ডেল্টা লাইফে প্রশাসক আমলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নানা তৎপরতা
দেশের শীর্ষ স্থানীয় বীমা কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে প্রশাসক নিয়োগে যতটা না ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় কিছু বিপথগামী কর্মকর্তাকে কর্তৃত্ব দেয়ায়। গত দেড় বছরে তারা প্রশাসনিক ও আর্থিক শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের ব্যবস্থাপনায় কর্মচারীদের মধ্যে শুধু বিভাজনই নয়, পারস্পরিক শত্রুতাও সৃষ্টি করা হয়েছে। সম্প্রতি এক অনুসন্ধ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, অপরদিকে কিছু কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে উগ্র আঞ্চলিকতার সৃষ্টি হয়েছে। আর কিছুসংখ্যক কর্মকর্তাকে প্রশাসক আমলে পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত ভাতাসহ নানা সুবিধা দিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এতে প্রশাসনের আগের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে গেছে যা ডেল্টা লাইফের সৃষ্টি থেকে প্রশাসক নিয়োগের আগ পর্যন্ত দেখা যায়নি। ডেল্টা লাইফের সর্বশেষ প্রশাসক মো. কুদুস খানের সময়ে কোম্পানির ভিতরে নতুন করে গড়ে উঠা বিশৃঙ্খলাকারী ও সার্ভিস রুল ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় সংকট আরও গভীর হয়েছে। প্রশাসক আমলের কালো অধ্যায়ের অবসানে ডেল্টা লাইফের পলিসি হোল্ডার, শেয়ার হোল্ডার ও সর্বস্তরের কর্মচারীদের মধ্যে স্বত্বি ফিরে আসছে। আর ডেল্টা লাইফ এখন নতুন করে আরও ভালো করার জন্য কাজ শুরু করেছে।
ডেল্টা লাইফের একাধিক সূত্র জানায়, ডেল্টা লাইফ দীর্ঘ প্রায় ২০ মাসের অন্ধকারের অবসান ঘটিয়ে আবার আলোকিত হয়ে উঠেছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে প্রশাসক প্রত্যাহার করে নেয়। এতে দেশের উচ্চ আদালত কর্তৃক অনুমোদিত পরিচালনা পর্ষদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
পরিচালনা পরিষদ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিশৃংখল প্রশাসনিক ও আর্থিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রায় ১৯ মাস আগে আইডিআরের সাবেক চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি করার অভিযোগ আনেন ডেল্টা লাইফ কর্তৃপক্ষ।
২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর ডেল্টা লাইফের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করা হয়। সে অভিযোগে বলা হয়েছে, আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন কোম্পানির সিইও নিয়োগসহ অন্য বিষয়ের অনুমোদনের জন্য ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। দুদকে এমন অভিযোগ করার পর ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করেও একই অভিযোগ করা হয়। ওই সংবাদ সম্মেলন করার এক সপ্তাহের মধ্যেই ১১ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ স্থগিত করে কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় আইডিআরএ।
প্রশাসক আমলে ডেল্টা লাইফ নিরপেক্ষভাবে পরিচালনার চেয়ে ক্ষমতা ও অর্থ ভান্ডার কুক্ষিগত করার নানা তৎপরতা চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনের কাজে অনভিজ্ঞ ও ফেনীতে কর্মরত একজন মাঠ কর্মকর্তার হাতে প্রশাসনের দায়িত্বভার তুলে দেয়। তাকে চার দফা পদোন্নতি ও তিনগুণ বেতন বৃদ্ধি করেছিল।
কোম্পানির সিএফওকে (চিফ ফাইনানসিয়াল অফিসার) সরিয়ে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে অনুগত কর্মকর্তাকে সিএফও পদে বসিয়ে অর্থভান্ডারকে কব্জায় আনা হয়। এছাড়াও একক বীমা ও গণবীমার কয়েকজন কর্মকর্তাকে হয়রানিমূলক বদলি করে পছন্দের লোক বসানো হয়েছে। এসব কিছুর মূল লক্ষ্য ছিল যাতে করে সহজে অর্থ লুটপাট করা যায়।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, প্রশাসক আমলে বহুল আলোচিত মাস্ক কেলেঙ্কারীর ও কক্সবাজারে সম্মেলনের নামে টাকা মানিলন্ডারিং হয়েছে। এই দুইটি বিষয়ে দায়েরকৃত মামলার অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৫ জন অভিযুক্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চার্জশিটভূক্ত আসামি। মামলায় প্রথম প্রশাসক কিছুদিন জেল খেটেছেন। মামলার খরচের নামে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। দরকার ছাড়াই রহস্যজনক কারণে দেড়শ কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ডেল্টা লাইফ অফিস সূত্র জানায়, ওই সময়ে ব্যবসার শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি এসেছে দাবির টাকা পরিশোধের সময় গ্রাহক পরিবারের হাতে আর একটি নতুন পলিসি তুলে দেয়ার মাধ্যমে। হিসাব করলে দেখা যায়, প্রকৃত নতুন ব্যবসা ঘোষিত ব্যবসার শতকরা ৫০ ভাগের কম। অর্থাৎ ব্যবসা অর্জনের প্রকৃত সক্ষমতা কমে গেছে। এই ১৯ মাসে কোম্পানির ভ্যালুড (মূল্যবান) পলিসি আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ২০২১ সালে দেশে লাইফ বীমায় ১৪১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ বাড়লেও প্রশাসক আমলে ডেল্টা লাইফে বিনিয়োগ ও লাইফ দুটোই কমেছে।
ডেল্টা লাইফে প্রশাসক আমলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নানা তৎপরতা
মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
দেশের শীর্ষ স্থানীয় বীমা কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে প্রশাসক নিয়োগে যতটা না ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় কিছু বিপথগামী কর্মকর্তাকে কর্তৃত্ব দেয়ায়। গত দেড় বছরে তারা প্রশাসনিক ও আর্থিক শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের ব্যবস্থাপনায় কর্মচারীদের মধ্যে শুধু বিভাজনই নয়, পারস্পরিক শত্রুতাও সৃষ্টি করা হয়েছে। সম্প্রতি এক অনুসন্ধ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, অপরদিকে কিছু কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে উগ্র আঞ্চলিকতার সৃষ্টি হয়েছে। আর কিছুসংখ্যক কর্মকর্তাকে প্রশাসক আমলে পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত ভাতাসহ নানা সুবিধা দিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এতে প্রশাসনের আগের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে গেছে যা ডেল্টা লাইফের সৃষ্টি থেকে প্রশাসক নিয়োগের আগ পর্যন্ত দেখা যায়নি। ডেল্টা লাইফের সর্বশেষ প্রশাসক মো. কুদুস খানের সময়ে কোম্পানির ভিতরে নতুন করে গড়ে উঠা বিশৃঙ্খলাকারী ও সার্ভিস রুল ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় সংকট আরও গভীর হয়েছে। প্রশাসক আমলের কালো অধ্যায়ের অবসানে ডেল্টা লাইফের পলিসি হোল্ডার, শেয়ার হোল্ডার ও সর্বস্তরের কর্মচারীদের মধ্যে স্বত্বি ফিরে আসছে। আর ডেল্টা লাইফ এখন নতুন করে আরও ভালো করার জন্য কাজ শুরু করেছে।
ডেল্টা লাইফের একাধিক সূত্র জানায়, ডেল্টা লাইফ দীর্ঘ প্রায় ২০ মাসের অন্ধকারের অবসান ঘটিয়ে আবার আলোকিত হয়ে উঠেছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে প্রশাসক প্রত্যাহার করে নেয়। এতে দেশের উচ্চ আদালত কর্তৃক অনুমোদিত পরিচালনা পর্ষদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
পরিচালনা পরিষদ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিশৃংখল প্রশাসনিক ও আর্থিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রায় ১৯ মাস আগে আইডিআরের সাবেক চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি করার অভিযোগ আনেন ডেল্টা লাইফ কর্তৃপক্ষ।
২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর ডেল্টা লাইফের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করা হয়। সে অভিযোগে বলা হয়েছে, আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন কোম্পানির সিইও নিয়োগসহ অন্য বিষয়ের অনুমোদনের জন্য ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। দুদকে এমন অভিযোগ করার পর ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করেও একই অভিযোগ করা হয়। ওই সংবাদ সম্মেলন করার এক সপ্তাহের মধ্যেই ১১ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ স্থগিত করে কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয় আইডিআরএ।
প্রশাসক আমলে ডেল্টা লাইফ নিরপেক্ষভাবে পরিচালনার চেয়ে ক্ষমতা ও অর্থ ভান্ডার কুক্ষিগত করার নানা তৎপরতা চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনের কাজে অনভিজ্ঞ ও ফেনীতে কর্মরত একজন মাঠ কর্মকর্তার হাতে প্রশাসনের দায়িত্বভার তুলে দেয়। তাকে চার দফা পদোন্নতি ও তিনগুণ বেতন বৃদ্ধি করেছিল।
কোম্পানির সিএফওকে (চিফ ফাইনানসিয়াল অফিসার) সরিয়ে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে অনুগত কর্মকর্তাকে সিএফও পদে বসিয়ে অর্থভান্ডারকে কব্জায় আনা হয়। এছাড়াও একক বীমা ও গণবীমার কয়েকজন কর্মকর্তাকে হয়রানিমূলক বদলি করে পছন্দের লোক বসানো হয়েছে। এসব কিছুর মূল লক্ষ্য ছিল যাতে করে সহজে অর্থ লুটপাট করা যায়।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, প্রশাসক আমলে বহুল আলোচিত মাস্ক কেলেঙ্কারীর ও কক্সবাজারে সম্মেলনের নামে টাকা মানিলন্ডারিং হয়েছে। এই দুইটি বিষয়ে দায়েরকৃত মামলার অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৫ জন অভিযুক্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চার্জশিটভূক্ত আসামি। মামলায় প্রথম প্রশাসক কিছুদিন জেল খেটেছেন। মামলার খরচের নামে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। দরকার ছাড়াই রহস্যজনক কারণে দেড়শ কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ডেল্টা লাইফ অফিস সূত্র জানায়, ওই সময়ে ব্যবসার শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি এসেছে দাবির টাকা পরিশোধের সময় গ্রাহক পরিবারের হাতে আর একটি নতুন পলিসি তুলে দেয়ার মাধ্যমে। হিসাব করলে দেখা যায়, প্রকৃত নতুন ব্যবসা ঘোষিত ব্যবসার শতকরা ৫০ ভাগের কম। অর্থাৎ ব্যবসা অর্জনের প্রকৃত সক্ষমতা কমে গেছে। এই ১৯ মাসে কোম্পানির ভ্যালুড (মূল্যবান) পলিসি আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ২০২১ সালে দেশে লাইফ বীমায় ১৪১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ বাড়লেও প্রশাসক আমলে ডেল্টা লাইফে বিনিয়োগ ও লাইফ দুটোই কমেছে।