চার বছর আগে সেখানে ছিল ধুধু বালুচর আর কাশবন। চরাঞ্চলের অনুর্বর সেই ধুধু বালুচর আর কাশবন কেটে পরিষ্কার করে ফসল ফলানোর জন্য উর্বর জমিতে পরিনত করতে নানা চড়াই উতড়াই পাড় হতে হয়েছে কৃষি উদ্যোক্তা রেজাউল হায়াত শিপু খালাসীকে।
যখন সেই অনুর্বর জমিতে ফসল ফলিয়ে সফল হলেন তখনই বিপাকে পড়তে হলো তাকে। প্রায় ৩শ বিঘা পতিত জমিতে মাসকলাই ও শষ্য আবাদ করে তিনি যখন একটু সফলতার মুখ দেখছেন, ঠিক তখনই ঈর্ষান্বিত হয়ে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি নিজেদের জমি দাবী করে তার ওই ফসলের মাঠ থেকে মাসকলাই তুলে ফেলছেন।
জানা যায়, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদরের মাথাভাঙ্গা চরাঞ্চলের প্রায় ৩শ বিঘা জমি সরকারি খাস খতিয়ানে অর্ন্তভূক্ত। ওই এলাকা ছিল ধুধু বালুচর আর কাশবন। ওই এলাকার বাসিন্দা কৃষি উদ্যোক্তা রেজাউল হায়াত শিপু খালাসী স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে চরের অনুর্বর জমি ফসলি জমিতে পরিনত করতে কাজ শুরু করেন প্রায় চার বছর আগে।
কৃষি উদ্যোক্তা শিপু খালাসী জানান, মাথাভাঙ্গা চরের প্রায় ৩শ বিঘা জমি পতিত পড়ে ছিল। সেখানে জঙ্গল হয়ে ছিল। গত চার বছর আগে ওই জমি আমি পরিষ্কার করতে কাজ শুরু করি। জমি যেহেতু সরকারি খাস খতিয়ানের জমি, সেকারনে আমি স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করে কাজি শুরু করি। এরপর একবছর লেগেছে পরিষ্কার করতে।
তিনি আরো বলেন, পরিষ্কারের পর সাধারণত দুই বছর কোনো ফসল হয়না। গত বছর ওই জমিতে মাসকলাই রোপন করি। ফসল মোটামুটি পাই। আমার প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে জমি পরিষ্কার করতে। আমি যখন ফসল ফলাতে পেরেছি, ঠিক তখনই এলাকার একটি মহল দাবী করছে ওইখানে তাদের জমি রয়েছে। গত সোমবার ও মঙ্গলবার প্রায় ৫০ বিঘা জমির মাসকলাই উঠিয়ে ফেলেছে স্থানীয় নজরুল সিকদার ও সোহান মৃধা নামের দুই ব্যক্তি। মাসকলাই উঠিয়ে আবার সেখানে চাষও করেছে তারা। কয়েকদিন পরই মাসকলাই কাটার কথা ছিল।
শিপু খালাসী বলেন, এটা সরকারি জমি। ওই জমিতে যে ফসল রয়েছে তা নষ্ট করার অধিকার কারো নেই। প্রয়োজন হলে সরকারের পক্ষ থেকে সকল ফসল নিয়ে নেওয়া হোক। কিন্তু জমি দাবী করে ফসল নষ্ট যারা করছে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানান তিনি।
ওই জমির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন জামাল খান। তিনি বলেন, গত তিন বছর ধরে খুব কষ্ট হয়েছে ফসল ফলাতে। চরের জমিতে আবাদ করা খুব কঠিন কাজ। অনেক কষ্টের পর যখন আমরা ফসল ফলাতে পেরেছি ঠিক তখনই স্থানীয় একটি মহলের লোভ জাগছে জমির উপর। আগে কিন্তু কেউ ফিরেও তাকায়নি। যখনই জমি আবাদের যোগ্য হয়েছে, তখনই তারা এখন জমি দখলে ব্যস্ত। সরকারি জমি তাদের বলে দাবী করছে।
নিজের জমি দাবী করে ফসল তুলে নষ্ট করেছেন নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। কি কারনে ফসল নষ্ট করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই জমির মধ্যে আমার ৩০ বিঘা জমি আছে, তাই আমি ফসল তুলে ফেলেছি।
এতোদিন কেন তুলেন নি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই জমিতে আমি ভুট্টা রোপন করবো একারনে তুলে ফেলেছি। সরকারি খাস খতিয়ানের জমি নয়, ওই জমি আমার।
চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোল্লা কাউছার বলেন, মাথাভাঙ্গা চরে যে জমি রয়েছে তা বর্তমানে সরকারি খাস খতিয়ানের জমি। ওই জমি আবাদের যোগ্য করে শিপু খালাসী চাষাবাদ করে। কিন্তু চরাঞ্চলে নিয়ম আছে কোনো অনাবাদি জমি পরিষ্কার করে আবাদ করলে তিনি তিন বছর ফসল নিতে পারবেন। এরপর জমির দাবীদারদেরকে জমি বুঝে দিতে হবে।
তিনি বলেন, যারা জমি দাবী করছে তাদের কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, জমি তাদের কি না। তবে বর্তমান সময়ে জমি থেকে ফসল তুলে ফেলা অন্যায় হয়েছে। দেশের কথা চিন্তা করা উচিত ছিল, ফসল নষ্ট করা ঠিক হয়নি।
চরভদ্রাসন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি)খাইরুল ইসলাম বলেন, মাথাভাঙ্গা চরে যে জমি রয়েছে তা খাস খতিয়ানের জমি। ওই জমিতে চাষাবাদ করে অনেকই জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে জমি থেকে ফসল তুলে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তহশিলদারকে পাঠানো হয়েছিল। জমির যদি কোনো দাবিদার থাকে তাহলে বিষয়টি যাচাই বাছাই করে দেখা হবে।
শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর ২০২২
চার বছর আগে সেখানে ছিল ধুধু বালুচর আর কাশবন। চরাঞ্চলের অনুর্বর সেই ধুধু বালুচর আর কাশবন কেটে পরিষ্কার করে ফসল ফলানোর জন্য উর্বর জমিতে পরিনত করতে নানা চড়াই উতড়াই পাড় হতে হয়েছে কৃষি উদ্যোক্তা রেজাউল হায়াত শিপু খালাসীকে।
যখন সেই অনুর্বর জমিতে ফসল ফলিয়ে সফল হলেন তখনই বিপাকে পড়তে হলো তাকে। প্রায় ৩শ বিঘা পতিত জমিতে মাসকলাই ও শষ্য আবাদ করে তিনি যখন একটু সফলতার মুখ দেখছেন, ঠিক তখনই ঈর্ষান্বিত হয়ে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি নিজেদের জমি দাবী করে তার ওই ফসলের মাঠ থেকে মাসকলাই তুলে ফেলছেন।
জানা যায়, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদরের মাথাভাঙ্গা চরাঞ্চলের প্রায় ৩শ বিঘা জমি সরকারি খাস খতিয়ানে অর্ন্তভূক্ত। ওই এলাকা ছিল ধুধু বালুচর আর কাশবন। ওই এলাকার বাসিন্দা কৃষি উদ্যোক্তা রেজাউল হায়াত শিপু খালাসী স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে চরের অনুর্বর জমি ফসলি জমিতে পরিনত করতে কাজ শুরু করেন প্রায় চার বছর আগে।
কৃষি উদ্যোক্তা শিপু খালাসী জানান, মাথাভাঙ্গা চরের প্রায় ৩শ বিঘা জমি পতিত পড়ে ছিল। সেখানে জঙ্গল হয়ে ছিল। গত চার বছর আগে ওই জমি আমি পরিষ্কার করতে কাজ শুরু করি। জমি যেহেতু সরকারি খাস খতিয়ানের জমি, সেকারনে আমি স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করে কাজি শুরু করি। এরপর একবছর লেগেছে পরিষ্কার করতে।
তিনি আরো বলেন, পরিষ্কারের পর সাধারণত দুই বছর কোনো ফসল হয়না। গত বছর ওই জমিতে মাসকলাই রোপন করি। ফসল মোটামুটি পাই। আমার প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে জমি পরিষ্কার করতে। আমি যখন ফসল ফলাতে পেরেছি, ঠিক তখনই এলাকার একটি মহল দাবী করছে ওইখানে তাদের জমি রয়েছে। গত সোমবার ও মঙ্গলবার প্রায় ৫০ বিঘা জমির মাসকলাই উঠিয়ে ফেলেছে স্থানীয় নজরুল সিকদার ও সোহান মৃধা নামের দুই ব্যক্তি। মাসকলাই উঠিয়ে আবার সেখানে চাষও করেছে তারা। কয়েকদিন পরই মাসকলাই কাটার কথা ছিল।
শিপু খালাসী বলেন, এটা সরকারি জমি। ওই জমিতে যে ফসল রয়েছে তা নষ্ট করার অধিকার কারো নেই। প্রয়োজন হলে সরকারের পক্ষ থেকে সকল ফসল নিয়ে নেওয়া হোক। কিন্তু জমি দাবী করে ফসল নষ্ট যারা করছে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানান তিনি।
ওই জমির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন জামাল খান। তিনি বলেন, গত তিন বছর ধরে খুব কষ্ট হয়েছে ফসল ফলাতে। চরের জমিতে আবাদ করা খুব কঠিন কাজ। অনেক কষ্টের পর যখন আমরা ফসল ফলাতে পেরেছি ঠিক তখনই স্থানীয় একটি মহলের লোভ জাগছে জমির উপর। আগে কিন্তু কেউ ফিরেও তাকায়নি। যখনই জমি আবাদের যোগ্য হয়েছে, তখনই তারা এখন জমি দখলে ব্যস্ত। সরকারি জমি তাদের বলে দাবী করছে।
নিজের জমি দাবী করে ফসল তুলে নষ্ট করেছেন নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। কি কারনে ফসল নষ্ট করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই জমির মধ্যে আমার ৩০ বিঘা জমি আছে, তাই আমি ফসল তুলে ফেলেছি।
এতোদিন কেন তুলেন নি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই জমিতে আমি ভুট্টা রোপন করবো একারনে তুলে ফেলেছি। সরকারি খাস খতিয়ানের জমি নয়, ওই জমি আমার।
চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোল্লা কাউছার বলেন, মাথাভাঙ্গা চরে যে জমি রয়েছে তা বর্তমানে সরকারি খাস খতিয়ানের জমি। ওই জমি আবাদের যোগ্য করে শিপু খালাসী চাষাবাদ করে। কিন্তু চরাঞ্চলে নিয়ম আছে কোনো অনাবাদি জমি পরিষ্কার করে আবাদ করলে তিনি তিন বছর ফসল নিতে পারবেন। এরপর জমির দাবীদারদেরকে জমি বুঝে দিতে হবে।
তিনি বলেন, যারা জমি দাবী করছে তাদের কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, জমি তাদের কি না। তবে বর্তমান সময়ে জমি থেকে ফসল তুলে ফেলা অন্যায় হয়েছে। দেশের কথা চিন্তা করা উচিত ছিল, ফসল নষ্ট করা ঠিক হয়নি।
চরভদ্রাসন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি)খাইরুল ইসলাম বলেন, মাথাভাঙ্গা চরে যে জমি রয়েছে তা খাস খতিয়ানের জমি। ওই জমিতে চাষাবাদ করে অনেকই জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে জমি থেকে ফসল তুলে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তহশিলদারকে পাঠানো হয়েছিল। জমির যদি কোনো দাবিদার থাকে তাহলে বিষয়টি যাচাই বাছাই করে দেখা হবে।