একশ স্পটে নতুন জরিপ
২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ১১৯
ডেঙ্গুজ্বরের ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা শহর থেকে গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে এডিস মশার উপদ্রব আবার ব্যাপক হারে বাড়ছে। অবস্থার অবনতি দেখে কীটতত্ব বিশেষজ্ঞরা আবার রাজধানীর শতাধিক পয়েন্ট অনুসন্ধান জরিপ শুরু করেছে।
গত ৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর ১০০ স্পটে প্রায় ৬০ জন কীটতত্ববিদ এ অনুসন্ধান জরিপে নেমেছেন। তারা রাজধানীতে তিন হাজার বাসা বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ও পূণাঙ্গ মশা উপস্থিতি নিশ্চিত করবেন। তাদের প্রতিবেদন উচ্চ পর্যায়ে জমা দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে।
মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে আরও ১১৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি রোগী ২৮ জন ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহর ও গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে ৯১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এ নিয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আক্রান্তদের মধ্যে ২৭ হাজার ৭৭৯ জন ভর্তি হয়েছে। চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়েছে ২৭ হাজার ৪২৩ জন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে শিশুসহ ১০০ জন। এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছে ২৫৬ জন।
সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ২৭ হাজার ৭৭৯ জন হলেও বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। কারণ, অনেক রোগী বাসা-বাড়িতে থেকে ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা করান। তাদের পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় নেই। ওই হিসাব জানা গেলে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিনিয়র কীটতত্ত্ববিদ খলিলুর রহমান বলেন, বৃষ্টির কারণে এখন এডিস মশার উপদ্রব বাড়ছে। নির্মাণাধীন বাড়ির ছাদে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার বংশ বিস্তার করছে।
এ ছাড়া অনেক বাসা-বাড়িতে পানি সংকট রয়েছে। তাই অনেকেই সংকট মোকাবিলায় পানি জমা রাখেন। জমিয়ে রাখা পানিতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করে। এ ছাড়া বেশির ভাগ জেলা ও উপজেলায় নতুন নতুন পাকা বাড়ি করছেন। সে কারণে বাড়ির ছাদে পানি জমে থাকে। অসচেতনতার কারণে এখন এডিস মশা শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তার লাভ করছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেসথেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের (আইসিইউ) বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, এডিস মশা না মারলে এ অবস্থা থাকবে। ভাইরাস আক্রান্ত মশা যাকে কামড় দিবে তিনি আক্রান্ত হবেন। আর আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড় দিয়ে আবার নতুন আরেকজনকে কামড় দিলে সেও আক্রান্ত হবেন। এভাবে এডিস মশার উপদ্রব এবং আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এখন বৃষ্টির কারণে মশার প্রজনন বাড়ছে। ডিম ফুটে নতুন নতুন মশার জন্ম হচ্ছে। জন্মগতভাবে যে মশা ডেঙ্গুজ্বরের ভাইরাস বহন করছে, সে মশার মাধ্যমে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সংবাদকে জানান, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর শহরে মশা দমনে আলাদা বিভাগ রয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ওই বিভাগ চলে। তারা মশার ওষুধ কেনা ও বছরজুড়ে মশা দমনে কাজ করছেন। বাংলাদেশে এ বিভাগ চালু করা দরকার বলে এ বিশেষজ্ঞ মনে করেন। না হয় বছরজুড়ে এডিস মশার উপদ্রব থাকবে বলে তিনি মনে করেন।
একশ স্পটে নতুন জরিপ
২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ১১৯
মঙ্গলবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২১
ডেঙ্গুজ্বরের ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা শহর থেকে গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে এডিস মশার উপদ্রব আবার ব্যাপক হারে বাড়ছে। অবস্থার অবনতি দেখে কীটতত্ব বিশেষজ্ঞরা আবার রাজধানীর শতাধিক পয়েন্ট অনুসন্ধান জরিপ শুরু করেছে।
গত ৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর ১০০ স্পটে প্রায় ৬০ জন কীটতত্ববিদ এ অনুসন্ধান জরিপে নেমেছেন। তারা রাজধানীতে তিন হাজার বাসা বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ও পূণাঙ্গ মশা উপস্থিতি নিশ্চিত করবেন। তাদের প্রতিবেদন উচ্চ পর্যায়ে জমা দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে।
মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে আরও ১১৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি রোগী ২৮ জন ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহর ও গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে ৯১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এ নিয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আক্রান্তদের মধ্যে ২৭ হাজার ৭৭৯ জন ভর্তি হয়েছে। চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়েছে ২৭ হাজার ৪২৩ জন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে শিশুসহ ১০০ জন। এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছে ২৫৬ জন।
সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ২৭ হাজার ৭৭৯ জন হলেও বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। কারণ, অনেক রোগী বাসা-বাড়িতে থেকে ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা করান। তাদের পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় নেই। ওই হিসাব জানা গেলে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিনিয়র কীটতত্ত্ববিদ খলিলুর রহমান বলেন, বৃষ্টির কারণে এখন এডিস মশার উপদ্রব বাড়ছে। নির্মাণাধীন বাড়ির ছাদে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার বংশ বিস্তার করছে।
এ ছাড়া অনেক বাসা-বাড়িতে পানি সংকট রয়েছে। তাই অনেকেই সংকট মোকাবিলায় পানি জমা রাখেন। জমিয়ে রাখা পানিতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করে। এ ছাড়া বেশির ভাগ জেলা ও উপজেলায় নতুন নতুন পাকা বাড়ি করছেন। সে কারণে বাড়ির ছাদে পানি জমে থাকে। অসচেতনতার কারণে এখন এডিস মশা শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তার লাভ করছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেসথেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের (আইসিইউ) বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, এডিস মশা না মারলে এ অবস্থা থাকবে। ভাইরাস আক্রান্ত মশা যাকে কামড় দিবে তিনি আক্রান্ত হবেন। আর আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড় দিয়ে আবার নতুন আরেকজনকে কামড় দিলে সেও আক্রান্ত হবেন। এভাবে এডিস মশার উপদ্রব এবং আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এখন বৃষ্টির কারণে মশার প্রজনন বাড়ছে। ডিম ফুটে নতুন নতুন মশার জন্ম হচ্ছে। জন্মগতভাবে যে মশা ডেঙ্গুজ্বরের ভাইরাস বহন করছে, সে মশার মাধ্যমে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সংবাদকে জানান, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর শহরে মশা দমনে আলাদা বিভাগ রয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ওই বিভাগ চলে। তারা মশার ওষুধ কেনা ও বছরজুড়ে মশা দমনে কাজ করছেন। বাংলাদেশে এ বিভাগ চালু করা দরকার বলে এ বিশেষজ্ঞ মনে করেন। না হয় বছরজুড়ে এডিস মশার উপদ্রব থাকবে বলে তিনি মনে করেন।