alt

অর্থ-বাণিজ্য

জুনে পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৩ বিলিয়নের বাজেট সহায়তা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

কয়দিন পরই শেষ হচ্ছে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর। এর মধ্যেই বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৩৫০ কোটি (৩.৫০ বিলিয়ন) ডলারের বেশি বাজেট সহায়তা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯০ কোটি ডলার দিচ্ছে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। আর বিশ্ব ব্যাংক দিচ্ছে ৫০ কোটি ডলার। এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছ থেকে পাওয়া যাবে ৪০ কোটি ডলার। জাপান সরকার দিচ্ছে ৪১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ওপেক ফান্ডের কাছ থেকে মিলছে ১০ কোটি ডলার।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আলোচিত ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের দুই কিস্তির (চতুর্থ ও পঞ্চম) ১৩০ কোটি (১.৩ বিলিয়ন) ডলারও পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে এই ছয় উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে ৩৬২ কোটি (৩.৬২ বিলিয়ন) ডলারের বড় অঙ্কের ঋণের সবই চলতি জুন মাসের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানিয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৪৪ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা।

সঙ্কট কাটাতে কম সুদের মোটা অঙ্কের এই ঋণ সহায়তা করবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ঋণের খুবই দরকার ছিল। বেশ কিছুদিন ধরে চাপের মধ্যে থাকা বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বাড়বে। অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসতে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশকে যে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক, বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে এই অর্থের পরিমাণ ৬ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। গত শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এ ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও স্থিতিশীলতা বাড়াতে এই অর্থ খরচ করা হবে।

একদিন আগে বৃহস্পতিবার সংস্থাটির বোর্ড সভায় ৬৪ কোটি ডলারের আরেকটি ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন হয়। তা দেওয়া হবে দুটি প্রকল্পের আওতায়। জ্বালানি খাতের নিরাপত্তা জোরদার প্রকল্পে ৩৫ কোটি ডলার এবং বায়ুমান উন্নয়ন প্রকল্পে ২৯ কোটি ডলার। বৃহস্পতিবার ৯০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা অনুমোদন দেয় এডিবি।

বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১১ হাজার ৭০ কোটি টাকা। ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় এডিবির বোর্ড সভায় এই ঋণ অনুমোদনের পরদিন ঢাকায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে এই ঋণের চুক্তিপত্র সই হয়।

এডিবির ৯০ কোটি ডলার ও বিশ্ব ব্যাংকের ৫০ কোটি ডলার—মোট ১৪০ কোটি (১.৪ বিলিয়ন) ডলার বাজেট সহায়তা চলতি জুন মাসেই বাংলাদেশ পাবে বলে ইআরডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এছাড়া ২৩ জুন সোমবার আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে সংস্থাটির চলমান ৪৭০ কোটি (৪.৭০ বিলিয়ন) ডলার ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির (চতুর্থ ও পঞ্চম) ১৩০ কোটি (১.৩০ বিলিয়ন) ডলার ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের সূচি রয়েছে।

অনেক আগেই এই দুই কিস্তির ঋণ অনুমোদের কথা ছিল। কিন্তু আইএমএফের কথামতো শর্ত পূরণ না করায় এই ঋণ অনুমোদন দেয়নি সংস্থাটি। আইএমএফের প্রধান শর্ত ছিল টাকা-ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। দীর্ঘদিন ধরেই এই শর্তটি দিয়ে আসছিল সংস্থাটি। শেষ পর্যন্ত গত ১৪ মে টাকা-ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই শর্ত পূরণ করায় সোমবার অনুষ্ঠিত আইএমএফের বোর্ড সভায় চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন পাবে বলে জোর দিয়ে বলেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ৪০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দিচ্ছে। ‘ক্লাইমেট রিসপন্সিভ ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (সিআরইডি)- সাবপ্রোগ্রাম-২’ এর অধীনে এই ঋণ দেবে সংস্থাটি।

গত ২৩ জুন চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে এআইআইবির সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সংস্থাটির বোর্ড সভায় এই ঋণ অনুমোদন হবে বলে ইআরডির কর্মকর্তা জানিয়েছেন। পরের দিন ২৪ জুন (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এই ঋণের চুক্তিপত্র সই হবে। এই অর্থও জুন মাসের মধ্যেই পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন ইআরডির কর্মকর্তারা। মে মাসের শেষদিকে প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরের পর বাংলাদেশ ৪১ কোটি ৮০ লাখ ডলার বাজেট সহায়তার ঋণ নিশ্চিত করেছে। জাপান সরকার জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) মাধ্যমে ‘ডেভেলপমেন্ট পলিসি লোন ফর ইকোনমিক রিফর্ম অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়েন্স’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য এই ঋণ দেবে। এই ঋণও চলতি জুন মাসের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে ইআরডি কর্মকর্তারা জানান।

এছাড়া ১০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দিচ্ছে ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট। ‘স্ট্রেংদেনিং ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড গভর্ন্যান্স প্রোগ্রাম’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই ঋণ দেবে সংস্থাটি। গত এপ্রিলে বাংলাদেশ সরকার ও ওপেক ফান্ড এর সঙ্গে এ সংক্রান্ত একটি ঋণচুক্তি সই হয়। ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, ওপেক ফান্ডের এদেশে স্থানীয় অফিস না থাকায় কিছু প্রশাসনিক জটিলতায় অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হয়েছে। সেই জটিলতা কাটিয়ে এই ঋণটিও জুন মাসের মধ্যেই রিজার্ভে যোগ হবে।

৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ পর্যন্ত ১১০ কোটি (১.১ বিলিয়ন) বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৫০ কোটি ডলার দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। গত বছরের ডিসেম্বরে ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেন্ট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’ প্রকল্পের আওতায় এই ঋণ দিয়েছে সংস্থাটি। আর চলতি মাসের শুরুতে ‘স্ট্রেংদেনিং ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (সাবপ্রোগ্রাম-১)’ প্রকল্পের আওতায় এডিবি ৬০ কোটি ডলার দিয়েছে। মূলত বাংলাদেশ কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে বাজেট সহায়তা নেওয়া শুরু করে এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরে যা গতি পায়।

ইআরডি’র তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে বাংলাদেশ ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১ বিলিয়ন ডলার, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১ দশমিক শূন্য নয় বিলিয়ন ডলার, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন এবং গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২ দশমিক শূন্য তিন ডলার বাজেটে সহায়তা পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, ১৯ জুন বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৩৯বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।

ছয় উন্নয়ন সংস্থার ঋণ যোগ হলে রিজার্ভ আরও বাড়বে বলে হিসাব বলছে। তবে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়িারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ খানিকটা কমে আসবে। মার্কিন ডলারের জোগান বাড়াতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাজেট সহায়তার দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। আগের সরকারের আমলেও বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে ১২০ কোটি (১.২ বিলিয়ন) ডলারের বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছিল।

দাতারা প্রকল্প সহায়তার পাশাপাশি বাজেট সহায়তাও দিয়ে থাকে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ হিসেবে সহায়তা দেয় তারা। এ ছাড়া সরকারকে অনেকটা নগদ অর্থ হিসেবে বাজেট সহায়তা দেয়। এ জন্য অবশ্য নানা ধরনের সংস্কারের শর্তও দিয়ে থাকে দাতারা।

ছবি

টানা চার দিন কমার পর ডলারের দাম বাড়লো ১ টাকা ৪০ পয়সা

ছবি

বদলির চিঠি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় ৮ কর কর্মকর্তা বরখাস্ত

রিটার্ন দিলেও কর দেন না ৩০ লাখ করদাতা

ছবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের কাজের দরপত্র ডাকা হবে না

ই-কমার্স ও ক্রাউডফান্ডিংয়ে সতর্ক থাকতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

এক লাখ ২০ হাজার ডলারের গণ্ডি ছাড়ালো বিটকয়েনের দাম

মূলধনি যন্ত্রের আমদানি কমেছে ১৯ শতাংশ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনা ‘ইতিবাচক’ তবে তা প্রকাশে অপারগ বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বমুখী ধারায় নতুন অর্থবছর শুরু

ছবি

বৈদেশিক লেনদেনে স্বস্তি, কমেছে ‘বাণিজ্য ঘাটতি’

ছবি

ডলারের দর কমায় নিলামে ১৭ কোটি ডলার কিনলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

সূচকের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় কমেছে লেনদেন

ছবি

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে নতুন মহাপরিচালকের যোগদান

ছবি

রিয়েলমি ১২ স্মার্টফোনে ৩০০০ টাকা ছাড়

দেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থায় আছে: বিশ্বব্যাংক

ছবি

সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীরসহ তিনজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ছবি

১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৪.২৪ শতাংশ, বেড়েছে রপ্তানি ও আমদানি

এক সপ্তাহে ডলারের দাম কমলো ২ টাকা ৯০ পয়সা

ছবি

জুনে ভারতে রপ্তানি কমেছে ৩২ শতাংশ

সূচকের পতন, কমেছে লেনদেনও

ছবি

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত-ঋণ-হিসাব বেড়েছে, কমেছে এজেন্ট-আউটলেট

ছবি

“বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা নয়, সত্য বলুন”—মোবাইল কোম্পানিগুলোর উদ্দেশে তৈয়্যব

‘সিন্ডিকেটের কবজায়’ এয়ারলাইন্সের টিকেট, অভিযোগ অ্যাটাবের

ছবি

২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে সরকারের ঋণ হবে সাড়ে ২৩ লাখ কোটি টাকা

পাল্টা শুল্কের শঙ্কায় বাংলাদেশ থেকে পোশাকের ক্রয়াদেশ পিছিয়েছে ওয়ালমার্ট

ছবি

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে

১০ হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধনে যোগ হলো শেয়ারবাজারে

ছবি

চার দিনের সফরে এসেছেন বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট

বিটকয়েনের দাম ১ লাখ ১৬ হাজার ডলার ছাড়ালো

ছবি

বাংলাদেশে উন্মোচিত হলো টেকনো স্পার্ক ৪০ এবং স্পার্ক ৪০ প্রো

ছবি

বাজারে লেনোভোর আইডিয়াপ্যাড স্লিম ৩ আই সিরিজের নতুন পাঁচটি ল্যাপটপ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীন ও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে

তিন কারণে পণ্য রপ্তানিতে আগের মতোই প্রণোদনা পাবেন ব্যবসায়ীরা

ছবি

টানা ৭ মাস বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে

পাল্টা শুল্ক নিয়ে চার উপদেষ্টাকে উদ্বেগ জানালেন ব্যবসায়ীরা

tab

অর্থ-বাণিজ্য

জুনে পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৩ বিলিয়নের বাজেট সহায়তা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

কয়দিন পরই শেষ হচ্ছে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর। এর মধ্যেই বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৩৫০ কোটি (৩.৫০ বিলিয়ন) ডলারের বেশি বাজেট সহায়তা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯০ কোটি ডলার দিচ্ছে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। আর বিশ্ব ব্যাংক দিচ্ছে ৫০ কোটি ডলার। এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছ থেকে পাওয়া যাবে ৪০ কোটি ডলার। জাপান সরকার দিচ্ছে ৪১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ওপেক ফান্ডের কাছ থেকে মিলছে ১০ কোটি ডলার।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আলোচিত ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের দুই কিস্তির (চতুর্থ ও পঞ্চম) ১৩০ কোটি (১.৩ বিলিয়ন) ডলারও পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে এই ছয় উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে ৩৬২ কোটি (৩.৬২ বিলিয়ন) ডলারের বড় অঙ্কের ঋণের সবই চলতি জুন মাসের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানিয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৪৪ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা।

সঙ্কট কাটাতে কম সুদের মোটা অঙ্কের এই ঋণ সহায়তা করবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ঋণের খুবই দরকার ছিল। বেশ কিছুদিন ধরে চাপের মধ্যে থাকা বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বাড়বে। অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসতে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশকে যে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক, বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে এই অর্থের পরিমাণ ৬ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। গত শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এ ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও স্থিতিশীলতা বাড়াতে এই অর্থ খরচ করা হবে।

একদিন আগে বৃহস্পতিবার সংস্থাটির বোর্ড সভায় ৬৪ কোটি ডলারের আরেকটি ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন হয়। তা দেওয়া হবে দুটি প্রকল্পের আওতায়। জ্বালানি খাতের নিরাপত্তা জোরদার প্রকল্পে ৩৫ কোটি ডলার এবং বায়ুমান উন্নয়ন প্রকল্পে ২৯ কোটি ডলার। বৃহস্পতিবার ৯০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা অনুমোদন দেয় এডিবি।

বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১১ হাজার ৭০ কোটি টাকা। ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় এডিবির বোর্ড সভায় এই ঋণ অনুমোদনের পরদিন ঢাকায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে এই ঋণের চুক্তিপত্র সই হয়।

এডিবির ৯০ কোটি ডলার ও বিশ্ব ব্যাংকের ৫০ কোটি ডলার—মোট ১৪০ কোটি (১.৪ বিলিয়ন) ডলার বাজেট সহায়তা চলতি জুন মাসেই বাংলাদেশ পাবে বলে ইআরডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এছাড়া ২৩ জুন সোমবার আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে সংস্থাটির চলমান ৪৭০ কোটি (৪.৭০ বিলিয়ন) ডলার ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির (চতুর্থ ও পঞ্চম) ১৩০ কোটি (১.৩০ বিলিয়ন) ডলার ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের সূচি রয়েছে।

অনেক আগেই এই দুই কিস্তির ঋণ অনুমোদের কথা ছিল। কিন্তু আইএমএফের কথামতো শর্ত পূরণ না করায় এই ঋণ অনুমোদন দেয়নি সংস্থাটি। আইএমএফের প্রধান শর্ত ছিল টাকা-ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। দীর্ঘদিন ধরেই এই শর্তটি দিয়ে আসছিল সংস্থাটি। শেষ পর্যন্ত গত ১৪ মে টাকা-ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই শর্ত পূরণ করায় সোমবার অনুষ্ঠিত আইএমএফের বোর্ড সভায় চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন পাবে বলে জোর দিয়ে বলেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ৪০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দিচ্ছে। ‘ক্লাইমেট রিসপন্সিভ ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (সিআরইডি)- সাবপ্রোগ্রাম-২’ এর অধীনে এই ঋণ দেবে সংস্থাটি।

গত ২৩ জুন চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে এআইআইবির সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সংস্থাটির বোর্ড সভায় এই ঋণ অনুমোদন হবে বলে ইআরডির কর্মকর্তা জানিয়েছেন। পরের দিন ২৪ জুন (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এই ঋণের চুক্তিপত্র সই হবে। এই অর্থও জুন মাসের মধ্যেই পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন ইআরডির কর্মকর্তারা। মে মাসের শেষদিকে প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরের পর বাংলাদেশ ৪১ কোটি ৮০ লাখ ডলার বাজেট সহায়তার ঋণ নিশ্চিত করেছে। জাপান সরকার জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) মাধ্যমে ‘ডেভেলপমেন্ট পলিসি লোন ফর ইকোনমিক রিফর্ম অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়েন্স’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য এই ঋণ দেবে। এই ঋণও চলতি জুন মাসের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে ইআরডি কর্মকর্তারা জানান।

এছাড়া ১০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দিচ্ছে ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট। ‘স্ট্রেংদেনিং ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড গভর্ন্যান্স প্রোগ্রাম’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই ঋণ দেবে সংস্থাটি। গত এপ্রিলে বাংলাদেশ সরকার ও ওপেক ফান্ড এর সঙ্গে এ সংক্রান্ত একটি ঋণচুক্তি সই হয়। ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, ওপেক ফান্ডের এদেশে স্থানীয় অফিস না থাকায় কিছু প্রশাসনিক জটিলতায় অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হয়েছে। সেই জটিলতা কাটিয়ে এই ঋণটিও জুন মাসের মধ্যেই রিজার্ভে যোগ হবে।

৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ পর্যন্ত ১১০ কোটি (১.১ বিলিয়ন) বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৫০ কোটি ডলার দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। গত বছরের ডিসেম্বরে ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেন্ট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’ প্রকল্পের আওতায় এই ঋণ দিয়েছে সংস্থাটি। আর চলতি মাসের শুরুতে ‘স্ট্রেংদেনিং ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (সাবপ্রোগ্রাম-১)’ প্রকল্পের আওতায় এডিবি ৬০ কোটি ডলার দিয়েছে। মূলত বাংলাদেশ কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে বাজেট সহায়তা নেওয়া শুরু করে এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরে যা গতি পায়।

ইআরডি’র তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে বাংলাদেশ ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১ বিলিয়ন ডলার, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১ দশমিক শূন্য নয় বিলিয়ন ডলার, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন এবং গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২ দশমিক শূন্য তিন ডলার বাজেটে সহায়তা পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, ১৯ জুন বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৩৯বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।

ছয় উন্নয়ন সংস্থার ঋণ যোগ হলে রিজার্ভ আরও বাড়বে বলে হিসাব বলছে। তবে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়িারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ খানিকটা কমে আসবে। মার্কিন ডলারের জোগান বাড়াতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাজেট সহায়তার দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। আগের সরকারের আমলেও বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে ১২০ কোটি (১.২ বিলিয়ন) ডলারের বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছিল।

দাতারা প্রকল্প সহায়তার পাশাপাশি বাজেট সহায়তাও দিয়ে থাকে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ হিসেবে সহায়তা দেয় তারা। এ ছাড়া সরকারকে অনেকটা নগদ অর্থ হিসেবে বাজেট সহায়তা দেয়। এ জন্য অবশ্য নানা ধরনের সংস্কারের শর্তও দিয়ে থাকে দাতারা।

back to top