লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মতিরহাট মাছঘাট নদী ও সাগরের মাছ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য জেলার মধ্যে বিখ্যাত। মেঘনার নদীর পাড়ে অবস্থিত এখানকার মেঘনাবীচ পর্যটনের জন্যও বেশ পরিচিত। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মাছের ক্রেতাসহ ভ্রমণপিপাসু মানুষ ছুঁটে যান এ ঘাটে। কিন্তু সেই স্থানে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম তোরাবগঞ্জ-মতিরহাট সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে বেহাল অবস্থায়। খানাখন্দের কারণে স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় ক্রমেই ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে মাছঘাটটি। আগের মতো দেখা মিলছে না ভ্রমণপিপাসুদের। তাই এলাকাটি ঐতিহ্য ফেরাতে সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। জানা গেছে, নয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে অতিগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ সংস্কার না হওয়ায় কার্পেটিং ওঠে গেছে। সড়কটির বেশিরভাগ অংশে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। কোথাও কোথাও সড়কের উল্লেখযোগ্য অংশ ভেঙে নদীর সংযোগ খালে বিলীন হয়েছে। যে কারণে সড়কটি সরু হয়ে পড়েছে। এসবের কারণে এতে যান চলাচল করতে না পেরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পর্যটক ও মাছের ক্রেতাসহ সাধারণ যাত্রীদের। সড়কের দুরাবস্থার কারণে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। চলতে গিয়ে প্রতিদিনই নষ্ট হচ্ছে যানবাহনের যন্ত্রাংশ। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার তোরাবগঞ্জ, চরলরেন্স, চরমার্টিন ও চরকালকিনি ইউনিয়ন এ চারটি ইউনিয়নের অংশে তোরাবগঞ্জ-মতিরহাট সড়কটি নির্মিত। কৃষি ও মৎস্য নির্ভর এসব ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দার যাতায়াত করতে ব্যবহৃত হয় এটি। কিন্তু সড়কটির বেহাল দশার কারণে কৃষকদের উৎপাদিত ফসল ও জেলেদের আহরিত মাছ শহরে সরবরাহ করতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এতে বাধ্য হয়ে স্বল্পদামে স্থানীয়দের নিকট বিক্রি করে দিতে হয়। তাছাড়া মতিরহাট পর্যটন এলাকা হওয়ায় ঈদসহ বিভিন্ন মৌসুমে পর্যটক আসতো। কিন্তু সড়কের কারণে এখন পর্যটক তুলনামূলক অনেক কমে গেছে।
তাঁরা আরও জানান, চারটি ইউনিয়নে প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ধরনের ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। সড়কটি বেহালের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাঁদের। দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে সড়কটি সংস্কারের দাবিতে কয়েক মাস আগে স্থানীয় মতিরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। জামাল হোসেন নামে লক্ষ্মীপুর শহরের এক বাসিন্দা জানান, শুক্রবার ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে তিনি মতিরহাট মেঘনা নদীর পাড়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সড়কের বেহাল দশার কারণে খুবই দুর্ভোগে পড়েছিলেন। এমনটি জানলে তিনি সেখানে যেতেন না। আওলাদ হোসেন নামে অটোরিক্সার এক চালক বলেন, তোরাবগঞ্জ থেকে মতিরহাট যেতে আগে সময় লাগতো ১৫-২০ মিনিট। কিন্তু সড়ক খারাপ হওয়ায় এখন এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। গর্তে পড়ে প্রায়ই গাড়ীর যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মতিরহাট বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার জানান, মতিরহাট বাজারে দুই শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। পর্যটন এলাকা হওয়ায় এখানে মানুষের ভিড় থাকতো। পর্যটক থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙা হয়। কিন্তু সড়ক খারাপ হওয়ার কারণে এখন পর্যটক তেমন আসেন না। এতে বাজারের বেচা-কেনা কমে গেছে। মতিরহাট মাছঘাটের সভাপতি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মেহেদী হাসান লিটন জানান, চরকালকিনি ইউনিয়নে তিন হাজারেরও বেশি জেলে রয়েছে। তাছাড়া মতিরহাট ঘাটে কয়েক হাজার নৌকা মাছ নিয়ে আসে। এ মাছঘাট থেকে লক্ষ্মীপুর এবং ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ইলিশ মাছ সরবরাহ হয়।
তিনি বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুমে দৈনিক এ ঘাটে ২০০-৩০০ টন মাছ বিক্রি হয়। এ মাছ দেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী ও কুমিল্লাসহ ২০টি জেলায় সরবরাহ হয়। কিন্তু মতিরহাট-তোরাবগঞ্জ সড়কটি বেহালের কারণে মাছ ব্যবসায়ীরা আসতে চান না। এতে জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার মো. ছায়েফ উল্যাহ জানান, এ সড়ক দিয়ে দৈনিক চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ চলাচল করেন। সড়ক বেহালের কারণে পর্যটক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসীন্দারা চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন।
তিনি বলেন, বিষয়টি উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সভায় উত্থাপন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের কয়েকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কমলনগর উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল আনোয়ার জানান, সড়কটির প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার অংশ সংস্কারের জন্য টেন্ডার হয়েছে। শিগগিরই সংস্কারকাজ শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে অপর অংশের কাজ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মতিরহাট মাছঘাট নদী ও সাগরের মাছ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য জেলার মধ্যে বিখ্যাত। মেঘনার নদীর পাড়ে অবস্থিত এখানকার মেঘনাবীচ পর্যটনের জন্যও বেশ পরিচিত। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মাছের ক্রেতাসহ ভ্রমণপিপাসু মানুষ ছুঁটে যান এ ঘাটে। কিন্তু সেই স্থানে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম তোরাবগঞ্জ-মতিরহাট সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে বেহাল অবস্থায়। খানাখন্দের কারণে স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় ক্রমেই ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে মাছঘাটটি। আগের মতো দেখা মিলছে না ভ্রমণপিপাসুদের। তাই এলাকাটি ঐতিহ্য ফেরাতে সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। জানা গেছে, নয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে অতিগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ সংস্কার না হওয়ায় কার্পেটিং ওঠে গেছে। সড়কটির বেশিরভাগ অংশে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। কোথাও কোথাও সড়কের উল্লেখযোগ্য অংশ ভেঙে নদীর সংযোগ খালে বিলীন হয়েছে। যে কারণে সড়কটি সরু হয়ে পড়েছে। এসবের কারণে এতে যান চলাচল করতে না পেরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পর্যটক ও মাছের ক্রেতাসহ সাধারণ যাত্রীদের। সড়কের দুরাবস্থার কারণে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। চলতে গিয়ে প্রতিদিনই নষ্ট হচ্ছে যানবাহনের যন্ত্রাংশ। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার তোরাবগঞ্জ, চরলরেন্স, চরমার্টিন ও চরকালকিনি ইউনিয়ন এ চারটি ইউনিয়নের অংশে তোরাবগঞ্জ-মতিরহাট সড়কটি নির্মিত। কৃষি ও মৎস্য নির্ভর এসব ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দার যাতায়াত করতে ব্যবহৃত হয় এটি। কিন্তু সড়কটির বেহাল দশার কারণে কৃষকদের উৎপাদিত ফসল ও জেলেদের আহরিত মাছ শহরে সরবরাহ করতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এতে বাধ্য হয়ে স্বল্পদামে স্থানীয়দের নিকট বিক্রি করে দিতে হয়। তাছাড়া মতিরহাট পর্যটন এলাকা হওয়ায় ঈদসহ বিভিন্ন মৌসুমে পর্যটক আসতো। কিন্তু সড়কের কারণে এখন পর্যটক তুলনামূলক অনেক কমে গেছে।
তাঁরা আরও জানান, চারটি ইউনিয়নে প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ধরনের ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। সড়কটি বেহালের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাঁদের। দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে সড়কটি সংস্কারের দাবিতে কয়েক মাস আগে স্থানীয় মতিরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। জামাল হোসেন নামে লক্ষ্মীপুর শহরের এক বাসিন্দা জানান, শুক্রবার ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে তিনি মতিরহাট মেঘনা নদীর পাড়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সড়কের বেহাল দশার কারণে খুবই দুর্ভোগে পড়েছিলেন। এমনটি জানলে তিনি সেখানে যেতেন না। আওলাদ হোসেন নামে অটোরিক্সার এক চালক বলেন, তোরাবগঞ্জ থেকে মতিরহাট যেতে আগে সময় লাগতো ১৫-২০ মিনিট। কিন্তু সড়ক খারাপ হওয়ায় এখন এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। গর্তে পড়ে প্রায়ই গাড়ীর যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মতিরহাট বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার জানান, মতিরহাট বাজারে দুই শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। পর্যটন এলাকা হওয়ায় এখানে মানুষের ভিড় থাকতো। পর্যটক থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙা হয়। কিন্তু সড়ক খারাপ হওয়ার কারণে এখন পর্যটক তেমন আসেন না। এতে বাজারের বেচা-কেনা কমে গেছে। মতিরহাট মাছঘাটের সভাপতি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মেহেদী হাসান লিটন জানান, চরকালকিনি ইউনিয়নে তিন হাজারেরও বেশি জেলে রয়েছে। তাছাড়া মতিরহাট ঘাটে কয়েক হাজার নৌকা মাছ নিয়ে আসে। এ মাছঘাট থেকে লক্ষ্মীপুর এবং ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ইলিশ মাছ সরবরাহ হয়।
তিনি বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুমে দৈনিক এ ঘাটে ২০০-৩০০ টন মাছ বিক্রি হয়। এ মাছ দেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী ও কুমিল্লাসহ ২০টি জেলায় সরবরাহ হয়। কিন্তু মতিরহাট-তোরাবগঞ্জ সড়কটি বেহালের কারণে মাছ ব্যবসায়ীরা আসতে চান না। এতে জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার মো. ছায়েফ উল্যাহ জানান, এ সড়ক দিয়ে দৈনিক চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ চলাচল করেন। সড়ক বেহালের কারণে পর্যটক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসীন্দারা চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন।
তিনি বলেন, বিষয়টি উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সভায় উত্থাপন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের কয়েকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কমলনগর উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল আনোয়ার জানান, সড়কটির প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার অংশ সংস্কারের জন্য টেন্ডার হয়েছে। শিগগিরই সংস্কারকাজ শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে অপর অংশের কাজ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।