alt

সারাদেশ

রোহিঙ্গা শিবিরে ঘরে ঘরে বাড়ছে চর্মরোগ

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার: : বুধবার, ২৯ জুন ২০২২

https://sangbad.net.bd/images/2022/June/29Jun22/news/%E0%A6%9A%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97.jpg

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে ঘরে ঘরে চর্মরোগ বাসা বেঁধেছে। গত এক বছর ধরে আক্রান্ত শিশুসহ অন্তত লক্ষাধিক মানুষ। মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ ও শিশু সবাই এ রোগে আক্রান্ত। আক্রান্তদের বেশিরভাগ হতদরিদ্র হওয়ায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এনিয়ে ক্যাম্পজুড়ে অজানা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

এছাড়া এ চর্মরোগে আক্রান্তদের শরীরে ঘা হওয়ায় কেউই তাদের সঙ্গে মিশছে না। আক্রান্ত পরিবারের ছেলেমেয়ের পাশে দোকানে, মসজিদে ও শিক্ষা প্রতিষ্টানে কেউ বসে না। এমনি এক মানবেতর জীবন-যাপন করছে তারা।

এদিকে আক্রান্তদের চিকিৎসার্থে এগিয়ে এসেছে বেসরকারি সাহায্য সংস্থা মেডিসিন সেন্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) কমিউনিকেশন। তবে তা অপ্রতুল। ক্যাম্প থেকে পাশের গ্রামগুলোতে এ চর্মরোগ এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লেও বিপদজ্জনক রোগ হিসেবে মানতে নারাজ কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান।

সরেজমিন দেখা যায়, হাকিমপাড়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা ওসমান, মোহাম্মদ ফোরকান, আয়েশা বিবি, নুরুল আমিনসহ বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে। তারা জানান, ক্যাম্পে এমন কোনো পরিবার পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে যে পরিবার এই রোগে আক্রান্ত নয়। পরিবারের সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। ওষুধ খেলে কিছুদিন ভালো থাকে, এরপর আবারও শুরু হয় চুলকানি।

ক্যাম্পগুলোতে, ২০ জন পর্যন্ত লোক একটি টয়লেট ভাগ করে। সেখানে তারা একে অপরের সাবান ব্যবহার করে থাকে। তাছাড়া একটি টিউবওয়েল থেকে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ জন একত্রে খাবার পানি সংগ্রহ করে। এমন ঘেঁষাঘেঁষি করে বসবাসের ফলে এই রোগ দ্রুত ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ছে বলে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

১৪ নাম্বার ক্যাম্পের এ ব্লকের বাসিন্দা রহমত আলী জানান, তার তিন বছরের ছেলে মোতালেব। গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে এক ধরণের চর্মরোগে আক্রান্ত। চুলকানির যন্ত্রণার মধ্যদিয়ে পার হয় তার পুরো সময়। রহমত আলীর দাবী, শুধু মোতালেব নয়, তার পরিবারের ৭ সদস্যের মধ্যে আরও ৪ জন এ রোগে আক্রান্ত।

রোহিঙ্গা ব্লক নেতা জুবায়ের জানান, মানুষের বসবাসের পাশাপাশি অপর্যাপ্ত পানি এবং স্যানিটেশনের কারণে ক্যাম্পে এ রোগের প্রার্দুভাব বাড়ছে।

তবে এটিকে স্ক্যাবিস রোগ বলে নিশ্চিত করেছেন ক্যাম্পের চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ডা. কামার উদ্দিন। তিনি জানান, সাধারণত বিছানা ভাগাভাগি ও একই কাপড় মানুষ ব্যবহার করলে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগের প্রধান উপসর্গ চুলকানি।

https://sangbad.net.bd/images/2022/June/29Jun22/news/%E0%A6%9A%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97%20%E0%A7%A8.jpg

চুলকানির কারণে ক্ষত হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসা না পেলে কিডনি পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে এতে। তাই দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

রোহিঙ্গা নারী রোকেয়া বেগম (২৪) এর দেড় বছরের শিশুও চুলকানির এই রোগে আক্রান্ত। তিনি জানান, চুলকানির কারণে তার সন্তান খাবার খেতে পারে না, ঘুমাতে পারে না। সারাক্ষণ কেঁদে আর কেঁদে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়া এই রোগের নাম স্ক্যাবিস। স্ক্যাবিস এক ধরনের ছোঁয়াচে চর্মরোগ, সাধারণ লোক যাকে খোসপাঁচড়া বলে থাকেন। ত্বকে বাসা বাঁধে এমন এক ধরনের কীটের কারণে এটি হয়ে থাকে। এটি ত্বকের মধ্যে বাসা বাঁধে এবং এবং ডিম পাড়ে।

ক্যাম্পে অবস্থিত এমএসএফের একটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশ রোগী স্ক্যাবিসে আক্রান্ত। এমএসএফের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র গত ১৪ মার্চ থেকে ১৪ এবং ১৫ ক্যাম্পে এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ৩৬ হাজার স্ক্যাবিস আক্রান্ত রোহিঙ্গা।

এছাড়াও অন্যান্য ক্যাম্পের হেলথ সেন্টারগুলোতেও কয়েক হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে এমএসএফ। এরমধ্যে শিশু ও নারীর সংখ্যা বেশি।

স্ক্যাবিসের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে এমএসএফ এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায় , স্ক্যাবিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা গত তিন বছরের মধ্যে এবছর সবচেয়ে বেশি দেখছে সংস্থাটি। ২০১৯ এবং ২০২০ সালে গড়ে ৪৩ হাজার চর্মরোগের রোগীর চিকিৎসা করেছে সংস্থাটি।

২০২১ সালে চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৭৩ হাজারে পৌঁছে যায়। চলতি বছরের ১৪ মার্চ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত স্ক্যাবিস সংক্রমণ গণনা শুরু করে। এই সময়ে তারা হাকিমপাড়া ও জামতলী হেলথ সেন্টারে ৩৬ হাজার স্ক্যাবিস রোগীর চিকিৎসা করেছে।

এছাড়াও ক্যাম্প ৮ ডব্লিউ এবং গোয়ালমারা হেলথ সেন্টারে ৪ হাজার ২০০ জন স্ক্যাবিস রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে। পাশাপাশি কুতুপালং, বালুখালী এবং উচিপ্রাং এ আরও অনেক স্ক্যাবিস রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে এমএসএফ।

মেডিসিন সেন্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) এর মেডিকেল অ্যাক্টিভিটি ম্যানেজার ডা. কামার উদ্দিন জানান, চলতি বছরের শুরুর দিকে স্ক্যাবিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকন্দ্রের মধ্যে একটি অস্থায়ী স্ক্যাবিস ট্রিটমেন্ট সেন্টার চালু করেছে। যেখানে আক্রান্তদের আলাদা করে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।

স্ক্যাবিস পরিস্থিতি দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে দাবী এই জরুরী মানবিক সহায়তা প্রদানকারী চিকিৎসা সংস্থাটির।

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে মিয়ানমারে নির্যাতিত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বসবাস করে। আশ্রয় শিবিরের ছোট্টো ঘরে গাদাগাদি করে থাকতে হয় প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারকে।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিকটতম এলাকার ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন জানান, শুধু রোহিঙ্গা নয়, ক্যাম্পের আশপাশের স্থানীয়রাও স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ উদ্বীগ্ন। এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি দাবী জানান।

কক্সবাজারে সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলছেন, স্ক্যাবিস এখনও স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। এটি নিয়ে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা তাকে এখন পর্যন্ত বিষয়টি মহামারী পর্যায়ের যাওয়ার ব্যাপারে কোনো ধরনের তথ্য দেননি।

উল্লেখ্য, ২০২০ এবং ২০২১ সালের দিকে চর্মরোগের উপস্থিতি বেশ দেখা গেলেও চলতি বছর স্ক্যাবিস জাতীয় চর্মরোগ হঠাৎ বেড়ে গেছে। এখন স্বাস্থ্যবিভাগ সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে স্ক্যাবিস মহামারী আকার ধারণ করলে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

ছবি

কক্সবাজারে জলকেলি উৎসবের সমাপনীতে আলোকিত জীবনের প্রত্যাশা

ছবি

মায়ানমারের বিজিপির আরও ২৪ সদস্য বাংলাদেশে

ছবি

রাজশাহীতে মোটরসাইকেলে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ৩

ছবি

ইউএসএআইডি এবং সিমিট প্রতিনিধি দলের বারি পরিদর্শন

ছবি

পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনে নারীর ঝুলন্ত মরদেহ

ছবি

‘আনন্দে’ শুরুর পর সড়কের ঈদযাত্রা কেন ‘বিষাদে’

ছবি

ঘটনা চাপা দিতে ১৫০ বস্তা সিমেন্ট সরিয়ে ফেলার অভিযোগ

মীরসরাইয়ে শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, ঘরের চাল ছিদ্র হয়ে গেছে

ছবি

মাধবপুরে বিরল প্রজাতির লজ্জাবতী বানর উদ্ধার

ছবি

টঙ্গীতে আগুনে পুড়ল ১২টি খাদ্য গুদাম

ছবি

জলকেলি উৎসবে মুখরিত কক্সবাজরের রাখাইন পল্লী

শেরপুরে বিনামূল্যে সার বীজ বিতরণ উদ্বোধন

কেশবপুরে সকাল-সন্ধ্যা বাজারের দখল নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি উচ্ছেদ আতঙ্কে অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী

ছবি

ভালুকায় বোরো ধানে চিটা কৃষকের মাথায় হাত

ছবি

ভালুকায় বোরো ধানে চিটা কৃষকের মাথায় হাত

ছবি

গোবিন্দগঞ্জে সরকারি রাস্তার ১২০টি গাছ কর্তনের অভিযোগ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে

পুঠিয়ায় শাশুড়িকে হত্যা করেন পুত্রবধূ

ছবি

মির্জাগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু

ছবি

নড়াইলের শ্রীনগর গ্রামে ভ্যানচালককে পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন

ছবি

প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে বাগান, ঝরছে আম, শঙ্কায় চাষীরা

ছবি

প্রেমিকার ওপর অভিমান প্রেমিকের আত্মহত্যা

ছবি

শ্যামনগর পদ্মপুকুরের প্রধান সড়কের একাংশ যেন বালুর স্তুপে পরিণত

আমার চেয়ে খারাপ লোক এ জেলায় নাই : তাহেরপুত্র বিপ্লব

ছবি

কক্সবাজারে রিসোর্টে পযটক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার

ছবি

ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা

ছবি

সুনামগঞ্জে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২

ছবি

টোলপ্লাজায় ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ১৪

ছবি

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন, বেশিরভাগ অঞ্চলে বইছে তাপপ্রবাহ

কোম্পানীগঞ্জে পর্যটকের সঙ্গে এএসপির মারামারি

ছবি

গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ গোপালগঞ্জে গ্রামীণ ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

শার্শায় সাংবাদিকের উপর হামলা

ছবি

চুয়াডাঙ্গায় রেললাইনের পাশ থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

সালথায় স্বামীর উপর অভিমান করে গৃহবধূর আত্মহত্যা

ছবি

শিবগঞ্জে পরিবারের উপর অভিমান করে কিশোরের আত্মহত্যা

ছবি

ভালুকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ছাত্রলীগ নেতা নিহত

ছবি

নরসিংদীতে বজ্রপাতে নিহত ১, আহত ২

tab

সারাদেশ

রোহিঙ্গা শিবিরে ঘরে ঘরে বাড়ছে চর্মরোগ

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার:

বুধবার, ২৯ জুন ২০২২

https://sangbad.net.bd/images/2022/June/29Jun22/news/%E0%A6%9A%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97.jpg

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে ঘরে ঘরে চর্মরোগ বাসা বেঁধেছে। গত এক বছর ধরে আক্রান্ত শিশুসহ অন্তত লক্ষাধিক মানুষ। মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ ও শিশু সবাই এ রোগে আক্রান্ত। আক্রান্তদের বেশিরভাগ হতদরিদ্র হওয়ায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এনিয়ে ক্যাম্পজুড়ে অজানা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

এছাড়া এ চর্মরোগে আক্রান্তদের শরীরে ঘা হওয়ায় কেউই তাদের সঙ্গে মিশছে না। আক্রান্ত পরিবারের ছেলেমেয়ের পাশে দোকানে, মসজিদে ও শিক্ষা প্রতিষ্টানে কেউ বসে না। এমনি এক মানবেতর জীবন-যাপন করছে তারা।

এদিকে আক্রান্তদের চিকিৎসার্থে এগিয়ে এসেছে বেসরকারি সাহায্য সংস্থা মেডিসিন সেন্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) কমিউনিকেশন। তবে তা অপ্রতুল। ক্যাম্প থেকে পাশের গ্রামগুলোতে এ চর্মরোগ এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লেও বিপদজ্জনক রোগ হিসেবে মানতে নারাজ কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান।

সরেজমিন দেখা যায়, হাকিমপাড়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা ওসমান, মোহাম্মদ ফোরকান, আয়েশা বিবি, নুরুল আমিনসহ বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে। তারা জানান, ক্যাম্পে এমন কোনো পরিবার পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে যে পরিবার এই রোগে আক্রান্ত নয়। পরিবারের সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। ওষুধ খেলে কিছুদিন ভালো থাকে, এরপর আবারও শুরু হয় চুলকানি।

ক্যাম্পগুলোতে, ২০ জন পর্যন্ত লোক একটি টয়লেট ভাগ করে। সেখানে তারা একে অপরের সাবান ব্যবহার করে থাকে। তাছাড়া একটি টিউবওয়েল থেকে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ জন একত্রে খাবার পানি সংগ্রহ করে। এমন ঘেঁষাঘেঁষি করে বসবাসের ফলে এই রোগ দ্রুত ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ছে বলে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

১৪ নাম্বার ক্যাম্পের এ ব্লকের বাসিন্দা রহমত আলী জানান, তার তিন বছরের ছেলে মোতালেব। গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে এক ধরণের চর্মরোগে আক্রান্ত। চুলকানির যন্ত্রণার মধ্যদিয়ে পার হয় তার পুরো সময়। রহমত আলীর দাবী, শুধু মোতালেব নয়, তার পরিবারের ৭ সদস্যের মধ্যে আরও ৪ জন এ রোগে আক্রান্ত।

রোহিঙ্গা ব্লক নেতা জুবায়ের জানান, মানুষের বসবাসের পাশাপাশি অপর্যাপ্ত পানি এবং স্যানিটেশনের কারণে ক্যাম্পে এ রোগের প্রার্দুভাব বাড়ছে।

তবে এটিকে স্ক্যাবিস রোগ বলে নিশ্চিত করেছেন ক্যাম্পের চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ডা. কামার উদ্দিন। তিনি জানান, সাধারণত বিছানা ভাগাভাগি ও একই কাপড় মানুষ ব্যবহার করলে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগের প্রধান উপসর্গ চুলকানি।

https://sangbad.net.bd/images/2022/June/29Jun22/news/%E0%A6%9A%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97%20%E0%A7%A8.jpg

চুলকানির কারণে ক্ষত হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসা না পেলে কিডনি পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে এতে। তাই দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

রোহিঙ্গা নারী রোকেয়া বেগম (২৪) এর দেড় বছরের শিশুও চুলকানির এই রোগে আক্রান্ত। তিনি জানান, চুলকানির কারণে তার সন্তান খাবার খেতে পারে না, ঘুমাতে পারে না। সারাক্ষণ কেঁদে আর কেঁদে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়া এই রোগের নাম স্ক্যাবিস। স্ক্যাবিস এক ধরনের ছোঁয়াচে চর্মরোগ, সাধারণ লোক যাকে খোসপাঁচড়া বলে থাকেন। ত্বকে বাসা বাঁধে এমন এক ধরনের কীটের কারণে এটি হয়ে থাকে। এটি ত্বকের মধ্যে বাসা বাঁধে এবং এবং ডিম পাড়ে।

ক্যাম্পে অবস্থিত এমএসএফের একটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশ রোগী স্ক্যাবিসে আক্রান্ত। এমএসএফের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র গত ১৪ মার্চ থেকে ১৪ এবং ১৫ ক্যাম্পে এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ৩৬ হাজার স্ক্যাবিস আক্রান্ত রোহিঙ্গা।

এছাড়াও অন্যান্য ক্যাম্পের হেলথ সেন্টারগুলোতেও কয়েক হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে এমএসএফ। এরমধ্যে শিশু ও নারীর সংখ্যা বেশি।

স্ক্যাবিসের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে এমএসএফ এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায় , স্ক্যাবিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা গত তিন বছরের মধ্যে এবছর সবচেয়ে বেশি দেখছে সংস্থাটি। ২০১৯ এবং ২০২০ সালে গড়ে ৪৩ হাজার চর্মরোগের রোগীর চিকিৎসা করেছে সংস্থাটি।

২০২১ সালে চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৭৩ হাজারে পৌঁছে যায়। চলতি বছরের ১৪ মার্চ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত স্ক্যাবিস সংক্রমণ গণনা শুরু করে। এই সময়ে তারা হাকিমপাড়া ও জামতলী হেলথ সেন্টারে ৩৬ হাজার স্ক্যাবিস রোগীর চিকিৎসা করেছে।

এছাড়াও ক্যাম্প ৮ ডব্লিউ এবং গোয়ালমারা হেলথ সেন্টারে ৪ হাজার ২০০ জন স্ক্যাবিস রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে। পাশাপাশি কুতুপালং, বালুখালী এবং উচিপ্রাং এ আরও অনেক স্ক্যাবিস রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে এমএসএফ।

মেডিসিন সেন্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) এর মেডিকেল অ্যাক্টিভিটি ম্যানেজার ডা. কামার উদ্দিন জানান, চলতি বছরের শুরুর দিকে স্ক্যাবিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকন্দ্রের মধ্যে একটি অস্থায়ী স্ক্যাবিস ট্রিটমেন্ট সেন্টার চালু করেছে। যেখানে আক্রান্তদের আলাদা করে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।

স্ক্যাবিস পরিস্থিতি দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে দাবী এই জরুরী মানবিক সহায়তা প্রদানকারী চিকিৎসা সংস্থাটির।

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে মিয়ানমারে নির্যাতিত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বসবাস করে। আশ্রয় শিবিরের ছোট্টো ঘরে গাদাগাদি করে থাকতে হয় প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারকে।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিকটতম এলাকার ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন জানান, শুধু রোহিঙ্গা নয়, ক্যাম্পের আশপাশের স্থানীয়রাও স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ উদ্বীগ্ন। এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি দাবী জানান।

কক্সবাজারে সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলছেন, স্ক্যাবিস এখনও স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। এটি নিয়ে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা তাকে এখন পর্যন্ত বিষয়টি মহামারী পর্যায়ের যাওয়ার ব্যাপারে কোনো ধরনের তথ্য দেননি।

উল্লেখ্য, ২০২০ এবং ২০২১ সালের দিকে চর্মরোগের উপস্থিতি বেশ দেখা গেলেও চলতি বছর স্ক্যাবিস জাতীয় চর্মরোগ হঠাৎ বেড়ে গেছে। এখন স্বাস্থ্যবিভাগ সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে স্ক্যাবিস মহামারী আকার ধারণ করলে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

back to top