যশোর হাসপাতাল
শ্বাসকষ্ট নিয়ে শত শত মানুষ ভর্তি হচ্ছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালে। নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগাক্রান্ত ‘রেকর্ড ব্রেকিং’ সংখ্যক শিশু হাসপাতালটি থেকে চিকিৎসা নিয়েছে। এখনও প্রতিদিন ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছে। ফলে তাদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে কর্মরতরা হিমশিম খাচ্ছেন। হাসপাতালে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাইরের হাসপাতাল ক্লিনিকেও ঠান্ডাজনিত সমস্যায় আক্রান্তরা চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গত এক সপ্তাহে হাসপাতালের শিশু বিভাগটিতে নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেয় আড়াই শতাধিক। অন্য ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদেরও বহুসংখ্যক বয়স্ক নারী-পুরুষ ঠান্ডাজনিত কারণে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ভর্তি শিশুদের অনেকেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। চলতি সপ্তাহে আড়াইশ’ শয্যার এই হাসপাতালে শিশু ভর্তির সংখ্যা আড়াইশ’ ছাড়িয়ে যায়। যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেয়।
তবে এরমধ্যে সিংহভাগ শিশু রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। চলতি সপ্তাহে (১৯-২৫ জানুয়ারি) পর্যন্ত যশোর জেনারেল হাসপাতালে ঠান্ডা, সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ২৫৩ জন শিশুকে ভর্তি করেন অভিভাবকরা। সর্বশেষ ২৫ জানুয়ারি ৪১ জন শিশুকে ভর্তি করা হয়। এর আগে ২৪ জানুয়ারি ৫২, ২৩ জানুয়ারি ৪৩, ২২ জানুয়ারি ৩৭, ২১ জানুয়ারি ৩৩, ২০ জানুয়ারি ২৫ ও ১৯ জানুয়ারি ২২ জন শিশু সর্দি-কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এখানে শিশু বেড রয়েছে ২৪টি। এর বাইরে একদিন বয়সী শিশুর চিকিৎসার জন্য গ্লাসঘেরা যে কক্ষটি রয়েছে সেখানেও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের রেখে চিকিৎসা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাঘারপাড়ার পদ্মবিলা গ্রামের আল-আমিনের ২৬ দিন বয়সী শিশুপুত্র আব্রাহাম লিংকন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। তাকে ভর্তি করা হয় গ্লাসঘেরা কক্ষে।
কোটচাঁদপুর শেরখালী গ্রামের আজিমুলের শিশুকন্যা রাবেয়ার বয়স ২১ মাস। সে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত। শিশুটির মা অলিমা জানান, এখানে ৪ দিন ধরে ভর্তি রয়েছে। বর্তমানে বেশ সুস্থ। যশোর সদরের রুপদিয়ার বলরাম গ্রামের চারদিন বয়সী শিশুপুত্র বাবু ভর্তি রয়েছে। তার পিতা আখের আলী জানান, জন্মের পর থেকেই শিশুটি নানা রোগে আক্রান্ত। তাকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
শিশুটির মা লেবার ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। বেনাপোলের রাজাপুর গ্রামের সোলাইমানের ৬ মাস বয়সী শিশুপুত্র সাকিবুল হাসান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শার্শা উপজেলার কন্যাদহ গ্রামের হৃদয়ের তিনদিন বয়সী শিশুপুত্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তাকে গত তিনদিন ধরে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত আশার কথা শোনাতে পারেননি চিকিৎসকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোগীর স্বজন জানান, আশানুরূপ চিকিৎসাসেবা এখানে মিলছে না। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি এখানে কয়েকগুণ রোগী ভর্তি থাকায় তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স সাজেদা পারভীন জানান, অধিক শিশু আক্রান্ত হলেও এরইমধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। বাকি শিশুদের চিকিৎসায় কোন রকমের গাফিলতি হচ্ছে না। নিয়ম মেনেই শিশুসহ সব রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
রোগী কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা যায়, তারা সাধ্যমত গরিব অসহায় ও দুস্থ রোগীর চিকিৎসায় সহায়তা করছেন। তবে রোগীর স্বজনকে কল্যাণ সমিতি কর্তৃপক্ষের কাছে জানাতে হয়। এখানে যশোর সমাজসেবা অফিসও রোগীর চিকিৎসায় সহায়তা করে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান জানান, বৈরি আবহাওয়া ও শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশুসহ নানা বয়সের নারী-পুরুষ সর্দি-জ্বর, কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। জনবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সবাইকে প্রপার চিকিৎসা দিতে ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার অধিকার সবার আছে। এখানে স্বজনপ্রীতির কোন সুযোগ নেই।
যশোর হাসপাতাল
শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২২
শ্বাসকষ্ট নিয়ে শত শত মানুষ ভর্তি হচ্ছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালে। নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগাক্রান্ত ‘রেকর্ড ব্রেকিং’ সংখ্যক শিশু হাসপাতালটি থেকে চিকিৎসা নিয়েছে। এখনও প্রতিদিন ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছে। ফলে তাদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে কর্মরতরা হিমশিম খাচ্ছেন। হাসপাতালে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাইরের হাসপাতাল ক্লিনিকেও ঠান্ডাজনিত সমস্যায় আক্রান্তরা চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গত এক সপ্তাহে হাসপাতালের শিশু বিভাগটিতে নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেয় আড়াই শতাধিক। অন্য ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদেরও বহুসংখ্যক বয়স্ক নারী-পুরুষ ঠান্ডাজনিত কারণে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ভর্তি শিশুদের অনেকেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। চলতি সপ্তাহে আড়াইশ’ শয্যার এই হাসপাতালে শিশু ভর্তির সংখ্যা আড়াইশ’ ছাড়িয়ে যায়। যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেয়।
তবে এরমধ্যে সিংহভাগ শিশু রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। চলতি সপ্তাহে (১৯-২৫ জানুয়ারি) পর্যন্ত যশোর জেনারেল হাসপাতালে ঠান্ডা, সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ২৫৩ জন শিশুকে ভর্তি করেন অভিভাবকরা। সর্বশেষ ২৫ জানুয়ারি ৪১ জন শিশুকে ভর্তি করা হয়। এর আগে ২৪ জানুয়ারি ৫২, ২৩ জানুয়ারি ৪৩, ২২ জানুয়ারি ৩৭, ২১ জানুয়ারি ৩৩, ২০ জানুয়ারি ২৫ ও ১৯ জানুয়ারি ২২ জন শিশু সর্দি-কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এখানে শিশু বেড রয়েছে ২৪টি। এর বাইরে একদিন বয়সী শিশুর চিকিৎসার জন্য গ্লাসঘেরা যে কক্ষটি রয়েছে সেখানেও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের রেখে চিকিৎসা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাঘারপাড়ার পদ্মবিলা গ্রামের আল-আমিনের ২৬ দিন বয়সী শিশুপুত্র আব্রাহাম লিংকন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। তাকে ভর্তি করা হয় গ্লাসঘেরা কক্ষে।
কোটচাঁদপুর শেরখালী গ্রামের আজিমুলের শিশুকন্যা রাবেয়ার বয়স ২১ মাস। সে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত। শিশুটির মা অলিমা জানান, এখানে ৪ দিন ধরে ভর্তি রয়েছে। বর্তমানে বেশ সুস্থ। যশোর সদরের রুপদিয়ার বলরাম গ্রামের চারদিন বয়সী শিশুপুত্র বাবু ভর্তি রয়েছে। তার পিতা আখের আলী জানান, জন্মের পর থেকেই শিশুটি নানা রোগে আক্রান্ত। তাকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
শিশুটির মা লেবার ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। বেনাপোলের রাজাপুর গ্রামের সোলাইমানের ৬ মাস বয়সী শিশুপুত্র সাকিবুল হাসান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শার্শা উপজেলার কন্যাদহ গ্রামের হৃদয়ের তিনদিন বয়সী শিশুপুত্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তাকে গত তিনদিন ধরে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত আশার কথা শোনাতে পারেননি চিকিৎসকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোগীর স্বজন জানান, আশানুরূপ চিকিৎসাসেবা এখানে মিলছে না। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি এখানে কয়েকগুণ রোগী ভর্তি থাকায় তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স সাজেদা পারভীন জানান, অধিক শিশু আক্রান্ত হলেও এরইমধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। বাকি শিশুদের চিকিৎসায় কোন রকমের গাফিলতি হচ্ছে না। নিয়ম মেনেই শিশুসহ সব রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
রোগী কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা যায়, তারা সাধ্যমত গরিব অসহায় ও দুস্থ রোগীর চিকিৎসায় সহায়তা করছেন। তবে রোগীর স্বজনকে কল্যাণ সমিতি কর্তৃপক্ষের কাছে জানাতে হয়। এখানে যশোর সমাজসেবা অফিসও রোগীর চিকিৎসায় সহায়তা করে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান জানান, বৈরি আবহাওয়া ও শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশুসহ নানা বয়সের নারী-পুরুষ সর্দি-জ্বর, কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। জনবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সবাইকে প্রপার চিকিৎসা দিতে ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার অধিকার সবার আছে। এখানে স্বজনপ্রীতির কোন সুযোগ নেই।