alt

অর্থ-বাণিজ্য

বড় ধরনের সমস্যায় বেশিরভাগ নতুন জীবন বীমা খাত

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

দেশে চাহিদার তুলনায় বীমা কোম্পানির সংখ্যা বেশি থাকলেও একের পর এক নতুন বীমা কোম্পানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া এসব বীমা কোম্পানির বেশিরভাগই ভালো ব্যবসা করতে পারছে না। সেই সঙ্গে আইনও মানছে না কোম্পানিগুলো।

আইন লঙ্ঘন করে বীমা গ্রাহকের টাকা বেপরোয়া খরচ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে বেশ কয়েকটি নতুন জীবন বীমা কোম্পানির লাইফ ফান্ড বা জীবন তহবিল ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। সার্বিকভাবে একদিকে কোম্পানিগুলো টিকে থাকার লড়াই করছে, অন্যদিকে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকের টাকা ফেরত পাওয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।

নতুন অনুমোদন পাওয়া জীবন বীমা কোম্পানিগুলো ভালো ব্যবসা করতে না পারায় অস্বস্তিতে রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। তবে আইনি দুর্বলতার কারণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারছে না সংস্থাটি। এজন্য বীমা আইন সংশোধনের পরিকল্পনা করছে আইডিআরএ।

অন্যদিকে জীবন বীমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন অনুমোদন পাওয়া বেশ কয়কটি জীবন বীমা কোম্পানি বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে রয়েছে। এসব কোম্পানি এরই মধ্যে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়েছে। ফলে সার্বিক বীমা খাতে এক ধরনের ইমেজ সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। তাই সার্বিক বীমা খাতের স্বার্থে এসব কোম্পানির বিরদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। প্রয়োজনে এসব কোম্পানির ব্যবসাও বন্ধ করে দিতে হবে।

বীমা খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে মালিকানা। অধিকাংশ বীমা কোম্পানির মালিকানা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দখলে রয়েছে। তাছাড়া এ খাতে ইমেজ সংকট আছে। সবকিছু মিলে আমাদের দেশে বীমা খাত যেভাবে উন্নয়ন করার কথা, সেভাবে পারেনি।

নতুন বীমা কোম্পানি হিসেবে দেশে ব্যবসা শুরু করা একটি প্রতিষ্ঠান আকিজ তাকাফুল লাইফ। এই জীবন বীমা কোম্পানিটি ২০২১ সালে আইন লঙ্ঘন করে ব্যবস্থাপনা খাতে অতিরিক্ত ১ কোটি ৫ লাখ টাকা খরচ করেছে। ব্যবস্থাপনা খাতে কোম্পানিটি মোট ব্যয় করেছে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অথচ আইন অনুযায়ী এ খাতে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ ব্যয়ের সীমা ছিল ৩৪ লাখ টাকা। এমন অর্থ ব্যয় করা কোম্পানিটি বছরটিতে মোট প্রিমিয়াম আয় করেছে ৫৩ লাখ টাকা। আর্থাৎ যে আয় হয়েছে, ব্যয় হয়েছে তার দ্বিগুণের বেশি। এতে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৬ লাখ টাকা।

নতুন জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে গার্ডিয়ান লাইফ। এই কোম্পানিটির ব্যয় একদিকে যেমন আইনি সীমার মধ্যে রয়েছে, অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে লাইফ ফান্ড। ২০২১ সালে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৭৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি ব্যয় করেছে ৬৫ কোটি ৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ আইনি সীমা থেকে ১০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা কম ব্যয় হয়েছে।

দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানার একমাত্র জীবন বীমা কোম্পানি লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এলআইসি) অব বাংলাদেশও খরচের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না। এই বীমা কোম্পানিটি ২০২১ সালে ব্যবস্থাপনা খাতে আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা প্রিমিয়াম আয় করা এই কোম্পানিটি ব্যবস্থাপনা খাতে মোট ব্যয় করেছে ৮ কোটি ৯ লাখ টাকা। আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করলেও কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড পজেটিভ রয়েছে। ২০২১ সাল শেষে প্রতিষ্ঠানটির লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

মাত্রাতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের তালিকায় রয়েছে চার্টার্ড লাইফ। ২০২১ সালে ব্যবস্থাপনা খাতে এ কোম্পানিটির সর্বোচ্চ ব্যয়ের সীমা ছিল ২০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। তবে কোম্পানিটি ব্যয় করেছে ২৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ আইন লঙ্ঘন করে ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে। আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করলেও কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড পজেটিভ রয়েছে। ২০২১ সাল শেষে লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ৩৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

যোগাযোগ করা হলে প্রগতী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জালালুল আজিম গণমাধ্যমকে বলেন, নতুন অনুমোদন পাওয়া জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ভালো ব্যবসা করতে পারছে না। একাধিক বীমা কোম্পানির লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। একটি জীবন বীমা কোম্পানির লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক মানে ওই কোম্পানির ভবিষ্যৎ জিরো। আমার মতো ওই কোম্পানি অপারেট (পরিচালনা) করতে দেয়া উচিত নয়। যাদের এ অবস্থা তারা মার্কেট নষ্ট করছে। ইমেজ নষ্ট করছে। এটা নিয়ন্ত্রক সংস্থার দেখা উচিত এবং তাদের শস্তি দেয়া উচিত।

লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক হয়ে পড়া এবং ব্যবস্থাপনা খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে যমুনা লাইফের সিইও কামরুল হাসান খন্দকার গণমাধ্যমকে বলেন, এ সমস্যা শুধু যমুনা লাইফের নয়। অনেক বীমা কোম্পানিতেই এটা হচ্ছে। সুতরাং এটা যমুনা লাইফের একার সমস্যা নয়, এটা টোটাল ইন্ডাস্ট্রির সমস্যা।

চার্টার্ড লাইফের সিইওর চলতি দায়িত্ব পালন করা এসএম জিয়াউল হক ব্যবস্থাপনা খাতে আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যবস্থাপনা খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হওয়ার বহুবিধ কারণ রয়েছে। আমরা ব্যয় আইনি সীমার মধ্যে নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছি। এরই মধ্যে আমরা অতিরিক্ত ব্যয়ের হার কমিয়ে নিয়ে এসেছি। আশা করি এ বছর (২০২২) ব্যয় আইনি সীমার নিচে থাকবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, বীমা খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে মালিকানা। অধিকাংশ বীমা কোম্পানির মালিকানা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দখলে রয়েছে। তাছাড়া এ খাতে ইমেজ সংকট আছে। সবকিছু মিলে আমাদের দেশ বীমা খাত যেভাবে উন্নয়ন করার কথা, সেভাবে পারেনি। তবে এখন বীমার প্রতি মানুষের সচেতনতা বাড়ছে। তাই আশা করা যায়, সামনে বীমা খাতের উন্নয়ন হবে।

আইডিআরএ’র মুখপাত্র এসএম শাকিল আখতার গণমাধ্যমকে বলেন, শুধু নতুন বীমা কোম্পানিগুলো না পুরোনো বেশ কয়েকটি কোম্পানি ভালো ব্যবসা করতে পারছে না। আইনের কারণে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা বীমা আইন ২০১০ সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছি। আইন সংশোধন করা গেলে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবো।

ইনসার্ট : বীমা খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে মালিকানা। অধিকাংশ বীমা কোম্পানির মালিকানা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দখলে রয়েছে। আইন লঙ্ঘন করে বীমা গ্রাহকের টাকা বেপরোয়া খরচ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে বেশ কয়েকটি নতুন জীবন বীমা কোম্পানির লাইফ ফান্ড বা জীবন তহবিল ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে যার ফলে সার্বিকভাবে একদিকে কোম্পানিগুলো টিকে থাকার লড়াই করছে, অন্যদিকে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকের টাকা ফেরত পাওয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।

ছবি

সূচকের পতনে পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন

ছবি

ব্যাংক এশিয়া কিনবে পাকিস্তানি ব্যাংক আলফালাহর বাংলাদেশ অংশ

ছবি

এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.৭%: আইএমএফ

ছবি

একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংক চাইলে সরে যেতে পারবে, তবে শর্তসাপেক্ষে : কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

পণ্যের দাম ঠিক রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে : প্রতিমন্ত্রী

ছবি

একীভূত ব্যাংক : পাঁচটির বাইরে আপাতত আর না

ছবি

ঈদে মানুষের মাঝে স্বস্তি দেখেছি : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বিশ্ব ব্যাংকের চেয়ে বেশি দেখছে এডিবি

ছবি

মার্চে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৮১ শতাংশ

ছবি

ঈদের আগে পাঁচ দিনে দেশে এলো ৪৬ কোটি ডলার

ছবি

শিল্পাঞ্চলের বাইরের কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ আর নয়, পাবেনা ঋণও

এবার ঈদে পর্যটন খাত চাঙ্গা হওয়ার আশা

ছবি

জাতীয় লজিস্টিক নীতির খসড়ার অনুমোদন

সোনালীতে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল

ছবি

সোনার দাম আবার বাড়লো, ভরি ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা

ছবি

সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বেসিক ব্যাংক

ছবি

বিজিএমইএর দায়িত্ব নিলেন এস এম মান্নান কচি

ছবি

বাজার মূলধন কিছুটা বাড়লো, তবু লাখ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি

ছবি

নতুন বিদেশী ঋণ নিয়ে পুরনো ঋণ শোধ করছে সরকার : সিপিডি

ছবি

ব্যাংক একীভুতকরনে নীতিমালা জারি

রাষ্ট্রীয় চার ব্যাংক একীভূত হয়ে হবে দুই

ছবি

এবার একীভূত হচ্ছে ‘সোনালীর সাথে বিডিবিএল’ ও ‘কৃষির সাথে রাকাব’

ছবি

শেয়ার প্রতি ১ পয়সা লভ্যাংশ দেবে একমি পেস্টিসাইড

এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানী লিমিটেডের কর্মীদের জন্য মেটলাইফের বীমা সুরক্ষা

গাজীপুরে এক বছরে ট্রাফিক পুলিশের ৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয়

ছবি

প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে: বিশ্বব্যাংক

ছবি

সিএসআর ফান্ডের আওতায় কৃষকদের আর্থিক সহযোগিতা করল সাউথইস্ট ব্যাংক

ছবি

ডেমরায় বাস গ্যারেজে আগুন

ছবি

নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও সেইহারে বাড়েনি তামাকপণ্যের দাম

ছবি

প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়া সেই ভূমি অফিস কর্মী সাময়িক বরখাস্ত

ব্যাংক ঋণের সুদহার আরও বাড়লো

ছবি

বেক্সিমকোর ২ হাজার ৬২৫ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন দিলো বিএসইসি

শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে কাজ করব : শ্রম প্রতিমন্ত্রী

ছবি

ঈদে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট বাড়াল বিমান

ছবি

ডিজেল-কেরোসিনের দাম লিটারে ২.২৫ টাকা কমলো

ছবি

ফেনীতে টপটেন মার্ট উদ্বোধন করলেন তামিম

tab

অর্থ-বাণিজ্য

বড় ধরনের সমস্যায় বেশিরভাগ নতুন জীবন বীমা খাত

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

দেশে চাহিদার তুলনায় বীমা কোম্পানির সংখ্যা বেশি থাকলেও একের পর এক নতুন বীমা কোম্পানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া এসব বীমা কোম্পানির বেশিরভাগই ভালো ব্যবসা করতে পারছে না। সেই সঙ্গে আইনও মানছে না কোম্পানিগুলো।

আইন লঙ্ঘন করে বীমা গ্রাহকের টাকা বেপরোয়া খরচ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে বেশ কয়েকটি নতুন জীবন বীমা কোম্পানির লাইফ ফান্ড বা জীবন তহবিল ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। সার্বিকভাবে একদিকে কোম্পানিগুলো টিকে থাকার লড়াই করছে, অন্যদিকে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকের টাকা ফেরত পাওয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।

নতুন অনুমোদন পাওয়া জীবন বীমা কোম্পানিগুলো ভালো ব্যবসা করতে না পারায় অস্বস্তিতে রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। তবে আইনি দুর্বলতার কারণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারছে না সংস্থাটি। এজন্য বীমা আইন সংশোধনের পরিকল্পনা করছে আইডিআরএ।

অন্যদিকে জীবন বীমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন অনুমোদন পাওয়া বেশ কয়কটি জীবন বীমা কোম্পানি বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে রয়েছে। এসব কোম্পানি এরই মধ্যে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়েছে। ফলে সার্বিক বীমা খাতে এক ধরনের ইমেজ সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। তাই সার্বিক বীমা খাতের স্বার্থে এসব কোম্পানির বিরদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। প্রয়োজনে এসব কোম্পানির ব্যবসাও বন্ধ করে দিতে হবে।

বীমা খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে মালিকানা। অধিকাংশ বীমা কোম্পানির মালিকানা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দখলে রয়েছে। তাছাড়া এ খাতে ইমেজ সংকট আছে। সবকিছু মিলে আমাদের দেশে বীমা খাত যেভাবে উন্নয়ন করার কথা, সেভাবে পারেনি।

নতুন বীমা কোম্পানি হিসেবে দেশে ব্যবসা শুরু করা একটি প্রতিষ্ঠান আকিজ তাকাফুল লাইফ। এই জীবন বীমা কোম্পানিটি ২০২১ সালে আইন লঙ্ঘন করে ব্যবস্থাপনা খাতে অতিরিক্ত ১ কোটি ৫ লাখ টাকা খরচ করেছে। ব্যবস্থাপনা খাতে কোম্পানিটি মোট ব্যয় করেছে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অথচ আইন অনুযায়ী এ খাতে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ ব্যয়ের সীমা ছিল ৩৪ লাখ টাকা। এমন অর্থ ব্যয় করা কোম্পানিটি বছরটিতে মোট প্রিমিয়াম আয় করেছে ৫৩ লাখ টাকা। আর্থাৎ যে আয় হয়েছে, ব্যয় হয়েছে তার দ্বিগুণের বেশি। এতে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৬ লাখ টাকা।

নতুন জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে গার্ডিয়ান লাইফ। এই কোম্পানিটির ব্যয় একদিকে যেমন আইনি সীমার মধ্যে রয়েছে, অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে লাইফ ফান্ড। ২০২১ সালে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৭৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি ব্যয় করেছে ৬৫ কোটি ৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ আইনি সীমা থেকে ১০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা কম ব্যয় হয়েছে।

দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানার একমাত্র জীবন বীমা কোম্পানি লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এলআইসি) অব বাংলাদেশও খরচের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না। এই বীমা কোম্পানিটি ২০২১ সালে ব্যবস্থাপনা খাতে আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা প্রিমিয়াম আয় করা এই কোম্পানিটি ব্যবস্থাপনা খাতে মোট ব্যয় করেছে ৮ কোটি ৯ লাখ টাকা। আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করলেও কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড পজেটিভ রয়েছে। ২০২১ সাল শেষে প্রতিষ্ঠানটির লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

মাত্রাতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের তালিকায় রয়েছে চার্টার্ড লাইফ। ২০২১ সালে ব্যবস্থাপনা খাতে এ কোম্পানিটির সর্বোচ্চ ব্যয়ের সীমা ছিল ২০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। তবে কোম্পানিটি ব্যয় করেছে ২৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ আইন লঙ্ঘন করে ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে। আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করলেও কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড পজেটিভ রয়েছে। ২০২১ সাল শেষে লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ৩৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

যোগাযোগ করা হলে প্রগতী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জালালুল আজিম গণমাধ্যমকে বলেন, নতুন অনুমোদন পাওয়া জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ভালো ব্যবসা করতে পারছে না। একাধিক বীমা কোম্পানির লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। একটি জীবন বীমা কোম্পানির লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক মানে ওই কোম্পানির ভবিষ্যৎ জিরো। আমার মতো ওই কোম্পানি অপারেট (পরিচালনা) করতে দেয়া উচিত নয়। যাদের এ অবস্থা তারা মার্কেট নষ্ট করছে। ইমেজ নষ্ট করছে। এটা নিয়ন্ত্রক সংস্থার দেখা উচিত এবং তাদের শস্তি দেয়া উচিত।

লাইফ ফান্ড ঋণাত্মক হয়ে পড়া এবং ব্যবস্থাপনা খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে যমুনা লাইফের সিইও কামরুল হাসান খন্দকার গণমাধ্যমকে বলেন, এ সমস্যা শুধু যমুনা লাইফের নয়। অনেক বীমা কোম্পানিতেই এটা হচ্ছে। সুতরাং এটা যমুনা লাইফের একার সমস্যা নয়, এটা টোটাল ইন্ডাস্ট্রির সমস্যা।

চার্টার্ড লাইফের সিইওর চলতি দায়িত্ব পালন করা এসএম জিয়াউল হক ব্যবস্থাপনা খাতে আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যবস্থাপনা খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হওয়ার বহুবিধ কারণ রয়েছে। আমরা ব্যয় আইনি সীমার মধ্যে নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছি। এরই মধ্যে আমরা অতিরিক্ত ব্যয়ের হার কমিয়ে নিয়ে এসেছি। আশা করি এ বছর (২০২২) ব্যয় আইনি সীমার নিচে থাকবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, বীমা খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে মালিকানা। অধিকাংশ বীমা কোম্পানির মালিকানা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দখলে রয়েছে। তাছাড়া এ খাতে ইমেজ সংকট আছে। সবকিছু মিলে আমাদের দেশ বীমা খাত যেভাবে উন্নয়ন করার কথা, সেভাবে পারেনি। তবে এখন বীমার প্রতি মানুষের সচেতনতা বাড়ছে। তাই আশা করা যায়, সামনে বীমা খাতের উন্নয়ন হবে।

আইডিআরএ’র মুখপাত্র এসএম শাকিল আখতার গণমাধ্যমকে বলেন, শুধু নতুন বীমা কোম্পানিগুলো না পুরোনো বেশ কয়েকটি কোম্পানি ভালো ব্যবসা করতে পারছে না। আইনের কারণে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা বীমা আইন ২০১০ সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছি। আইন সংশোধন করা গেলে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবো।

ইনসার্ট : বীমা খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে মালিকানা। অধিকাংশ বীমা কোম্পানির মালিকানা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দখলে রয়েছে। আইন লঙ্ঘন করে বীমা গ্রাহকের টাকা বেপরোয়া খরচ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে বেশ কয়েকটি নতুন জীবন বীমা কোম্পানির লাইফ ফান্ড বা জীবন তহবিল ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে যার ফলে সার্বিকভাবে একদিকে কোম্পানিগুলো টিকে থাকার লড়াই করছে, অন্যদিকে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকের টাকা ফেরত পাওয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।

back to top