কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উত্তর হারবাং এলাকায় সরকারিভাবে জেলা প্রশাসনের দুটি বালু মহাল চালু রয়েছে। একবছর মেয়াদে ওই বালু মহাল দুটি চলতিবছরের এপ্রিল মাসে ইজারা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, বালুমহাল ইজারাদারের লোকজন সরকারের বালু মহাল ইজারা নীতিমালা লঙ্ঘন করে সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে দুই পয়েন্টের পারমিট নিয়ে বর্তমানে উত্তর হারবাংয়ে একটি খালের সাত কিলোমিটার অংশে ৮ পয়েন্টে সেলো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু লুটের মহোৎসবে মেতেছে।
এমন পরিস্থিতিতে উপজেলার উত্তর হারবাং এলাকার শতশত একর ফসলি জমি ভেঙে খালে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষিজমির রকমারি সবজি খেত ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধনের মুখে চরম উদ্বেগ আতঙ্কে ভুগছেন স্থানীয় কৃষকেরা। পাশাপাশি ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে খালের দুই তীরের বিপুল বসতবাড়ি। অপরদিকে উত্তোলন করা বালু পরিবহনে মাত্রাতিরিক্ত ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ভেঙে যাচ্ছে ওই এলাকার গ্রামীন ও বনাঞ্চলের ভেতরের সড়কগুলো।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছে, সরকারি দুটি বালু মহালের দোহাই দিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন, বিএনপি নেতা দাবিদার খানে আলম, রাজিব, রাসেল ও ফারুক আহমদের নেতৃত্বে দাপুটে বালুখেকো সিন্ডিকেট চক্র কয়েকমাস ধরে হারবাং ইউনিয়নের উত্তর হারবাং সাবানঘাটা, সেগুনবাগান, গয়ালমারা, কাট্টলি, কোরবানিয়া ঘোনা, করমুহরী পাড়ার সালাহউদ্দিন আহমদ ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা এবং পাহাড় ঘেঁষা ছড়াখালের অন্তত ৮ পয়েন্টে সেলো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব শুরু করেছে। তাঁরা প্রতিদিন দিবারাত্রি বালু উত্তোলন করে ভারী যানবাহন যোগে চট্টগ্রাম শহর এবং উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে মাসে কোটি টাকার বাণিজ্য চালাচ্ছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের করমহুরীপাড়া গ্রামীণ সড়ক ধরে দুই কিলোমিটার ভেতরে পাহাড়ি জনপদ। এই জনপদে পাহাড়ি ছড়ার অন্তত ৮ পয়েন্টে বসানো হয়েছে বালু উত্তোলনে একাধিক শক্তিশালী সেলো মেশিন। অথচ উত্তর হারবাং এলাকায় এবছর সরকারিভাবে জেলা প্রশাসন থেকে বালু মহাল ইজারা দেওয়া হয়েছে দুটি।
স্থানীয় লোকজন ও কৃষকদের অভিযোগ, কৃষিজমির মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত খালের একাধিক পয়েন্টে সেলো মেশিন বসিয়ে এভাবে বালু উত্তোলনের কারণে খালের দুই পাশের কৃষিজমি গুলো ভেঙে খালে তলিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ফসলের ক্ষেত ও উৎপাদিত রকমারি সবজি চাষ নষ্ট হচ্ছে। এতে বড়ধরণের ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষকেরা।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসন দুটি বালু মহাল ইজারা নিলেও জড়িতরা মিলেমিশে সিন্ডিকেট করে অন্তত ৮ পয়েন্ট থেকে সেলো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। তাদের সঙ্গে আঁতাত করে একইভাবে উত্তর হারবাং ব্রিকফিল্ড এলাকায় খালে সেলো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন চেয়ারম্যানের ছেলে মানিক ও কোরবানিয়াঘোনা অংশে মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে অপর একটি চক্র।
উপজেলা ভুমি অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, জেলা প্রশাসন কতৃক বালু মহাল ইজারা সংক্রান্ত সরকারি নীতিমালা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইজারা দেওয়া নির্ধারিত এরিয়া থেকে বালু উত্তোলন করতে হবে। বালু উত্তোলনে সেলো মেশিন বা ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করা যাবে না। নীতিমালায় আছে বালু উত্তোলন করতে হবে শ্রমিক দিয়ে বেলচা কেটে টুকরিতে করে তুলে মহালে মজুদ করতে হবে। তারপর সেখান থেকে বিক্রি করবে ইজারাদার।
এলাকাবাসী জানান, বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৮ পয়েন্ট থেকে দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ গাড়ি বালু বিক্রি করা হচ্ছে। বালু ভর্তি এসব ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ভেঙে যাচ্ছে গ্রামীন ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সড়কগুলো। স্বাভাবিক চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণ দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
সরকারি বালু মহালের বাইরে গিয়ে একাধিক পয়েন্ট থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইজারাদার পক্ষের অংশিদার খানে আলম বলেন, সরকারি ইজারাকৃত মহালের জায়গা থেকে প্রত্যাশীত বালু উত্তোলন করা যাচ্ছে না। তাই আমাদের বিনিয়োগকৃত পুঁজি তোলার জন্য একাধিক পয়েন্ট থেকে বালু তুলছি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রূপায়ন দেব বলেন, সরকারি মহালের বাইরে গিয়ে একাধিক পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না। নীতিমালায় বিষয়টি পরিস্কারভাবে বলা আছে। যদি একাধিক পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করার অভিযোগটি তদন্তে পাওয়া যায়, তাহলে এ কাজের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন জানিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের (চুনতি ও পদুয়া রেঞ্জের) সহকারী বন সংরক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে যদি বালু উত্তোলন ও পরিবহনের জায়গা বনভূমির পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া হারবাংয়ের ওই এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের কারণে বন ও পরিবেশের কোনো ধরনের ক্ষতি হচ্ছে কীনা তা দেখভালের জন্য বনবিভাগ সদা তৎপর রয়েছে।