alt

দেশের ব্যবসার পরিবেশে তেমন উন্নতি হয়নি: বিবিএক্স জরিপ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

২০২৪-২৫ অর্থবছরের ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে ব্যবসা পরিবেশ সূচক প্রকাশ করেছে মেট্রো চেম্বার ও পলিসি এক্সচেঞ্জ। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন হাতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনসহ অন্য অতিথিরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পুলিশ প্লাজায় মেট্রো চেম্বার মিলনায়তনে।

বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশে বলার মতো কোনো উন্নতি হয়নি। উল্টো গত এক বছরে আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তি, অবকাঠামোসুবিধা, শ্রম নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্য সহজীকরণ, প্রযুক্তি গ্রহণ এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান, এই ছয় সূচকে পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়েছে

বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশে বলার মতো কোনো উন্নতি হয়নি। উল্টো গত এক বছরে আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তি, অবকাঠামোসুবিধা, শ্রম নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্য সহজীকরণ, প্রযুক্তি গ্রহণ এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান, এই ছয় সূচকে পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়েছে। তবে ব্যবসা শুরু, জমি প্রাপ্তি, বিরোধ নিষ্পত্তি, কর পরিশোধ ও ঋণের প্রাপ্যতা সূচকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ব্যবসা পরিবেশ সূচক বা ক্লাইমেট ইনডেক্সে (বিবিএক্স) এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এবার দেশের ব্যবসা পরিবেশ সূচকে অর্জিত পয়েন্ট ৫৯ দশমিক ৬৯। তার মানে হচ্ছে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিবেশ চ্যালেঞ্জিং। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অর্জিত পয়েন্ট ছিল ৫৮ দশমিক ৭৫। সেই হিসাবে গত এক বছরে ব্যবসা পরিবেশ সূচকের মান শূন্য দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বাড়লেও চ্যালেঞ্জিং অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটেনি।

বিবিএক্সের প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, বিনিয়োগের অনিশ্চয়তা, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ, ব্যাংকঋণের সুদের হার বৃদ্ধি ও বিনিময় হারের অস্থিরতার কারণে বিদায়ী অর্থবছরে ব্যবসার পরিবেশ চ্যালেঞ্জিং অবস্থায় রয়েছে। যদিও গত বছরের আগস্টে ছাত্র আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। তারপর দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

চতুর্থবারের মতো বিবিএক্স জরিপ করেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ। রাজধানীর গুলশানে এমসিসিআইয়ের কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

অনুষ্ঠানে বিবিএক্স প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের এমডি রূপালী চৌধুরী, জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) বাংলাদেশের প্রতিনিধি কাজুয়াকি কাতাওকা ও ঢাকার অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশনার বেন কারসন।

ব্যবসা শুরু, জমির প্রাপ্যতা, আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তি, অবকাঠামোসুবিধা, শ্রম নিয়ন্ত্রণ, বিরোধ নিষ্পত্তি, বাণিজ্য সহজীকরণ, কর পরিশোধ, প্রযুক্তি গ্রহণ, ঋণের প্রাপ্যতা এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান, এই ১১ সূচকের ওপর ভিত্তি করে জরিপটি করা হয়েছে। এই ১১ সূচকের মধ্যে বিদায়ী অর্থবছরে ছয়টি সূচকের অবনতি হয়েছে। উন্নতি হয়েছে পাঁচ সূচকের। মূলত খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা, পরিবহন, নির্মাণ, ইলেকট্রনিকস ও হালকা প্রকৌশল, চামড়া ও ট্যানারি, কৃষি ও বনায়ন, আবাসন, খাদ্য ও পানীয়, ওষুধ ও রাসায়নিক, তৈরি পোশাক, বস্ত্র এবং আর্থিক মধ্যস্থতাকারী- এই ১২ খাতের ওপর জরিপটি করা হয়।

বিবিএক্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোনো সূচকের মান ১০০ নম্বরের মধ্যে ০-৪০ হলে ব্যবসার পরিবেশ কঠিন, মান ৪১ থেকে ৬০ হলে ব্যবসায় বেশ কিছু বাধা রয়েছে, মান ৬১ থেকে ৮০ হলে পরিবেশ উন্নতির দিকে এবং মান ৮১ থেকে ১০০ হলে পরিবেশ ব্যবসাবান্ধব।

এ দেশের ব্যবসা–বাণিজ্যের পরিবেশ নিয়ে টানা দেড় দশক ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ বা সহজে ব্যবসা সূচক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বের ১৯০টি দেশ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটি তৈরিতে অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় ২০২০ সালের পর প্রতিবেদনটি প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৮তম। ২০২০ সালে সংস্থাটির ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৪৫।

এবারের বিবিএক্সের জরিপ অনুযায়ী, ১১টি সূচকের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে খারাপ করেছে ঋণের প্রাপ্যতা সূচকে, প্রাপ্ত নম্বর ৪০ দশমিক ০৭। যদিও সূচকটির নম্বর আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই সূচকে প্রাপ্ত নম্বর ছিল ২৮ দশমিক ১১। বিদায়ী অর্থবছরে ব্যবসা শুরুর সূচকেরও উন্নতি হয়েছে। এই সূচকে প্রাপ্ত নম্বর ৬৪ দশমিক ৭২, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৬২ দশমিক ৭৪। এ ছাড়া বিদায়ী অর্থবছর জমির প্রাপ্যতা সূচকের প্রাপ্ত নম্বর বেড়ে ৫৪ দশমিক ১০; বিরোধ নিষ্পত্তি সূচকের নম্বর ৬৪ দশমিক ৭৩; কর পরিশোধ সূচকের নম্বর বেড়ে হয়েছে ৫৫ দশমিক ৩৮।

জরিপের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছর ব্যবসায়িক অবকাঠামো সূচকের অবনতি হয়েছে। এই সূচকের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮ দশমিক ৮২, যা আগের বছর ছিল ৭১ দশমিক ০৮। বিবিএক্সের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমানে লোডশেডিং সব খাতের জন্য গুরুতর সমস্যা। গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ পেতে অনানুষ্ঠানিক অর্থ প্রদানের মতো ঘটনা ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে তুলছে।

এ ছাড়া অবনতি হয়েছে আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তি সূচকের, প্রাপ্ত নম্বর ৬৭ দশমিক ৭০, শ্রম নিয়ন্ত্রণ সূচকের নম্বর কমে ৬৮ দশমিক শূন্য ৯২, বাণিজ্য সহজীকরণ সূচকের নম্বর ৫৯ দশমিক ৫৬; প্রযুক্তি গ্রহণ সূচক ৬২ দশমিক ৪৬ এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান সূচকে প্রাপ্ত নম্বর ৫০ দশমিক ১৮।

বিবিএক্সের তথ্যানুযায়ী, দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে ব্যবসার পরিবেশ ভালো বরিশালে। বিদায়ী অর্থবছর বরিশালে ব্যবসার পরিবেশ সূচকে অর্জিত পয়েন্ট ৬২ দশমিক ৮। তারপর সিলেটে ৬১ দশমিক ৫, ময়মনসিংহে ৬১ দশমিক ৫, চট্টগ্রামে ৬০ দশমিক ১, রাজশাহীতে ৫৯ দশমিক ৫, ঢাকায় ৫৯, খুলনায় ৫৮ দশমিক ৮ এবং রংপুরে ৫৬ দশমিক ৯ পয়েন্ট।

আগামী বছর ব্যাংক ঋণের সুদহার কমবে: বাণিজ্য উপদেষ্টার

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার ব্যবসার জন্য বাধা। আগামী বছরের শুরুর দিকে সুদের হার কমবে। কমার হার হবে অনেক। এনবিআরের নিরীক্ষা কোনো সমস্যা না। তবে নিরীক্ষা কী প্রক্রিয়ায় হচ্ছে, সেটি সমস্যা। যখন আপনি নিরীক্ষার বিরুদ্ধে কথা বলবেন, তখন মনে হবে আপনি কমপ্লায়েন্স মানতে চাইছেন না।’ তিনি ব্যবসায়ীদের কমপ্লায়েন্স মানার অনুরোধ জানান।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘দুর্নীতিও ব্যবসার জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা। পৃথিবীর সব জায়গাতেই দুর্নীতি আছে। আমরা দুর্নীতির পথকে কঠিন করে তুলতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তিনটি মন্ত্রণালয় সমন্বয় করছি। সেখানে কিছু হলে সুনির্দিষ্ট করে বলুন। আমি ব্যবস্থা নেব।’

এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, ‘বিবিএক্স বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরছে। এটি নীতিনির্ধারক, বিনিয়োগকারী ও উন্নয়ন অংশীদারদের দেশের বেসরকারি খাতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ উভয়ই বুঝতে সাহায্য করে।’

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। অবিলম্বে সেদিকে নজর দেওয়া ও সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া প্রয়োজন।’

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না এলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা আসবে না। বিনিয়োগ হবে না। আমদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও বাড়বে না।’

বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের এমডি রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘বছরের পর বছর ব্যবসায় লোকসান দেখানোর কারণেই কিন্তু ন্যূনতম করপোরেট কর বসেছে। কষ্ট হলেও আমাদের কমপ্লায়েন্ট হতে হবে। আমাদের একজন আরেকজনকে বিশ্বাস করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) বাংলাদেশের প্রতিনিধি কাজুয়াকি কাতাওকা ও ঢাকার অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশনার বেন কারসন।

ছবি

এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বাড়লো ৪০ টাকা, সবজি কিছুটা নিম্নমুখী

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীর ক্ষতিপূরণ বিবেচনা করতে পারে সরকার

ছবি

সমন্বিত ঋণ ব্যবস্থাপনা অফিস প্রতিষ্ঠার সুপারিশ আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের

ছবি

নভেম্বরের প্রথম পাঁচ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৮ কোটি ডলার

ছবি

কানাডায় তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়াতে এক সঙ্গে কাজ করবে বিবিসিসি ও বিজিএমইএ

ছবি

নগদ লভ্যাংশ পেল বীমা খাতের বিনিয়োগকারীরা

ছবি

বিএসইসির নতুন মার্জিন রুলসের গেজেট প্রকাশ

ছবি

মিরসরাইয়ে চার প্রতিষ্ঠানের ১১ কোটি ডলারের বিনিয়োগ

এক বছরের অভিজ্ঞতা ও ৫ লাখ টাকার বিনিয়োগ ছাড়া মিলবে না মার্জিন ঋণ

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত, যেভাবে টাকা ফেরত পাবেন আমানতকারীরা

ছবি

অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নর পদত্যাগ না করলে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাওয়ের হুমকি

ছবি

সূচকের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় কমেছে লেনদেন

ছবি

ই-কমার্স রপ্তানির সীমা দ্বিগুণ, ওয়ালেটে অর্থ আনার সুবিধা

ছবি

পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি আমদানির প্রস্তাব

ছবি

তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে চায় আইএমএফ

ছবি

কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়োগকৃত প্রশাসক পাঁচ ব্যাংক একীভূত করবে, আমানতকারীরা নিরাপদ

ছবি

মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে, ৩৯ মাসে সর্বনিম্ন

ছবি

ডিএসইএক্স সূচক ৪ মাস পর পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে

ছবি

আর্থিক সংকটে থাকা শরিয়াহভিত্তিক ৫ ব্যাংকের বোর্ড বাতিল

ছবি

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন না হলে খাদ্য সংকট বাড়বে: কর্মশালায় বক্তারা

ছবি

জার্মান রাষ্ট্রদূত ও বিজিএমইএ সভাপতির সৌজন্য সাক্ষাৎ

ছবি

বন্ড ছেড়ে ২৫০০ কোটি টাকা তুলবে সরকার

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ বিলিয়ন ডলারে সয়াবিন কিনবে তিন প্রতিষ্ঠান

ছবি

জাপানি উপকরণ ও প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ শুরু

ছবি

বাংলাদেশে তুলা রপ্তানিতে জটিলতার সমাধান চান যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা

ছবি

টানা তিন মাস কমলো দেশের পণ্য রপ্তানি

ছবি

শেয়ারবাজারে দরপতন চলছেই

ছবি

ডিজিটাল ব্যাংক খুলতে চায় ১২ প্রতিষ্ঠান

ছবি

নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর সমন্বয় ছাড়া আর্থিক খাতের সংস্কার টেকসই হবে না, আলোচনায় বক্তারা

ছবি

বে টার্মিনাল চালু হলে আমদানি-রপ্তানি খাতে নতুন যুগের সূচনা হবে: বন্দর চেয়ারম্যান

ছবি

সূচকের পতনে দাম কমল ৩০০ কোম্পানির

ছবি

বিদেশী ঋণের ১৯০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে সামিট মেঘনাঘাট

ছবি

বাজুসের নতুন সভাপতি এনামুল

ছবি

পরপর দুই মাস রেমিট্যান্স এসেছে আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি

ছবি

ডিজিটাল ব্যাংকের আবেদন করেছে আকিজ রিসোর্স

ছবি

তিন দিনের পর্যটন মেলায় ৪০ কোটি টাকার ব্যবসা

tab

দেশের ব্যবসার পরিবেশে তেমন উন্নতি হয়নি: বিবিএক্স জরিপ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

২০২৪-২৫ অর্থবছরের ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে ব্যবসা পরিবেশ সূচক প্রকাশ করেছে মেট্রো চেম্বার ও পলিসি এক্সচেঞ্জ। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন হাতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনসহ অন্য অতিথিরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পুলিশ প্লাজায় মেট্রো চেম্বার মিলনায়তনে।

বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশে বলার মতো কোনো উন্নতি হয়নি। উল্টো গত এক বছরে আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তি, অবকাঠামোসুবিধা, শ্রম নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্য সহজীকরণ, প্রযুক্তি গ্রহণ এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান, এই ছয় সূচকে পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়েছে

বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশে বলার মতো কোনো উন্নতি হয়নি। উল্টো গত এক বছরে আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তি, অবকাঠামোসুবিধা, শ্রম নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্য সহজীকরণ, প্রযুক্তি গ্রহণ এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান, এই ছয় সূচকে পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়েছে। তবে ব্যবসা শুরু, জমি প্রাপ্তি, বিরোধ নিষ্পত্তি, কর পরিশোধ ও ঋণের প্রাপ্যতা সূচকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ব্যবসা পরিবেশ সূচক বা ক্লাইমেট ইনডেক্সে (বিবিএক্স) এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এবার দেশের ব্যবসা পরিবেশ সূচকে অর্জিত পয়েন্ট ৫৯ দশমিক ৬৯। তার মানে হচ্ছে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিবেশ চ্যালেঞ্জিং। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অর্জিত পয়েন্ট ছিল ৫৮ দশমিক ৭৫। সেই হিসাবে গত এক বছরে ব্যবসা পরিবেশ সূচকের মান শূন্য দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বাড়লেও চ্যালেঞ্জিং অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটেনি।

বিবিএক্সের প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, বিনিয়োগের অনিশ্চয়তা, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ, ব্যাংকঋণের সুদের হার বৃদ্ধি ও বিনিময় হারের অস্থিরতার কারণে বিদায়ী অর্থবছরে ব্যবসার পরিবেশ চ্যালেঞ্জিং অবস্থায় রয়েছে। যদিও গত বছরের আগস্টে ছাত্র আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। তারপর দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

চতুর্থবারের মতো বিবিএক্স জরিপ করেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ। রাজধানীর গুলশানে এমসিসিআইয়ের কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

অনুষ্ঠানে বিবিএক্স প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের এমডি রূপালী চৌধুরী, জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) বাংলাদেশের প্রতিনিধি কাজুয়াকি কাতাওকা ও ঢাকার অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশনার বেন কারসন।

ব্যবসা শুরু, জমির প্রাপ্যতা, আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তি, অবকাঠামোসুবিধা, শ্রম নিয়ন্ত্রণ, বিরোধ নিষ্পত্তি, বাণিজ্য সহজীকরণ, কর পরিশোধ, প্রযুক্তি গ্রহণ, ঋণের প্রাপ্যতা এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান, এই ১১ সূচকের ওপর ভিত্তি করে জরিপটি করা হয়েছে। এই ১১ সূচকের মধ্যে বিদায়ী অর্থবছরে ছয়টি সূচকের অবনতি হয়েছে। উন্নতি হয়েছে পাঁচ সূচকের। মূলত খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা, পরিবহন, নির্মাণ, ইলেকট্রনিকস ও হালকা প্রকৌশল, চামড়া ও ট্যানারি, কৃষি ও বনায়ন, আবাসন, খাদ্য ও পানীয়, ওষুধ ও রাসায়নিক, তৈরি পোশাক, বস্ত্র এবং আর্থিক মধ্যস্থতাকারী- এই ১২ খাতের ওপর জরিপটি করা হয়।

বিবিএক্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোনো সূচকের মান ১০০ নম্বরের মধ্যে ০-৪০ হলে ব্যবসার পরিবেশ কঠিন, মান ৪১ থেকে ৬০ হলে ব্যবসায় বেশ কিছু বাধা রয়েছে, মান ৬১ থেকে ৮০ হলে পরিবেশ উন্নতির দিকে এবং মান ৮১ থেকে ১০০ হলে পরিবেশ ব্যবসাবান্ধব।

এ দেশের ব্যবসা–বাণিজ্যের পরিবেশ নিয়ে টানা দেড় দশক ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ বা সহজে ব্যবসা সূচক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বের ১৯০টি দেশ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটি তৈরিতে অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় ২০২০ সালের পর প্রতিবেদনটি প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৮তম। ২০২০ সালে সংস্থাটির ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৪৫।

এবারের বিবিএক্সের জরিপ অনুযায়ী, ১১টি সূচকের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে খারাপ করেছে ঋণের প্রাপ্যতা সূচকে, প্রাপ্ত নম্বর ৪০ দশমিক ০৭। যদিও সূচকটির নম্বর আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই সূচকে প্রাপ্ত নম্বর ছিল ২৮ দশমিক ১১। বিদায়ী অর্থবছরে ব্যবসা শুরুর সূচকেরও উন্নতি হয়েছে। এই সূচকে প্রাপ্ত নম্বর ৬৪ দশমিক ৭২, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৬২ দশমিক ৭৪। এ ছাড়া বিদায়ী অর্থবছর জমির প্রাপ্যতা সূচকের প্রাপ্ত নম্বর বেড়ে ৫৪ দশমিক ১০; বিরোধ নিষ্পত্তি সূচকের নম্বর ৬৪ দশমিক ৭৩; কর পরিশোধ সূচকের নম্বর বেড়ে হয়েছে ৫৫ দশমিক ৩৮।

জরিপের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছর ব্যবসায়িক অবকাঠামো সূচকের অবনতি হয়েছে। এই সূচকের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮ দশমিক ৮২, যা আগের বছর ছিল ৭১ দশমিক ০৮। বিবিএক্সের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমানে লোডশেডিং সব খাতের জন্য গুরুতর সমস্যা। গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ পেতে অনানুষ্ঠানিক অর্থ প্রদানের মতো ঘটনা ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে তুলছে।

এ ছাড়া অবনতি হয়েছে আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তি সূচকের, প্রাপ্ত নম্বর ৬৭ দশমিক ৭০, শ্রম নিয়ন্ত্রণ সূচকের নম্বর কমে ৬৮ দশমিক শূন্য ৯২, বাণিজ্য সহজীকরণ সূচকের নম্বর ৫৯ দশমিক ৫৬; প্রযুক্তি গ্রহণ সূচক ৬২ দশমিক ৪৬ এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান সূচকে প্রাপ্ত নম্বর ৫০ দশমিক ১৮।

বিবিএক্সের তথ্যানুযায়ী, দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে ব্যবসার পরিবেশ ভালো বরিশালে। বিদায়ী অর্থবছর বরিশালে ব্যবসার পরিবেশ সূচকে অর্জিত পয়েন্ট ৬২ দশমিক ৮। তারপর সিলেটে ৬১ দশমিক ৫, ময়মনসিংহে ৬১ দশমিক ৫, চট্টগ্রামে ৬০ দশমিক ১, রাজশাহীতে ৫৯ দশমিক ৫, ঢাকায় ৫৯, খুলনায় ৫৮ দশমিক ৮ এবং রংপুরে ৫৬ দশমিক ৯ পয়েন্ট।

আগামী বছর ব্যাংক ঋণের সুদহার কমবে: বাণিজ্য উপদেষ্টার

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার ব্যবসার জন্য বাধা। আগামী বছরের শুরুর দিকে সুদের হার কমবে। কমার হার হবে অনেক। এনবিআরের নিরীক্ষা কোনো সমস্যা না। তবে নিরীক্ষা কী প্রক্রিয়ায় হচ্ছে, সেটি সমস্যা। যখন আপনি নিরীক্ষার বিরুদ্ধে কথা বলবেন, তখন মনে হবে আপনি কমপ্লায়েন্স মানতে চাইছেন না।’ তিনি ব্যবসায়ীদের কমপ্লায়েন্স মানার অনুরোধ জানান।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘দুর্নীতিও ব্যবসার জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা। পৃথিবীর সব জায়গাতেই দুর্নীতি আছে। আমরা দুর্নীতির পথকে কঠিন করে তুলতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তিনটি মন্ত্রণালয় সমন্বয় করছি। সেখানে কিছু হলে সুনির্দিষ্ট করে বলুন। আমি ব্যবস্থা নেব।’

এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, ‘বিবিএক্স বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরছে। এটি নীতিনির্ধারক, বিনিয়োগকারী ও উন্নয়ন অংশীদারদের দেশের বেসরকারি খাতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ উভয়ই বুঝতে সাহায্য করে।’

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। অবিলম্বে সেদিকে নজর দেওয়া ও সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া প্রয়োজন।’

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না এলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা আসবে না। বিনিয়োগ হবে না। আমদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও বাড়বে না।’

বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের এমডি রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘বছরের পর বছর ব্যবসায় লোকসান দেখানোর কারণেই কিন্তু ন্যূনতম করপোরেট কর বসেছে। কষ্ট হলেও আমাদের কমপ্লায়েন্ট হতে হবে। আমাদের একজন আরেকজনকে বিশ্বাস করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) বাংলাদেশের প্রতিনিধি কাজুয়াকি কাতাওকা ও ঢাকার অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশনার বেন কারসন।

back to top