alt

অর্থ-বাণিজ্য

খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ালো ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় সোয়া চার লাখ কোটি টাকায় উঠেছে। এই অঙ্ক বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক রবিবার খেলাপি ঋণের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। তিন মাস আগে গত বছরের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ।

তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় পৌনে এক লাখ কোটি টাকা, ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ছয় মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। আর এক বছরে বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯ কোটি টাকা

তার তিন মাস আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। জুন শেষে ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। মার্চ শেষে ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় পৌনে এক লাখ কোটি টাকা, ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ছয় মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। আর এক বছরে বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, বিতরণ করা ঋণের চার ভাগের এক ভাগই খেলাপি হয়ে পড়েছে।

৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। আর ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার বেড়ে হয়েছে ৪৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, যা ডিসেম্বরে ছিল ৪২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণের ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে, যা ডিসেম্বরে ছিল ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ।

মার্চ শেষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ হচ্ছে তিন লাখ ১৯ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। আর বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ ১৩ লাখ ১০ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এরপর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। অর্থনীতিবিদরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট হয়েছে, যার একটা বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে। আর তাতে বেড়েই চলেছে খেলাপি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘খেলাপি ঋণের কোনও তথ্য আমরা লুকিয়ে রাখব না। সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর এটা আদায় জোরদারের মাধ্যমে কমানো হবে। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করা হয়েছে। যে কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।’

নতুন বিতরণ করা ঋণ যেন খেলাপি না হয় সে জন্য বিভিন্ন আইনি কঠোরতা আনার কথাও বলেছিলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে প্রভাবশালীদের বড় অঙ্কের ঋণ দিতে নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কাগজে-কলমে কম দেখাতে নেওয়া হয়েছিল একের পর এক নীতি। সরকার পরিবর্তনের পর সেই নীতি থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ও সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া ব্যাংকগুলো ঋণের প্রকৃত চিত্র দেখাতে শুরু করেছে। তাদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেশি বেড়েছে। একইভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেশ বেড়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ, এস আলমসহ আরও কিছু বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। এতেও বেড়েছে খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, সরকার পতনের আগেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত মানতে গিয়ে গত বছরের মার্চ থেকে কৌশলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সুযোগ কমে এসেছে।

আবার তদারকি শিথিলতার কারণে এতদিন জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণ আর ফেরত আসছে না। সরকার পতনের পর এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ঘরনার ব্যবসায়ীদের অনেকেই পালিয়েছেন। এতে করে খেলাপি ঋণ আগামীতে আরও বাড়তে পারে বলে ব্যাংকারদের আশঙ্কা।

কোভিড মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে কোনও ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপিমুক্ত ছিলেন গ্রাহকেরা। ২০২২ সালে এসব নীতি ছাড় তুলে দেওয়ার পর ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের জুনে ব্যাংকঋণ পরিশোধে আবার ছাড় দেয়।

ওই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী জুন মাসের মধ্যে ঋণের কিস্তির অর্ধেক টাকা জমা দিলেই একজন গ্রাহককে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের ফলে যেসব ঋণ গ্রাহক খেলাপি হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছিলেন, তারা অর্ধেক টাকা জমা দিয়েই নিয়মিত গ্রাহক হিসেবে থাকার সুযোগ পান। এই সুবিধা দেওয়া হয় শুধু মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে।

ব্যাংক খাতের মোট ঋণের প্রায় অর্ধেকেই মেয়াদি ঋণ। এত সুবিধা দেওয়ার পরও খেলাপি কেবল বাড়ছেই; বরং বারবার ছাড় দেওয়ার কারণে ভালো গ্রাহকেরাও ঋণ পরিশোধে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে মনে করেন ব্যাংকাররা। তাদের মতে, এতে ব্যাংকগুলো তারল্যসংকটে পড়ছে এবং নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা হারাচ্ছে।

এদিকে গত বছর জাতীয় সংসদে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হয়। এর ফলে খেলাপিরাও ঋণ নেওয়ার সুযোগ পায়। আগে একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের কোনও প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হলে তাদের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ পাওয়ার সুযোগ ছিল না। নতুন এই আইনের কারণেও খেলাপি ঋণ বেড়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ছবি

গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ

ছবি

আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংক নয়, সরকারের নিজস্ব উদ্যোগে সংস্কার: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

সততা-দক্ষতার সঙ্গে কাজ করলে কোনো ভয় নেই: এনবিআর চেয়ারম্যান

শেয়ারবাজারে বছরের সর্বোচ্চ লেনদেন

জুলাইয়ের ৭ দিনে রেমিট্যান্স এলো ৮১২৫ কোটি টাকা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতদের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

জুলাই হতাহতদের সহায়তায় ২৫ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

বাণিজ্য রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ

ছবি

বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ

ছবি

আকু দায় মিটিয়ে রিজার্ভ ২৪ বিলিয়নের ঘরে

ছবি

ডিএসইতে লেনদেন ৬০০ কোটি টাকা ছাড়ালো

৬ মাসের কম সময়ে আইপিও প্রক্রিয়া শেষ করা হবে: ডিএসই চেয়ারম্যান

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণে নতুন নির্দেশনা

জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ

ছবি

ফুডির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলো স্কিটো

ছবি

বাজারে আসছে নতুন স্মার্টফোন ওয়ানপ্লাস নর্ড ৫ সিরিজ

ছবি

বাংলাদেশসহ ১৪ দেশে নতুন শুল্কের সময়সীমা ‘চূড়ান্ত নয়’ আলোচনার দরজা খোলা

ছবি

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

ছবি

বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে, ভারত ছয় নম্বরে

পাঁচ কার্যদিবসে বিদেশি ও প্রবাসী বিও হিসাব কমেছে প্রায় পাঁচশ’

সূচকের উত্থানে সপ্তাহ শুরু, লেনদেন ৫৭৩ কোটি

ছবি

ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন আদিল চৌধুরী

ছবি

খাদ্যপণ্যের দাম কমায় স্বস্তি, জুনে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৮.৪৮%

২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে গড় ব্যয় ৩০ পয়সা

রিটার্ন জমায় যেসব খাতে মিলবে করছাড়

ছবি

সেলসফোর্স বাজারে আনল এজেন্টফোর্স ৩ এআই এজেন্ট পরিচালনায় সহজ সমাধান

ছবি

আড়াই মাস পর ডিএসইএক্স ছুঁই ছুঁই পাঁচ হাজারের কাছে

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দর: বিদেশি অপারেটর আসার আগে এনসিটির ভার নিল ড্রাইডক

ছবি

স্থানীয় শিল্পে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার

ছবি

তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান টেক্সটাইল মালিকরা

বাজার মূলধনে যোগ হলো সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা

বিকাশ, রকেট, নগদসহ এমএফএসের মাধ্যমে শুল্ক-কর জমা দেয়া যাবে

ছবি

ব্রাদার পার্টনার ডে ২০২৫ অনুষ্ঠিত

ছবি

বিকাশ-রকেট-নগদে কাস্টমস শুল্ক পরিশোধ সুবিধা চালু, ঘরে বসেই পণ্য খালাসের পথ খুলল

ছবি

তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান ব্যবসায়ীরা

ছবি

কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে মাশুল বাড়বে না

tab

অর্থ-বাণিজ্য

খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ালো ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় সোয়া চার লাখ কোটি টাকায় উঠেছে। এই অঙ্ক বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক রবিবার খেলাপি ঋণের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। তিন মাস আগে গত বছরের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ।

তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় পৌনে এক লাখ কোটি টাকা, ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ছয় মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। আর এক বছরে বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯ কোটি টাকা

তার তিন মাস আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। জুন শেষে ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। মার্চ শেষে ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় পৌনে এক লাখ কোটি টাকা, ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ছয় মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। আর এক বছরে বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, বিতরণ করা ঋণের চার ভাগের এক ভাগই খেলাপি হয়ে পড়েছে।

৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। আর ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার বেড়ে হয়েছে ৪৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, যা ডিসেম্বরে ছিল ৪২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণের ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে, যা ডিসেম্বরে ছিল ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ।

মার্চ শেষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ হচ্ছে তিন লাখ ১৯ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। আর বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ ১৩ লাখ ১০ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এরপর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। অর্থনীতিবিদরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট হয়েছে, যার একটা বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে। আর তাতে বেড়েই চলেছে খেলাপি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘খেলাপি ঋণের কোনও তথ্য আমরা লুকিয়ে রাখব না। সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর এটা আদায় জোরদারের মাধ্যমে কমানো হবে। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করা হয়েছে। যে কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।’

নতুন বিতরণ করা ঋণ যেন খেলাপি না হয় সে জন্য বিভিন্ন আইনি কঠোরতা আনার কথাও বলেছিলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে প্রভাবশালীদের বড় অঙ্কের ঋণ দিতে নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কাগজে-কলমে কম দেখাতে নেওয়া হয়েছিল একের পর এক নীতি। সরকার পরিবর্তনের পর সেই নীতি থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ও সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া ব্যাংকগুলো ঋণের প্রকৃত চিত্র দেখাতে শুরু করেছে। তাদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেশি বেড়েছে। একইভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেশ বেড়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ, এস আলমসহ আরও কিছু বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। এতেও বেড়েছে খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, সরকার পতনের আগেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত মানতে গিয়ে গত বছরের মার্চ থেকে কৌশলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সুযোগ কমে এসেছে।

আবার তদারকি শিথিলতার কারণে এতদিন জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণ আর ফেরত আসছে না। সরকার পতনের পর এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ঘরনার ব্যবসায়ীদের অনেকেই পালিয়েছেন। এতে করে খেলাপি ঋণ আগামীতে আরও বাড়তে পারে বলে ব্যাংকারদের আশঙ্কা।

কোভিড মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে কোনও ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপিমুক্ত ছিলেন গ্রাহকেরা। ২০২২ সালে এসব নীতি ছাড় তুলে দেওয়ার পর ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের জুনে ব্যাংকঋণ পরিশোধে আবার ছাড় দেয়।

ওই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী জুন মাসের মধ্যে ঋণের কিস্তির অর্ধেক টাকা জমা দিলেই একজন গ্রাহককে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের ফলে যেসব ঋণ গ্রাহক খেলাপি হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছিলেন, তারা অর্ধেক টাকা জমা দিয়েই নিয়মিত গ্রাহক হিসেবে থাকার সুযোগ পান। এই সুবিধা দেওয়া হয় শুধু মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে।

ব্যাংক খাতের মোট ঋণের প্রায় অর্ধেকেই মেয়াদি ঋণ। এত সুবিধা দেওয়ার পরও খেলাপি কেবল বাড়ছেই; বরং বারবার ছাড় দেওয়ার কারণে ভালো গ্রাহকেরাও ঋণ পরিশোধে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে মনে করেন ব্যাংকাররা। তাদের মতে, এতে ব্যাংকগুলো তারল্যসংকটে পড়ছে এবং নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা হারাচ্ছে।

এদিকে গত বছর জাতীয় সংসদে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হয়। এর ফলে খেলাপিরাও ঋণ নেওয়ার সুযোগ পায়। আগে একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের কোনও প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হলে তাদের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ পাওয়ার সুযোগ ছিল না। নতুন এই আইনের কারণেও খেলাপি ঋণ বেড়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

back to top