ঝড়-বৃষ্টি আবহাওয়ার বৈরিতা উপেক্ষা করে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে শপথ নিয়েছে নারী-পুরুষ, তরুণ, শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধিসহ সুবর্ণচরের মানুষ।
বিশ্বব্যাপী চলমান কর্মস‚চি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ পক্ষের অংশ হিসেবে সোমবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২১ স‚বর্ণচর পাংখার বাজার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক উন্মুক্ত সংলাপ আয়োজিত হয়। উন্নয়ন সংগঠন পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক-প্রান, নিজেরা করি এবং বন্ধন এর যৌথ উদ্যোগে এবং একশনএইড বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল এর সার্বিক সহায়তায় ‘নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে উন্মুক্ত সংলাপ’ শীর্ষক এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠনে অতিথি হয়ে যোগ দেন চর জব্বার থানার অফিসার ইন চার্জ জিয়াউল হক, সুবর্ণচর উপজেলা ভাইস চেয়ার সালমা চৌধুরী, পাংখার বাজার উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসেন বাবুল প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এর প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদ।
সমবেত জাতীয় সংগীত এর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় উন্মুক্ত সংলাপ। নারীর প্রতি চলমান সহিংসতার কারণ, করণীয় ও প্রতিকার বিষয়ে অংশগ্রহণকারী ও অতিথিদের মধ্যে নানা প্রশ্নোত্তরের মধ্যে দিয়ে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
অংশগ্রহণকারীরা বলেন, এখানে নারীর প্রতি সহিংসতার ম‚ল বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যৌতুক, বাল্যবিবাহ। প্রায়শই দেখা যায় জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বয়স নিয়ে মিথ্যে রেজিস্ট্রেশন হয়। চলমান করোনা মহামারীতে এখানে বাল্যবিবাহের ঘটনা আশংকাজনকভাবে বেড়েছে। অনেক সময় প্রশাসনের সহায়তায় বিয়ের আয়োজন বন্ধ করা গেলেও কোর্টে গিয়ে এই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
তারা আরো বলেন এই অঞ্চলে এক ধরণের না, অন্যান্য অনেক ধরণের নিপীড়ন ও আছে যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক। এগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা এখন সময়ের দাবি। মামলার দীর্ঘস‚ত্রিতার কারণে অনেক নারীরা মামলা করতে চান না। ফলে অনেকেই আইনী সহায়তা নেয়া থেকে পিছিয়ে যায়।
তারা আরো বলেন, ‘নারীর প্রতি কোনো রকমের সহিংসতা হলে আমরা এলাকার মুরুব্বিদের কাছে যাই। তারা আইনী সহায়তা নিতে বললে পরে দেখা যায় কোনো তদন্তে এলাকার কেউ কথা বলেন না। এক্ষেত্রে আরো জটিলতা তৈরি হয়’।
পাংখার বাজার উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক জনাব আক্তার হোসেন বাবুল বলেন- অনেক সময় স্কুলে বাচ্চারা এলে মন খারাপ করে বসে থাকে। তাদের প্রশ্ন করলে জানা যায় বাবার বহুবিবাহ বা তালাকের কারণে নানা পারিবারিক অশান্তি হচ্ছে। আবার বহুবার আমরা পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে বাল্যববাহ বন্ধ করেছি। কিন্তু অন্য কোনো না কোনোভাবে বিয়েটি পরে হয়েছে।
সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ার সালমা চৌধুরি বলেন, একজন নারীকে আঘাত করা মানে গোটা পরিবারকে আঘাত করা। সমাজ পরিবারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অবদান অপরিসীম হলেও তার স্বীকৃত সেভাবে নেই। নারীর প্রতি নির্যাতনের যে কোনো ঘটনায় সরাসরি প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের শরনাপন্ন হবার আহবান জানান তিনি।
জিয়াউল হাসান ,চর জব্বর থানা অফিসার ইন চার্জ বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার প্রধান কারণ সহিংসতার ঘটনা প্রকাশ করতে না পারাটা। যে পরিবারে বাল্যবিবাহ, যোউতুক, সহিংসতা,নিপীড়ন হয়ে হয় সেই পরিবারে মা থাকেন, পরিবারে অন্যান্য নারীরাও থাকেন। নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য এই কাছের মানুষেদের অজ্ঞতাও দায়ী। একটি সমীক্ষা বলে নারীর প্রতি নির্যাতনের ৮৭ শতাংশ হয় নারীর নিজের ঘরে।
নুরুল আলম মাসুদ বলেন সুবর্ণচর অঞ্চলের ভ‚মি লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় আহতের সংখ্যা নারী, অবদান ও নারীরই বেশী। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নারীর প্রতি সহিংসতা কমেনি বরং বেড়েছে।
আলোচনায় উঠে আসে এখানকার অধিকাংশ মানুষ এখানে হটলাইন নাম্বার জানেন না, যারা জানেন তারাও কখনো হটলাইন ব্যবহার করে নিপীড়ন বন্ধে আইনী সহায়তা চাননি।
ভ‚মিহীন আন্দোলন নেত্রী মেরিনা আক্তার বলেন- আমরা অনেকেই নিজে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেখা যাচ্ছে নিজের ছেলে তার স্ত্রীকে নির্যাতন করলেও আর বাধা দেই না। সহিংসতাকে আমরা স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছি। যৌতুকের মত পারিবারিক নির্যাতন হচ্ছে এক ধরণের লোভের ফসল। যত প্রশ্রয় দেয়া হয় তত বাড়ে। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে নারীদের স্বাবলম্বী হবার বিকল্প নেই।
সুবর্ণচর উপজেলার দুই শতাধিক নারী পুরুষ, তরুণ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, নোয়াখালীতে কর্মরত উন্নয়ন সংগঠন এনআরডিএস, সাগরিকা, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা, এসো গড়ি উন্নয়ন সংস্থা, প্রচেষ্টা নারী উন্নয়ন মেলা, এফপিএবি, নোয়াখালী নারী অধিকার জোট, গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট, এসডিপি, পারিবারিক নিযাতন প্রতিরোধ জোট, দুর্যোগকালীন নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ প¬াটফর্ম-প্রতিবাদ করি, প্রতিরোধ গড়ি এই এয়োজনে সহউদ্যোক্তা হিসেবে অংশ নেন।
সোমবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২১
ঝড়-বৃষ্টি আবহাওয়ার বৈরিতা উপেক্ষা করে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে শপথ নিয়েছে নারী-পুরুষ, তরুণ, শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধিসহ সুবর্ণচরের মানুষ।
বিশ্বব্যাপী চলমান কর্মস‚চি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ পক্ষের অংশ হিসেবে সোমবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২১ স‚বর্ণচর পাংখার বাজার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক উন্মুক্ত সংলাপ আয়োজিত হয়। উন্নয়ন সংগঠন পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক-প্রান, নিজেরা করি এবং বন্ধন এর যৌথ উদ্যোগে এবং একশনএইড বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল এর সার্বিক সহায়তায় ‘নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে উন্মুক্ত সংলাপ’ শীর্ষক এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠনে অতিথি হয়ে যোগ দেন চর জব্বার থানার অফিসার ইন চার্জ জিয়াউল হক, সুবর্ণচর উপজেলা ভাইস চেয়ার সালমা চৌধুরী, পাংখার বাজার উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসেন বাবুল প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এর প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদ।
সমবেত জাতীয় সংগীত এর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় উন্মুক্ত সংলাপ। নারীর প্রতি চলমান সহিংসতার কারণ, করণীয় ও প্রতিকার বিষয়ে অংশগ্রহণকারী ও অতিথিদের মধ্যে নানা প্রশ্নোত্তরের মধ্যে দিয়ে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
অংশগ্রহণকারীরা বলেন, এখানে নারীর প্রতি সহিংসতার ম‚ল বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যৌতুক, বাল্যবিবাহ। প্রায়শই দেখা যায় জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বয়স নিয়ে মিথ্যে রেজিস্ট্রেশন হয়। চলমান করোনা মহামারীতে এখানে বাল্যবিবাহের ঘটনা আশংকাজনকভাবে বেড়েছে। অনেক সময় প্রশাসনের সহায়তায় বিয়ের আয়োজন বন্ধ করা গেলেও কোর্টে গিয়ে এই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
তারা আরো বলেন এই অঞ্চলে এক ধরণের না, অন্যান্য অনেক ধরণের নিপীড়ন ও আছে যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক। এগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা এখন সময়ের দাবি। মামলার দীর্ঘস‚ত্রিতার কারণে অনেক নারীরা মামলা করতে চান না। ফলে অনেকেই আইনী সহায়তা নেয়া থেকে পিছিয়ে যায়।
তারা আরো বলেন, ‘নারীর প্রতি কোনো রকমের সহিংসতা হলে আমরা এলাকার মুরুব্বিদের কাছে যাই। তারা আইনী সহায়তা নিতে বললে পরে দেখা যায় কোনো তদন্তে এলাকার কেউ কথা বলেন না। এক্ষেত্রে আরো জটিলতা তৈরি হয়’।
পাংখার বাজার উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক জনাব আক্তার হোসেন বাবুল বলেন- অনেক সময় স্কুলে বাচ্চারা এলে মন খারাপ করে বসে থাকে। তাদের প্রশ্ন করলে জানা যায় বাবার বহুবিবাহ বা তালাকের কারণে নানা পারিবারিক অশান্তি হচ্ছে। আবার বহুবার আমরা পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে বাল্যববাহ বন্ধ করেছি। কিন্তু অন্য কোনো না কোনোভাবে বিয়েটি পরে হয়েছে।
সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ার সালমা চৌধুরি বলেন, একজন নারীকে আঘাত করা মানে গোটা পরিবারকে আঘাত করা। সমাজ পরিবারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অবদান অপরিসীম হলেও তার স্বীকৃত সেভাবে নেই। নারীর প্রতি নির্যাতনের যে কোনো ঘটনায় সরাসরি প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের শরনাপন্ন হবার আহবান জানান তিনি।
জিয়াউল হাসান ,চর জব্বর থানা অফিসার ইন চার্জ বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার প্রধান কারণ সহিংসতার ঘটনা প্রকাশ করতে না পারাটা। যে পরিবারে বাল্যবিবাহ, যোউতুক, সহিংসতা,নিপীড়ন হয়ে হয় সেই পরিবারে মা থাকেন, পরিবারে অন্যান্য নারীরাও থাকেন। নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য এই কাছের মানুষেদের অজ্ঞতাও দায়ী। একটি সমীক্ষা বলে নারীর প্রতি নির্যাতনের ৮৭ শতাংশ হয় নারীর নিজের ঘরে।
নুরুল আলম মাসুদ বলেন সুবর্ণচর অঞ্চলের ভ‚মি লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় আহতের সংখ্যা নারী, অবদান ও নারীরই বেশী। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নারীর প্রতি সহিংসতা কমেনি বরং বেড়েছে।
আলোচনায় উঠে আসে এখানকার অধিকাংশ মানুষ এখানে হটলাইন নাম্বার জানেন না, যারা জানেন তারাও কখনো হটলাইন ব্যবহার করে নিপীড়ন বন্ধে আইনী সহায়তা চাননি।
ভ‚মিহীন আন্দোলন নেত্রী মেরিনা আক্তার বলেন- আমরা অনেকেই নিজে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেখা যাচ্ছে নিজের ছেলে তার স্ত্রীকে নির্যাতন করলেও আর বাধা দেই না। সহিংসতাকে আমরা স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছি। যৌতুকের মত পারিবারিক নির্যাতন হচ্ছে এক ধরণের লোভের ফসল। যত প্রশ্রয় দেয়া হয় তত বাড়ে। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে নারীদের স্বাবলম্বী হবার বিকল্প নেই।
সুবর্ণচর উপজেলার দুই শতাধিক নারী পুরুষ, তরুণ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, নোয়াখালীতে কর্মরত উন্নয়ন সংগঠন এনআরডিএস, সাগরিকা, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা, এসো গড়ি উন্নয়ন সংস্থা, প্রচেষ্টা নারী উন্নয়ন মেলা, এফপিএবি, নোয়াখালী নারী অধিকার জোট, গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট, এসডিপি, পারিবারিক নিযাতন প্রতিরোধ জোট, দুর্যোগকালীন নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ প¬াটফর্ম-প্রতিবাদ করি, প্রতিরোধ গড়ি এই এয়োজনে সহউদ্যোক্তা হিসেবে অংশ নেন।