alt

আইএমএফ থেকে পরের কিস্তি পাওয়ার আলোচনা হবে নতুন সরকারের সঙ্গে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলমান ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না, সে সিদ্ধান্ত হবে নতুন সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাওয়া নতুন সরকারকে এ ব্যাপারে মতামত প্রদানের সুযোগ দেওয়াই যৌক্তিক হবে।

সফররত আইএমএফ মিশনের দুই সপ্তাহের বৈঠক শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথাগুলো বলেন মিশন চিফ ক্রিস পাপাজর্জিও। তিনি আইএমএফের গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো ইকোনমিকসের প্রধান এবং তার নেতৃত্বেই এবারের মিশন ২৯ অক্টোবর থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছে। কাল বিকেলে তাদের শেষ বৈঠক ছিল অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে।

৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির পর গত বছরের জুনে এর সঙ্গে ৮০ কোটি যোগ করে তা ৫৫০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়। এ কর্মসূচির অধীনে আইএমএফ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে পাঁচ কিস্তিতে দিয়েছে ৩৬৪ কোটি ডলার। সে অনুযায়ী এখনো বাকি আছে ১৮৬ কোটি ডলার। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এরই মধ্যে মন্তব্য করেছেন যে আগামী ডিসেম্বরে যে ষষ্ঠ কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা ছিল, তা হচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে পাপাজর্জিও বলেন, ‘চলমান ঋণ কর্মসূচির পঞ্চম পর্যালোচনা-সংক্রান্ত আলোচনা গত মাসে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আইএমএফের বার্ষিক সভায় শুরু হয়েছিল। আমরা মনে করেছি, ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাওয়া নবনির্বাচিত সরকারকে এ নিয়ে পদক্ষেপ নির্ধারণে মতামত প্রদানের সুযোগ দেওয়াই যৌক্তিক হবে। নির্বাচনের পর আগামী বছরের এপ্রিল বা মে মাসে উচ্চপর্যায়ের আরেকটি মিশন আসতে পারে এবং যৌথ পর্যালোচনা এগিয়ে নেওয়া হবে কি না, সেই সময়ই মূল্যায়ন হবে। একসঙ্গে তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার অভিজ্ঞতাও আমাদের আছে, যেখানে বড় অঙ্কের অর্থ ছাড় করা হয়েছিল।’

রাজস্ব সংগ্রহ হোক জাতীয় অগ্রাধিকার: রাজস্ব সংগ্রহকে জাতীয় অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, রাজস্ব সংগ্রহ না বাড়ালে সরকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বিনিয়োগ করতে পারবে না এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও কঠিন হবে। এ ছাড়া নিম্নগতির প্রবৃদ্ধির ফাঁদে পড়ার ঝুঁকিতে থাকবে বাংলাদেশ।

সংস্থাটি আরও বলেছে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের হার বিশ্বের মধ্যেই নিম্নতম বাংলাদেশে। এ দেশের অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে কর দিচ্ছে না। অপরিহার্য পণ্য ও সেবা ছাড়া ভ্যাটের হার কমানো, করমুক্তির সুযোগ বাতিল এবং সব প্রতিষ্ঠানের জন্য ন্যূনতম টার্নওভার কর বৃদ্ধি করা দরকার।

রাজস্ব খাত নিয়ে সংস্থাটি বলেছে, নীতি পরিকল্পনা অবশ্যই সমাধানের অংশ। তবে বাস্তবায়ন ব্যবস্থা উন্নত না হলে ভালো নীতিও কার্যকর হবে না। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে এটি দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা হিসেবে আছে। তাই ছোট সংস্কার বা আংশিক পদক্ষেপের বদলে এখন দরকার সাহসী, কার্যকর ও সহজে পালনযোগ্য সংস্কার।

আন্তর্জাতিক অংশীদারেরা বাংলাদেশের পাশে আছে এবং থাকবে বলেও জানায় আইএমএফ। ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ‘ঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কার চেষ্টাকে তারা সহায়তা করে যাচ্ছে। অন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোও রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তবে আমরা মনে করি, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য দেশীয় সম্পদ সংগ্রহের সক্ষমতা বাড়ানোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সহায়তা একটি সহায়ক হাত, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে স্বনির্ভরতা অর্জনের বিকল্প নেই।’

সুদহার কমানো এখনই নয়: আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা জরুরি, এমন পরামর্শ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলো থেকে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি কৌশল হাতে নেওয়া দরকার। ব্যাংক পরিচালনায় স্বচ্ছতার পাশাপাশি খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে দরকার ধারাবাহিক প্রচেষ্টা।

আইএমএফ বলেছে, বিনিময় হার সংস্কারের পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনরুদ্ধার হতে শুরু করেছে। প্রবাসী আয় এবং রপ্তানি আয়ের কারণে এটা হচ্ছে। কিন্তু এই অনুকূল পরিস্থিতি চিরকাল স্থায়ী হবে না। এদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আর্থিক ও রাজস্ব নীতিকে কঠোর করার মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ। দুই অঙ্কে পৌঁছানো সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। যদিও গত অক্টোবরের হিসাবে এখনো তা ৮ দশমিক ২ শতাংশে অবস্থান করছে। মুদ্রানীতির অগ্রাধিকার থাকা উচিত মূল্যস্ফীতি কমানোয়। এ হার ৫ থেকে ৬ শতাংশে না নামা পর্যন্ত কঠোর মুদ্রানীতি বজায় রাখাই সংগত হবে এবং নীতি সুদহার না কমানোই ভালো হবে।

নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষায় গুরুত্ব: সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা টিকিয়ে রাখতে নীতিগত ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন পাপাজর্জিও। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যেও মূল অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার বজায় রাখতে পারলে তা উন্নয়ন যাত্রাকে রক্ষায় সহায়ক হবে। নীতির অগ্রাধিকার যেন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হারিয়ে না যায়।’

সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি এবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে আইএমএফের মিশন। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে সংস্কার কর্মসূচি, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পাপাজর্জিও। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক চক্রের কারণে অনেক সময় সংস্কারের আগ্রহ কমে যায়। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যাতে নীতি ধারাবাহিকতা থাকে ও কর্মসূচিগুলোর মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা যায়, সেটা ছিল তাদের সঙ্গে বৈঠক করার অন্যতম উদ্দেশ্য।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সামাজিক সুরক্ষা শুধু দারিদ্র্য হ্রাস নয়, এটি সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং মানবিক মর্যাদা রক্ষারও হাতিয়ার। দুর্বল ও বিপন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য এটি বিশেষভাবে জরুরি। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমে অগ্রগতি থাকলেও মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থানের অস্থিরতার কারণে ঝুঁকি রয়েছে। তাই কার্যকর সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় ডিজিটাল নিবন্ধন ও তথ্যভিত্তিক পদ্ধতি প্রয়োজন।

ছবি

পাঁচ ব্যাংক নয়, সরকারের টাকা পাবে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’

ছবি

খেলাপি হার ২০ শতাংশ হলেও তহবিল পরিচালনায় যোগ্য হবে ব্যাংক

ছবি

এবার স্বর্ণের দাম ভরিতে বাড়লো ৫ হাজার টাকা

ছবি

সার ডিলার নিয়োগ ও বিতরণ নীতিমালা অনুমোদন

ছবি

ঠিকায় কাজ করা পোশাক কারখানাও প্রণোদনা পাবে

ছবি

রমজান-নির্বাচন উপলক্ষে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর তাগিদ

ছবি

বাকিতে আমদানি করা যাবে রোজার পণ্য

ছবি

সুমিটোমো থার্ড টার্মিনালের অপারেশনস-মেইটেনেন্স কাজ করতে আগ্রহী জাপান

ছবি

চলমান গ্যাস সংকট কমাতে দীর্ঘ পরিকল্পনা পেট্রোবাংলার

ছবি

প্রথম প্রান্তিকে ওয়ালটনের মুনাফায় ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

ছবি

সয়াবিন তেল ও চিনি কিনছে সরকার

ছবি

১৬৪ টাকায় সয়াবিন তেল, ৯৪ টাকায় চিনি কিনবে সরকার

ছবি

ভারতে মূল্যস্ফীতি শূন্যের কাছাকাছি

ছবি

সিএমএসএমইর তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ল

ছবি

সরকারের জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ, অর্থবিভাগ-এর সাথে সর্বজনীন পেনশন স্কিমসমুহে রেজিস্ট্রেশন

ছবি

মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা নিয়ে গেজেট, থাকছে না মেয়াদি ফান্ড

ছবি

মেট্রোরেল প্রকল্প বাতিল হয়নি, ব্যয় কমানোর চেষ্টা চলছে: ডিএমটিসিএল এমডি

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে চিঠি

ছবি

নতুন পে-স্কেলের ফ্রেমওয়ার্ক দিয়ে যাবে বর্তমান সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

চট্টগ্রামে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল: ৩০ বছর চালাবে ডেনমার্কের কোম্পানি

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানত নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার অনুরোধ প্রশাসকদের

ছবি

বৃহস্পতিবার দোকান ও বিপণিবিতান খোলা রাখার ঘোষণা ব্যবসায়ীদের

ছবি

চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চান ব্যবসায়ীরা

ছবি

তিন শতাধিক শেয়ারের দরপতনে তলানিতে লেনদেন শেয়ারবাজারে

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা একতরফা সিদ্ধান্ত: বিএমবিএ

ছবি

সাবেক এমপিদের ৩১ বিলাসবহুল গাড়ি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দিল এনবিআর

ছবি

তরূণদের অংশগ্রহনে নারায়ণগঞ্জে উদ্যোক্তা সম্মেলন হলো

ছবি

বাজারে নতুন স্মার্টফোন হেলিও ৪৫

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে রিয়েলমি সি৮৫ প্রো উন্মোচন

ছবি

এলডিসি উত্তরণ ৩ বছর পিছিয়ে দেয়ার অনুরোধ ব্যবসায়ীদের

ছবি

শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করবে আরএসসি, সায় দিচ্ছে না বিজিএমইএ

ছবি

শেয়ারবাজারে ৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

ছবি

বাংলাদেশের তৈরি ফ্যাশনেবল পোশাকের আমদানি বাড়াবে জাপান

ছবি

স্বর্ণের দাম আবার বাড়লো

একনেকে ৭১৫০ কোটি টাকার ১২ প্রকল্প পাস

আবারও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সুপারিশ

tab

আইএমএফ থেকে পরের কিস্তি পাওয়ার আলোচনা হবে নতুন সরকারের সঙ্গে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলমান ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না, সে সিদ্ধান্ত হবে নতুন সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাওয়া নতুন সরকারকে এ ব্যাপারে মতামত প্রদানের সুযোগ দেওয়াই যৌক্তিক হবে।

সফররত আইএমএফ মিশনের দুই সপ্তাহের বৈঠক শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথাগুলো বলেন মিশন চিফ ক্রিস পাপাজর্জিও। তিনি আইএমএফের গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো ইকোনমিকসের প্রধান এবং তার নেতৃত্বেই এবারের মিশন ২৯ অক্টোবর থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছে। কাল বিকেলে তাদের শেষ বৈঠক ছিল অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে।

৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির পর গত বছরের জুনে এর সঙ্গে ৮০ কোটি যোগ করে তা ৫৫০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়। এ কর্মসূচির অধীনে আইএমএফ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে পাঁচ কিস্তিতে দিয়েছে ৩৬৪ কোটি ডলার। সে অনুযায়ী এখনো বাকি আছে ১৮৬ কোটি ডলার। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এরই মধ্যে মন্তব্য করেছেন যে আগামী ডিসেম্বরে যে ষষ্ঠ কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা ছিল, তা হচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে পাপাজর্জিও বলেন, ‘চলমান ঋণ কর্মসূচির পঞ্চম পর্যালোচনা-সংক্রান্ত আলোচনা গত মাসে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আইএমএফের বার্ষিক সভায় শুরু হয়েছিল। আমরা মনে করেছি, ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাওয়া নবনির্বাচিত সরকারকে এ নিয়ে পদক্ষেপ নির্ধারণে মতামত প্রদানের সুযোগ দেওয়াই যৌক্তিক হবে। নির্বাচনের পর আগামী বছরের এপ্রিল বা মে মাসে উচ্চপর্যায়ের আরেকটি মিশন আসতে পারে এবং যৌথ পর্যালোচনা এগিয়ে নেওয়া হবে কি না, সেই সময়ই মূল্যায়ন হবে। একসঙ্গে তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার অভিজ্ঞতাও আমাদের আছে, যেখানে বড় অঙ্কের অর্থ ছাড় করা হয়েছিল।’

রাজস্ব সংগ্রহ হোক জাতীয় অগ্রাধিকার: রাজস্ব সংগ্রহকে জাতীয় অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, রাজস্ব সংগ্রহ না বাড়ালে সরকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বিনিয়োগ করতে পারবে না এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও কঠিন হবে। এ ছাড়া নিম্নগতির প্রবৃদ্ধির ফাঁদে পড়ার ঝুঁকিতে থাকবে বাংলাদেশ।

সংস্থাটি আরও বলেছে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের হার বিশ্বের মধ্যেই নিম্নতম বাংলাদেশে। এ দেশের অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে কর দিচ্ছে না। অপরিহার্য পণ্য ও সেবা ছাড়া ভ্যাটের হার কমানো, করমুক্তির সুযোগ বাতিল এবং সব প্রতিষ্ঠানের জন্য ন্যূনতম টার্নওভার কর বৃদ্ধি করা দরকার।

রাজস্ব খাত নিয়ে সংস্থাটি বলেছে, নীতি পরিকল্পনা অবশ্যই সমাধানের অংশ। তবে বাস্তবায়ন ব্যবস্থা উন্নত না হলে ভালো নীতিও কার্যকর হবে না। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে এটি দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা হিসেবে আছে। তাই ছোট সংস্কার বা আংশিক পদক্ষেপের বদলে এখন দরকার সাহসী, কার্যকর ও সহজে পালনযোগ্য সংস্কার।

আন্তর্জাতিক অংশীদারেরা বাংলাদেশের পাশে আছে এবং থাকবে বলেও জানায় আইএমএফ। ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ‘ঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কার চেষ্টাকে তারা সহায়তা করে যাচ্ছে। অন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোও রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তবে আমরা মনে করি, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য দেশীয় সম্পদ সংগ্রহের সক্ষমতা বাড়ানোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সহায়তা একটি সহায়ক হাত, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে স্বনির্ভরতা অর্জনের বিকল্প নেই।’

সুদহার কমানো এখনই নয়: আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা জরুরি, এমন পরামর্শ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলো থেকে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি কৌশল হাতে নেওয়া দরকার। ব্যাংক পরিচালনায় স্বচ্ছতার পাশাপাশি খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে দরকার ধারাবাহিক প্রচেষ্টা।

আইএমএফ বলেছে, বিনিময় হার সংস্কারের পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনরুদ্ধার হতে শুরু করেছে। প্রবাসী আয় এবং রপ্তানি আয়ের কারণে এটা হচ্ছে। কিন্তু এই অনুকূল পরিস্থিতি চিরকাল স্থায়ী হবে না। এদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আর্থিক ও রাজস্ব নীতিকে কঠোর করার মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ। দুই অঙ্কে পৌঁছানো সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। যদিও গত অক্টোবরের হিসাবে এখনো তা ৮ দশমিক ২ শতাংশে অবস্থান করছে। মুদ্রানীতির অগ্রাধিকার থাকা উচিত মূল্যস্ফীতি কমানোয়। এ হার ৫ থেকে ৬ শতাংশে না নামা পর্যন্ত কঠোর মুদ্রানীতি বজায় রাখাই সংগত হবে এবং নীতি সুদহার না কমানোই ভালো হবে।

নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষায় গুরুত্ব: সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা টিকিয়ে রাখতে নীতিগত ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন পাপাজর্জিও। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যেও মূল অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার বজায় রাখতে পারলে তা উন্নয়ন যাত্রাকে রক্ষায় সহায়ক হবে। নীতির অগ্রাধিকার যেন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হারিয়ে না যায়।’

সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি এবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে আইএমএফের মিশন। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে সংস্কার কর্মসূচি, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পাপাজর্জিও। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক চক্রের কারণে অনেক সময় সংস্কারের আগ্রহ কমে যায়। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যাতে নীতি ধারাবাহিকতা থাকে ও কর্মসূচিগুলোর মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা যায়, সেটা ছিল তাদের সঙ্গে বৈঠক করার অন্যতম উদ্দেশ্য।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সামাজিক সুরক্ষা শুধু দারিদ্র্য হ্রাস নয়, এটি সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং মানবিক মর্যাদা রক্ষারও হাতিয়ার। দুর্বল ও বিপন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য এটি বিশেষভাবে জরুরি। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমে অগ্রগতি থাকলেও মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থানের অস্থিরতার কারণে ঝুঁকি রয়েছে। তাই কার্যকর সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় ডিজিটাল নিবন্ধন ও তথ্যভিত্তিক পদ্ধতি প্রয়োজন।

back to top