alt

অর্থ-বাণিজ্য

বোরো ধানের বাম্পার ফলনের পরও চালের বাজার অস্থির

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ২০২১

জহিরুল ইসলাম একজন বেসরকারি কর্মকর্তা। প্রতি শুক্রবার তিনি রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে বাজার করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার (১০ জুন) চাল কিনতে এসে তিনি চমকে উঠেন। কারণ এক সপ্তাহ আগে এক বস্তা চাল তিনি কিনেছিলেন ২৬শ’ টাকায়। অথচ বৃহস্পতিবার সেই চাল তাকে ২৮শ’ টাকায় কিনতে হলো।

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক বস্তা চালের দাম ২শ’ টাকা বেড়ে যাওয়ার বিষয়কে তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। যেসব মধ্যবিত্ত বা নিন্মবিত্ত মানুষ কম আয় রোজগার করেন, কয়দিন পর পর দাম বৃদ্ধি, তাদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

‘আমরা এমন এক দেশে বসবাস করছি, যেখানে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করলেই ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়িয়ে দিতে পারে তবুও তাদের কিছু হয় না। দেশটা কি শুধু ব্যবসায়ীদেরই। তাহলে আমরা কী?’ সংবাদকে বলছিলেন জহিরুল ইসলাম।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, এখানে পণ্যের দাম বাড়ে, এক ব্যবসায়ী আরেকজনের দোষ দেয়। খুচরা ব্যবসায়ী বলেন আড়তে দাম বেড়েছে, আড়তদার বলেন মিলাররা দাম বাড়িয়েছেন। মিলাররাও এটা ওটা কারণ দেখিয়ে দিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, রশিদ, সাগরসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৭ থেকে ৫৮ টাকায়। লোকাল মিনিকেটগুলো বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫৪ থেকে ৫৬ টাকায়। এছাড়া বিআর-২৮ ও স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। অথচ মাত্র এক সপ্তাহ আগে এসব চাল প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমে পাওয়া যেত।

এ প্রসঙ্গে কাওরান বাজারের মেসার্স জনতা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আবু ওসমান সংবাদকে বলেন, ‘খুচরা ক্রেতারা আমাদের কাছে এসে বলেন, আমরা দাম বাড়াচ্ছি। কিন্তু তারা জানে না, দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমাদের কোন হাত নেই। গত সপ্তাহে এক বস্তা চাল আমরা ২৪শ’ বা সাড়ে ২৪শ’ টাকায় কিনেছিলাম এবং বিক্রি করেছিলাম ২৬শ’ টাকায়। আর আজ সেই চাল আমরা কিনেই আনছি ২৬শ’ টাকায়।’

দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি মিলারদের সিন্ডিকেটের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘মিলাররা বলছেন, ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। তবে ধানের দাম কতটুকু বেড়েছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ বছর দেশে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে এবং ধান মাড়াই সবেমাত্র শেষ হলো। সরবরাহও রয়েছে প্রচুর। তাহলে ধানের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে মিলারদের অজুহাত কতটা সত্য সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে।’

শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, এই চিত্র সারাদেশেরই। গত কয়দিনেই রংপুর, নওগাঁ, বগুড়া, শেরপুর, নাটোর, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহসহ বেশ কয়েকটি জেলায় চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এসব জেলায় যোগাযোগ করে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে।

কেউ দাবি করছেন, ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম বাড়ছে। আবার কেউ অভিযোগ করছেন, মিলাররা সিন্ডিকেট করে চাল মজুদ করার কারণে দাম বাড়ছে।

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার খাজানগরের একটি বড় অটো মিলের গেটে প্রতিদিনের দর তালিকায় দেখা যায়, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা, কাজললতা ও আঠাশ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, বাসমতি বিক্রি হচ্ছে ৬২.৫০ টাকা, স্বর্ণা ৪০.৫০ টাকা। ধানের যে দর লেখা আছে তাতে দেখা যায়, সরু ধান যাকে মিনিকেট বলা হয় সেই ধান ৩৫.৫০ টাকা, কাজললতা ও আঠাশ ৩১.৫০ টাকা, বাসমতি ৩৫ টাকা ও ¯স্বর্ণা ২৭.৫০ টাকায় কিনছেন তারা। এক সপ্তাহ আগেও এ দর কেজি অনুযায়ী ২ থেকে ৩ টাকা কম ছিল।

এখানকার মিল মালিকরা দাবি করেন, গত এক সপ্তাহ ধরে ধানে বাজার বাড়তি। সব ধরনের ধানের দাম মণপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতিদিন ধানের বাজার বাড়ছে। তাই ধানের বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে চালের দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে এমন ভরা মৌসুমে ধানের দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছেন মিল মালিকরা। তারাও বিষয়টি ভেবে পাচ্ছেন না।

তবে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, কুষ্টিয়ার ৪৬টি অটো মিল মালিকরা বোরো ধান বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর ধান কিনেছেন। তারা প্রথম দিকে কম দামে ধান কিনেছেন। এসব ধান তাদের গুদামে রয়েছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত তারা ধান কিনছেন। এসব ধানও মজুদ রাখছেন তারা।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহে গত এক মাসে মান অনুযায়ী, চালের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৫ টাকা হারে। বাজারের খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা জানান, একমাস আগে পুরাতন বিআর-২৮, ২৯ জাতের চাল খুচরা পর্যায় বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৫২ টাকা। নতুন চাল বাজারে আসার পর সেই চাল প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪২ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু বর্তমানে সেই চাল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা প্রতি কেজি। এছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলের অটো রাইস মিলগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক মিলাররা চিকন চাল উৎপন্ন করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে চিকন চাল বাজারজাত করছে উচ্চমূল্যে, যা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীদের দাবি, এ ধরনের ব্র্যান্ডের নামধারী মিলাররা উন্নত জাতের চাল উৎপাদন খরচের ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি হারে বাজারজাত করছে। এতে ব্যবসায়ীদের চেয়ে ভোক্তাদের বেশি মূল্য গুনতে হচ্ছে।

স্থানীয় মিলাররা বলছেন, বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওযায় চাল একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি গুদামেও চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করতে হচ্ছে। তাই বাজারে চাল সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় চালে দাম একটু বেড়েছে।

নওগাঁ : নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তম সরকার সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘গত সপ্তাহে কাটারি চাল প্রতি কেজি ছিল ৪৭-৫০ টাকা বর্তমানে তা বেড়ে ৫০-৫২ টাকা, জিরাশাইল চাল প্রতি কেজি ছিল ৪৮-৫০ টাকা বর্তমানে তা বেড়ে ৫০-৫৩ টাকা, খাটোদশ চাল প্রতি কেজি ছিল ৪২-৪৩ টাকা বর্তমানে তা বেড়ে ৪৫-৪৬ টাকা, উনত্রিশ চাল প্রতি কেজি ছিল ৪০-৪২ বর্তমানে তা বেড়ে ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে নওগাঁ জেলা চাউলকল মালিক সমিতি সভাপতি আলহাজ রফিকুল ইসলাম সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘বাজারে চালের দাম বাড়ার একমাত্র কারণ ধানের দাম বৃদ্ধি। ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বাজার থেকে ধান কিনে চাল উৎপাদন করতে খরচ বেশি পড়ায় চালের দাম বেড়েছে।’

রংপুর : রংপুরের বৃহৎ চালের মোকাম রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ এলাকায় গিয়ে পাইকারি চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিনিকেট চাল প্রতি কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে হাইব্রিড মোটা চাল ৩৬ টাকা কেজি থেবে বেড়ে ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গুটি স্বর্ণা চাল কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৪৩ টাকা বিআর-২৮ ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮ টাকা এবং বিআর-২৯ চাল ৪১ টাকা থেকে বেড়ে ৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাহিগঞ্জ আড়তদার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সম্পাদক রিপন জানান, চালের কোন সংকট নেই। এবার রংপুরেই ৬ লাখ টনেরও বেশি চাল উৎপাদন হয়েছে। রংপুর বিভাগে ১৮ লাখ টনের বেশি চাল উৎপাদিত হয়েছে যা রংপুর বিভাগের চাহিদা পূরণ করার পরও কমপক্ষে ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা। সেখানে চালের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই বলে জানান তিনি।

বগুড়া : বগুড়ার ফতেহআলী বাজারের চালের খুরচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা ও চিকন চাল প্রতি কেজিতে ২টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৭-৪৮ টাকা দরে যা আগে ছিল ৪৪-৪৫ টাকা দরে। কাটারি বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা যা আগে বিক্রি হয়েছে ৫২-৫৩ টাকা কেজি দরে। বিআর-২৯ ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৬ টাকা যা আগে ছিল ৪২-৪৩ টাকা কেজি। মিনিকেট ৫৩ টাকা যা আগে ছিল ৫২ টাকা। নাজিরশাইল ৬৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। যা আগে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজি দরে।

চারমাথা গোদারপাড়া চালের পাইকারি বাজারের মেসার্স ইসলাম চাউল ঘরের স্বত্বাধিকারী আলহাজ মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, গত ৩-৪ দিন ধরে প্রতি বস্তায় ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে খুরচা বাজারেও চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জানান, বাজারে ধানের দাম বেড়ে গেছে। এ কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে অনেক মিল মালিক চালের দাম বাড়বে এই ভেবে ধান কিনে মজুদ করছে।

শেরপুর : শেরপুরে চালের খুচরা বাজারে আটাশ চালের বস্তাপ্রতি বেড়ে হয়েছে ২২শ’ টাকা। কেজিপ্রতি হয়েছে ৪৮ টাকা। আগে এর বাজার ছিল ২১শ’ ৫০ টাকা। কেজিপ্রতি ছিল ৪৭ টাকা। বিআর-২৯ চালের বস্তাপ্রতি বেড়ে হয়েছে ২১৫০-২২শ’ টাকা যা কেজিপ্রতি ৪৭-৪৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগে এর বাজার মূল্য ছিল ২১শ’ টাকা। আতব চাল বস্তাপ্রতি বেড়ে হয়েছে ৩৪শ’ টাকা। কেজিপ্রতি ৬৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগে এর বাজার মূল্য ছিল ৩২শ’ ৫০ টাকা। তবে নাজির চালের বাজারমূল্য স্থিতিশীল রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মুহিত কুমার দে জানান, ‘চালের বাজার বৃদ্ধি হওয়ার বিষয়টি মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট দেখেন। আমরা শুধু উৎপাদনটা দেখি।’

ছবি

রাজধানীতে ঈদের পরও চড়া সবজির বাজার

ছবি

সয়াবিন তেলের লিটার প্রতি দাম বাড়ল ৪ টাকা

ছবি

সূচকের পতনে পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন

ছবি

ব্যাংক এশিয়া কিনবে পাকিস্তানি ব্যাংক আলফালাহর বাংলাদেশ অংশ

ছবি

এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.৭%: আইএমএফ

ছবি

একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংক চাইলে সরে যেতে পারবে, তবে শর্তসাপেক্ষে : কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

পণ্যের দাম ঠিক রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে : প্রতিমন্ত্রী

ছবি

একীভূত ব্যাংক : পাঁচটির বাইরে আপাতত আর না

ছবি

ঈদে মানুষের মাঝে স্বস্তি দেখেছি : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বিশ্ব ব্যাংকের চেয়ে বেশি দেখছে এডিবি

ছবি

মার্চে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৮১ শতাংশ

ছবি

ঈদের আগে পাঁচ দিনে দেশে এলো ৪৬ কোটি ডলার

ছবি

শিল্পাঞ্চলের বাইরের কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ আর নয়, পাবেনা ঋণও

এবার ঈদে পর্যটন খাত চাঙ্গা হওয়ার আশা

ছবি

জাতীয় লজিস্টিক নীতির খসড়ার অনুমোদন

সোনালীতে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল

ছবি

সোনার দাম আবার বাড়লো, ভরি ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা

ছবি

সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বেসিক ব্যাংক

ছবি

বিজিএমইএর দায়িত্ব নিলেন এস এম মান্নান কচি

ছবি

বাজার মূলধন কিছুটা বাড়লো, তবু লাখ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি

ছবি

নতুন বিদেশী ঋণ নিয়ে পুরনো ঋণ শোধ করছে সরকার : সিপিডি

ছবি

ব্যাংক একীভুতকরনে নীতিমালা জারি

রাষ্ট্রীয় চার ব্যাংক একীভূত হয়ে হবে দুই

ছবি

এবার একীভূত হচ্ছে ‘সোনালীর সাথে বিডিবিএল’ ও ‘কৃষির সাথে রাকাব’

ছবি

শেয়ার প্রতি ১ পয়সা লভ্যাংশ দেবে একমি পেস্টিসাইড

এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানী লিমিটেডের কর্মীদের জন্য মেটলাইফের বীমা সুরক্ষা

গাজীপুরে এক বছরে ট্রাফিক পুলিশের ৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয়

ছবি

প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে: বিশ্বব্যাংক

ছবি

সিএসআর ফান্ডের আওতায় কৃষকদের আর্থিক সহযোগিতা করল সাউথইস্ট ব্যাংক

ছবি

ডেমরায় বাস গ্যারেজে আগুন

ছবি

নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও সেইহারে বাড়েনি তামাকপণ্যের দাম

ছবি

প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়া সেই ভূমি অফিস কর্মী সাময়িক বরখাস্ত

ব্যাংক ঋণের সুদহার আরও বাড়লো

ছবি

বেক্সিমকোর ২ হাজার ৬২৫ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন দিলো বিএসইসি

শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে কাজ করব : শ্রম প্রতিমন্ত্রী

ছবি

ঈদে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট বাড়াল বিমান

tab

অর্থ-বাণিজ্য

বোরো ধানের বাম্পার ফলনের পরও চালের বাজার অস্থির

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ২০২১

জহিরুল ইসলাম একজন বেসরকারি কর্মকর্তা। প্রতি শুক্রবার তিনি রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে বাজার করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার (১০ জুন) চাল কিনতে এসে তিনি চমকে উঠেন। কারণ এক সপ্তাহ আগে এক বস্তা চাল তিনি কিনেছিলেন ২৬শ’ টাকায়। অথচ বৃহস্পতিবার সেই চাল তাকে ২৮শ’ টাকায় কিনতে হলো।

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক বস্তা চালের দাম ২শ’ টাকা বেড়ে যাওয়ার বিষয়কে তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। যেসব মধ্যবিত্ত বা নিন্মবিত্ত মানুষ কম আয় রোজগার করেন, কয়দিন পর পর দাম বৃদ্ধি, তাদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

‘আমরা এমন এক দেশে বসবাস করছি, যেখানে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করলেই ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়িয়ে দিতে পারে তবুও তাদের কিছু হয় না। দেশটা কি শুধু ব্যবসায়ীদেরই। তাহলে আমরা কী?’ সংবাদকে বলছিলেন জহিরুল ইসলাম।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, এখানে পণ্যের দাম বাড়ে, এক ব্যবসায়ী আরেকজনের দোষ দেয়। খুচরা ব্যবসায়ী বলেন আড়তে দাম বেড়েছে, আড়তদার বলেন মিলাররা দাম বাড়িয়েছেন। মিলাররাও এটা ওটা কারণ দেখিয়ে দিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, রশিদ, সাগরসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৭ থেকে ৫৮ টাকায়। লোকাল মিনিকেটগুলো বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫৪ থেকে ৫৬ টাকায়। এছাড়া বিআর-২৮ ও স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। অথচ মাত্র এক সপ্তাহ আগে এসব চাল প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমে পাওয়া যেত।

এ প্রসঙ্গে কাওরান বাজারের মেসার্স জনতা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আবু ওসমান সংবাদকে বলেন, ‘খুচরা ক্রেতারা আমাদের কাছে এসে বলেন, আমরা দাম বাড়াচ্ছি। কিন্তু তারা জানে না, দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমাদের কোন হাত নেই। গত সপ্তাহে এক বস্তা চাল আমরা ২৪শ’ বা সাড়ে ২৪শ’ টাকায় কিনেছিলাম এবং বিক্রি করেছিলাম ২৬শ’ টাকায়। আর আজ সেই চাল আমরা কিনেই আনছি ২৬শ’ টাকায়।’

দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি মিলারদের সিন্ডিকেটের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘মিলাররা বলছেন, ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। তবে ধানের দাম কতটুকু বেড়েছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ বছর দেশে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে এবং ধান মাড়াই সবেমাত্র শেষ হলো। সরবরাহও রয়েছে প্রচুর। তাহলে ধানের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে মিলারদের অজুহাত কতটা সত্য সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে।’

শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, এই চিত্র সারাদেশেরই। গত কয়দিনেই রংপুর, নওগাঁ, বগুড়া, শেরপুর, নাটোর, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহসহ বেশ কয়েকটি জেলায় চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এসব জেলায় যোগাযোগ করে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে।

কেউ দাবি করছেন, ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম বাড়ছে। আবার কেউ অভিযোগ করছেন, মিলাররা সিন্ডিকেট করে চাল মজুদ করার কারণে দাম বাড়ছে।

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার খাজানগরের একটি বড় অটো মিলের গেটে প্রতিদিনের দর তালিকায় দেখা যায়, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা, কাজললতা ও আঠাশ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, বাসমতি বিক্রি হচ্ছে ৬২.৫০ টাকা, স্বর্ণা ৪০.৫০ টাকা। ধানের যে দর লেখা আছে তাতে দেখা যায়, সরু ধান যাকে মিনিকেট বলা হয় সেই ধান ৩৫.৫০ টাকা, কাজললতা ও আঠাশ ৩১.৫০ টাকা, বাসমতি ৩৫ টাকা ও ¯স্বর্ণা ২৭.৫০ টাকায় কিনছেন তারা। এক সপ্তাহ আগেও এ দর কেজি অনুযায়ী ২ থেকে ৩ টাকা কম ছিল।

এখানকার মিল মালিকরা দাবি করেন, গত এক সপ্তাহ ধরে ধানে বাজার বাড়তি। সব ধরনের ধানের দাম মণপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতিদিন ধানের বাজার বাড়ছে। তাই ধানের বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে চালের দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে এমন ভরা মৌসুমে ধানের দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছেন মিল মালিকরা। তারাও বিষয়টি ভেবে পাচ্ছেন না।

তবে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, কুষ্টিয়ার ৪৬টি অটো মিল মালিকরা বোরো ধান বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর ধান কিনেছেন। তারা প্রথম দিকে কম দামে ধান কিনেছেন। এসব ধান তাদের গুদামে রয়েছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত তারা ধান কিনছেন। এসব ধানও মজুদ রাখছেন তারা।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহে গত এক মাসে মান অনুযায়ী, চালের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৫ টাকা হারে। বাজারের খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা জানান, একমাস আগে পুরাতন বিআর-২৮, ২৯ জাতের চাল খুচরা পর্যায় বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৫২ টাকা। নতুন চাল বাজারে আসার পর সেই চাল প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪২ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু বর্তমানে সেই চাল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা প্রতি কেজি। এছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলের অটো রাইস মিলগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক মিলাররা চিকন চাল উৎপন্ন করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে চিকন চাল বাজারজাত করছে উচ্চমূল্যে, যা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীদের দাবি, এ ধরনের ব্র্যান্ডের নামধারী মিলাররা উন্নত জাতের চাল উৎপাদন খরচের ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি হারে বাজারজাত করছে। এতে ব্যবসায়ীদের চেয়ে ভোক্তাদের বেশি মূল্য গুনতে হচ্ছে।

স্থানীয় মিলাররা বলছেন, বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওযায় চাল একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি গুদামেও চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করতে হচ্ছে। তাই বাজারে চাল সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় চালে দাম একটু বেড়েছে।

নওগাঁ : নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তম সরকার সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘গত সপ্তাহে কাটারি চাল প্রতি কেজি ছিল ৪৭-৫০ টাকা বর্তমানে তা বেড়ে ৫০-৫২ টাকা, জিরাশাইল চাল প্রতি কেজি ছিল ৪৮-৫০ টাকা বর্তমানে তা বেড়ে ৫০-৫৩ টাকা, খাটোদশ চাল প্রতি কেজি ছিল ৪২-৪৩ টাকা বর্তমানে তা বেড়ে ৪৫-৪৬ টাকা, উনত্রিশ চাল প্রতি কেজি ছিল ৪০-৪২ বর্তমানে তা বেড়ে ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে নওগাঁ জেলা চাউলকল মালিক সমিতি সভাপতি আলহাজ রফিকুল ইসলাম সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘বাজারে চালের দাম বাড়ার একমাত্র কারণ ধানের দাম বৃদ্ধি। ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বাজার থেকে ধান কিনে চাল উৎপাদন করতে খরচ বেশি পড়ায় চালের দাম বেড়েছে।’

রংপুর : রংপুরের বৃহৎ চালের মোকাম রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ এলাকায় গিয়ে পাইকারি চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিনিকেট চাল প্রতি কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে হাইব্রিড মোটা চাল ৩৬ টাকা কেজি থেবে বেড়ে ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গুটি স্বর্ণা চাল কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৪৩ টাকা বিআর-২৮ ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮ টাকা এবং বিআর-২৯ চাল ৪১ টাকা থেকে বেড়ে ৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাহিগঞ্জ আড়তদার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সম্পাদক রিপন জানান, চালের কোন সংকট নেই। এবার রংপুরেই ৬ লাখ টনেরও বেশি চাল উৎপাদন হয়েছে। রংপুর বিভাগে ১৮ লাখ টনের বেশি চাল উৎপাদিত হয়েছে যা রংপুর বিভাগের চাহিদা পূরণ করার পরও কমপক্ষে ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা। সেখানে চালের দাম বাড়ার কোন কারণ নেই বলে জানান তিনি।

বগুড়া : বগুড়ার ফতেহআলী বাজারের চালের খুরচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা ও চিকন চাল প্রতি কেজিতে ২টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৭-৪৮ টাকা দরে যা আগে ছিল ৪৪-৪৫ টাকা দরে। কাটারি বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা যা আগে বিক্রি হয়েছে ৫২-৫৩ টাকা কেজি দরে। বিআর-২৯ ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৬ টাকা যা আগে ছিল ৪২-৪৩ টাকা কেজি। মিনিকেট ৫৩ টাকা যা আগে ছিল ৫২ টাকা। নাজিরশাইল ৬৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। যা আগে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজি দরে।

চারমাথা গোদারপাড়া চালের পাইকারি বাজারের মেসার্স ইসলাম চাউল ঘরের স্বত্বাধিকারী আলহাজ মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, গত ৩-৪ দিন ধরে প্রতি বস্তায় ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে খুরচা বাজারেও চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জানান, বাজারে ধানের দাম বেড়ে গেছে। এ কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে অনেক মিল মালিক চালের দাম বাড়বে এই ভেবে ধান কিনে মজুদ করছে।

শেরপুর : শেরপুরে চালের খুচরা বাজারে আটাশ চালের বস্তাপ্রতি বেড়ে হয়েছে ২২শ’ টাকা। কেজিপ্রতি হয়েছে ৪৮ টাকা। আগে এর বাজার ছিল ২১শ’ ৫০ টাকা। কেজিপ্রতি ছিল ৪৭ টাকা। বিআর-২৯ চালের বস্তাপ্রতি বেড়ে হয়েছে ২১৫০-২২শ’ টাকা যা কেজিপ্রতি ৪৭-৪৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগে এর বাজার মূল্য ছিল ২১শ’ টাকা। আতব চাল বস্তাপ্রতি বেড়ে হয়েছে ৩৪শ’ টাকা। কেজিপ্রতি ৬৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগে এর বাজার মূল্য ছিল ৩২শ’ ৫০ টাকা। তবে নাজির চালের বাজারমূল্য স্থিতিশীল রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মুহিত কুমার দে জানান, ‘চালের বাজার বৃদ্ধি হওয়ার বিষয়টি মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট দেখেন। আমরা শুধু উৎপাদনটা দেখি।’

back to top