খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বরং এতে আরও উল্টে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সর্বকালের সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা, যা আগের তিন মাসের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের জন্য দেয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্তের একটি হলো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার কমানো। ২০২৪ সালের মধ্যে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলেছে সংস্থাটি। কিন্তু খেলাপি না কমে উল্টো বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত মেনে রাষ্ট্রমালিকানাধীন চারটি ব্যাংককে চলতি জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণ ১২ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক চারটি হলো-সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক। তবে মার্চ পর্যন্ত কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এই সীমার মধ্যে আসেনি। কারণ, কোন কৌশলে খেলাপি ঋণ কমানো হবে, সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। ফলে সরকারি খাতের বেশিরভাগ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ না কমে উল্টো বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে ঋণ স্থিতি ছিল ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। সেখানে খেলাপি ছিল এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এর মানে প্রথম তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। যেখানে ঋণ বেড়েছে মাত্র ২৩ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৮৪ হাজার ২২১ কোটি টাকা বা ২৭ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ২১ শতাংশ।
বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মার্চ পর্যন্ত ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ২১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৮৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৭০ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর ৬৬ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে, যা বিতরণকৃত ঋণের ৫ দশমিক ২০ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে ছিল ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। আর বিশেষায়িত ব্যাংকের ৪০ হাজার ৩২ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তিন মাস আগে যা ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ ছিল।
খেলাপি ঋণ বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘খেলাপি ঋণ যা প্রকাশ করেছে, এটা প্রকৃত তথ্য না। আমি বরাবরই বলি খেলাপি ঋণ এর চাইতেও বেশি। অর্থ ঋণ আদালত, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের মামলাগুলোতে আটকে থাকা খেলাপি ঋণকে জাস্টিফাইড ঋণে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। ৬৫ হাজার কোটি টাকা যেটা রাইট অব করা হয়েছে, পাঁচ বছরের পুরনো মন্দ ঋণ সেটা কিন্তু খেলাপি ঋণে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। এই দুটোকে যোগ করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ পাঁচ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।’
ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘সরকার যদি ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে কঠোর না হয় এবং একটা স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায় করার ব্যবস্থা না করে, তাহলে এই সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পাব না।’
বৃহস্পতিবার, ০৬ জুন ২০২৪
খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বরং এতে আরও উল্টে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সর্বকালের সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা, যা আগের তিন মাসের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের জন্য দেয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্তের একটি হলো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার কমানো। ২০২৪ সালের মধ্যে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলেছে সংস্থাটি। কিন্তু খেলাপি না কমে উল্টো বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত মেনে রাষ্ট্রমালিকানাধীন চারটি ব্যাংককে চলতি জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণ ১২ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক চারটি হলো-সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক। তবে মার্চ পর্যন্ত কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এই সীমার মধ্যে আসেনি। কারণ, কোন কৌশলে খেলাপি ঋণ কমানো হবে, সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। ফলে সরকারি খাতের বেশিরভাগ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ না কমে উল্টো বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে ঋণ স্থিতি ছিল ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। সেখানে খেলাপি ছিল এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এর মানে প্রথম তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। যেখানে ঋণ বেড়েছে মাত্র ২৩ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৮৪ হাজার ২২১ কোটি টাকা বা ২৭ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ২১ শতাংশ।
বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মার্চ পর্যন্ত ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ২১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৮৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৭০ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর ৬৬ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে, যা বিতরণকৃত ঋণের ৫ দশমিক ২০ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে ছিল ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। আর বিশেষায়িত ব্যাংকের ৪০ হাজার ৩২ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তিন মাস আগে যা ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ ছিল।
খেলাপি ঋণ বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘খেলাপি ঋণ যা প্রকাশ করেছে, এটা প্রকৃত তথ্য না। আমি বরাবরই বলি খেলাপি ঋণ এর চাইতেও বেশি। অর্থ ঋণ আদালত, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের মামলাগুলোতে আটকে থাকা খেলাপি ঋণকে জাস্টিফাইড ঋণে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। ৬৫ হাজার কোটি টাকা যেটা রাইট অব করা হয়েছে, পাঁচ বছরের পুরনো মন্দ ঋণ সেটা কিন্তু খেলাপি ঋণে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। এই দুটোকে যোগ করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ পাঁচ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।’
ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘সরকার যদি ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে কঠোর না হয় এবং একটা স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায় করার ব্যবস্থা না করে, তাহলে এই সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পাব না।’