঁর কাছে শুধু দায়িত্ব নয়, সম্মানেরও বিষয়। কিন্তু বর্তমান কিডনী সমস্যার থাকার কারনে ঠিকমত কর্মস্থলে আসতে পারছে না। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রহিমের বাবা মৃত ঘুতু মন্ডল ২০১২ সালে মারা যাওয়ার পর থেকেই সে সংসার জীবনে দায়িত্বভার কাঁধে নেন। উপজেলার মহাশ্বসানের দক্ষিণ পার্শ্বে টিনের ঘরে তাঁর মা, স্ত্রী, দুই কন্যা ও এক ছেলে নিয়ে রহিম বসবাস করে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কম্পিউটার অপারেটর অস্থায়ীভাবে চাকুরী করতেন। দু’পা অচল হওয়ায় গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করলেও এখন কিডনী সমস্যায় ভুগছেন।
বগুড়া পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কিডনী স্পেশালিষ্ট ডা. আহসান হাবিব এর পারামর্শে আছেন, সেখানে প্রতিমাসে ঔষধ ছাড়া ডাক্তার ভিজিট ও রিপোট বাবদ গুনতে হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা। উপজেলার সামনে হোচিমিন পাইলট প্রিন্টিং হাউজে বসেই তিনি ব্যানার, পোস্টার, লোগো, বিজনেস কার্ডসহ বিভিন্ন ডিজাইনের কাজ। আধুনিক সফটওয়্যারে দক্ষতা, সৃজনশীল চিন্তা ও নির্ভুল কাজে তিনি স্থানীয়ভাবে ইতোমধ্যেই পরিচিত একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। গ্রাহকদের সঙ্গে তাঁর আচরণ, সময়মতো কাজ সরবরাহ এবং কাজের মান—সবকিছুর সমন্বয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন সবার আস্থার জায়গা। আব্দুর রহিম বলেন, দুই পা অচল হয়ে জীবনযুদ্ধে লড়াই করা হামার জন্য সহজ আছলনা। তবুও ভাগ্যবান হামি, কারণ হামার কর্মস্থলে হোচিমিন ভাই ও পাইলট ভাইয়ের মতো মানুষ আছিলো। তারা শুধু হামাক বেতনই দেন না—বরং নানা সময় নানাভাবে আর্থিক সহায়তা ও মানসিক সমর্থন দিয়ে পাশে দাঁড়াছে। (তার ভাষে দুই পা অচল হয়ে জীবনযুদ্ধে লড়াই করা তার জন্য সহজ ছিল না। তবুও ভাগ্যবান সে, কারণ তার কর্মস্থলে হোচিমিন ও পাইলটের মতো মানুষ ছিল। তারা শুধু তাকে বেতনই দেন না—বরং নানা সময় নানাভাবে আর্থিক সহায়তা ও মানসিক সমর্থন দিয়ে পাশে দাড়িয়েছে। দোকান মালিক পাইলট বলেন, রহিম শুধু আমার কর্মী নয়, পরিবারের একজন সদস্য। অসুস্থতার মধ্যেও সে দায়িত্ব পালনে চেষ্টা কওে এটা আমাদের সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়। আমরা সব সময় তাকে সম্মান করি ও পাশে থাকার চেষ্টা করি। বৃত্তবান মানুষরা যদি একটু সহযোগিতা করে, রহিমের মতো হাজারো রহিম আরও সাবলিম ভাবে এগিয়ে যেতে পারবে। উপজেলার সমাজসেবা অফিসার মো. সাজেদুর রহমান বলেন, রহিমের সংগ্রাম ও প্রতিভা সত্যিই প্রশংসনীয়। মানুষ ইচ্ছা করলে কিনা করতে পারে বর্তমানে তিনি প্রতিবন্ধি ভাতা পাচ্ছেন । দুই পা অচল হয়েও নিজের সাহস, মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে তিনি শুধু নিজের পরিবারের হালই ধরেননি, বরং সমাজের হাজারো প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য হয়ে উঠেছেন অদম্য অনুপ্রেরণা।