সানেমের জরিপ
করোনা সংকটের প্রথমদিকে অনেক পোশাক শ্রমিকের বেতন কমেছিল। কেউ কেউ চাকরিও হারিয়েছিলেন। পরে বেতন বেড়েছে। যারা চাকরি হারিয়েছিলেন তারা কাজেও ফিরেছে। একই সঙ্গে ওভারটাইম কাজ করে বাড়তি বেতনও পাচ্ছে। তবে এই বাড়তি বেতন কোন কাজে লাগাতে পারছেন না শ্রমিকরা। কারণ বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বাড়তি আয়ের টাকা বাড়তি দামেই খেয়ে ফেলছে।
সম্প্রতি সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিং (সানেম) এবং পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ চ্যানেল দ্য গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরিসের (জিডব্লিউডি) যৌথ জরিপের এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
সানেমের জরিপের তথ্য বলছে, পোশাক শ্রমিকরা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করছেন। তবে শ্রমিকদের বেতন ও ওভারটাইম বাড়লেও তা খেয়ে দিচ্ছে মূল্যস্ফীতি। কারণ এ সময়ে চালে ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ আর বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ১৭ শতাংশ। পোশাক শ্রমিকরা আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করছেন। গড়ে ১০ ঘণ্টার শ্রমে ভালো পারিশ্রমিক আসছে। এর সঙ্গে আছে ওভারটাইম। বেতন ও ওভারটাইম মিলে আয় বাড়লেও বাড়তি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গিয়ে তা পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ওয়েবিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন সানেম চেয়ারম্যান বজলুল হক খন্দকার এবং জিডব্লিউডির মাঠ ব্যবস্থাপক ফারাহ মারজান। জরিপে শ্রমিকদের এ সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে তাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। শ্রমিকদের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘২০২০ সাল থেকে সপ্তাহভিত্তিতে শ্রমিকদের গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা এবং শ্রমিকদের কাছে থাকা ডায়েরি থেকে নেয়া হিসাবের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।’
জরিপে উঠে আসা ফল থেকে ব্র্র্যান্ড-ক্রেতা, উদ্যোক্তা ও মালিক পক্ষ যাতে নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপ নিতে পারে সে ব্যাপারে সহায়তা দেয়াও জরিপের উদ্দেশ্য। এক হাজার ৩০০ শ্রমিক জরিপে অংশ নেন, যাদের ৭৬ শতাংশই নারী। জরিপ এলাকা ছিল ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া ও চট্টগ্রাম।
জরিপে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কে তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০২০ সালের এপ্রিলে লকডাউন শুরুর পর থেকেই শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা বেড়েছে। এতে বেতনের সঙ্গে ওভারটাইমসহ শ্রমিকদের আয়ও বেড়েছে। তবে যে পরিমাণ আয় বেড়েছে তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে চালের দাম। এ সময়ে শ্রমিকরা যে ধরনের চাল কিনে থাকেন সেগুলোর দর বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এ সময়ে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ১৭ শতাংশ।
জরিপের সাক্ষাৎকারে একজন শ্রমিক জানান, করোনা-পরবর্তী সময়ের তুলনায় এখন তারা ভালো আছেন। কারণ করোনার আগে কারখানায় কাজ কম ছিল। এ কারণে বেতনও নিয়মিত ছিল না। প্রতি মাসে বেতনের অর্ধেকের মতো খাওয়া বাবদ খরচ হয়ে যেত। এখন নিয়মিত বেতন পান তিনি।
জরিপে আরও দেখা যায়, করোনা টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন অন্তত ৮০ শতাংশ শ্রমিক। নারী শ্রমিকদের মধ্যে এ হার ৭৭ শতাংশ। তবে দ্বিতীয় ডোজ কত শ্রমিক পেয়েছেন সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। করোনাকালে মাত্র ১০ শতাংশ শ্রমিক তাদের সন্তানের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পেরেছেন।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক খাতে রপ্তানি আদেশ অনেক বেড়েছে। ব্যবসা সম্প্রসারণ করছেন উদ্যোক্তারা। এতে শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে। এ কারণে শ্রমিকদের দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করাতে হচ্ছে। করোনাকালে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সরকারের দেয়া প্রণোদনার আওতায় ডিজিটাল মাধ্যমে বেতন পেতেন শ্রমিকরা। ২০২০ সালের এপ্রিলে ৭৬ শতাংশ বা প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক এ ব্যবস্থায় যুক্ত ছিলেন। তবে তার তিন মাস পরই আবার নগদ বেতন পরিশোধের পদ্ধতিতে ফিরে গেছেন মালিকরা। এখন তা ৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
সানেমের জরিপ
শুক্রবার, ২০ মে ২০২২
করোনা সংকটের প্রথমদিকে অনেক পোশাক শ্রমিকের বেতন কমেছিল। কেউ কেউ চাকরিও হারিয়েছিলেন। পরে বেতন বেড়েছে। যারা চাকরি হারিয়েছিলেন তারা কাজেও ফিরেছে। একই সঙ্গে ওভারটাইম কাজ করে বাড়তি বেতনও পাচ্ছে। তবে এই বাড়তি বেতন কোন কাজে লাগাতে পারছেন না শ্রমিকরা। কারণ বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বাড়তি আয়ের টাকা বাড়তি দামেই খেয়ে ফেলছে।
সম্প্রতি সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিং (সানেম) এবং পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ চ্যানেল দ্য গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরিসের (জিডব্লিউডি) যৌথ জরিপের এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
সানেমের জরিপের তথ্য বলছে, পোশাক শ্রমিকরা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করছেন। তবে শ্রমিকদের বেতন ও ওভারটাইম বাড়লেও তা খেয়ে দিচ্ছে মূল্যস্ফীতি। কারণ এ সময়ে চালে ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ আর বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ১৭ শতাংশ। পোশাক শ্রমিকরা আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করছেন। গড়ে ১০ ঘণ্টার শ্রমে ভালো পারিশ্রমিক আসছে। এর সঙ্গে আছে ওভারটাইম। বেতন ও ওভারটাইম মিলে আয় বাড়লেও বাড়তি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গিয়ে তা পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ওয়েবিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন সানেম চেয়ারম্যান বজলুল হক খন্দকার এবং জিডব্লিউডির মাঠ ব্যবস্থাপক ফারাহ মারজান। জরিপে শ্রমিকদের এ সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে তাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। শ্রমিকদের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘২০২০ সাল থেকে সপ্তাহভিত্তিতে শ্রমিকদের গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা এবং শ্রমিকদের কাছে থাকা ডায়েরি থেকে নেয়া হিসাবের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।’
জরিপে উঠে আসা ফল থেকে ব্র্র্যান্ড-ক্রেতা, উদ্যোক্তা ও মালিক পক্ষ যাতে নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপ নিতে পারে সে ব্যাপারে সহায়তা দেয়াও জরিপের উদ্দেশ্য। এক হাজার ৩০০ শ্রমিক জরিপে অংশ নেন, যাদের ৭৬ শতাংশই নারী। জরিপ এলাকা ছিল ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া ও চট্টগ্রাম।
জরিপে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কে তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০২০ সালের এপ্রিলে লকডাউন শুরুর পর থেকেই শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা বেড়েছে। এতে বেতনের সঙ্গে ওভারটাইমসহ শ্রমিকদের আয়ও বেড়েছে। তবে যে পরিমাণ আয় বেড়েছে তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে চালের দাম। এ সময়ে শ্রমিকরা যে ধরনের চাল কিনে থাকেন সেগুলোর দর বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এ সময়ে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ১৭ শতাংশ।
জরিপের সাক্ষাৎকারে একজন শ্রমিক জানান, করোনা-পরবর্তী সময়ের তুলনায় এখন তারা ভালো আছেন। কারণ করোনার আগে কারখানায় কাজ কম ছিল। এ কারণে বেতনও নিয়মিত ছিল না। প্রতি মাসে বেতনের অর্ধেকের মতো খাওয়া বাবদ খরচ হয়ে যেত। এখন নিয়মিত বেতন পান তিনি।
জরিপে আরও দেখা যায়, করোনা টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন অন্তত ৮০ শতাংশ শ্রমিক। নারী শ্রমিকদের মধ্যে এ হার ৭৭ শতাংশ। তবে দ্বিতীয় ডোজ কত শ্রমিক পেয়েছেন সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। করোনাকালে মাত্র ১০ শতাংশ শ্রমিক তাদের সন্তানের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পেরেছেন।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক খাতে রপ্তানি আদেশ অনেক বেড়েছে। ব্যবসা সম্প্রসারণ করছেন উদ্যোক্তারা। এতে শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে। এ কারণে শ্রমিকদের দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করাতে হচ্ছে। করোনাকালে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সরকারের দেয়া প্রণোদনার আওতায় ডিজিটাল মাধ্যমে বেতন পেতেন শ্রমিকরা। ২০২০ সালের এপ্রিলে ৭৬ শতাংশ বা প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক এ ব্যবস্থায় যুক্ত ছিলেন। তবে তার তিন মাস পরই আবার নগদ বেতন পরিশোধের পদ্ধতিতে ফিরে গেছেন মালিকরা। এখন তা ৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে।