মুন্সিগঞ্জে বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিতে নয়, ইটের আঘাতেই যুবদল কর্মী শাওনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল মামুন।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
পুলিশ সুপার বলেন, যুবদল কর্মী শহীদুল ইসলাম শাওন মাথায় আঘাতের কারণে মারা গেছেন। ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টেও গান শুটের কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সুপার বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে পুরাতন ফেরিঘাটে সদর উপজেলা বিএনপি ও মুন্সীগঞ্জ পৌর বিএনপি নেতাকর্মীরা অবৈধবাবে অনির্ধারিত সমাবেশ ও ঝটিকা মিছিল বের করে। এ সময় তাদের অন্তর্কোন্দলের জের ধরে নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। তারা শ্রমিক লীগের অফিস ভাঙচুর করলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলে বিএনপি নেতাকর্মীরা মারমুখী হয়ে উঠে। এ সময় চারদিক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। ইটের আঘাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল, সদর থানার ওসিসহ অন্তত ১৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শর্টগানের রাবার কার্তুজ ও গ্যাসশেল নিক্ষেপ করে। বিএনপি নেতাকর্মীরা ৩-৪টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ২৪ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, ওই দিনের ঘটনায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করাসহ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পুলিশ ও পাবলিক বাদী হয়ে পৃথক দু’টি মামলা রুজু করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন দাবি করেন, যুবদলের কর্মী শাওন বিএনপির অপর এক কর্মীর পেছন থেকে ছুড়ে মারা ইটের আঘাতে আহত হন। গুরুতর অবস্থায় স্বজনরা তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ২২ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত ৯টার দিকে মারা যান।
পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে নিহত শাওনের লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগে হস্তান্তর করে। ফরেনসিক বিভাগ নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে চূড়ান্ত মতামত প্রদানের ভিসেরা পরীক্ষা করে। তাতে মাথায় আঘাত জনিত কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে মতামত প্রদান করেছে। নিহত শাওনের মাথার পেছনে থেতলানো আঘাত রয়েছে বলে তাতে উল্লেখ রয়েছে। গান শুটের কোনো আঘাত নেই।
এ বিষয়ে নিহত শাওনের মা লিপি আক্তার বলেন, ‘যারা বলছে, আমার ছেলে ইটের আঘাতে মারা গেছে, তারা ওই ভিডিওটি দেখুক, যেখানে গুলির শব্দ হলো, ধোঁয়াও বের হলো, তখন আমার ছেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। হাসপাতালের রিপোর্টে বলা হচ্ছে, গুলির আঘাতে শাওন মারা গেছে। অথচ তারা সেই রিপোর্টকে মিথ্যা বলছে।’
শাওনের মা আরও বলেন, ‘আমার একটা ছেলে গেছে। আমার আরও তিনটা ছেলে আছে। আমার স্বামী আছে। আমি তাদের হারাতে চাই না। আমি নিরাপত্তা চাই। কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যারা হুমকি দিচ্ছে, আমরা তাদের চিনি না। যারা হুমকি দিচ্ছে, তারা বলছে, আমার ছেলে পুলিশের গুলিতে মরে নাই। আমার ছেলে ইটের আঘাতে মারা গেছে। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা পাল্টে ইটের আঘাতে মারা গেছে—এমন মামলা দিতে বলছে। আমাদের ভয় দেখানো হচ্ছে।’
এর আগে শাওনের মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পরে তাতে দেখা যায়, পেছন থেকে কিছু আঘাতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন যুবদলকর্মী শহিদুল ইসলাম শাওন। মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, সংঘর্ষের সময় অগ্রভাগ থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছেন নিহত যুবদল নেতা শাওন।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, শাওনের সঙ্গে ২৫ থেকে ৩০ জন নেতাকর্মী ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছে। একপর্যায়ে শাওন ইট নিক্ষেপ করতে করতে সামনের দিকে চলে গেলে হঠাৎ পেছন থেকে ছোড়া কিছু একটায় আঘাতপ্রাপ্ত হয় সে। শাওন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তবে বিএনপি ও পরিবারের দাবি, পুলিশের ছোড়া গুলি মাথায় লাগে শাওনের। পরে আহত অবস্থায় তাকে আনা হয় ঢাকা মেডিকেলে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মারা যান তিনি।
উল্লেখ্য, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও দলীয় নেতা-কর্মী হত্যার প্রতিবাদে মুন্সিগঞ্জ শহরের পাশে মুক্তারপুরে ২১ সেপ্টেম্বর বেলা তিনটার দিকে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে জেলা বিএনপি। সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে শাওন ও বিএনপির সমর্থক জাহাঙ্গীর মাদবর (৩৮) গুরুতর আহত হন। পরের দিন রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাওনের মৃত্যু হয়।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ও শ্রমিক লীগের দুই মামলায় ৩৬৫ জনের নাম উল্লেখসহ ১ হাজার ৩৬৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুটি মামলায় ২৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
মুন্সিগঞ্জে বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিতে নয়, ইটের আঘাতেই যুবদল কর্মী শাওনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল মামুন।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
পুলিশ সুপার বলেন, যুবদল কর্মী শহীদুল ইসলাম শাওন মাথায় আঘাতের কারণে মারা গেছেন। ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টেও গান শুটের কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সুপার বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে পুরাতন ফেরিঘাটে সদর উপজেলা বিএনপি ও মুন্সীগঞ্জ পৌর বিএনপি নেতাকর্মীরা অবৈধবাবে অনির্ধারিত সমাবেশ ও ঝটিকা মিছিল বের করে। এ সময় তাদের অন্তর্কোন্দলের জের ধরে নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। তারা শ্রমিক লীগের অফিস ভাঙচুর করলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলে বিএনপি নেতাকর্মীরা মারমুখী হয়ে উঠে। এ সময় চারদিক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। ইটের আঘাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল, সদর থানার ওসিসহ অন্তত ১৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শর্টগানের রাবার কার্তুজ ও গ্যাসশেল নিক্ষেপ করে। বিএনপি নেতাকর্মীরা ৩-৪টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ২৪ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, ওই দিনের ঘটনায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করাসহ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পুলিশ ও পাবলিক বাদী হয়ে পৃথক দু’টি মামলা রুজু করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন দাবি করেন, যুবদলের কর্মী শাওন বিএনপির অপর এক কর্মীর পেছন থেকে ছুড়ে মারা ইটের আঘাতে আহত হন। গুরুতর অবস্থায় স্বজনরা তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ২২ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত ৯টার দিকে মারা যান।
পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে নিহত শাওনের লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগে হস্তান্তর করে। ফরেনসিক বিভাগ নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে চূড়ান্ত মতামত প্রদানের ভিসেরা পরীক্ষা করে। তাতে মাথায় আঘাত জনিত কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে মতামত প্রদান করেছে। নিহত শাওনের মাথার পেছনে থেতলানো আঘাত রয়েছে বলে তাতে উল্লেখ রয়েছে। গান শুটের কোনো আঘাত নেই।
এ বিষয়ে নিহত শাওনের মা লিপি আক্তার বলেন, ‘যারা বলছে, আমার ছেলে ইটের আঘাতে মারা গেছে, তারা ওই ভিডিওটি দেখুক, যেখানে গুলির শব্দ হলো, ধোঁয়াও বের হলো, তখন আমার ছেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। হাসপাতালের রিপোর্টে বলা হচ্ছে, গুলির আঘাতে শাওন মারা গেছে। অথচ তারা সেই রিপোর্টকে মিথ্যা বলছে।’
শাওনের মা আরও বলেন, ‘আমার একটা ছেলে গেছে। আমার আরও তিনটা ছেলে আছে। আমার স্বামী আছে। আমি তাদের হারাতে চাই না। আমি নিরাপত্তা চাই। কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যারা হুমকি দিচ্ছে, আমরা তাদের চিনি না। যারা হুমকি দিচ্ছে, তারা বলছে, আমার ছেলে পুলিশের গুলিতে মরে নাই। আমার ছেলে ইটের আঘাতে মারা গেছে। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা পাল্টে ইটের আঘাতে মারা গেছে—এমন মামলা দিতে বলছে। আমাদের ভয় দেখানো হচ্ছে।’
এর আগে শাওনের মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পরে তাতে দেখা যায়, পেছন থেকে কিছু আঘাতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন যুবদলকর্মী শহিদুল ইসলাম শাওন। মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, সংঘর্ষের সময় অগ্রভাগ থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছেন নিহত যুবদল নেতা শাওন।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, শাওনের সঙ্গে ২৫ থেকে ৩০ জন নেতাকর্মী ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছে। একপর্যায়ে শাওন ইট নিক্ষেপ করতে করতে সামনের দিকে চলে গেলে হঠাৎ পেছন থেকে ছোড়া কিছু একটায় আঘাতপ্রাপ্ত হয় সে। শাওন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তবে বিএনপি ও পরিবারের দাবি, পুলিশের ছোড়া গুলি মাথায় লাগে শাওনের। পরে আহত অবস্থায় তাকে আনা হয় ঢাকা মেডিকেলে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মারা যান তিনি।
উল্লেখ্য, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও দলীয় নেতা-কর্মী হত্যার প্রতিবাদে মুন্সিগঞ্জ শহরের পাশে মুক্তারপুরে ২১ সেপ্টেম্বর বেলা তিনটার দিকে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে জেলা বিএনপি। সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে শাওন ও বিএনপির সমর্থক জাহাঙ্গীর মাদবর (৩৮) গুরুতর আহত হন। পরের দিন রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাওনের মৃত্যু হয়।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ও শ্রমিক লীগের দুই মামলায় ৩৬৫ জনের নাম উল্লেখসহ ১ হাজার ৩৬৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুটি মামলায় ২৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।