বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ভিড় -সংবাদ
ভারতীয় ভিসা প্রাপ্তিতে নানা জটিলতার কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ৪ লাখ ২ হাজার ৮৪৯ জন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর ভারত সরকারের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও একের পর এক শর্ত আরোপের ফলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভ্রমণ, চিকিৎসা, ব্যবসা ও উচ্চশিক্ষায় যেতে না পেরে বিপাকে পড়ছেন বাংলাদেশিরা। তবে ভারতীয়দের ভিসা প্রাপ্তিতে কোনো বাধা না থাকায় তাদের যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে।
চেকপোস্ট বন্দর সূত্র জানায়, প্রতিবছর ভ্রমণ, চিকিৎসা, ব্যবসা ও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দুই দেশের মধ্যে ১৮-২০ লাখ পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেন। এতে সুবিধা পান যাত্রীরা এবং বাংলাদেশ সরকার পায় প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ভ্রমণ কর-রাজস্ব; ভারত সরকার পায় ভিসা ফি বাবদ প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে ভারত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসার মেয়াদ কমানোসহ নানা শর্ত আরোপ করে। এতে ভ্রমণখাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ভারত এখনও ভিসা প্রদান সহজ করেনি। ফলে চাহিদা অনুযায়ী ভিসা না পেয়ে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাংলাদেশিরা।
বেনাপোল স্থলবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর এই চার মাসে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করেছেন ৬ লাখ ৫ হাজার ৮১৮ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫২ জন এবং ফিরেছেন ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬৬ জন।
অন্যদিকে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের একই সময়ে ভারতে যাতায়াত করেছেন মাত্র ২ লাখ ২ হাজার ৯৬৯ জন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৩৪ জন এবং ভারত থেকে ফিরেছেন ৮৮ হাজার ২৩৫ জন।
ফলে আগের অর্থবছরের তুলনায় পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার কমেছে ৪ লাখ ২ হাজার ৮৪৯ জন। এতে ভারত সরকারের ভিসা ফি বাবদ প্রায় ৪২ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ভ্রমণ কর বাবদ প্রায় ৩২ কোটি টাকা রাজস্ব কমেছে।
এদিকে প্রতি বছর ব্যবসা, স্বজনদের সঙ্গে দেখা এবং চিকিৎসার জন্য কেবল বেনাপোল বন্দর দিয়েই প্রায় আড়াই লাখ পাসপোর্টধারী ভারতীয় বাংলাদেশে আসেন। তাদের ভিসা প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো বাধা না থাকায় যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে। ভারতীয় ভিসা সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ভারত ভ্রমণকারী আতিয়ার রহমান বলেন, ‘কড়াকড়ির কারণে ভিসা পেতে অনেক টাকা খরচ করতে হচ্ছে এবং হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এতে ব্যবসা ও চিকিৎসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভিসা সহজ করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই।’
ভিসা প্রাপ্তিতে ভোগান্তির কথা জানিয়ে ব্যবসায়ী হায়দার আলী বলেন, ‘আমি ১২ হাজার টাকা দিয়ে ভিসা পেয়েছি। দালাল ছাড়া ভিসা পাওয়া যায় না। এর আগে সব কাগজ ঠিক থাকলেও ভিসা না দিয়ে পাসপোর্ট ফেরত দেয়।’
চিকিৎসার জন্য ভিসা নিয়ে ভারত গিয়ে হয়রানির অভিযোগ করেন আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, ‘কলকাতার একটি হাসপাতালে একজন চিকিৎসকের জন্য ভিসা নিয়েছিলাম। কিন্তু আত্মীয়ের পরামর্শে অন্য ডাক্তারের কাছে গেলে ফেরার পথে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে নানা হয়রানি করা হয়। তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখা এবং ভবিষ্যতে ভিসা না দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়। অনেকের পাসপোর্টে সিল মেরে দেয়া হয়, ফলে পরে ভিসা পাওয়া যায় না।’
বাংলাদেশ ভ্রমণে আসা ভারতীয় নাগরিক সুরজিত সাহা ও রেখা সাহা জানান, ‘কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন থেকে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। স্বাভাবিক নিয়মে ভিসা পেয়েছি। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা ও ঘোরাঘুরির জন্য বাংলাদেশে এসেছি।’
বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) শামিম হোসেন জানান, ‘ভিসা জটিলতার কারণে যাত্রী পারাপার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ফলে সরকারের রাজস্বও কমেছে।’
সর্বশেষ গতকাল সোমবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে গেছেন মাত্র ৯৪০ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশি ৫৯০ জন এবং ভারতীয় নাগরিক ৩৫০ জন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ভিড় -সংবাদ
মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
ভারতীয় ভিসা প্রাপ্তিতে নানা জটিলতার কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ৪ লাখ ২ হাজার ৮৪৯ জন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর ভারত সরকারের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও একের পর এক শর্ত আরোপের ফলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভ্রমণ, চিকিৎসা, ব্যবসা ও উচ্চশিক্ষায় যেতে না পেরে বিপাকে পড়ছেন বাংলাদেশিরা। তবে ভারতীয়দের ভিসা প্রাপ্তিতে কোনো বাধা না থাকায় তাদের যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে।
চেকপোস্ট বন্দর সূত্র জানায়, প্রতিবছর ভ্রমণ, চিকিৎসা, ব্যবসা ও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দুই দেশের মধ্যে ১৮-২০ লাখ পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেন। এতে সুবিধা পান যাত্রীরা এবং বাংলাদেশ সরকার পায় প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ভ্রমণ কর-রাজস্ব; ভারত সরকার পায় ভিসা ফি বাবদ প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে ভারত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসার মেয়াদ কমানোসহ নানা শর্ত আরোপ করে। এতে ভ্রমণখাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ভারত এখনও ভিসা প্রদান সহজ করেনি। ফলে চাহিদা অনুযায়ী ভিসা না পেয়ে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাংলাদেশিরা।
বেনাপোল স্থলবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর এই চার মাসে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করেছেন ৬ লাখ ৫ হাজার ৮১৮ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫২ জন এবং ফিরেছেন ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬৬ জন।
অন্যদিকে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের একই সময়ে ভারতে যাতায়াত করেছেন মাত্র ২ লাখ ২ হাজার ৯৬৯ জন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৩৪ জন এবং ভারত থেকে ফিরেছেন ৮৮ হাজার ২৩৫ জন।
ফলে আগের অর্থবছরের তুলনায় পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার কমেছে ৪ লাখ ২ হাজার ৮৪৯ জন। এতে ভারত সরকারের ভিসা ফি বাবদ প্রায় ৪২ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ভ্রমণ কর বাবদ প্রায় ৩২ কোটি টাকা রাজস্ব কমেছে।
এদিকে প্রতি বছর ব্যবসা, স্বজনদের সঙ্গে দেখা এবং চিকিৎসার জন্য কেবল বেনাপোল বন্দর দিয়েই প্রায় আড়াই লাখ পাসপোর্টধারী ভারতীয় বাংলাদেশে আসেন। তাদের ভিসা প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো বাধা না থাকায় যাতায়াত স্বাভাবিক রয়েছে। ভারতীয় ভিসা সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ভারত ভ্রমণকারী আতিয়ার রহমান বলেন, ‘কড়াকড়ির কারণে ভিসা পেতে অনেক টাকা খরচ করতে হচ্ছে এবং হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এতে ব্যবসা ও চিকিৎসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভিসা সহজ করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই।’
ভিসা প্রাপ্তিতে ভোগান্তির কথা জানিয়ে ব্যবসায়ী হায়দার আলী বলেন, ‘আমি ১২ হাজার টাকা দিয়ে ভিসা পেয়েছি। দালাল ছাড়া ভিসা পাওয়া যায় না। এর আগে সব কাগজ ঠিক থাকলেও ভিসা না দিয়ে পাসপোর্ট ফেরত দেয়।’
চিকিৎসার জন্য ভিসা নিয়ে ভারত গিয়ে হয়রানির অভিযোগ করেন আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, ‘কলকাতার একটি হাসপাতালে একজন চিকিৎসকের জন্য ভিসা নিয়েছিলাম। কিন্তু আত্মীয়ের পরামর্শে অন্য ডাক্তারের কাছে গেলে ফেরার পথে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে নানা হয়রানি করা হয়। তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখা এবং ভবিষ্যতে ভিসা না দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়। অনেকের পাসপোর্টে সিল মেরে দেয়া হয়, ফলে পরে ভিসা পাওয়া যায় না।’
বাংলাদেশ ভ্রমণে আসা ভারতীয় নাগরিক সুরজিত সাহা ও রেখা সাহা জানান, ‘কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন থেকে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। স্বাভাবিক নিয়মে ভিসা পেয়েছি। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা ও ঘোরাঘুরির জন্য বাংলাদেশে এসেছি।’
বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) শামিম হোসেন জানান, ‘ভিসা জটিলতার কারণে যাত্রী পারাপার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ফলে সরকারের রাজস্বও কমেছে।’
সর্বশেষ গতকাল সোমবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে গেছেন মাত্র ৯৪০ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশি ৫৯০ জন এবং ভারতীয় নাগরিক ৩৫০ জন।