নদীর ঢেউ আর লাল ফুলের পাঁপাড়ি একে অপরের সাথে মিশে অন্যরকম আবহ নেয় ভদ্রা নদী। এতে যেন একান্ন বছর আগের স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠে। নদীর ঘোলা পানি যেন রক্তের স্রোত। কিছুটা সময় স্তব্ধ হয়ে যান ভদ্রা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা শত শত মানুষ। এত মানুষের ভিড়েও নিস্তব্ধতা বলে দেয় ১৯৭১ সালের ২০ মে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা কতটা ভয়ানক ছিলো। শহীদদের স্মরণ করতে গিয়ে ৫১ বছর পরও অনেকেই আবেগে আপ্লুত হন এবং নিরবে চোখের পানি ফেলেন।
পৃথিবীতে যতগুলো গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরের গণহত্যা সব থেকে ভয়ানক বলে দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। আনুমানিক চার ঘণ্টায় চুকনগরে ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিলো বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী। অথচ স্বাধীনতার ৫১বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি এই গণহত্যার। ৫১ বছর পর হলেও ১৯৭১ সালের জঘন্যতম জেনোসাইডের বিশ্ব স্বীকৃতির দাবিতে শুক্রবার (২০ মে) ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গণহত্যা দিবস পালন করেছে ‘আমরা একাত্তর’ ও চুকনগর গণহত্যা ৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদ এবং উদীচী যশোর জেলা সংসদ।
সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে চুকনগর গণহত্যা ৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদ, আমরা একাত্তর, উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযুদ্ধ কমান্ড, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন, চুকনগর কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। এসব কর্মসূচি থেকে চুকনগর গণহত্যার বিশ^ স্বীকৃতির দাবি জানানো হয়েছে।
এদিন বেলা ১১টায় চুকনগর ভদ্রা নদীতে লাখো পুষ্পপাঁপড়ি ছিটিয়ে স্মরণ করা হয় শহীদদের। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক আইজিপি ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ কো-অর্ডিনেটর সানাউল হক, ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ আসিফ রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা, প্রবীণ সাংবাদিক ও যশোর মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগারের প্রতষ্ঠিাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ, আমরা একাত্তর’র সংগঠক মাহাবুব জামান, প্রকৌশলী হিলাল উদ্দিন(হেলাল ফয়েজী) আজিজুল হক মনি প্রমুখ।
দ্বিতীয় পর্বে চুকনগর গণহত্যা ৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি এবিএম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বধ্যভূমি চত্বরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, দেরিতে হলেও একটি মহৎ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সারা বিশ্বে এমন গণহত্যার নজির দ্বিতীয়টি নেই। তাই অবশ্যই এই গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়া উচিত। এসময় তিনি আশ্বাস দেন বিষয়টি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করবেন এবং স্বীকৃতি আদায়ের জন্য যে সকল সংগঠন ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ লড়াই করছেন তাদের সাথে কথা বলে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
আমরা একাত্তরের সংগঠক মাহাবুব জামান বলেন, ১৯৭১ সালের জঞস্যতম জেনোসাইডের বিশ^ স্বীকৃতি চাই। ৫১ বছর পরে হলেও প্রকৃত ইতিহাসের প্রয়োজনে এই স্বীকৃতি আমাদেও দরকার।
এ সময় যশোর যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক কাজী বর্ণ উত্তম, উদীচী জেলা সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহবুবুর রহমান মজনুসহ মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভা শেষে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন করেন। পরে যশোর উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাতে কর্মসূচি শেষ হয়।
১৯৭১ সালের ২০ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হাজার হাজার শরণার্থীর উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। খুলনা থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে চুকনগর এলাকার পাতোখোলা বিলের চতুরপাশের্^ এক কিলোমিটার দূরত্ব নিয়ে এ হত্যাকা- ঘটে। সেদিন চুকনগর ভদ্রা নদীর পানি শহীদের রক্তে লাল হয়ে যায়। তৎকালীন সময়ে যারা লাশ অপসারণ করে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। অনেকের মতে ২০ হাজার মানুষ হত্যা করা হয়। ওই সকল শহীদের স্মরণে ২০০৬ সালে বধ্যভূমি তৈরি করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে বিশে^র সবচেয়ে বড় গণহত্যা এই চুকনগরেই সংঘটিত হয়।
শনিবার, ২১ মে ২০২২
নদীর ঢেউ আর লাল ফুলের পাঁপাড়ি একে অপরের সাথে মিশে অন্যরকম আবহ নেয় ভদ্রা নদী। এতে যেন একান্ন বছর আগের স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠে। নদীর ঘোলা পানি যেন রক্তের স্রোত। কিছুটা সময় স্তব্ধ হয়ে যান ভদ্রা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা শত শত মানুষ। এত মানুষের ভিড়েও নিস্তব্ধতা বলে দেয় ১৯৭১ সালের ২০ মে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা কতটা ভয়ানক ছিলো। শহীদদের স্মরণ করতে গিয়ে ৫১ বছর পরও অনেকেই আবেগে আপ্লুত হন এবং নিরবে চোখের পানি ফেলেন।
পৃথিবীতে যতগুলো গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরের গণহত্যা সব থেকে ভয়ানক বলে দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। আনুমানিক চার ঘণ্টায় চুকনগরে ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিলো বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী। অথচ স্বাধীনতার ৫১বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি এই গণহত্যার। ৫১ বছর পর হলেও ১৯৭১ সালের জঘন্যতম জেনোসাইডের বিশ্ব স্বীকৃতির দাবিতে শুক্রবার (২০ মে) ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গণহত্যা দিবস পালন করেছে ‘আমরা একাত্তর’ ও চুকনগর গণহত্যা ৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদ এবং উদীচী যশোর জেলা সংসদ।
সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে চুকনগর গণহত্যা ৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদ, আমরা একাত্তর, উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযুদ্ধ কমান্ড, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন, চুকনগর কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। এসব কর্মসূচি থেকে চুকনগর গণহত্যার বিশ^ স্বীকৃতির দাবি জানানো হয়েছে।
এদিন বেলা ১১টায় চুকনগর ভদ্রা নদীতে লাখো পুষ্পপাঁপড়ি ছিটিয়ে স্মরণ করা হয় শহীদদের। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক আইজিপি ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ কো-অর্ডিনেটর সানাউল হক, ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ আসিফ রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা, প্রবীণ সাংবাদিক ও যশোর মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগারের প্রতষ্ঠিাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ, আমরা একাত্তর’র সংগঠক মাহাবুব জামান, প্রকৌশলী হিলাল উদ্দিন(হেলাল ফয়েজী) আজিজুল হক মনি প্রমুখ।
দ্বিতীয় পর্বে চুকনগর গণহত্যা ৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি এবিএম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বধ্যভূমি চত্বরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, দেরিতে হলেও একটি মহৎ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সারা বিশ্বে এমন গণহত্যার নজির দ্বিতীয়টি নেই। তাই অবশ্যই এই গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়া উচিত। এসময় তিনি আশ্বাস দেন বিষয়টি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করবেন এবং স্বীকৃতি আদায়ের জন্য যে সকল সংগঠন ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ লড়াই করছেন তাদের সাথে কথা বলে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
আমরা একাত্তরের সংগঠক মাহাবুব জামান বলেন, ১৯৭১ সালের জঞস্যতম জেনোসাইডের বিশ^ স্বীকৃতি চাই। ৫১ বছর পরে হলেও প্রকৃত ইতিহাসের প্রয়োজনে এই স্বীকৃতি আমাদেও দরকার।
এ সময় যশোর যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক কাজী বর্ণ উত্তম, উদীচী জেলা সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহবুবুর রহমান মজনুসহ মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভা শেষে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন করেন। পরে যশোর উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাতে কর্মসূচি শেষ হয়।
১৯৭১ সালের ২০ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হাজার হাজার শরণার্থীর উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। খুলনা থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে চুকনগর এলাকার পাতোখোলা বিলের চতুরপাশের্^ এক কিলোমিটার দূরত্ব নিয়ে এ হত্যাকা- ঘটে। সেদিন চুকনগর ভদ্রা নদীর পানি শহীদের রক্তে লাল হয়ে যায়। তৎকালীন সময়ে যারা লাশ অপসারণ করে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। অনেকের মতে ২০ হাজার মানুষ হত্যা করা হয়। ওই সকল শহীদের স্মরণে ২০০৬ সালে বধ্যভূমি তৈরি করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে বিশে^র সবচেয়ে বড় গণহত্যা এই চুকনগরেই সংঘটিত হয়।