হেয় বাঁচার মতো লাইন কইরা দিছে : পেয়ারা বেগম
‘মোরা কল্পনাও করিনি যে ঘর পামু। এ ঘর মোগো ধারে রাজপ্রসাদের সমান। আগে মানুষের বাড়ি বাড়ি যেয়ে কতো যে তাক খাইছি। এহন মোরা কোটিপতি। তিনটা মাইয়া ও স্ত্রী লইয়া নতুন ঘরে আজকেই চইলা আইছি। এখন আহ্লাদে ডাইল ভাত খামু, চলমু...।’ গতকাল বুধবার বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার উত্তর পাড় প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের জমি ও ঘর পেয়ে সংবাদকে এমন অনুভূতিই প্রকাশ করেন উপকারভোগী মাহবুব হোসেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আগে মোগো জায়গা জমি কিচ্ছু ছিল না। বানারীপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতাম এখানে সেখানে। মোরা ঘর পাইয়া অনেক খুশি। আল্লাহ হ্যারো (প্রধানমন্ত্রী) ভাল রাখুক।’
গতকাল মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’ এর তৃতীয় ধাপের শেষ ও চতুর্থ ধাপে প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধনের পর বরিশালের বানারীপাড়া উত্তর পাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৪২টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের প্রত্যেককে বিনামূল্যে দুইশতক জমিসহ আধাপাকাঘর হস্তান্তর করা হয়।
গণভবন থেকে গাজীপুরের শ্রীপুর, বরিশালের বানারীপাড়া ও সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় ৩৯ হাজার ৩৬৫ পরিবারকে ভূমি ও ঘর দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গণভবনসহ বিভিন্ন প্রান্তে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, রাজনৈতিক নেতা ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা ও উপকারভোগীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
‘মা আপনার সঙ্গে বসে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ভাত খেয়েছিলাম। এবার আপনি বানারীপাড়ায় আসবেন। আপনার সঙ্গে বসে একটু ভাত খাব’ আবেগে আপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন বরিশাল বানারীপাড়ার উত্তর পাড়, প্রধানমন্ত্রী’র আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর ঘর ও জমি পাওয়া মনোয়ারা বেগম সুন্দরী।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি আমার মা। জীবনে আপনার কাছে আর কিছু চাই না। আপনি ঘর দিয়েছেন, জমি দিয়েছেন। আপনার সঙ্গে বসে একটু খেতে চাই। আমার জীবনে আর কোন চাওয়া-পাওয়া নাই। এটাই আমার জীবনের শেষ চাওয়া।’
মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘১৯৭১ সালে আর্মি আমাদের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এরপরে আর ঘরে থাকতে পারেনি। তারপর আমার মা ভিক্ষা করে একটা ঘর তুলেছিল। সেই ঘরও বন্যা নিয়ে যায়। এরপরে আর ঘরে থাকতে পারিনি। আজ আপনি ঘর দিয়েছেন। আমি পাকা ঘর পেয়েছি।’
উপহারের ঘর পাওয়া আরেকজন উপকারভোগী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের কোন ঘর ছিল না। অনেক কষ্ট করে রাস্তার পাড়ে ঝুপড়ি ঘর তুলে আমার বাবা আমাদের নিয়ে জীবনযাপন করছেন। অনেক চেষ্টা করেও আমাদের একটা ঘর তুলে দিতে পারেননি বাবা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে থেকে যে ঘর পেয়েছি এই বিল্ডিং ঘরের স্বপ্নও দেখিনি কোনদিন। কারণ এমন বড় স্বপ্ন দেখার জন্য পরিস্থিতি লাগে, সেটা আমার বাবার ছিল না, আমারও নেই। আমি দিনমজুরি কাজ করি, এই কাজ করে তো কোনদিন বিল্ডিং করা সম্ভব না। আজ আপনি (প্রধানমন্ত্রী) দুই শতাংশ জমির ওপরে আমাদের বিল্ডিং করে দিয়েছেন। একইসঙ্গে বিশুদ্ধ পানি পান করার ব্যবস্থা ও ঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’
‘মমতাময়ী মা আপনি ঘর দেয়ায় আমার মেয়েদের নিয়ে আল্লাহর রহমতে ভালো থাকতে পারবো। মা, আপনি আমার সন্তানের ভবিষ্যত করে দিয়েছেন। আমার বৃদ্ধ মাকে নিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, যা আমাদের কাছে রাজপ্রসাদের সমান। আপনি না থাকলে আমাদের পক্ষে কোনদিন সম্ভব হতে না। মন থেকে দোয়া করি আপনি সুস্থ থাকেন ও দীর্ঘজীবী হন।’
স্বামী পরিত্যক্তা পেয়ারা বেগম ৩০ বছর ধরে বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভা বিভিন্ন স্থানে ভাড়া বাসায় থাকতেন। উপহারের জমি ও ঘর পেয়ে যেন তার জীবনের হিসেবে নিকাশই বদলে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর পেয়ে কেমন লাগছে এমন প্রশ্নের উত্তরে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার উত্তর পাড় এ দাড়িয়ে পেয়ারা বেগম সংবাদকে বলেন, ‘কোনদিন ভাবি নাই, ভাবার কথাও না- মাথা গোজার ঠাই পাব। ভালো লাগতেছে, খুব খুশি লাগতাছে। ত্রিশ বছর ভাড়া বাসায় থাকতাম, এখন থাইকা আর ভাড়া দেওয়ান লাগবো না। আমার মনে হয় মা বাপ থাকলেও হত না, স্বামী থাকলেও এমন ঘরে থাকতে পারতাম না।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার আমাদের সামনে আসুক, আমাদের উপকার হবে। আমরা হেরে নিয়ে বাঁচতে পারুম। হেয় বাঁচার মত লাইন কইরা দিছিএ আমরা তারে বারবার দেখতে চাই। আমরা তারে ভোট দিয়ে আনছি, আবারও ভোট দিয়ে আনবো। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করমু হেয় যেন বারবার আমাদের সামনে আসতে পারে।’
উত্তর পাড় প্রকল্পে উপহারের ঘর পাওয়া আরেক উপকার ভোগী বলেন মনজু বসু সংবাদ কে বলেন, ‘কোনদিন স্বপ্নেও দেখি নাই নিজের একটা পাকা ঘর হবে। নিজের ভাঙা ঘরে একপাশে ভিজতাম অন্যপাশে ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকতাম। এখন থেকে আর ভিজতে হবে না।’
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহে আলম বলেন, ‘মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারের জমিসহ এই পাকা ঘর অনাবিল হাসি ফুটিয়েছে অসহায় মানুষের মুখে। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বানারীপাড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪২টি জমিসহ ঘর হস্তান্তর করায় এলাকাবাসী আবেগাপ্লুত ও উচ্ছ্বসিত। প্রধানমন্ত্রীর এ মহানুভবতা ঊজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও ইতিহাস হয়ে থাকবে।’
স্থানীয় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা মিরা বলেন, ‘বানারীপাড়া নদী ভাঙন কবলিত এলাকা। এখানে যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারে ঘর ও জমি পেয়েছেন সবাই নদী ভাঙন কবলিত মানুষ। তারা মূলত ছিন্নমূল ছিলেন। তাদের কোন থাকার জায়গা ও ঘর ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ঘর ও জমি দিয়ে ঠিকানা দিয়েছেন। এখানে যারা ঘর ও জমি পেয়েছেন তারা বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে মানুষগুলোর বাস্তবভিটা ছিল না, সেই ছিন্নমূল মানুষগুলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের একটি করে দুর্যোগ সহনীয় ঘর দিয়েছে। এখন থেকে তারা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবে।’
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া মানুষদের সবার আগে সেবা প্রদানের এ আশ্রয়ণ প্রকল্প সারা বিশে^ ‘অন্তর্ভূক্তিমূলক শেখ হাসিনা মডেল’ হিসেবে পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আশ্রয়ণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ সব ধরনের সহায়তা ও পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকেও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শও দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতিমা আজরিন তন্বী বলেন, ‘এর আগে বানারীপাড়ায় উপজেলার ৮ ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে মোট ৩৮০টি পরিবারের জন্য সেমি পাকা ঘর নির্মাণ ও হস্তান্তর করা হয়। এসব আশ্রয়ণে বসবাসকারী উপকারভোগীদের জীবনমান আমূল বদলে গেছে। আগামী জুন মাসে বানারীপাড়া উপজেলাকে শতভাগ ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত করার মানসে কাজ চলছে। বাইশারী, সলিয়াবাকপুর ও ইলুহার ইউনিয়নে ৪র্থ পর্যায়ে নতুন নির্মিত জমিসহ আরও ১৪২টি সেমি পাকা ঘর উপকারভোগীদের মাঝে আজ হস্তান্তর করা হলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একাধিকবার গণ শুনানি নিয়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যাচাই বাছাই করে তাদের কোথাও কোন সম্পত্তি আছে কিনা বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হবেন এমন ব্যক্তিদের আমরা তালিকায় রাখিনি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা ছয়েল টেস্ট করেছি, দেয়াল না শুকানো পর্যন্ত রং করিনি, সিমেন্ট টিন ব্র্যান্ডের দিয়েছি।’
বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, আলহাজ্ব গোলাম ফারুক বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আনন্দের বন্যা বয়েছে। ঈদ কি? ঈদের চেয়েও যদি আরও কিছু থাকে....।’
সন্ধা নদীর পাড়ে ভোরের সোনালী আলোয় ভাসছে ১৪২টি পরিবার।
হেয় বাঁচার মতো লাইন কইরা দিছে : পেয়ারা বেগম
বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩
‘মোরা কল্পনাও করিনি যে ঘর পামু। এ ঘর মোগো ধারে রাজপ্রসাদের সমান। আগে মানুষের বাড়ি বাড়ি যেয়ে কতো যে তাক খাইছি। এহন মোরা কোটিপতি। তিনটা মাইয়া ও স্ত্রী লইয়া নতুন ঘরে আজকেই চইলা আইছি। এখন আহ্লাদে ডাইল ভাত খামু, চলমু...।’ গতকাল বুধবার বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার উত্তর পাড় প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের জমি ও ঘর পেয়ে সংবাদকে এমন অনুভূতিই প্রকাশ করেন উপকারভোগী মাহবুব হোসেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আগে মোগো জায়গা জমি কিচ্ছু ছিল না। বানারীপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতাম এখানে সেখানে। মোরা ঘর পাইয়া অনেক খুশি। আল্লাহ হ্যারো (প্রধানমন্ত্রী) ভাল রাখুক।’
গতকাল মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’ এর তৃতীয় ধাপের শেষ ও চতুর্থ ধাপে প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধনের পর বরিশালের বানারীপাড়া উত্তর পাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৪২টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের প্রত্যেককে বিনামূল্যে দুইশতক জমিসহ আধাপাকাঘর হস্তান্তর করা হয়।
গণভবন থেকে গাজীপুরের শ্রীপুর, বরিশালের বানারীপাড়া ও সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় ৩৯ হাজার ৩৬৫ পরিবারকে ভূমি ও ঘর দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গণভবনসহ বিভিন্ন প্রান্তে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, রাজনৈতিক নেতা ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা ও উপকারভোগীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
‘মা আপনার সঙ্গে বসে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ভাত খেয়েছিলাম। এবার আপনি বানারীপাড়ায় আসবেন। আপনার সঙ্গে বসে একটু ভাত খাব’ আবেগে আপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন বরিশাল বানারীপাড়ার উত্তর পাড়, প্রধানমন্ত্রী’র আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর ঘর ও জমি পাওয়া মনোয়ারা বেগম সুন্দরী।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি আমার মা। জীবনে আপনার কাছে আর কিছু চাই না। আপনি ঘর দিয়েছেন, জমি দিয়েছেন। আপনার সঙ্গে বসে একটু খেতে চাই। আমার জীবনে আর কোন চাওয়া-পাওয়া নাই। এটাই আমার জীবনের শেষ চাওয়া।’
মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘১৯৭১ সালে আর্মি আমাদের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এরপরে আর ঘরে থাকতে পারেনি। তারপর আমার মা ভিক্ষা করে একটা ঘর তুলেছিল। সেই ঘরও বন্যা নিয়ে যায়। এরপরে আর ঘরে থাকতে পারিনি। আজ আপনি ঘর দিয়েছেন। আমি পাকা ঘর পেয়েছি।’
উপহারের ঘর পাওয়া আরেকজন উপকারভোগী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের কোন ঘর ছিল না। অনেক কষ্ট করে রাস্তার পাড়ে ঝুপড়ি ঘর তুলে আমার বাবা আমাদের নিয়ে জীবনযাপন করছেন। অনেক চেষ্টা করেও আমাদের একটা ঘর তুলে দিতে পারেননি বাবা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে থেকে যে ঘর পেয়েছি এই বিল্ডিং ঘরের স্বপ্নও দেখিনি কোনদিন। কারণ এমন বড় স্বপ্ন দেখার জন্য পরিস্থিতি লাগে, সেটা আমার বাবার ছিল না, আমারও নেই। আমি দিনমজুরি কাজ করি, এই কাজ করে তো কোনদিন বিল্ডিং করা সম্ভব না। আজ আপনি (প্রধানমন্ত্রী) দুই শতাংশ জমির ওপরে আমাদের বিল্ডিং করে দিয়েছেন। একইসঙ্গে বিশুদ্ধ পানি পান করার ব্যবস্থা ও ঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’
‘মমতাময়ী মা আপনি ঘর দেয়ায় আমার মেয়েদের নিয়ে আল্লাহর রহমতে ভালো থাকতে পারবো। মা, আপনি আমার সন্তানের ভবিষ্যত করে দিয়েছেন। আমার বৃদ্ধ মাকে নিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, যা আমাদের কাছে রাজপ্রসাদের সমান। আপনি না থাকলে আমাদের পক্ষে কোনদিন সম্ভব হতে না। মন থেকে দোয়া করি আপনি সুস্থ থাকেন ও দীর্ঘজীবী হন।’
স্বামী পরিত্যক্তা পেয়ারা বেগম ৩০ বছর ধরে বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভা বিভিন্ন স্থানে ভাড়া বাসায় থাকতেন। উপহারের জমি ও ঘর পেয়ে যেন তার জীবনের হিসেবে নিকাশই বদলে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর পেয়ে কেমন লাগছে এমন প্রশ্নের উত্তরে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার উত্তর পাড় এ দাড়িয়ে পেয়ারা বেগম সংবাদকে বলেন, ‘কোনদিন ভাবি নাই, ভাবার কথাও না- মাথা গোজার ঠাই পাব। ভালো লাগতেছে, খুব খুশি লাগতাছে। ত্রিশ বছর ভাড়া বাসায় থাকতাম, এখন থাইকা আর ভাড়া দেওয়ান লাগবো না। আমার মনে হয় মা বাপ থাকলেও হত না, স্বামী থাকলেও এমন ঘরে থাকতে পারতাম না।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার আমাদের সামনে আসুক, আমাদের উপকার হবে। আমরা হেরে নিয়ে বাঁচতে পারুম। হেয় বাঁচার মত লাইন কইরা দিছিএ আমরা তারে বারবার দেখতে চাই। আমরা তারে ভোট দিয়ে আনছি, আবারও ভোট দিয়ে আনবো। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করমু হেয় যেন বারবার আমাদের সামনে আসতে পারে।’
উত্তর পাড় প্রকল্পে উপহারের ঘর পাওয়া আরেক উপকার ভোগী বলেন মনজু বসু সংবাদ কে বলেন, ‘কোনদিন স্বপ্নেও দেখি নাই নিজের একটা পাকা ঘর হবে। নিজের ভাঙা ঘরে একপাশে ভিজতাম অন্যপাশে ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকতাম। এখন থেকে আর ভিজতে হবে না।’
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহে আলম বলেন, ‘মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারের জমিসহ এই পাকা ঘর অনাবিল হাসি ফুটিয়েছে অসহায় মানুষের মুখে। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বানারীপাড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪২টি জমিসহ ঘর হস্তান্তর করায় এলাকাবাসী আবেগাপ্লুত ও উচ্ছ্বসিত। প্রধানমন্ত্রীর এ মহানুভবতা ঊজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও ইতিহাস হয়ে থাকবে।’
স্থানীয় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা মিরা বলেন, ‘বানারীপাড়া নদী ভাঙন কবলিত এলাকা। এখানে যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারে ঘর ও জমি পেয়েছেন সবাই নদী ভাঙন কবলিত মানুষ। তারা মূলত ছিন্নমূল ছিলেন। তাদের কোন থাকার জায়গা ও ঘর ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ঘর ও জমি দিয়ে ঠিকানা দিয়েছেন। এখানে যারা ঘর ও জমি পেয়েছেন তারা বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে মানুষগুলোর বাস্তবভিটা ছিল না, সেই ছিন্নমূল মানুষগুলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের একটি করে দুর্যোগ সহনীয় ঘর দিয়েছে। এখন থেকে তারা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবে।’
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া মানুষদের সবার আগে সেবা প্রদানের এ আশ্রয়ণ প্রকল্প সারা বিশে^ ‘অন্তর্ভূক্তিমূলক শেখ হাসিনা মডেল’ হিসেবে পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আশ্রয়ণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ সব ধরনের সহায়তা ও পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকেও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শও দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতিমা আজরিন তন্বী বলেন, ‘এর আগে বানারীপাড়ায় উপজেলার ৮ ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে মোট ৩৮০টি পরিবারের জন্য সেমি পাকা ঘর নির্মাণ ও হস্তান্তর করা হয়। এসব আশ্রয়ণে বসবাসকারী উপকারভোগীদের জীবনমান আমূল বদলে গেছে। আগামী জুন মাসে বানারীপাড়া উপজেলাকে শতভাগ ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত করার মানসে কাজ চলছে। বাইশারী, সলিয়াবাকপুর ও ইলুহার ইউনিয়নে ৪র্থ পর্যায়ে নতুন নির্মিত জমিসহ আরও ১৪২টি সেমি পাকা ঘর উপকারভোগীদের মাঝে আজ হস্তান্তর করা হলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একাধিকবার গণ শুনানি নিয়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যাচাই বাছাই করে তাদের কোথাও কোন সম্পত্তি আছে কিনা বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হবেন এমন ব্যক্তিদের আমরা তালিকায় রাখিনি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা ছয়েল টেস্ট করেছি, দেয়াল না শুকানো পর্যন্ত রং করিনি, সিমেন্ট টিন ব্র্যান্ডের দিয়েছি।’
বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, আলহাজ্ব গোলাম ফারুক বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আনন্দের বন্যা বয়েছে। ঈদ কি? ঈদের চেয়েও যদি আরও কিছু থাকে....।’
সন্ধা নদীর পাড়ে ভোরের সোনালী আলোয় ভাসছে ১৪২টি পরিবার।