দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ায় ব্যক্তি খাতের আয়কর রাজস্ব আয়ের মূল উৎস হওয়া উচিত বলে মনে করছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
পাশাপাশি দেশে শিল্পায়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করে শুল্ক থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর মনোভাব পরিহার করা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।
আজ রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংলাপে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রচুর কোটিপতির বিকাশ ঘটেছে, বিত্তবানদের দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন আছে। সৌর যন্ত্রপাতির শুল্ক কমিয়ে আনা বিবেচনা করা দরকার। প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যে কর থাকার কোনো দরকার নেই।’
তিনি বলেন, ‘দেশ মোটেই সংকটকালে নেই। জিডিপির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে এখনো। যাঁরা সংকটকাল বলছেন, এটি অতিকথন। বরং ইতিহাসের বাঁকবদলের মধ্যে আছে দেশ। গত দেড় দশকে মাথাপিছু আয় সাড়ে তিন গুণ হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে পাঁচ গুণ।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতে বিদ্যুৎ চাহিদার চেয়ে উৎপাদন সক্ষমতা দ্বিগুণ। তাহলে বাংলাদেশের অতিরিক্ত সক্ষমতা কী দোষ করল! পরিকল্পনা করেই দেশে বিদ্যুৎ সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম টাকা ভোক্তার কাছ থেকে নিচ্ছে সরকার। তাই লুণ্ঠনমূলক মুনাফার অভিযোগ ঠিক নয়। উৎপাদন খরচ থেকে ১০ শতাংশ বেশি নিলেও তা লুণ্ঠনমূলক হবে না।’
সংলাপটি আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। সংলাপের শুরুতে ‘মূল্যসাশ্রয়ী ও সবুজ বাজেটের ওপর গুরুত্ব রেখে টেকসই জ্বালানির পথ অন্বেষণ’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের চিত্র তুলে ধরে হয়।
মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেমের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহকারী ইসরাত হোসেন। আলোচনার জন্য এই নিবন্ধে পাঁচটি প্রশ্নের অবতারণা করে। এর মধ্যে আছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চ্যালেঞ্জ, দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন ও বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস ব্যবহার ব্যবস্থাপনা, এলএনজি আমদানি ও তুলনামূলক খরচ, দেশের গ্যাসক্ষেত্রের সম্ভাবনা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ রূপরেখা।
সংলাপে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, ‘এখন জ্বালানিনিরাপত্তা নেই। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল, জ্বালানি তেল কেনার টাকা দিতে পারছে না সরকার। জ্বালানি খাতে লুণ্ঠনমূলক মুনাফা করছে বিপিসি, ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের হাত থেকে শুধু জ্বালানি নয়, সরকারকেও বের করে আনতে হবে। সরকার শুধু ব্যবসায়ীদের নয়, জনগণেরও।’
বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, ‘শুধু সৌর নয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক উপায় আছে। এগুলো কাজে লাগাতে হবে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা চাহিদার চেয়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি থাকতে পারে। এর বেশি হলে তা অতিরিক্ত।’
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রথম চ্যালেঞ্জ প্রাথমিক জ্বালানির জোগান। এ কারণেই বহুমুখী জ্বালানির ব্যবহারে জোর দেওয়া হয়েছে, এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। এখন দক্ষতা বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমানোয় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’
সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘জ্বালানি খাতে সুবিধাভোগী একটি গোষ্ঠী আছে, যারা সরকারের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে। জ্বালানি খাত সংকটে পড়েছে, এটা নিয়ে কারও দ্বিধা নেই। এ খাতে সরকার যত উদ্যোগ নিয়েছে, তার মধ্যে সমন্বয় দরকার।’
সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) জ্বালানি বিশ্লেষক শফিকুল আলম, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রফিকুল ইসলাম, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) পরিচালক এ কে এম ফজলুল হক, বিইআরসির সচিব খলিলুর রহমান খান, আরপিজিসিএলের মহাব্যবস্থাপক শাহ আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ায় ব্যক্তি খাতের আয়কর রাজস্ব আয়ের মূল উৎস হওয়া উচিত বলে মনে করছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
পাশাপাশি দেশে শিল্পায়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করে শুল্ক থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর মনোভাব পরিহার করা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।
আজ রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংলাপে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রচুর কোটিপতির বিকাশ ঘটেছে, বিত্তবানদের দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন আছে। সৌর যন্ত্রপাতির শুল্ক কমিয়ে আনা বিবেচনা করা দরকার। প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যে কর থাকার কোনো দরকার নেই।’
তিনি বলেন, ‘দেশ মোটেই সংকটকালে নেই। জিডিপির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে এখনো। যাঁরা সংকটকাল বলছেন, এটি অতিকথন। বরং ইতিহাসের বাঁকবদলের মধ্যে আছে দেশ। গত দেড় দশকে মাথাপিছু আয় সাড়ে তিন গুণ হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে পাঁচ গুণ।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতে বিদ্যুৎ চাহিদার চেয়ে উৎপাদন সক্ষমতা দ্বিগুণ। তাহলে বাংলাদেশের অতিরিক্ত সক্ষমতা কী দোষ করল! পরিকল্পনা করেই দেশে বিদ্যুৎ সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম টাকা ভোক্তার কাছ থেকে নিচ্ছে সরকার। তাই লুণ্ঠনমূলক মুনাফার অভিযোগ ঠিক নয়। উৎপাদন খরচ থেকে ১০ শতাংশ বেশি নিলেও তা লুণ্ঠনমূলক হবে না।’
সংলাপটি আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। সংলাপের শুরুতে ‘মূল্যসাশ্রয়ী ও সবুজ বাজেটের ওপর গুরুত্ব রেখে টেকসই জ্বালানির পথ অন্বেষণ’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের চিত্র তুলে ধরে হয়।
মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেমের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহকারী ইসরাত হোসেন। আলোচনার জন্য এই নিবন্ধে পাঁচটি প্রশ্নের অবতারণা করে। এর মধ্যে আছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চ্যালেঞ্জ, দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন ও বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস ব্যবহার ব্যবস্থাপনা, এলএনজি আমদানি ও তুলনামূলক খরচ, দেশের গ্যাসক্ষেত্রের সম্ভাবনা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ রূপরেখা।
সংলাপে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, ‘এখন জ্বালানিনিরাপত্তা নেই। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল, জ্বালানি তেল কেনার টাকা দিতে পারছে না সরকার। জ্বালানি খাতে লুণ্ঠনমূলক মুনাফা করছে বিপিসি, ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের হাত থেকে শুধু জ্বালানি নয়, সরকারকেও বের করে আনতে হবে। সরকার শুধু ব্যবসায়ীদের নয়, জনগণেরও।’
বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, ‘শুধু সৌর নয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক উপায় আছে। এগুলো কাজে লাগাতে হবে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা চাহিদার চেয়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি থাকতে পারে। এর বেশি হলে তা অতিরিক্ত।’
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রথম চ্যালেঞ্জ প্রাথমিক জ্বালানির জোগান। এ কারণেই বহুমুখী জ্বালানির ব্যবহারে জোর দেওয়া হয়েছে, এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। এখন দক্ষতা বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমানোয় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’
সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘জ্বালানি খাতে সুবিধাভোগী একটি গোষ্ঠী আছে, যারা সরকারের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে। জ্বালানি খাত সংকটে পড়েছে, এটা নিয়ে কারও দ্বিধা নেই। এ খাতে সরকার যত উদ্যোগ নিয়েছে, তার মধ্যে সমন্বয় দরকার।’
সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) জ্বালানি বিশ্লেষক শফিকুল আলম, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রফিকুল ইসলাম, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) পরিচালক এ কে এম ফজলুল হক, বিইআরসির সচিব খলিলুর রহমান খান, আরপিজিসিএলের মহাব্যবস্থাপক শাহ আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।