বিপর্যয়ের মুখোমুখি উপকূলীয় দুই উপজেলা
‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা দেয়ার ২২ বছরেও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায়। ফলে পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখোমুখি সাতক্ষীরার উপকূলীয় দুই উপজেলা। এদিকে খাদ্য ও পুষ্টি সংকট, কর্মসংস্থানের অভাবসহ উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত ৬টি ইউনিয়ন। পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উপকূলীয় ২ লক্ষাধিক মানুষের।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিবেশগত মান উন্নয়ন এবং টেকসই পরিবেশ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে সরকার ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের ১৩টি এলাকাকে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেয়। নিষিদ্ধ করা হয় মাটি, পানি, বায়ু এবং শব্দ দূষণকারী শিল্প বা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, ভূমি এবং পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করতে পারে এমন সকল কাজসহ ৭টি কাজ। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকার প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে হাকালুকি হাওর ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলকায় জনগণকে সংগঠিত করে ৭৫টি গ্রাম সংরক্ষণ দল গঠন ও সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন করানো হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় কোস্টাল এ্যান্ড ওয়েটল্যান্ড বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কক্সবাজার বা হাকালুকি হাওর এলাকায় কিছু কাজ হলেও ঘোষণার ২২ বছরে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা কোন পদক্ষেপ নেয়নি সরকার।
২০০৯ সালে আইলার তান্ডবে তছনছ হয়ে যায় সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা। লবণ পানির ব্যাপক প্রবেশে সুজলা-সুফলা উপকূল হারাতে থাকে তার খাদ্য উৎপাদনের প্রাচুর্য। পরবর্তীতে বুলবুল-ফণি-আম্ফান-ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড় প্রায় প্রতিবছরই আছড়িয়ে যায় উপকূল। লবণ পানিতে টিকতে না পেরে গাছ মরে বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে পুরো এলাকা। নেই কর্মসংস্থানের সুযোগ। ফলে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা সমস্যা সঙ্কুল হয়ে পড়েছে উপকূলবাসীর জন্য। এ বিষয়ে উপকূলীয় এলাকা শ্যামনগরের গাবুরা গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম বলেন, এলাকায় কোন কৃষি কাজ নেই। সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীলতা ছাড়া বিকল্প কোন কর্মসংস্থান নেই। গাছ-পালা নেই। অথচ উপকূলীয় এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। ঘোষণার ২২ বছরেও অবস্থার উত্তরণে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষুব্ধ উপকূলবাসী। তাদের দাবি সবুজ বনায়ন, লোনামুক্ত জমিতে কৃষিকাজসহ টেকসই বেড়িবাঁধ। এ বিষয়ে আশাশুনির কুড়িকাহুনিয়া গ্রামের আবু সালেহ জানান, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা ধীরে ধীরে যেভাবে উপকূলীয় এলাকাকে গ্রাস করছে, ভবিষ্যতে বাস করার মতো কোন অবস্থা এখানে থাকবে না। উচ্চমাত্রার লবণাক্ততার জন্য কৃষিকাজ নেই শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার উপকূলীয় এলাকায়। কর্মসংস্থানের জন্য সুন্দরবনকে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছে উপকূলবাসী। তাই বিকল্প কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিচ্ছেন জলবায়ু পরিষদের নেতারা। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা জলবায়ু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাধব দত্ত বলেন, ১৯৯৯ সালে সুন্দরবন থেকে ১০ কি.মি. পর্যন্ত ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া ঘোষণা করে সরকার। এই দশ কি.মি. এলাকা হলো উপকূলীয় এলাকা। এই এলাকায় মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা সরকার করেনি। তারা সুন্দরবনকে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছে। ফলে তারা পরিবেশ ও প্রতিবেশ উভয়েরই ক্ষতি করছে। সরকারের এখনই উচিত হবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা । যাতে করে এই এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি হয়। তাতে এলাকার প্রতিবেশ ও পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে। প্রতিবেশগত বিপর্যয়ের হাত থেকে উপকূলীয় এলাকাকে বাচাতে সরকারি উদ্যোগ নেয়ার গুরুত্ব অনুভব করে পরিবেশ অধিদপ্তর। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে তাই জানানো হয়েছে বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৯ সালে ইসিএ ঘোষণা করা হলেও তা থেকে উত্তরণের জন্য কার্যকর কোন ব্যবস্থা আমরা নিতে পারিনি, বা কোন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। আমি এখানে দায়িত্ব নেয়ার পরে বিষয়টি উর্ধতনদের জানিয়েছি। সদর দপ্তরের শেষ মিটিংয়ে আমি মহাপরিচালককে জানিয়েছি বিষয়টা। আমরা ইসিএ ঘোষণা করেছি। তাই কিছু কার্যক্রম শুরু করা দরকার। আমরা যদি কক্সবাজার বা হাকালুকি হাওরের মতো কার্যক্রম শুরু করতে পারতাম, তবে লোকাল কম্যুনিটিকে আমরা পরিবেশ রক্ষায় সংযুক্ত করতে পারতাম, তাহলে উপকূলীয় এলাকাকে বিপর্যয়েল হাত থেকে রক্ষা করতে পারতাম। আমরা সেখানে উপযুক্ত বনায়ন করতে পারতাম। তাছাড়া সুন্দরবন রক্ষা করার কাজটাও সহজ হয়ে যেত। আমরা সদর দপ্তরে জানিয়েছি। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
বিপর্যয়ের মুখোমুখি উপকূলীয় দুই উপজেলা
সোমবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২২
‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা দেয়ার ২২ বছরেও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায়। ফলে পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখোমুখি সাতক্ষীরার উপকূলীয় দুই উপজেলা। এদিকে খাদ্য ও পুষ্টি সংকট, কর্মসংস্থানের অভাবসহ উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত ৬টি ইউনিয়ন। পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উপকূলীয় ২ লক্ষাধিক মানুষের।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিবেশগত মান উন্নয়ন এবং টেকসই পরিবেশ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে সরকার ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের ১৩টি এলাকাকে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেয়। নিষিদ্ধ করা হয় মাটি, পানি, বায়ু এবং শব্দ দূষণকারী শিল্প বা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, ভূমি এবং পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করতে পারে এমন সকল কাজসহ ৭টি কাজ। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকার প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে হাকালুকি হাওর ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলকায় জনগণকে সংগঠিত করে ৭৫টি গ্রাম সংরক্ষণ দল গঠন ও সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন করানো হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় কোস্টাল এ্যান্ড ওয়েটল্যান্ড বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কক্সবাজার বা হাকালুকি হাওর এলাকায় কিছু কাজ হলেও ঘোষণার ২২ বছরে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা কোন পদক্ষেপ নেয়নি সরকার।
২০০৯ সালে আইলার তান্ডবে তছনছ হয়ে যায় সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা। লবণ পানির ব্যাপক প্রবেশে সুজলা-সুফলা উপকূল হারাতে থাকে তার খাদ্য উৎপাদনের প্রাচুর্য। পরবর্তীতে বুলবুল-ফণি-আম্ফান-ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড় প্রায় প্রতিবছরই আছড়িয়ে যায় উপকূল। লবণ পানিতে টিকতে না পেরে গাছ মরে বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে পুরো এলাকা। নেই কর্মসংস্থানের সুযোগ। ফলে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা সমস্যা সঙ্কুল হয়ে পড়েছে উপকূলবাসীর জন্য। এ বিষয়ে উপকূলীয় এলাকা শ্যামনগরের গাবুরা গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম বলেন, এলাকায় কোন কৃষি কাজ নেই। সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীলতা ছাড়া বিকল্প কোন কর্মসংস্থান নেই। গাছ-পালা নেই। অথচ উপকূলীয় এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। ঘোষণার ২২ বছরেও অবস্থার উত্তরণে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষুব্ধ উপকূলবাসী। তাদের দাবি সবুজ বনায়ন, লোনামুক্ত জমিতে কৃষিকাজসহ টেকসই বেড়িবাঁধ। এ বিষয়ে আশাশুনির কুড়িকাহুনিয়া গ্রামের আবু সালেহ জানান, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা ধীরে ধীরে যেভাবে উপকূলীয় এলাকাকে গ্রাস করছে, ভবিষ্যতে বাস করার মতো কোন অবস্থা এখানে থাকবে না। উচ্চমাত্রার লবণাক্ততার জন্য কৃষিকাজ নেই শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার উপকূলীয় এলাকায়। কর্মসংস্থানের জন্য সুন্দরবনকে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছে উপকূলবাসী। তাই বিকল্প কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিচ্ছেন জলবায়ু পরিষদের নেতারা। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা জলবায়ু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাধব দত্ত বলেন, ১৯৯৯ সালে সুন্দরবন থেকে ১০ কি.মি. পর্যন্ত ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া ঘোষণা করে সরকার। এই দশ কি.মি. এলাকা হলো উপকূলীয় এলাকা। এই এলাকায় মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা সরকার করেনি। তারা সুন্দরবনকে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছে। ফলে তারা পরিবেশ ও প্রতিবেশ উভয়েরই ক্ষতি করছে। সরকারের এখনই উচিত হবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা । যাতে করে এই এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি হয়। তাতে এলাকার প্রতিবেশ ও পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে। প্রতিবেশগত বিপর্যয়ের হাত থেকে উপকূলীয় এলাকাকে বাচাতে সরকারি উদ্যোগ নেয়ার গুরুত্ব অনুভব করে পরিবেশ অধিদপ্তর। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে তাই জানানো হয়েছে বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৯ সালে ইসিএ ঘোষণা করা হলেও তা থেকে উত্তরণের জন্য কার্যকর কোন ব্যবস্থা আমরা নিতে পারিনি, বা কোন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। আমি এখানে দায়িত্ব নেয়ার পরে বিষয়টি উর্ধতনদের জানিয়েছি। সদর দপ্তরের শেষ মিটিংয়ে আমি মহাপরিচালককে জানিয়েছি বিষয়টা। আমরা ইসিএ ঘোষণা করেছি। তাই কিছু কার্যক্রম শুরু করা দরকার। আমরা যদি কক্সবাজার বা হাকালুকি হাওরের মতো কার্যক্রম শুরু করতে পারতাম, তবে লোকাল কম্যুনিটিকে আমরা পরিবেশ রক্ষায় সংযুক্ত করতে পারতাম, তাহলে উপকূলীয় এলাকাকে বিপর্যয়েল হাত থেকে রক্ষা করতে পারতাম। আমরা সেখানে উপযুক্ত বনায়ন করতে পারতাম। তাছাড়া সুন্দরবন রক্ষা করার কাজটাও সহজ হয়ে যেত। আমরা সদর দপ্তরে জানিয়েছি। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।