alt

অর্থ-বাণিজ্য

এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ

ফয়েজ আহমেদ তুষার : মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২২

গ্যাসের পর এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত সপ্তাহে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জমা দেয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তবে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় প্রস্তাব ফেরত আসে। এখন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তাব চূড়ান্ত করছে পিডিবি। দেশে চলমান গ্যাস সংকটে দীর্ঘদিন ধরে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বাড়ছে ব্যয়বহুল জ্বালানি তেলের পাশপাশি কয়লার ব্যবহার। সম্প্রতি ফার্নেস তেল আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। কয়লা আমদানিতে বসানো হয়েছে পাঁচ শতাংশ ভ্যাট। বাড়ানো হয়েছে ডিজেলের দাম। পিডিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘যে পরিমাণ গ্যাস দরকার, সেটা তো দিতে পারছে না। বিশ্ববাজারে এলএনজি এবং জ্বালানি তেলের দামও বাড়ছে। গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে রেকর্ড লোকসান হয়েছে। এ বছরও তেলের মূল্যবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি স্থানীয় গ্যাসের সরবরাহ আরও কমার পূর্বাভাস রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে গ্রাহককে বিদ্যুৎ দিতে হয়। ফলে প্রতিবছর একটা ঘাটতি থেকেইে যায়। জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর ত্রিশ হাজার কোটি টাকার বেশি ঘাটতি হবে, এমন হিসাব কষে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। অন্যথায় ঘাটতি মোকবিলায় সরকারকে ভর্তুকি বাড়াতে হবে।’ যদি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়, তাহলে ঘাটতি আরও বাড়বে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা। পিডিবির দেখাদেখি খুচরা বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানিগুলোও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা যায়, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর বিষয়ে গত কয়েক মাস ধরে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা চলছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে বিইআরসিতে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠায় পিডিবি।

বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল গত ১৮ জানুয়ারি সংবাদকে বলেন, ‘বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধির জন্য পিডিবির একটি আবেদন পেয়েছি। কিন্তু তা প্রবিধান অনুযায়ী যথাযথ হয়নি। ফলে পরদিনই ফেরত পাঠিয়েছি। বিধি মোতাবেক ফের প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।’

পিডিবির অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। তবে আগের প্রস্তাবে যা ছিল সংশোধিত প্রস্তাবেও আর্থিক বিষয়গুলো প্রায় একই থাকবে। শুধু বিধি অনুসরণ করে যুক্তি ও গাণিতিক হিসাব প্রদর্শণ করা হবে।

বিদ্যুতের দামবৃদ্ধির প্রস্তাবে যা আছে গত সপ্তাহে পিডিবির দেয়া প্রস্তাবে বলা হয়, গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি থাকায় ফার্নেস অয়েল আমদানি বাড়াতে হয়েছে। অথচ গত জুনে ফার্নেস অয়েল আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে এ বাবদ খরচ ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। এতে গত অর্থবছর শুধু জ্বালানি বাবদ ব্যয় ৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা বেড়েছে। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট) বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩ টাকা ১৬ পয়সা জ্বালানি খরচ হয়। আগের অর্থবছর ২০১৯-২০ এ ব্যয় ছিল প্রতি ইউনিটে ২ টাকা ১৩ পয়সা।

এদিকে গত জুলাইয়ে কয়লার ওপর পাঁচ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও কয়লার দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব ধরনের জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং গ্যাস সরবরাহ আরও কমে যাওয়ায় চলতি ২০২২ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিট জ্বালানি ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ৪ টাকা ২৪ পয়সা। আর জ্বালানি বাবদ মোট ব্যয় বাড়বে ১২ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। ২০২১ সালের তুলনায় তা তিন ভাগের এক ভাগের চেয়ে বেশি হবে। তবে সম্প্রতি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা কার্যকর হলে বিদ্যুতের জ্বালানি খরচ আরও বাড়বে। পিডিবির প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিইআরসি বিদ্যুতের গড় পাইকারি দাম নির্ধারণ করে পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। যদিও গত অর্থবছর গড় পাইকারি বিক্রয় মূল্য পাঁচ টাকা ১২ পয়সায় নেমে যায়। এর ফলে সব মিলিয়ে পিডিবির আয় হয় ৩৯ হাজার ৫২ কোটি টাকা। আর এ বিদ্যুৎ কেনায় পিডিবির ব্যয় হয় ৫০ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। এতে সংস্থাটির লোকসান হয় ১১ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ১১ মাসের জন্য (জুলাই ২০২০-মে-২০২১) ভর্তুকি দিয়েছে ১০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ভর্তুকি এখনও অপেক্ষাধীন।

চলতি বছর বিতরণকারী সংস্থা-কোম্পানিগুলোর কাছে বিদ্যুৎ বিক্রির সম্ভাব্য পরিমাণ দাঁড়াবে আট হাজার ৮৯৯ কোটি ৩০ লাখ কিলোওয়াট। গ্যাসের দাম না বাড়লে এ বিদ্যুৎ কেনায় পিডিবির ব্যয় হবে ৭৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। আর এ বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবির আয় হবে ৪৩ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। অর্র্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৮ টাকা ৫৮ পয়সায় কিনে পাঁচ টাকা আট পয়সায় বিক্রি করবে পিডিবি। বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির ফলে চলতি বছর পিডিবির ঘাটতি দাঁড়াবে ৩০ হাজার ২৫২ কোটি টাকা।

এ ঘাটতি মেটাতে বিদ্যুতের পাইকারি দাম আট টাকা ৫৮ পয়সা নির্ধারণের আবেদন করেছে পিডিবি। অর্থাৎ বিদ্যুতের পাইকারি দাম প্রতি কিলোওয়াটে সাড়ে তিন টাকা বা ৬৮ দশমিক ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। পাইকারি দাম বৃদ্ধির হারের অনুপাতে গ্রাহক পর্যায়েও দাম বাড়াতে হবে।

এদিকে পাইকারি দাম বাড়ানোর পাশাপাশি মূল্যহার নির্ধারণে ডিমান্ড চার্জ আরোপের প্রস্তাবও করেছে পিডিবি। এছাড়া ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের জন্য মূল্যহার ঘাটতি ও দাম বৃদ্ধির পৃথক প্রস্তাবও করেছে সংস্থাটি। ডেসকো, ডিপিডিসি, নেসকোসহ অন্যান্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পিডিবির প্রস্তাবের আলোকে তারাও হিসাব-নিকাশ শুরু করেছেন যাতে দ্রুতই বিদ্যুতের খুচরা মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব কমিশনে জমা দেয়া যায়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জালিল সংবাদকে বলেন, ‘উৎপাদন খরচ কত হচ্ছে, সেটি বিবেচনা করে বিদ্যুতের পাইকারি দাম এবং পাইকারি দামের ওপর ভিত্তি করে খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়। আমরা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষেয়ে ৬টি কোম্পানির প্রস্তাব পেয়েছি। বাকি একটির প্রস্তাব পেলে কারিগরি কমিটি তা মূল্যায়ন করবে। তারপর শুনানিসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

বিদ্যুতের দাম নির্ধারণে গ্যাসের দামেরও প্রভাব থাকবে জানিয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগে পিডিবির প্রস্তাব আসুক। প্রক্রিয়া তো একই।’রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পিডিবি দেশে পাইকারি বিদ্যুৎ বিক্রির একমাত্র প্রতিষ্ঠান। কেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর তা চুক্তিমূল্যে কিনে নেয় পিডিবি। প্রতিষ্ঠানটি সেই বিদ্যুৎ পাইকারি মূল্যে বিতরণকারী সংস্থা-কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করে। এর মাঝে সঞ্চালন বাবদ হুইলিং চার্জ (মাশুল) নেয় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।

বিগত সময় বিদ্যুতের মূল্যহার সমন্বয়ের প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে দেখা যায়, পাইকারি দাম বৃদ্ধির পরপরই খুচরা দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে একসঙ্গে দামবৃদ্ধির ঘোষণা দেয় বিইআরসি।

সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি করে বিইআরসি, যা ওই বছর ১ মার্চ থেকে কার্যকর হয়।

এর আগে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর খুচরা বিদ্যুতের মূল্য ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হলেও পাইকারি মূল্য বাড়ানো হয়নি। বর্ধিত মূল্য ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। এদিকে ২০১৫ সালে পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ বাড়ানো হয়।

ছবি

সয়াবিন তেলের লিটার প্রতি দাম বাড়ল ৪ টাকা

ছবি

সূচকের পতনে পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন

ছবি

ব্যাংক এশিয়া কিনবে পাকিস্তানি ব্যাংক আলফালাহর বাংলাদেশ অংশ

ছবি

এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.৭%: আইএমএফ

ছবি

একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংক চাইলে সরে যেতে পারবে, তবে শর্তসাপেক্ষে : কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

পণ্যের দাম ঠিক রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে : প্রতিমন্ত্রী

ছবি

একীভূত ব্যাংক : পাঁচটির বাইরে আপাতত আর না

ছবি

ঈদে মানুষের মাঝে স্বস্তি দেখেছি : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বিশ্ব ব্যাংকের চেয়ে বেশি দেখছে এডিবি

ছবি

মার্চে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৮১ শতাংশ

ছবি

ঈদের আগে পাঁচ দিনে দেশে এলো ৪৬ কোটি ডলার

ছবি

শিল্পাঞ্চলের বাইরের কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ আর নয়, পাবেনা ঋণও

এবার ঈদে পর্যটন খাত চাঙ্গা হওয়ার আশা

ছবি

জাতীয় লজিস্টিক নীতির খসড়ার অনুমোদন

সোনালীতে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল

ছবি

সোনার দাম আবার বাড়লো, ভরি ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা

ছবি

সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বেসিক ব্যাংক

ছবি

বিজিএমইএর দায়িত্ব নিলেন এস এম মান্নান কচি

ছবি

বাজার মূলধন কিছুটা বাড়লো, তবু লাখ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি

ছবি

নতুন বিদেশী ঋণ নিয়ে পুরনো ঋণ শোধ করছে সরকার : সিপিডি

ছবি

ব্যাংক একীভুতকরনে নীতিমালা জারি

রাষ্ট্রীয় চার ব্যাংক একীভূত হয়ে হবে দুই

ছবি

এবার একীভূত হচ্ছে ‘সোনালীর সাথে বিডিবিএল’ ও ‘কৃষির সাথে রাকাব’

ছবি

শেয়ার প্রতি ১ পয়সা লভ্যাংশ দেবে একমি পেস্টিসাইড

এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানী লিমিটেডের কর্মীদের জন্য মেটলাইফের বীমা সুরক্ষা

গাজীপুরে এক বছরে ট্রাফিক পুলিশের ৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয়

ছবি

প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে: বিশ্বব্যাংক

ছবি

সিএসআর ফান্ডের আওতায় কৃষকদের আর্থিক সহযোগিতা করল সাউথইস্ট ব্যাংক

ছবি

ডেমরায় বাস গ্যারেজে আগুন

ছবি

নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও সেইহারে বাড়েনি তামাকপণ্যের দাম

ছবি

প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়া সেই ভূমি অফিস কর্মী সাময়িক বরখাস্ত

ব্যাংক ঋণের সুদহার আরও বাড়লো

ছবি

বেক্সিমকোর ২ হাজার ৬২৫ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন দিলো বিএসইসি

শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে কাজ করব : শ্রম প্রতিমন্ত্রী

ছবি

ঈদে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট বাড়াল বিমান

ছবি

ডিজেল-কেরোসিনের দাম লিটারে ২.২৫ টাকা কমলো

tab

অর্থ-বাণিজ্য

এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ

ফয়েজ আহমেদ তুষার

মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২২

গ্যাসের পর এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত সপ্তাহে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জমা দেয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তবে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় প্রস্তাব ফেরত আসে। এখন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তাব চূড়ান্ত করছে পিডিবি। দেশে চলমান গ্যাস সংকটে দীর্ঘদিন ধরে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বাড়ছে ব্যয়বহুল জ্বালানি তেলের পাশপাশি কয়লার ব্যবহার। সম্প্রতি ফার্নেস তেল আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। কয়লা আমদানিতে বসানো হয়েছে পাঁচ শতাংশ ভ্যাট। বাড়ানো হয়েছে ডিজেলের দাম। পিডিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘যে পরিমাণ গ্যাস দরকার, সেটা তো দিতে পারছে না। বিশ্ববাজারে এলএনজি এবং জ্বালানি তেলের দামও বাড়ছে। গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে রেকর্ড লোকসান হয়েছে। এ বছরও তেলের মূল্যবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি স্থানীয় গ্যাসের সরবরাহ আরও কমার পূর্বাভাস রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে গ্রাহককে বিদ্যুৎ দিতে হয়। ফলে প্রতিবছর একটা ঘাটতি থেকেইে যায়। জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর ত্রিশ হাজার কোটি টাকার বেশি ঘাটতি হবে, এমন হিসাব কষে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। অন্যথায় ঘাটতি মোকবিলায় সরকারকে ভর্তুকি বাড়াতে হবে।’ যদি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়, তাহলে ঘাটতি আরও বাড়বে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা। পিডিবির দেখাদেখি খুচরা বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানিগুলোও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা যায়, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর বিষয়ে গত কয়েক মাস ধরে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা চলছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে বিইআরসিতে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠায় পিডিবি।

বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল গত ১৮ জানুয়ারি সংবাদকে বলেন, ‘বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধির জন্য পিডিবির একটি আবেদন পেয়েছি। কিন্তু তা প্রবিধান অনুযায়ী যথাযথ হয়নি। ফলে পরদিনই ফেরত পাঠিয়েছি। বিধি মোতাবেক ফের প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।’

পিডিবির অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। তবে আগের প্রস্তাবে যা ছিল সংশোধিত প্রস্তাবেও আর্থিক বিষয়গুলো প্রায় একই থাকবে। শুধু বিধি অনুসরণ করে যুক্তি ও গাণিতিক হিসাব প্রদর্শণ করা হবে।

বিদ্যুতের দামবৃদ্ধির প্রস্তাবে যা আছে গত সপ্তাহে পিডিবির দেয়া প্রস্তাবে বলা হয়, গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি থাকায় ফার্নেস অয়েল আমদানি বাড়াতে হয়েছে। অথচ গত জুনে ফার্নেস অয়েল আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে এ বাবদ খরচ ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। এতে গত অর্থবছর শুধু জ্বালানি বাবদ ব্যয় ৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা বেড়েছে। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট) বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩ টাকা ১৬ পয়সা জ্বালানি খরচ হয়। আগের অর্থবছর ২০১৯-২০ এ ব্যয় ছিল প্রতি ইউনিটে ২ টাকা ১৩ পয়সা।

এদিকে গত জুলাইয়ে কয়লার ওপর পাঁচ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও কয়লার দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব ধরনের জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং গ্যাস সরবরাহ আরও কমে যাওয়ায় চলতি ২০২২ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিট জ্বালানি ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ৪ টাকা ২৪ পয়সা। আর জ্বালানি বাবদ মোট ব্যয় বাড়বে ১২ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। ২০২১ সালের তুলনায় তা তিন ভাগের এক ভাগের চেয়ে বেশি হবে। তবে সম্প্রতি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা কার্যকর হলে বিদ্যুতের জ্বালানি খরচ আরও বাড়বে। পিডিবির প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিইআরসি বিদ্যুতের গড় পাইকারি দাম নির্ধারণ করে পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। যদিও গত অর্থবছর গড় পাইকারি বিক্রয় মূল্য পাঁচ টাকা ১২ পয়সায় নেমে যায়। এর ফলে সব মিলিয়ে পিডিবির আয় হয় ৩৯ হাজার ৫২ কোটি টাকা। আর এ বিদ্যুৎ কেনায় পিডিবির ব্যয় হয় ৫০ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। এতে সংস্থাটির লোকসান হয় ১১ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ১১ মাসের জন্য (জুলাই ২০২০-মে-২০২১) ভর্তুকি দিয়েছে ১০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ভর্তুকি এখনও অপেক্ষাধীন।

চলতি বছর বিতরণকারী সংস্থা-কোম্পানিগুলোর কাছে বিদ্যুৎ বিক্রির সম্ভাব্য পরিমাণ দাঁড়াবে আট হাজার ৮৯৯ কোটি ৩০ লাখ কিলোওয়াট। গ্যাসের দাম না বাড়লে এ বিদ্যুৎ কেনায় পিডিবির ব্যয় হবে ৭৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। আর এ বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবির আয় হবে ৪৩ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। অর্র্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৮ টাকা ৫৮ পয়সায় কিনে পাঁচ টাকা আট পয়সায় বিক্রি করবে পিডিবি। বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির ফলে চলতি বছর পিডিবির ঘাটতি দাঁড়াবে ৩০ হাজার ২৫২ কোটি টাকা।

এ ঘাটতি মেটাতে বিদ্যুতের পাইকারি দাম আট টাকা ৫৮ পয়সা নির্ধারণের আবেদন করেছে পিডিবি। অর্থাৎ বিদ্যুতের পাইকারি দাম প্রতি কিলোওয়াটে সাড়ে তিন টাকা বা ৬৮ দশমিক ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। পাইকারি দাম বৃদ্ধির হারের অনুপাতে গ্রাহক পর্যায়েও দাম বাড়াতে হবে।

এদিকে পাইকারি দাম বাড়ানোর পাশাপাশি মূল্যহার নির্ধারণে ডিমান্ড চার্জ আরোপের প্রস্তাবও করেছে পিডিবি। এছাড়া ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের জন্য মূল্যহার ঘাটতি ও দাম বৃদ্ধির পৃথক প্রস্তাবও করেছে সংস্থাটি। ডেসকো, ডিপিডিসি, নেসকোসহ অন্যান্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পিডিবির প্রস্তাবের আলোকে তারাও হিসাব-নিকাশ শুরু করেছেন যাতে দ্রুতই বিদ্যুতের খুচরা মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব কমিশনে জমা দেয়া যায়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জালিল সংবাদকে বলেন, ‘উৎপাদন খরচ কত হচ্ছে, সেটি বিবেচনা করে বিদ্যুতের পাইকারি দাম এবং পাইকারি দামের ওপর ভিত্তি করে খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়। আমরা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষেয়ে ৬টি কোম্পানির প্রস্তাব পেয়েছি। বাকি একটির প্রস্তাব পেলে কারিগরি কমিটি তা মূল্যায়ন করবে। তারপর শুনানিসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

বিদ্যুতের দাম নির্ধারণে গ্যাসের দামেরও প্রভাব থাকবে জানিয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগে পিডিবির প্রস্তাব আসুক। প্রক্রিয়া তো একই।’রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পিডিবি দেশে পাইকারি বিদ্যুৎ বিক্রির একমাত্র প্রতিষ্ঠান। কেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর তা চুক্তিমূল্যে কিনে নেয় পিডিবি। প্রতিষ্ঠানটি সেই বিদ্যুৎ পাইকারি মূল্যে বিতরণকারী সংস্থা-কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করে। এর মাঝে সঞ্চালন বাবদ হুইলিং চার্জ (মাশুল) নেয় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।

বিগত সময় বিদ্যুতের মূল্যহার সমন্বয়ের প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে দেখা যায়, পাইকারি দাম বৃদ্ধির পরপরই খুচরা দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে একসঙ্গে দামবৃদ্ধির ঘোষণা দেয় বিইআরসি।

সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি করে বিইআরসি, যা ওই বছর ১ মার্চ থেকে কার্যকর হয়।

এর আগে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর খুচরা বিদ্যুতের মূল্য ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হলেও পাইকারি মূল্য বাড়ানো হয়নি। বর্ধিত মূল্য ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। এদিকে ২০১৫ সালে পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ বাড়ানো হয়।

back to top