সংকটে চাতালগুলো
ভরা মৌসুমেও মোকামে (আড়ত) ধানের আমদানি কম। মোকামগুলোতে চাহিদার বিপরীতে আমদানি কম থাকায় দাম কিছুটা বেশি। তবে ধানের দাম বেশিতে খুশি চাষিরা। কৃষি অফিস বলছে, ‘এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ধানের ফলন কিছুটা কম হয়েছে।’ এমন অবস্থায় ধান সংকটে রয়েছে চাতালগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে কৃষকের গোলায় ধান ওঠার সময়ে দাম কিছুটা কম থাকে। এরপর আস্তে আস্তে দাম বাড়তে থাকে। তবে এ বছর ধান ওঠার সময় দাম বেশি। তারপরও আমদানি কম। রাজশাহী অঞ্চলের তানোরে মিনিটেক ধানের দাম বেড়েছে গত কয়েকদিনের তুলনায় কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা।
ধান ব্যবসায়ী ইনজামামুল হক জানান, মঙ্গলবার (২৪ মে) তানোরের মোকামে ১৩৮৬ টাকা মণ দরে মিনিকেট ধান কেনা-বেচা হয়েছে। গত কয়েকদিনের তুলনায় ধানের দাম বেড়েছে। এ বছর চাষিরা তুলনামূলক ভালো দাম পাচ্ছেন। মোহনপুর অঞ্চলে ধানের চড়া দাম পেলেও লোকসানে মোহনপুরের বোরো চাষিরা। কারণ বোরো চাষে ব্যয় বেশি হয়েছে। তারপর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়নি। এছাড়া ধানকাটা শ্রমিক সংকটে দিতে হয়েছে অধিক মজুরি। এমন অবস্থায় কিছুটা খরচ বেড়েছে।
মোহনপুরের কেশরহাটে গত ২২ মে জিরা ধান বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১৩০০ টাকা থেকে ১৪৫০ টাকা দরে। যা বুধবার (২৫ মে) এ হাটে জিরা ধান বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা মণ দরে।
তিলাহারী গ্রামের কৃষক এনামুল হক জানান, শনিবার (২১ মে) প্রতি মণ জিরাশাইল ধান বিক্রি হয়েছে ১৩২০ টাকা দরে। তাতে আমাদের মতো কৃষকদের জন্য ভালো। কারণ কৃষকদের কিছুটা কষ্টের দাম উঠবে। এছাড়া প্রতি বিঘা জমিতে ধানের ফলন হয়েছে ১৬ মণ। যা গত বছর হয়েছিল ২৫ মণ। এছাড়া ঝড়-বৃষ্টির কারণে অতিরিক্ত শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হয়েছে চাষিদের। মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রহিমা খাতুন বলেন, এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বোরো ধানের ফলন কিছুটা কম হয়েছে। বাজারে ধানের ধাম ভালো আছে। এজন্য কৃষকরা কিছুটা লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।
রাজশাহীর দুর্গাপুর হাটে ধানের আমদানি কম, বেড়েছে দাম। ফলে বেচাকেনাও কমেছে। চালকল মালিকরা বলছেন, হাটে প্রতি মণ ধানে দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এতে ধান থেকে চাল তৈরিতেও খরচ বাড়ছে।
হাট সংশ্লিষ্টরা জানায়, দুর্গাপুর ১৯টি চালকলে ধানের জোগান দেয় এই মোকাম। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মোকামে ধান বেচাকেনা চলে। প্রতি হাটবারে প্রায় ৩০০ মণ ধান বিক্রি হয়। এর মধ্যে বিআর-২৮ জাতের ধান প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকায়, বিআর-২৯ জাতের ধান প্রতি মণ ১২১০ থেকে ১২২০ টাকা এবং বিআর-৩৯ ও বিআর-৪৯ জাতের ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১০৮০ থেকে ১১০০ টাকা দামে। প্রত্যেক জাতের ধানেই মণপ্রতি গড়ে ৪০-৫০ টাকা বেড়েছে। বছরের শুরুতে ধানের দাম চড়া হলেও মাঝে একটু কমে ছিল।
জানা গেছে, প্রতি অর্থবছরে উপজেলার চালকলগুলোর সঙ্গে চাল সংগ্রহের জন্য চুক্তি করে খাদ্য বিভাগ। এবারও উপজেলার ১২টি চালকলের সঙ্গে ৩২৫ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের চুক্তি হয়েছে। আর উপজেলার কৃষকের কাছ থেকে ৬৩৭ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রতি কেজি চাল নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। আর ধান কেনা হচ্ছে প্রতি কেজি ২৭ টাকায়। এ বছর ১ মে থেকে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। চলবে আগামী ৩০ আগস্ট পর্যন্ত।
উপজেলার চালকলের ধানের ক্রেতা সাত্তার আলী জানান, জানুয়ারি মাসের প্রথম থেকে ধানের দাম বেড়েছে। মোকামে ধানের আমদানি কম। এ কারণে কোন ধানে মণপ্রতি ৪০ টাকা আবার কোন ধানে ৫০ টাকা দাম বেড়েছে। নতুন মৌসুমের ধান হাটে আসার পর বাজারদর স্বাভাবিক হয়নি বলে জানান তিনি।
ভাই ভাই রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী এজাজুল হক জানান, হাট থেকে ধান কেনার পর মিলে নিয়ে চাল তৈরি পর্যন্ত যে খরচ হয়, সেই দামে চাল বিক্রি করা যায় না। এক মণ ধানে চাল হয় ২৫-২৬ কেজি। ৪০ টাকা দরে ২৬ কেজি চালের দাম ১০৪০ টাকা। এই দামে চাল দিতে গিয়ে মিল মালিকদের লাভ তো হচ্ছেই না, উল্টো লোকসানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ধানের বর্তমান বাজার দরে প্রতি কেজি চালে এক টাকা করে লোকসান গুনতে হবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) তৌফিকুর রহমান জানান, ‘এ বছর ফলন কিছুটা কম হয়েছে। ধানের দাম বেশি পেলে কৃষকরা চাষে আগ্রহী হবে।
সংকটে চাতালগুলো
শুক্রবার, ২৭ মে ২০২২
ভরা মৌসুমেও মোকামে (আড়ত) ধানের আমদানি কম। মোকামগুলোতে চাহিদার বিপরীতে আমদানি কম থাকায় দাম কিছুটা বেশি। তবে ধানের দাম বেশিতে খুশি চাষিরা। কৃষি অফিস বলছে, ‘এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ধানের ফলন কিছুটা কম হয়েছে।’ এমন অবস্থায় ধান সংকটে রয়েছে চাতালগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে কৃষকের গোলায় ধান ওঠার সময়ে দাম কিছুটা কম থাকে। এরপর আস্তে আস্তে দাম বাড়তে থাকে। তবে এ বছর ধান ওঠার সময় দাম বেশি। তারপরও আমদানি কম। রাজশাহী অঞ্চলের তানোরে মিনিটেক ধানের দাম বেড়েছে গত কয়েকদিনের তুলনায় কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা।
ধান ব্যবসায়ী ইনজামামুল হক জানান, মঙ্গলবার (২৪ মে) তানোরের মোকামে ১৩৮৬ টাকা মণ দরে মিনিকেট ধান কেনা-বেচা হয়েছে। গত কয়েকদিনের তুলনায় ধানের দাম বেড়েছে। এ বছর চাষিরা তুলনামূলক ভালো দাম পাচ্ছেন। মোহনপুর অঞ্চলে ধানের চড়া দাম পেলেও লোকসানে মোহনপুরের বোরো চাষিরা। কারণ বোরো চাষে ব্যয় বেশি হয়েছে। তারপর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়নি। এছাড়া ধানকাটা শ্রমিক সংকটে দিতে হয়েছে অধিক মজুরি। এমন অবস্থায় কিছুটা খরচ বেড়েছে।
মোহনপুরের কেশরহাটে গত ২২ মে জিরা ধান বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১৩০০ টাকা থেকে ১৪৫০ টাকা দরে। যা বুধবার (২৫ মে) এ হাটে জিরা ধান বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা মণ দরে।
তিলাহারী গ্রামের কৃষক এনামুল হক জানান, শনিবার (২১ মে) প্রতি মণ জিরাশাইল ধান বিক্রি হয়েছে ১৩২০ টাকা দরে। তাতে আমাদের মতো কৃষকদের জন্য ভালো। কারণ কৃষকদের কিছুটা কষ্টের দাম উঠবে। এছাড়া প্রতি বিঘা জমিতে ধানের ফলন হয়েছে ১৬ মণ। যা গত বছর হয়েছিল ২৫ মণ। এছাড়া ঝড়-বৃষ্টির কারণে অতিরিক্ত শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হয়েছে চাষিদের। মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রহিমা খাতুন বলেন, এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বোরো ধানের ফলন কিছুটা কম হয়েছে। বাজারে ধানের ধাম ভালো আছে। এজন্য কৃষকরা কিছুটা লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।
রাজশাহীর দুর্গাপুর হাটে ধানের আমদানি কম, বেড়েছে দাম। ফলে বেচাকেনাও কমেছে। চালকল মালিকরা বলছেন, হাটে প্রতি মণ ধানে দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এতে ধান থেকে চাল তৈরিতেও খরচ বাড়ছে।
হাট সংশ্লিষ্টরা জানায়, দুর্গাপুর ১৯টি চালকলে ধানের জোগান দেয় এই মোকাম। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মোকামে ধান বেচাকেনা চলে। প্রতি হাটবারে প্রায় ৩০০ মণ ধান বিক্রি হয়। এর মধ্যে বিআর-২৮ জাতের ধান প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকায়, বিআর-২৯ জাতের ধান প্রতি মণ ১২১০ থেকে ১২২০ টাকা এবং বিআর-৩৯ ও বিআর-৪৯ জাতের ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১০৮০ থেকে ১১০০ টাকা দামে। প্রত্যেক জাতের ধানেই মণপ্রতি গড়ে ৪০-৫০ টাকা বেড়েছে। বছরের শুরুতে ধানের দাম চড়া হলেও মাঝে একটু কমে ছিল।
জানা গেছে, প্রতি অর্থবছরে উপজেলার চালকলগুলোর সঙ্গে চাল সংগ্রহের জন্য চুক্তি করে খাদ্য বিভাগ। এবারও উপজেলার ১২টি চালকলের সঙ্গে ৩২৫ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের চুক্তি হয়েছে। আর উপজেলার কৃষকের কাছ থেকে ৬৩৭ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রতি কেজি চাল নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। আর ধান কেনা হচ্ছে প্রতি কেজি ২৭ টাকায়। এ বছর ১ মে থেকে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। চলবে আগামী ৩০ আগস্ট পর্যন্ত।
উপজেলার চালকলের ধানের ক্রেতা সাত্তার আলী জানান, জানুয়ারি মাসের প্রথম থেকে ধানের দাম বেড়েছে। মোকামে ধানের আমদানি কম। এ কারণে কোন ধানে মণপ্রতি ৪০ টাকা আবার কোন ধানে ৫০ টাকা দাম বেড়েছে। নতুন মৌসুমের ধান হাটে আসার পর বাজারদর স্বাভাবিক হয়নি বলে জানান তিনি।
ভাই ভাই রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী এজাজুল হক জানান, হাট থেকে ধান কেনার পর মিলে নিয়ে চাল তৈরি পর্যন্ত যে খরচ হয়, সেই দামে চাল বিক্রি করা যায় না। এক মণ ধানে চাল হয় ২৫-২৬ কেজি। ৪০ টাকা দরে ২৬ কেজি চালের দাম ১০৪০ টাকা। এই দামে চাল দিতে গিয়ে মিল মালিকদের লাভ তো হচ্ছেই না, উল্টো লোকসানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ধানের বর্তমান বাজার দরে প্রতি কেজি চালে এক টাকা করে লোকসান গুনতে হবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) তৌফিকুর রহমান জানান, ‘এ বছর ফলন কিছুটা কম হয়েছে। ধানের দাম বেশি পেলে কৃষকরা চাষে আগ্রহী হবে।