alt

অর্থ-বাণিজ্য

দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতের বাজার প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) বলছে, বর্তমানে এ খাত বছরে গড়ে ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে, যা উচ্চমানের আমদানি করা খাদ্য উপকরণের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

দেশের শহরকেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনযাত্রার ধরনে এসেছে পরিবর্তন। বেড়েছে সুবিধাজনক ও সহজলভ্য খাবারের প্রতি আগ্রহ। ফলে দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতের বাজারও বাড়ছে। বর্তমানে বাজারমূল্য ছাড়িয়েছে আট বিলিয়ন ডলার। দেশে মূল্য সংযোজনকারী ফুড প্রসেসিং কোম্পানিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজারে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) বলছে, বর্তমানে এ খাত বছরে গড়ে ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে, যা উচ্চমানের আমদানি করা খাদ্য উপকরণের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে।

গত ১৬ জুন প্রকাশিত ইউএসডিএর এক্সপোর্টার গাইড বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের শহরকেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রমবর্ধমান চাহিদা, জীবনযাত্রার ধরনে পরিবর্তন ও সুবিধাজনক খাবারের প্রতি আগ্রহ এ প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি।

বাংলাদেশে আধুনিক ফুড রিটেইল বা খুচরা খাদ্য বিক্রয় খাতে বর্তমানে ৭৫০টির বেশি সুপারমার্কেট আউটলেট এবং প্রায় এক হাজার ছোট চেইন আউটলেট রয়েছে, যেগুলো বিভিন্ন কোম্পানির মালিকানাধীন। এছাড়া অনলাইন ফুড রিটেইলের জন্য সাতশটির বেশি ওয়েবসাইট ও অসংখ্য ফেসবুক পেজ সক্রিয়। এ খাতের বার্ষিক টার্নওভার ৬শ মিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশে বর্তমানে চার লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪টি হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে ৫১টি সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক চেইন হোটেল, দেশীয় হোটেল ও রিসোর্ট অন্তর্ভুক্ত। দেশে বর্তমানে ২০টি ফাইভ-স্টার, সাতটি ফোর-স্টার এবং ২৪টি থ্রি-স্টার হোটেল চালু রয়েছে। শীর্ষ হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা, দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা, লে মেরিডিয়ান ও র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেল।

বাংলাদেশে এখন নানা রকম তৈরি খাবারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। যেমন স্ন্যাকস, রেডি-টু-ইট মিল, ফ্রোজেন পণ্য, দুগ্ধজাত দ্রব্য ও পানীয়। এসব পণ্য উৎপাদনের জন্য উচ্চমানের আমদানি করা কাঁচামাল প্রয়োজন হচ্ছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ বিশ্ব থেকে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের ভোক্তাভিত্তিক কৃষিপণ্য আমদানি করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ খাতে রপ্তানি ছিল মাত্র ১২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার, যা মোট আমদানির ১ শতাংশেরও কম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আয় বৃদ্ধি, নগরায়ণ ও নারীদের কর্মজীবনে অংশগ্রহণের কারণে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। ফলে প্রক্রিয়াজাত ফলমূল, জুস, চকোলেট, বাদাম, মসলা, মাংস, চা, সস, দুগ্ধজাত দ্রব্য, বেকারি পণ্য ও রেডিমেড খাবারের চাহিদা বেড়েছে।

বাংলাদেশে দুগ্ধজাত পণ্যের বাজারের আকার প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার, যার বেশিরভাগই দেশীয় উৎপাদিত দুধ (প্রায় ১ দশকি ৪ কোটি মেট্রিক টন) দিয়ে পূরণ হয়। তবে প্রায় ৩ দশমিক ১১ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করা দুগ্ধজাত পণ্য মূল্য সংযোজন সেক্টরে ব্যবহৃত হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে এখন স্বাস্থ্যসচেতন ভোক্তার সংখ্যা বাড়ছে। ফলে প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য যেমন বাদাম, কফি, সস এবং অন্য প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উপকরণের চাহিদাও বাড়ছে। তবে প্রতিবেদনটি সতর্ক করে দিয়েছে যে, দুর্বল কোল্ড চেইন, জটিল কাস্টমস প্রক্রিয়া ও উচ্চ ট্যাক্স এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাতের চাহিদা ও ভোক্তার রুচির পরিবর্তন বিদেশি, মানসম্পন্ন খাদ্য উপকরণের জন্য একটি ভালো বাজার তৈরি করছে।

বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও আধুনিক রিটেইল বাজারের দ্রুত সম্প্রসারণ খাদ্য খাতে উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনার জন্ম দিচ্ছে। বিশেষ করে ফুড প্রসেসিং শিল্পে নিরাপদ ও উচ্চমানের উপাদানের চাহিদা বাড়ছে।

এই বাজারে ভোক্তামুখী খাদ্য আমদানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও নতুন পণ্যের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের জন্য ইতিবাচক।

তবে এই সম্ভাবনার পথে কিছু বড় বাধাও রয়েছে। ভোক্তামুখী খাদ্যপণ্যে উচ্চ আমদানি শুল্ক, দুর্বল বন্দর অবকাঠামো এবং সীমিত কোল্ড চেইন সুবিধা এ খাতের প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করছে। বর্তমানে দেশের ধীরগতিসম্পন্ন অর্থনীতি অনেকের ক্রয়ক্ষমতাকে প্রভাবিত করছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্যপণ্য বাজারে প্রবেশে অন্য প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করতে হচ্ছে, যা মার্কিন পণ্যের প্রসারে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞ, আমদানিকারক এবং দেশীয় উৎপাদকরা কর ও শুল্ক যৌক্তিক করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, কর কাঠামো সহজ ও বাস্তবসম্মত হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়বে এবং ভোক্তারা উন্নতমানের খাদ্যপণ্য আরও সহজে পাবে।

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে যেসব খাদ্যপণ্য বেশি রপ্তানি হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল দুগ্ধজাত পণ্য, যার রপ্তানি মূল্য ছিল ৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার। এরপর ছিল বাদাম জাতীয় পণ্য (ট্রি নাটস), যা রপ্তানি হয়েছে চার মিলিয়ন ডলারের। প্রস্তুত খাদ্য বা ফুড প্রিপারেশন পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারের। এছাড়া সস ও কনডিমেন্টস, যেমন টমেটো সস বা চাটনি জাতীয় পণ্য রপ্তানি হয়েছে শূন্য দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারের এবং প্রক্রিয়াজাত সবজি রপ্তানি হয়েছে শূন্য দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলারের। এই তথ্যগুলো থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের উন্নত ও প্রস্তুত খাদ্যপণ্যের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে।

চাহিদা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে খাদ্য উপাদান আমদানিতে প্রধান বাধা হচ্ছে উচ্চ কর। ডেইরি পণ্যে কর ৩১ শতাংশ থেকে ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত, ফুড প্রিপারেশনে ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, খেজুর জাতীয় ফলের ওপর প্রায় ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ফল ও সবজির জুসে সর্বোচ্চ ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ কর আরোপ করা হয়।

বিশেষজ্ঞ, আমদানিকারক এবং দেশীয় উৎপাদকরা কর ও শুল্ক যৌক্তিক করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, কর কাঠামো সহজ ও বাস্তবসম্মত হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়বে। ভোক্তারা উন্নতমানের খাদ্যপণ্য আরও সহজে পাবে।

বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় আরও ৭ এনবিআর কর্মকর্তা বরখাস্ত

সাড়ে ১৫ হাজার আয়কর মামলা অডিট করবে এনবিআর

এনবিআরের আন্দোলনে ক্ষতি নিরূপণে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি

এনবিআর চেয়ারম্যানকে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে মন্তব্য করায় নিরাপত্তা প্রহরী বরখাস্ত

বাজার স্থীতিশীল রাখতে দুই দিনে ৫০ কোটি ডলার কিনলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

এনবিআর আন্দোলনে ক্ষতির হিসাব করতে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনে মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা

ছবি

টানা চার দিন কমার পর ডলারের দাম বাড়লো ১ টাকা ৪০ পয়সা

ছবি

বদলির চিঠি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় ৮ কর কর্মকর্তা বরখাস্ত

রিটার্ন দিলেও কর দেন না ৩০ লাখ করদাতা

ছবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের কাজের দরপত্র ডাকা হবে না

ই-কমার্স ও ক্রাউডফান্ডিংয়ে সতর্ক থাকতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

এক লাখ ২০ হাজার ডলারের গণ্ডি ছাড়ালো বিটকয়েনের দাম

মূলধনি যন্ত্রের আমদানি কমেছে ১৯ শতাংশ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনা ‘ইতিবাচক’ তবে তা প্রকাশে অপারগ বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বমুখী ধারায় নতুন অর্থবছর শুরু

ছবি

বৈদেশিক লেনদেনে স্বস্তি, কমেছে ‘বাণিজ্য ঘাটতি’

ছবি

ডলারের দর কমায় নিলামে ১৭ কোটি ডলার কিনলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

সূচকের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় কমেছে লেনদেন

ছবি

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে নতুন মহাপরিচালকের যোগদান

ছবি

রিয়েলমি ১২ স্মার্টফোনে ৩০০০ টাকা ছাড়

দেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থায় আছে: বিশ্বব্যাংক

ছবি

সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীরসহ তিনজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ছবি

১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৪.২৪ শতাংশ, বেড়েছে রপ্তানি ও আমদানি

এক সপ্তাহে ডলারের দাম কমলো ২ টাকা ৯০ পয়সা

ছবি

জুনে ভারতে রপ্তানি কমেছে ৩২ শতাংশ

সূচকের পতন, কমেছে লেনদেনও

ছবি

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত-ঋণ-হিসাব বেড়েছে, কমেছে এজেন্ট-আউটলেট

ছবি

“বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা নয়, সত্য বলুন”—মোবাইল কোম্পানিগুলোর উদ্দেশে তৈয়্যব

‘সিন্ডিকেটের কবজায়’ এয়ারলাইন্সের টিকেট, অভিযোগ অ্যাটাবের

ছবি

২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে সরকারের ঋণ হবে সাড়ে ২৩ লাখ কোটি টাকা

পাল্টা শুল্কের শঙ্কায় বাংলাদেশ থেকে পোশাকের ক্রয়াদেশ পিছিয়েছে ওয়ালমার্ট

ছবি

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে

১০ হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধনে যোগ হলো শেয়ারবাজারে

ছবি

চার দিনের সফরে এসেছেন বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট

tab

অর্থ-বাণিজ্য

দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতের বাজার প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) বলছে, বর্তমানে এ খাত বছরে গড়ে ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে, যা উচ্চমানের আমদানি করা খাদ্য উপকরণের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

দেশের শহরকেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনযাত্রার ধরনে এসেছে পরিবর্তন। বেড়েছে সুবিধাজনক ও সহজলভ্য খাবারের প্রতি আগ্রহ। ফলে দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতের বাজারও বাড়ছে। বর্তমানে বাজারমূল্য ছাড়িয়েছে আট বিলিয়ন ডলার। দেশে মূল্য সংযোজনকারী ফুড প্রসেসিং কোম্পানিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজারে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) বলছে, বর্তমানে এ খাত বছরে গড়ে ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে, যা উচ্চমানের আমদানি করা খাদ্য উপকরণের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে।

গত ১৬ জুন প্রকাশিত ইউএসডিএর এক্সপোর্টার গাইড বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের শহরকেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রমবর্ধমান চাহিদা, জীবনযাত্রার ধরনে পরিবর্তন ও সুবিধাজনক খাবারের প্রতি আগ্রহ এ প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি।

বাংলাদেশে আধুনিক ফুড রিটেইল বা খুচরা খাদ্য বিক্রয় খাতে বর্তমানে ৭৫০টির বেশি সুপারমার্কেট আউটলেট এবং প্রায় এক হাজার ছোট চেইন আউটলেট রয়েছে, যেগুলো বিভিন্ন কোম্পানির মালিকানাধীন। এছাড়া অনলাইন ফুড রিটেইলের জন্য সাতশটির বেশি ওয়েবসাইট ও অসংখ্য ফেসবুক পেজ সক্রিয়। এ খাতের বার্ষিক টার্নওভার ৬শ মিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশে বর্তমানে চার লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪টি হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে ৫১টি সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক চেইন হোটেল, দেশীয় হোটেল ও রিসোর্ট অন্তর্ভুক্ত। দেশে বর্তমানে ২০টি ফাইভ-স্টার, সাতটি ফোর-স্টার এবং ২৪টি থ্রি-স্টার হোটেল চালু রয়েছে। শীর্ষ হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা, দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা, লে মেরিডিয়ান ও র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেল।

বাংলাদেশে এখন নানা রকম তৈরি খাবারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। যেমন স্ন্যাকস, রেডি-টু-ইট মিল, ফ্রোজেন পণ্য, দুগ্ধজাত দ্রব্য ও পানীয়। এসব পণ্য উৎপাদনের জন্য উচ্চমানের আমদানি করা কাঁচামাল প্রয়োজন হচ্ছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ বিশ্ব থেকে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের ভোক্তাভিত্তিক কৃষিপণ্য আমদানি করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ খাতে রপ্তানি ছিল মাত্র ১২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার, যা মোট আমদানির ১ শতাংশেরও কম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আয় বৃদ্ধি, নগরায়ণ ও নারীদের কর্মজীবনে অংশগ্রহণের কারণে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। ফলে প্রক্রিয়াজাত ফলমূল, জুস, চকোলেট, বাদাম, মসলা, মাংস, চা, সস, দুগ্ধজাত দ্রব্য, বেকারি পণ্য ও রেডিমেড খাবারের চাহিদা বেড়েছে।

বাংলাদেশে দুগ্ধজাত পণ্যের বাজারের আকার প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার, যার বেশিরভাগই দেশীয় উৎপাদিত দুধ (প্রায় ১ দশকি ৪ কোটি মেট্রিক টন) দিয়ে পূরণ হয়। তবে প্রায় ৩ দশমিক ১১ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করা দুগ্ধজাত পণ্য মূল্য সংযোজন সেক্টরে ব্যবহৃত হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে এখন স্বাস্থ্যসচেতন ভোক্তার সংখ্যা বাড়ছে। ফলে প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য যেমন বাদাম, কফি, সস এবং অন্য প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উপকরণের চাহিদাও বাড়ছে। তবে প্রতিবেদনটি সতর্ক করে দিয়েছে যে, দুর্বল কোল্ড চেইন, জটিল কাস্টমস প্রক্রিয়া ও উচ্চ ট্যাক্স এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাতের চাহিদা ও ভোক্তার রুচির পরিবর্তন বিদেশি, মানসম্পন্ন খাদ্য উপকরণের জন্য একটি ভালো বাজার তৈরি করছে।

বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও আধুনিক রিটেইল বাজারের দ্রুত সম্প্রসারণ খাদ্য খাতে উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনার জন্ম দিচ্ছে। বিশেষ করে ফুড প্রসেসিং শিল্পে নিরাপদ ও উচ্চমানের উপাদানের চাহিদা বাড়ছে।

এই বাজারে ভোক্তামুখী খাদ্য আমদানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও নতুন পণ্যের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের জন্য ইতিবাচক।

তবে এই সম্ভাবনার পথে কিছু বড় বাধাও রয়েছে। ভোক্তামুখী খাদ্যপণ্যে উচ্চ আমদানি শুল্ক, দুর্বল বন্দর অবকাঠামো এবং সীমিত কোল্ড চেইন সুবিধা এ খাতের প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করছে। বর্তমানে দেশের ধীরগতিসম্পন্ন অর্থনীতি অনেকের ক্রয়ক্ষমতাকে প্রভাবিত করছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্যপণ্য বাজারে প্রবেশে অন্য প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করতে হচ্ছে, যা মার্কিন পণ্যের প্রসারে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞ, আমদানিকারক এবং দেশীয় উৎপাদকরা কর ও শুল্ক যৌক্তিক করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, কর কাঠামো সহজ ও বাস্তবসম্মত হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়বে এবং ভোক্তারা উন্নতমানের খাদ্যপণ্য আরও সহজে পাবে।

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে যেসব খাদ্যপণ্য বেশি রপ্তানি হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল দুগ্ধজাত পণ্য, যার রপ্তানি মূল্য ছিল ৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার। এরপর ছিল বাদাম জাতীয় পণ্য (ট্রি নাটস), যা রপ্তানি হয়েছে চার মিলিয়ন ডলারের। প্রস্তুত খাদ্য বা ফুড প্রিপারেশন পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারের। এছাড়া সস ও কনডিমেন্টস, যেমন টমেটো সস বা চাটনি জাতীয় পণ্য রপ্তানি হয়েছে শূন্য দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারের এবং প্রক্রিয়াজাত সবজি রপ্তানি হয়েছে শূন্য দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলারের। এই তথ্যগুলো থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের উন্নত ও প্রস্তুত খাদ্যপণ্যের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে।

চাহিদা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে খাদ্য উপাদান আমদানিতে প্রধান বাধা হচ্ছে উচ্চ কর। ডেইরি পণ্যে কর ৩১ শতাংশ থেকে ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত, ফুড প্রিপারেশনে ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, খেজুর জাতীয় ফলের ওপর প্রায় ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ফল ও সবজির জুসে সর্বোচ্চ ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ কর আরোপ করা হয়।

বিশেষজ্ঞ, আমদানিকারক এবং দেশীয় উৎপাদকরা কর ও শুল্ক যৌক্তিক করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, কর কাঠামো সহজ ও বাস্তবসম্মত হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়বে। ভোক্তারা উন্নতমানের খাদ্যপণ্য আরও সহজে পাবে।

back to top