আগামী সপ্তাহে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর (মূল্য সমন্বয়ের) ঘোষণা দেবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। পাইকারি (ব্লাল্ক) বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা বিদ্যুতের দামও বাড়বে। এদিকে গত ১ জুন থেকে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পাইকারি বিদ্যুতের দাম সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ বাড়ানোর, এছাড়া ১৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ানোর একাধিক প্রস্তাব তৈরি করেছে কমিশন। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে যে চাপ, এই মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম এতটা বাড়ানো ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় আছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল। এদিকে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চাপ আছে বিদ্যুৎ বিভাগের ওপর। বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়ে তারা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে বলেছে। এখন বিষয়টি নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর আবেদনের গণশুনানি হয়েছিল গত ১৮ মে। আইন অনুযায়ী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে রায় ঘোষণা করতে হবে। বিইআরসি বলছে, আইন অনুযায়ী আগামী ১৩ অক্টোবরের মধ্যে পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বিদ্যুতের একক পাইকারি বিক্রেতা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। নিজেরা উৎপাদনের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি ও বেসরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনছে তারা।
ডিপিডিসি, ডেসকো, আরইবি, নেসকো, ওজোপাডিকো- এই ৫টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কাছে পাইকারি দরে বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবি। আর নিজেরা ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের শহরাঞ্চলে বিতরণ করে।
পিডিবি প্রতি ইউনিট পাইকারি বিদ্যুতের দাম ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব গত ফেব্রুয়ারিতে বিইআরসিতে জমা দিয়েছিল। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক উৎপাদনের খরচ বিবেচনায় পিডিবি এই প্রস্তাব দেয়।
পিডিবি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় জ্বালানি খরচ ছিল ২ টাকা ১৩ পয়সা, ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ টাকা ১৬ পয়সা। এখন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, কয়লার মূসক বৃদ্ধির কারণে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি খরচ আরও বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪.২৪ টাকা। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক অন্য খরচ রয়েছে। তাই পাইকারি দাম না বাড়লে ২০২২ সালে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে পিডিবিকে।
প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে কারিগরি মূল্যায়ন টিম (টিইটি) জানায়, সরকার ভর্তুকি না দিলে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাড়ানো যেতে পারে। টিইটির সুপারিশে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে ২ টাকা ৯৯ পয়সা বাড়িয়ে ৮ টাকা ১৬ পয়সা করার কথা বলা হয়।
বর্তমানে সরকার প্রতি ইউনিট পাইকারি বিদ্যুতে ৩ টাকা ৩৯ পয়সা ভর্তুকি দিচ্ছে।
পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের (নতুন দাম) ঘোষণার কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে বলে জানিয়েছেন বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল। রোববার (২ অক্টোবর) এলপিজির মূল্য সমন্বয় সংক্রান্ত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দাম ঘোষণা করব। ৫০-৬০ পৃষ্ঠার একটা রায়, প্রতিটি শব্দ দেখে দিতে হয়। এজন্য একটু সময় লাগছে। রায় ঘোষণার কাজটি ফাইনাল স্টেজে আছে। এটি ২-১ দিনের মধ্যেও হতে পারে। ২-১ দিনটা ৪-৫ দিনও হতে পারে।’
পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে ভোক্তা সংগঠনগুলো আপত্তি জানিয়েছিল। তাদের যুক্তি, বিদ্যুৎ উৎপাদনে অযাচিত ব্যয় না কমিয়ে শুধু দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে বোঝা গ্রাহকদের ওপর চাপানোর কৌশল অনেকদিন ধরে চলছে।
এফবিসিসিআই যুক্তি দেখিয়ে বলেছিল, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি সরকারের জন্য আত্মঘাতী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। এফবিসিসিআইয়ের মতে, বিদ্যুৎ খাতে সরকারের নানা পদ্ধতিগত সমস্যা রয়েছে। এরমধ্যে ওভার ক্যাপাসিটি অন্যতম। এছাড়া কম দক্ষতা সম্পন্ন তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানোর ফলেও উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু করতে বিলম্ব হচ্ছে। এলএনজি সরবরাহ চেইনের ভুল পরিকল্পনা করা হয়েছে। এফবিসিসিআইয়ের মতে, বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে এসব পদ্ধতিগত সমস্যার সঠিকভাবে নিরূপণ ও সমাধানে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ওই সময় বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধির উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়, যা ওই বছর মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়। সে সময় পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে গড়ে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ টাকা ১৭ পয়সা করা হয়, যা আগে ৪ টাকা ৭৭ পয়সা ছিল। ওই সময় সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে (খুচরা) প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৭ টাকা ১৩ পয়সা করা হয়, যা আগে ৬ টাকা ৭৭ পয়সা ছিল।
ক্যাবের তথ্য অনুযায়ী, বিগত ১১ বছরে ১০ দফায় বিদ্যুতের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছর জুনে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ক্যাব জানায়, গত ১১ বছরে পাইকারি বিদ্যুতের দাম ১১৮ শতাংশ এবং খুচরা বিদ্যুতের দাম ৮৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়েছে।
চলতি বছর জুনে গ্যাসের দাম গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ৬ আগস্ট লোডশেডিংয়ের মধ্যে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ডিজেলে সাড়ে ৪২ ও পেট্রল-অকটেনে ৫১ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পরিবহন, নিত্যপণ্যের বাজার, সব রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদনসহ নানা খাতে। বিদ্যুতের দাম বাড়লে জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘এখন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কোন যৌক্তিকতা নেই। ব্যয়বহুল বলে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা, একই কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রাখা, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর বদলে ২০ শতাংশ কম উৎপাদন করা হচ্ছে। এখন দাম বাড়ানো মানে ভোক্তাকে অধিকারবঞ্চিত করে জোরপূর্বক টাকা নেয়া। বিইআরসি এখন দাম বৃদ্ধির আদেশ দিলে তা হবে লুণ্ঠনমূলক।
এদিকে বিদ্যুতের দাম না বাড়াতে গত ১৩ জুলাই বিইআরসিতে চিঠি দিয়েছিল ক্যাব। চিঠিতে বলা হয়, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও এলএনজির মূল্যবৃদ্ধিতে আর্থিক ঘাটতি সমন্বয়ে ভোক্তা পর্যায়ে লোডশেডিং করা হচ্ছে। আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর কথা থাকলেও এখন উৎপাদন হচ্ছে আগের চেয়ে কম। এতে জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানির অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। তাই ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এখন আর যৌক্তিক নয়। তাই শুনানি না করে আগের দাম বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে ক্যাব।
রোববার, ০২ অক্টোবর ২০২২
আগামী সপ্তাহে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর (মূল্য সমন্বয়ের) ঘোষণা দেবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। পাইকারি (ব্লাল্ক) বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা বিদ্যুতের দামও বাড়বে। এদিকে গত ১ জুন থেকে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পাইকারি বিদ্যুতের দাম সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ বাড়ানোর, এছাড়া ১৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ানোর একাধিক প্রস্তাব তৈরি করেছে কমিশন। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে যে চাপ, এই মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম এতটা বাড়ানো ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় আছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল। এদিকে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চাপ আছে বিদ্যুৎ বিভাগের ওপর। বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়ে তারা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে বলেছে। এখন বিষয়টি নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর আবেদনের গণশুনানি হয়েছিল গত ১৮ মে। আইন অনুযায়ী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে রায় ঘোষণা করতে হবে। বিইআরসি বলছে, আইন অনুযায়ী আগামী ১৩ অক্টোবরের মধ্যে পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বিদ্যুতের একক পাইকারি বিক্রেতা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। নিজেরা উৎপাদনের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি ও বেসরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনছে তারা।
ডিপিডিসি, ডেসকো, আরইবি, নেসকো, ওজোপাডিকো- এই ৫টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কাছে পাইকারি দরে বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবি। আর নিজেরা ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের শহরাঞ্চলে বিতরণ করে।
পিডিবি প্রতি ইউনিট পাইকারি বিদ্যুতের দাম ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব গত ফেব্রুয়ারিতে বিইআরসিতে জমা দিয়েছিল। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক উৎপাদনের খরচ বিবেচনায় পিডিবি এই প্রস্তাব দেয়।
পিডিবি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় জ্বালানি খরচ ছিল ২ টাকা ১৩ পয়সা, ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ টাকা ১৬ পয়সা। এখন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, কয়লার মূসক বৃদ্ধির কারণে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি খরচ আরও বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪.২৪ টাকা। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক অন্য খরচ রয়েছে। তাই পাইকারি দাম না বাড়লে ২০২২ সালে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে পিডিবিকে।
প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে কারিগরি মূল্যায়ন টিম (টিইটি) জানায়, সরকার ভর্তুকি না দিলে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাড়ানো যেতে পারে। টিইটির সুপারিশে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে ২ টাকা ৯৯ পয়সা বাড়িয়ে ৮ টাকা ১৬ পয়সা করার কথা বলা হয়।
বর্তমানে সরকার প্রতি ইউনিট পাইকারি বিদ্যুতে ৩ টাকা ৩৯ পয়সা ভর্তুকি দিচ্ছে।
পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের (নতুন দাম) ঘোষণার কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে বলে জানিয়েছেন বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল। রোববার (২ অক্টোবর) এলপিজির মূল্য সমন্বয় সংক্রান্ত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দাম ঘোষণা করব। ৫০-৬০ পৃষ্ঠার একটা রায়, প্রতিটি শব্দ দেখে দিতে হয়। এজন্য একটু সময় লাগছে। রায় ঘোষণার কাজটি ফাইনাল স্টেজে আছে। এটি ২-১ দিনের মধ্যেও হতে পারে। ২-১ দিনটা ৪-৫ দিনও হতে পারে।’
পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে ভোক্তা সংগঠনগুলো আপত্তি জানিয়েছিল। তাদের যুক্তি, বিদ্যুৎ উৎপাদনে অযাচিত ব্যয় না কমিয়ে শুধু দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে বোঝা গ্রাহকদের ওপর চাপানোর কৌশল অনেকদিন ধরে চলছে।
এফবিসিসিআই যুক্তি দেখিয়ে বলেছিল, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি সরকারের জন্য আত্মঘাতী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। এফবিসিসিআইয়ের মতে, বিদ্যুৎ খাতে সরকারের নানা পদ্ধতিগত সমস্যা রয়েছে। এরমধ্যে ওভার ক্যাপাসিটি অন্যতম। এছাড়া কম দক্ষতা সম্পন্ন তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানোর ফলেও উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু করতে বিলম্ব হচ্ছে। এলএনজি সরবরাহ চেইনের ভুল পরিকল্পনা করা হয়েছে। এফবিসিসিআইয়ের মতে, বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে এসব পদ্ধতিগত সমস্যার সঠিকভাবে নিরূপণ ও সমাধানে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ওই সময় বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধির উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়, যা ওই বছর মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়। সে সময় পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে গড়ে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ টাকা ১৭ পয়সা করা হয়, যা আগে ৪ টাকা ৭৭ পয়সা ছিল। ওই সময় সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে (খুচরা) প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৭ টাকা ১৩ পয়সা করা হয়, যা আগে ৬ টাকা ৭৭ পয়সা ছিল।
ক্যাবের তথ্য অনুযায়ী, বিগত ১১ বছরে ১০ দফায় বিদ্যুতের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছর জুনে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ক্যাব জানায়, গত ১১ বছরে পাইকারি বিদ্যুতের দাম ১১৮ শতাংশ এবং খুচরা বিদ্যুতের দাম ৮৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়েছে।
চলতি বছর জুনে গ্যাসের দাম গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ৬ আগস্ট লোডশেডিংয়ের মধ্যে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ডিজেলে সাড়ে ৪২ ও পেট্রল-অকটেনে ৫১ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পরিবহন, নিত্যপণ্যের বাজার, সব রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদনসহ নানা খাতে। বিদ্যুতের দাম বাড়লে জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘এখন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কোন যৌক্তিকতা নেই। ব্যয়বহুল বলে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা, একই কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রাখা, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর বদলে ২০ শতাংশ কম উৎপাদন করা হচ্ছে। এখন দাম বাড়ানো মানে ভোক্তাকে অধিকারবঞ্চিত করে জোরপূর্বক টাকা নেয়া। বিইআরসি এখন দাম বৃদ্ধির আদেশ দিলে তা হবে লুণ্ঠনমূলক।
এদিকে বিদ্যুতের দাম না বাড়াতে গত ১৩ জুলাই বিইআরসিতে চিঠি দিয়েছিল ক্যাব। চিঠিতে বলা হয়, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও এলএনজির মূল্যবৃদ্ধিতে আর্থিক ঘাটতি সমন্বয়ে ভোক্তা পর্যায়ে লোডশেডিং করা হচ্ছে। আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর কথা থাকলেও এখন উৎপাদন হচ্ছে আগের চেয়ে কম। এতে জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানির অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। তাই ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এখন আর যৌক্তিক নয়। তাই শুনানি না করে আগের দাম বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে ক্যাব।