ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, ঢাকায় পরবর্তী যে দুটি মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প চলমান, সেগুলো বাতিল করা হয়নি। বরং এগুলোর ব্যয় কমানোর বিষয়ে কাজ করছে সরকার। কারণ, কিছু কাজের জন্য ঠিকাদার যে ব্যয় প্রস্তাব করেছে, তা প্রাক্কলনের চেয়ে ২৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি।
আজ বুধবার সড়ক, রেল ও অবকাঠামো খাতের সাংবাদিকদের সঙ্গে উত্তরার দিয়াবাড়িতে ডিএমটিসিএল প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য জানান। সভায় ডিএমটিসিএলের এমডি তাঁর বিদেশি নাগরিকত্ব ছাড়াও মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়া এবং মেট্রোরেলের চলাচল–সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
ঢাকায় পরবর্তী মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প হচ্ছে এমআরটি লাইন-১ ও এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর)। এই দুটি প্রকল্পের ডিপো উন্নয়নসহ নানা কাজ চলমান। মূল কাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে বাড়তি ব্যয়ের বিষয়টি সামনে এলে দুটি প্যাকেজ বা কাজের অংশের ঠিকাদার নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল চাইছে সরকার।
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ডিএমটিসিএলের এমডি ফারুক আহমেদ বলেন, এমআরটি লাইন ৫–এর একটি প্যাকেজে প্রকল্প প্রস্তাবে যে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা ছিল, এখন পর্যন্ত ঠিকাদারের কাছ থেকে যে দর প্রস্তাব পাওয়া গেছে, তাতে প্রাক্কলিত ব্যয় থেকে প্রায় আড়াই শ গুণ বেশি। লাইন-১–এর সব কটি প্যাকেজেই প্রকল্প প্রস্তাব থেকে ৩০ থেকে ৪০ গুণ বেশি দর ধরা হয়েছে। এখন এত বেশি মূল্যে মেট্রো করা উচিত কি না, সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ডিএমটিসিএল এমডি জানান, বাড়তি ব্যয়ের কারণে লাইন-৫ এবং লাইন-১ দুটি প্রকল্পেরই সবগুলো কাজের ঠিকাদার নিয়োগপ্রক্রিয়া পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ব্যয় কমানোর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দর–কষাকষি করা হচ্ছে। এর মধ্যে লাইন-৫–এর একটি এবং লাইন-১–এর একটি প্যাকেজের ব্যয় অত্যধিক বেশি। ফলে তাঁরা এগুলো বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের জন্য জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকাকে চিঠি লিখেছেন। কারণ, এভাবে বাড়তি ব্যয় অনুমোদন করলে লাইন-১–এর মোট ব্যয় এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অথচ প্রকল্প প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখ্য, এমআরটি লাইন-১ ও লাইন-৫ (উত্তর) দুটি প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাইকা।
প্রকল্প বাতিল করা হচ্ছে না জানিয়ে এমডি বলেন, ঢাকার জন্য মেট্রোরেল লাগবেই। তাঁরা মেট্রোরেল করবেন। তবে কীভাবে খরচ কমানো যায় এবং দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতা আনা যায়, সেটাই তাঁদের লক্ষ্য। জাইকার বাইরেও বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশের সঙ্গে মেট্রোরেলে অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা চলছে।
নিজের নাগরিকত্ব ও নিয়োগ প্রসঙ্গে এমডি
নিজের বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে আলোচনার মধ্যে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, ভারতে চাকরি করার কারণে তাঁকে আধার কার্ড নিতে হয়েছিল। কিন্তু তিনি ভারতের নাগরিক নন। বাংলাদেশের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব রয়েছে তাঁর।
ডিএমটিসিএলের এমডি নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে মতবিনিময় সভায় কথা বলেন ডিএমটিসিএলের কোম্পানি সেক্রেটারি খোন্দকার এহতেশামুল কবীর। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কিংহয় সাক্ষাৎকার নিয়ে এমডি নিয়োগ হয়নি। বর্তমান এমডিকে নিয়োগ দেওয়ার আগে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। দেশে ও বিদেশে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ৭৬ জন আবেদন করেছিলেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি কমিটি সেখান থেকে ১৪ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা করে। এরপর দুজনের নাম চূড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যে বর্তমান এমডি ফারুক আহমেদ প্রথম ছিলেন এবং সড়ক মন্ত্রণালয় তাঁকেই নিয়োগ দেয়।
নিয়োগের বিষয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমি জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক। আমার যদি এখানে কাজ করার অধিকার না থাকে, অন্য অনেক সংস্থার এমডি-সিইও আছে যারা বিদেশি। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিমানে এর আগে জন্মসূত্রে বিদেশিরা চাকরি করেছেন।’
ভারতের আধার কার্ড থাকার বিষয়ে এমডি বলেন, তিনি ভারতের মেট্রোরেল ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন। ভারতে ১৮৪ দিনের বেশি থাকলে এবং ব্যাংক হিসাব খুলতে হলে আধার কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক। এটি থাকার সঙ্গে সে দেশের নাগরিকত্বের সম্পর্ক নেই। তবে তিনি বাংলাদেশের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ারও নাগরিক বলে জানান।
অস্ট্রেলিয়া, হংকং, ভারত, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা মেট্রোরেলে চাকরি করেছেন। ডিএমটিসিএলের এমডি পদে আগের চেয়ে বেতন বেশি না কম এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমি সর্বশেষ ভারতে চাকরি করেছি। ওখান থেকে ডিএমটিসিএলে ১৫ ভাগের ১ ভাগ বেতন পাচ্ছি। বাংলাদেশে জন্ম, পড়াশোনাও করেছি এখানে। বাবা-মাসহ আত্মীয়স্বজন বাংলাদেশে আছেন। ফলে ঢাকায় কাজ করার একটা ইচ্ছা ছিল। দেশকে কিছু দেওয়ারও বাসনা আছে। এ জন্যেই চাকরিটা নিয়েছি।’
নিরাপত্তা ও চলাচল
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মেট্রোরেলে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান সংস্থাটির এমডি ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সবাইকে স্টেশনে পাঠানো হচ্ছে নজরদারি করার জন্য। স্টেশনে যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি করা হচ্ছে। এতে যাত্রীদের একটু অস্বস্তি হবে। এর জন্য সবার সহযোগিতা দরকার। এ ছাড়া পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। স্টেশনের নিচে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ব্যস্ত সময়ে দুই ট্রেনের মাঝখানের বিরতি ৬ মিনিট থেমে কমিয়ে ৫ মিনিট করা হয়েছে বলে জানান ডিএমটিসিএল এমডি। আগামী ডিসেম্বরের শেষে দুই ট্রেনের বিরতি ৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে নামিয়ে আনা হবে বলে জানান তিনি।
বিয়ারিং প্যাড পড়ার ঘটনার তদন্তের সময় বেড়েছে
খামারবাড়িতে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে একজন নিহত হওয়ার ঘটনার তদন্ত কমিটির মেয়াদ দুই সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে বলে জানান ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটিতে তিনজন সদস্য নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দিলে বোঝা যাবে কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছিল।
ডিএমটিসিএল এমডি আরও বলেন, তারা সব কটি পিলারের বিয়ারিং প্যাড পর্যবেক্ষণের কাজ দুই মাস আগেই সম্পন্ন করেছেন। কিছু স্থানে ঝুঁকি এড়াতে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা যুক্ত করেছেন। তবে তাঁদের হাতে নতুন কোনো বিয়ারিং প্যাড নেই। কেনার জন্য ফরমাশ দিয়েছেন। জানুয়ারিতে পাবেন এবং তখন কিছু স্থানে বিয়ারিং প্যাড বদলানো হবে।
বিয়ারিং প্যাড না থাকা অস্বাভাবিক কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মেট্রোরেলের এমডি বলেন, এটা অস্বাভাবিক। কেন বাড়তি বিয়ারিং প্যাড থাকতে হবে—এমন শর্ত আগে দরপত্রে উল্লেখ করা হয়নি, তা বোধগম্য নয়। তিনি আরও বলেন, বিয়ারিং প্যাডের আয়ুষ্কাল ৫০ বছর। এর মধ্যে তা নষ্ট হওয়ার কথা নয়। এরপরও কিছু বাড়তি রাখা দরকার।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, ঢাকায় পরবর্তী যে দুটি মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প চলমান, সেগুলো বাতিল করা হয়নি। বরং এগুলোর ব্যয় কমানোর বিষয়ে কাজ করছে সরকার। কারণ, কিছু কাজের জন্য ঠিকাদার যে ব্যয় প্রস্তাব করেছে, তা প্রাক্কলনের চেয়ে ২৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি।
আজ বুধবার সড়ক, রেল ও অবকাঠামো খাতের সাংবাদিকদের সঙ্গে উত্তরার দিয়াবাড়িতে ডিএমটিসিএল প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য জানান। সভায় ডিএমটিসিএলের এমডি তাঁর বিদেশি নাগরিকত্ব ছাড়াও মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়া এবং মেট্রোরেলের চলাচল–সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
ঢাকায় পরবর্তী মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প হচ্ছে এমআরটি লাইন-১ ও এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর)। এই দুটি প্রকল্পের ডিপো উন্নয়নসহ নানা কাজ চলমান। মূল কাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে বাড়তি ব্যয়ের বিষয়টি সামনে এলে দুটি প্যাকেজ বা কাজের অংশের ঠিকাদার নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল চাইছে সরকার।
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ডিএমটিসিএলের এমডি ফারুক আহমেদ বলেন, এমআরটি লাইন ৫–এর একটি প্যাকেজে প্রকল্প প্রস্তাবে যে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা ছিল, এখন পর্যন্ত ঠিকাদারের কাছ থেকে যে দর প্রস্তাব পাওয়া গেছে, তাতে প্রাক্কলিত ব্যয় থেকে প্রায় আড়াই শ গুণ বেশি। লাইন-১–এর সব কটি প্যাকেজেই প্রকল্প প্রস্তাব থেকে ৩০ থেকে ৪০ গুণ বেশি দর ধরা হয়েছে। এখন এত বেশি মূল্যে মেট্রো করা উচিত কি না, সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ডিএমটিসিএল এমডি জানান, বাড়তি ব্যয়ের কারণে লাইন-৫ এবং লাইন-১ দুটি প্রকল্পেরই সবগুলো কাজের ঠিকাদার নিয়োগপ্রক্রিয়া পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ব্যয় কমানোর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দর–কষাকষি করা হচ্ছে। এর মধ্যে লাইন-৫–এর একটি এবং লাইন-১–এর একটি প্যাকেজের ব্যয় অত্যধিক বেশি। ফলে তাঁরা এগুলো বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের জন্য জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকাকে চিঠি লিখেছেন। কারণ, এভাবে বাড়তি ব্যয় অনুমোদন করলে লাইন-১–এর মোট ব্যয় এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অথচ প্রকল্প প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখ্য, এমআরটি লাইন-১ ও লাইন-৫ (উত্তর) দুটি প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাইকা।
প্রকল্প বাতিল করা হচ্ছে না জানিয়ে এমডি বলেন, ঢাকার জন্য মেট্রোরেল লাগবেই। তাঁরা মেট্রোরেল করবেন। তবে কীভাবে খরচ কমানো যায় এবং দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতা আনা যায়, সেটাই তাঁদের লক্ষ্য। জাইকার বাইরেও বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশের সঙ্গে মেট্রোরেলে অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা চলছে।
নিজের নাগরিকত্ব ও নিয়োগ প্রসঙ্গে এমডি
নিজের বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে আলোচনার মধ্যে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, ভারতে চাকরি করার কারণে তাঁকে আধার কার্ড নিতে হয়েছিল। কিন্তু তিনি ভারতের নাগরিক নন। বাংলাদেশের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব রয়েছে তাঁর।
ডিএমটিসিএলের এমডি নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে মতবিনিময় সভায় কথা বলেন ডিএমটিসিএলের কোম্পানি সেক্রেটারি খোন্দকার এহতেশামুল কবীর। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কিংহয় সাক্ষাৎকার নিয়ে এমডি নিয়োগ হয়নি। বর্তমান এমডিকে নিয়োগ দেওয়ার আগে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। দেশে ও বিদেশে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ৭৬ জন আবেদন করেছিলেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি কমিটি সেখান থেকে ১৪ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা করে। এরপর দুজনের নাম চূড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যে বর্তমান এমডি ফারুক আহমেদ প্রথম ছিলেন এবং সড়ক মন্ত্রণালয় তাঁকেই নিয়োগ দেয়।
নিয়োগের বিষয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমি জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক। আমার যদি এখানে কাজ করার অধিকার না থাকে, অন্য অনেক সংস্থার এমডি-সিইও আছে যারা বিদেশি। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিমানে এর আগে জন্মসূত্রে বিদেশিরা চাকরি করেছেন।’
ভারতের আধার কার্ড থাকার বিষয়ে এমডি বলেন, তিনি ভারতের মেট্রোরেল ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন। ভারতে ১৮৪ দিনের বেশি থাকলে এবং ব্যাংক হিসাব খুলতে হলে আধার কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক। এটি থাকার সঙ্গে সে দেশের নাগরিকত্বের সম্পর্ক নেই। তবে তিনি বাংলাদেশের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ারও নাগরিক বলে জানান।
অস্ট্রেলিয়া, হংকং, ভারত, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা মেট্রোরেলে চাকরি করেছেন। ডিএমটিসিএলের এমডি পদে আগের চেয়ে বেতন বেশি না কম এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমি সর্বশেষ ভারতে চাকরি করেছি। ওখান থেকে ডিএমটিসিএলে ১৫ ভাগের ১ ভাগ বেতন পাচ্ছি। বাংলাদেশে জন্ম, পড়াশোনাও করেছি এখানে। বাবা-মাসহ আত্মীয়স্বজন বাংলাদেশে আছেন। ফলে ঢাকায় কাজ করার একটা ইচ্ছা ছিল। দেশকে কিছু দেওয়ারও বাসনা আছে। এ জন্যেই চাকরিটা নিয়েছি।’
নিরাপত্তা ও চলাচল
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মেট্রোরেলে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান সংস্থাটির এমডি ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সবাইকে স্টেশনে পাঠানো হচ্ছে নজরদারি করার জন্য। স্টেশনে যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি করা হচ্ছে। এতে যাত্রীদের একটু অস্বস্তি হবে। এর জন্য সবার সহযোগিতা দরকার। এ ছাড়া পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। স্টেশনের নিচে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ব্যস্ত সময়ে দুই ট্রেনের মাঝখানের বিরতি ৬ মিনিট থেমে কমিয়ে ৫ মিনিট করা হয়েছে বলে জানান ডিএমটিসিএল এমডি। আগামী ডিসেম্বরের শেষে দুই ট্রেনের বিরতি ৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে নামিয়ে আনা হবে বলে জানান তিনি।
বিয়ারিং প্যাড পড়ার ঘটনার তদন্তের সময় বেড়েছে
খামারবাড়িতে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে একজন নিহত হওয়ার ঘটনার তদন্ত কমিটির মেয়াদ দুই সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে বলে জানান ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটিতে তিনজন সদস্য নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দিলে বোঝা যাবে কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছিল।
ডিএমটিসিএল এমডি আরও বলেন, তারা সব কটি পিলারের বিয়ারিং প্যাড পর্যবেক্ষণের কাজ দুই মাস আগেই সম্পন্ন করেছেন। কিছু স্থানে ঝুঁকি এড়াতে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা যুক্ত করেছেন। তবে তাঁদের হাতে নতুন কোনো বিয়ারিং প্যাড নেই। কেনার জন্য ফরমাশ দিয়েছেন। জানুয়ারিতে পাবেন এবং তখন কিছু স্থানে বিয়ারিং প্যাড বদলানো হবে।
বিয়ারিং প্যাড না থাকা অস্বাভাবিক কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মেট্রোরেলের এমডি বলেন, এটা অস্বাভাবিক। কেন বাড়তি বিয়ারিং প্যাড থাকতে হবে—এমন শর্ত আগে দরপত্রে উল্লেখ করা হয়নি, তা বোধগম্য নয়। তিনি আরও বলেন, বিয়ারিং প্যাডের আয়ুষ্কাল ৫০ বছর। এর মধ্যে তা নষ্ট হওয়ার কথা নয়। এরপরও কিছু বাড়তি রাখা দরকার।