alt

সারাদেশ

গ্যাসের বিল বকেয়া ৩৮৩৭ কোটি টাকা, সংকটে রাষ্ট্রীয় বিতরণ কোম্পানিগুলো

ফয়েজ আহমেদ তুষার : শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩

সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে পেট্রোবাংলার অধীনস্থ রাষ্ট্রীয় ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির পাওনা প্রায় ৩৮৩৭ কোটি টাকা। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, বেসরকারি কোম্পানির বিল বকেয়া থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে গ্যাস বিল আদায় করা যাচ্ছে। কিন্তু সরকারি সার কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র বা অন্যান্য কোম্পানির বিল সহজে আদায় করা যাচ্ছে না। দফায় দফায় চিঠি চালাচালি আর বৈঠক করা পর্যন্তই থেমে থাকছে বিল আদায় প্রক্রিয়া।

দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত বকেয়া আদায়ে কোম্পানিগুলোর নানামুখী চেষ্টা সফল না হওয়ায় এখন মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারকদের দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ তেল গ্যাস খনিজসম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বকেয়া গ্যাস বিল আদায়ে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। বিল বকেয়া থাকলে সরকারি কিংবা বেসরকারি যেকোন প্রতিষ্ঠানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ এসেছে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে সম্প্রতি সচিবালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও কোম্পানিগুলোর কাছে পাওনা গ্যাস বিল আদায় এবং অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে বলা হয়, বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিসিআইসির কাছে বিপুল পরিমাণ গ্যাস বিল বকেয়া থাকার ফলে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বকেয়া পরিশোধে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিসিআইসি এ পর্যন্ত কী পদক্ষেপ নিয়েছে তাও আলোচনায় উঠে আসে। দ্রুত এসব বকেয়া আদায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে রাষ্ট্রীয় গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর বকেয়া বিল পড়ে আছে প্রায় ২৮৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে পিডিবির নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে বকেয়া ১৮৩৩ কোটি টাকা এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারদের (আইপিপি) কাছে বকেয়া পড়ে আছে প্রায় ১০০৩ কোটি টাকা।

এছাড়া বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অধীনস্থ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সার কারখানা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্যাস বিল বকেয়া আরও ১০০১ কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে পেট্রোবাংলার অধীনস্থ রাষ্ট্রীয় ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির পাওনা প্রায় ৩৮৩৭ কোটি টাকা।

গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর দাবি, একদিকে এলএনজি আমদানির বিল পরিশোধের চাপ অন্যদিকে বিক্রিত গ্যাসের বিল আদায় করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সংকট তৈরি হয়েছে।

গ্যাসের বকেয়া বিল আদায়ের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু গত বুধবার মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ছাড়াও পেট্রোবাংলা, তিতাস এবং বিসিআইসির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, সার কারখানায় প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে। সে বিষয়ে শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে গ্যাস সরবরাহ নিয়েও আলোচনা হয়।

দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে আইওসি (আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি) ও দেশীয় কোম্পানির মাধ্যমে উত্তোলিত বা উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাস সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা, শিল্প, বাণিজ্য, আবাসিকসহ বিভিন্ন খাতে সরবরাহ করছে ছয়টি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি।

গ্রাহক সংখ্যা বিবেচনায় সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)। এই কোম্পানির অনদায়ী বিলের পরিমাণও অন্যদের চেয়ে বেশি।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ মোল্লাহ জানান, গত জুনে সার কারখানায় প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা নির্ধারণ করা হলেও কারখানাগুলো আগের মূল্যহার অনুযায়ী বিল পরিশোধ করছে। নতুন দাম দিচ্ছে না।

সূত্রে জানা যায়, যমুনা সার কারখানার কাছে ১৩৯.৩৩ কোটি, ইউরিয়া সার কারখানার কাছে ১৫.৫৮ কোটি, পলাশ সার কারখানার কাছে ২.২৮ কোটি, চট্টগ্রাম (সিইউফএল) সার কারখানার কাছে ২০২.৬৯ কোটি, শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানির কাছে ৩১৬.৮৬ কোটি, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার কোম্পানির কাছে ৩৮৯.২৮ কোটি টাকা বিল বকেয়া রয়েছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর। এছাড়া অন্যান্য সার কারখানার কাছে পাওনা রয়েছে ১২২.৭৭ কোটি টাকা।

দেশে সরবরাহকৃত গ্যাসের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনেই ব্যবহার হয় বেশিরভাগ। বিদ্যুতে ৪৩ শতাংশ, শিল্প-কারখানায় ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, বাসাবাড়িতে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ, শিল্প-কারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে (ক্যাপটিভ পাওয়ার) ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ, সার উৎপাদনে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, সিএনজি স্টেশনে ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, বাণিজ্যিকে দশমিক ৭৬ শতাংশ ও চা-বাগানে দশমিক ১০ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার হয়ে থাকে।

রাষ্ট্রীয় অন্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠান- কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল), বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (বিজিডিসিএল), জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (জেজিটিডিএসএল), পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি (পিজিসিএল) এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি (এসজিসিএল) সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গ্যাস বিতরণ করে। এদের সবারই কম-বেশি বকেয়া পড়ে আছে।

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গ্যাসের অনেক বিল বকেয়া, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ভবনে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি হোক আর ব্যক্তিগত হোক, গ্যাস বিল বকেয়া থাকলে প্রধানমন্ত্রী কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। যে খাতেই বকেয়া থাকবে, লাইন কেটে দেয়া হবে।

আমার চেয়ে খারাপ লোক এ জেলায় নাই : তাহেরপুত্র বিপ্লব

ছবি

কক্সবাজারে রিসোর্টে পযটক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার

ছবি

ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা

ছবি

সুনামগঞ্জে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২

ছবি

টোলপ্লাজায় ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ১৪

ছবি

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন, বেশিরভাগ অঞ্চলে বইছে তাপপ্রবাহ

কোম্পানীগঞ্জে পর্যটকের সঙ্গে এএসপির মারামারি

ছবি

গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ গোপালগঞ্জে গ্রামীণ ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

শার্শায় সাংবাদিকের উপর হামলা

ছবি

চুয়াডাঙ্গায় রেললাইনের পাশ থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

সালথায় স্বামীর উপর অভিমান করে গৃহবধূর আত্মহত্যা

ছবি

শিবগঞ্জে পরিবারের উপর অভিমান করে কিশোরের আত্মহত্যা

ছবি

ভালুকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ছাত্রলীগ নেতা নিহত

ছবি

নরসিংদীতে বজ্রপাতে নিহত ১, আহত ২

ছবি

হাওরে বৃষ্টি জলাবদ্ধতায় দেড় হাজার একর বোরো জমি বিনষ্টের পথে, কৃষকের আহাজারি

ছবি

রংপুরে বাসের টিকেট বিক্রিতে নৈরাজ্য, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

ছবি

দর্শনার্থীতে মুখরিত ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক

ছবি

গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও পূবালী ব্যাংকের ম্যানেজার

ছবি

রায়পুরায় দুইপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ১০

ছবি

সিরাজগঞ্জ যমুনার চরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী

ছবি

মোরেলগঞ্জে ব্রিজের রেলিং ভেঙে যাত্রী পরিবহন বন্ধ, ভোগান্তি

ছবি

দুই দিনে বাংলাদেশে প্রবেশ করলো মিয়ানমারের ৮১ সীমান্তনক্ষী

ছবি

ধর্ষণে সহযোগিতা করায় কারাভোগ ২৩ বছর পর জেল থেকে বেরিয়ে দেখেন পরিবারের কেউ বেঁচে নেই

ছবি

ধনবাড়ীতে গ্রামীণ মেলায় ‘অশ্লীল নৃত্য’

ছবি

রায়গঞ্জে বিএডিসির খাল পুনঃখননে ব্যাপক অনিয়ম

ছবি

ইউপি নির্বাচনী বিরোধ চকরিয়ায় বাড়ি থেকে ঢেকে নিয়ে মেম্বার প্রার্থীকে গুলি করে হত্যা

ছবি

গাজীপুরে বয়লার বিস্ফোরণে চীনা নাগরিক নিহত

ছবি

সুনামগঞ্জ কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

ছবি

কাপাসিয়ায় বাস-সিএনজি সংঘর্ষ, নিহত ১

ছবি

সুইমিংপুলে পর্যটক শিশুর মৃত্যু

ছবি

উজিরপুরে ব্র্যাক ম্যানেজারের বাসায় ডাকাতি

ছবি

চৈত্রের খরতাপে পুড়ছে রাজশাহী ফসল বাঁচাতে আবাসিকে লোডশেডিং

ছবি

বোদায় শ্বশুর বাড়িতে জামাইয়ের আত্মহত্যা

ছবি

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

ছবি

মহাদেবপুরে কর্মসৃজন কর্মসূচিতে বরাদ্দ আড়াই কোটি টাকা

ছবি

কেশবপুরে বোরোর ভালো ফলন হলেও জলাবদ্ধতায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

tab

সারাদেশ

গ্যাসের বিল বকেয়া ৩৮৩৭ কোটি টাকা, সংকটে রাষ্ট্রীয় বিতরণ কোম্পানিগুলো

ফয়েজ আহমেদ তুষার

শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩

সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে পেট্রোবাংলার অধীনস্থ রাষ্ট্রীয় ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির পাওনা প্রায় ৩৮৩৭ কোটি টাকা। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, বেসরকারি কোম্পানির বিল বকেয়া থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে গ্যাস বিল আদায় করা যাচ্ছে। কিন্তু সরকারি সার কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র বা অন্যান্য কোম্পানির বিল সহজে আদায় করা যাচ্ছে না। দফায় দফায় চিঠি চালাচালি আর বৈঠক করা পর্যন্তই থেমে থাকছে বিল আদায় প্রক্রিয়া।

দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত বকেয়া আদায়ে কোম্পানিগুলোর নানামুখী চেষ্টা সফল না হওয়ায় এখন মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারকদের দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ তেল গ্যাস খনিজসম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বকেয়া গ্যাস বিল আদায়ে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। বিল বকেয়া থাকলে সরকারি কিংবা বেসরকারি যেকোন প্রতিষ্ঠানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ এসেছে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে সম্প্রতি সচিবালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও কোম্পানিগুলোর কাছে পাওনা গ্যাস বিল আদায় এবং অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে বলা হয়, বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিসিআইসির কাছে বিপুল পরিমাণ গ্যাস বিল বকেয়া থাকার ফলে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বকেয়া পরিশোধে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিসিআইসি এ পর্যন্ত কী পদক্ষেপ নিয়েছে তাও আলোচনায় উঠে আসে। দ্রুত এসব বকেয়া আদায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে রাষ্ট্রীয় গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর বকেয়া বিল পড়ে আছে প্রায় ২৮৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে পিডিবির নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে বকেয়া ১৮৩৩ কোটি টাকা এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারদের (আইপিপি) কাছে বকেয়া পড়ে আছে প্রায় ১০০৩ কোটি টাকা।

এছাড়া বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অধীনস্থ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সার কারখানা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্যাস বিল বকেয়া আরও ১০০১ কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে পেট্রোবাংলার অধীনস্থ রাষ্ট্রীয় ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির পাওনা প্রায় ৩৮৩৭ কোটি টাকা।

গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর দাবি, একদিকে এলএনজি আমদানির বিল পরিশোধের চাপ অন্যদিকে বিক্রিত গ্যাসের বিল আদায় করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সংকট তৈরি হয়েছে।

গ্যাসের বকেয়া বিল আদায়ের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু গত বুধবার মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ছাড়াও পেট্রোবাংলা, তিতাস এবং বিসিআইসির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, সার কারখানায় প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে। সে বিষয়ে শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে গ্যাস সরবরাহ নিয়েও আলোচনা হয়।

দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে আইওসি (আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি) ও দেশীয় কোম্পানির মাধ্যমে উত্তোলিত বা উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাস সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা, শিল্প, বাণিজ্য, আবাসিকসহ বিভিন্ন খাতে সরবরাহ করছে ছয়টি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি।

গ্রাহক সংখ্যা বিবেচনায় সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)। এই কোম্পানির অনদায়ী বিলের পরিমাণও অন্যদের চেয়ে বেশি।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ মোল্লাহ জানান, গত জুনে সার কারখানায় প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা নির্ধারণ করা হলেও কারখানাগুলো আগের মূল্যহার অনুযায়ী বিল পরিশোধ করছে। নতুন দাম দিচ্ছে না।

সূত্রে জানা যায়, যমুনা সার কারখানার কাছে ১৩৯.৩৩ কোটি, ইউরিয়া সার কারখানার কাছে ১৫.৫৮ কোটি, পলাশ সার কারখানার কাছে ২.২৮ কোটি, চট্টগ্রাম (সিইউফএল) সার কারখানার কাছে ২০২.৬৯ কোটি, শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানির কাছে ৩১৬.৮৬ কোটি, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার কোম্পানির কাছে ৩৮৯.২৮ কোটি টাকা বিল বকেয়া রয়েছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর। এছাড়া অন্যান্য সার কারখানার কাছে পাওনা রয়েছে ১২২.৭৭ কোটি টাকা।

দেশে সরবরাহকৃত গ্যাসের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনেই ব্যবহার হয় বেশিরভাগ। বিদ্যুতে ৪৩ শতাংশ, শিল্প-কারখানায় ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, বাসাবাড়িতে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ, শিল্প-কারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে (ক্যাপটিভ পাওয়ার) ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ, সার উৎপাদনে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, সিএনজি স্টেশনে ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, বাণিজ্যিকে দশমিক ৭৬ শতাংশ ও চা-বাগানে দশমিক ১০ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার হয়ে থাকে।

রাষ্ট্রীয় অন্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠান- কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল), বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (বিজিডিসিএল), জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (জেজিটিডিএসএল), পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি (পিজিসিএল) এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি (এসজিসিএল) সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গ্যাস বিতরণ করে। এদের সবারই কম-বেশি বকেয়া পড়ে আছে।

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গ্যাসের অনেক বিল বকেয়া, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ভবনে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি হোক আর ব্যক্তিগত হোক, গ্যাস বিল বকেয়া থাকলে প্রধানমন্ত্রী কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। যে খাতেই বকেয়া থাকবে, লাইন কেটে দেয়া হবে।

back to top