alt

অর্থ-বাণিজ্য

বাড়লো এলপি গ্যাসের দামও, ২২%

ফয়েজ আহমেদ তুষার : বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

গ্যাস, বিদ্যুতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবার এলপি গ্যাসের দামও বাড়ল। বাসায় রান্নায় বহুল প্রচলিত ১২ কেজি এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম এক লাফে ২৬৬ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা থেকে নতুন মূল্য কার্যকর হবে বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

এখন ফেব্রুয়ারি মাসে ১২ কেজির এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডার কিনতে মূসকসহ ১ হাজার ৪৯৮ টাকা লাগবে। এই গ্যাসের আগের দাম ছিল ১ হাজার ২৩২ টাকা। দাম বাড়ল ২৬৬ টাকা। দাম বেড়েছে ২১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

তবে বিইআরসির ঘোষণার এক সপ্তাহ আগে থেকেই বাজারে এই গ্যাসের দাম অনেকটাই বাড়তি ছিল।

অর্থনীতিবিদের মতে, দেশে চলমান মূল্যস্ফিতিতে এমনিতেই কষ্টে আছে সাধারণ মানুষ। এরমধ্যে নতুন বছরের শুরুতেই দুইবার বিদ্যুতের দাম এবং একবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন এবার এলপি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, সব মিলিয়ে জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়বে।

বিইআরসির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটো গ্যাস) নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার মূসকসহ ৬৯ টাকা ৭১ পয়সা, যা এতদিন ছিল ৫৭ টাকা ৪১ পয়সা। রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে তরল অবস্থায় সরবরাহকৃত এলপিজির দাম ঠিক করা হয়েছে প্রতিকেজি মূসকসহ ১২১ টাকা ৬২ পয়সা, যা এতদিন ছিল ৯৯ টাকা ৪৬ পয়সা।

তবে সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা এলপিজির দাম বাড়ানো হয়নি।

দেশের মোট চাহিদার দুই শতাংশ এলপিজি (এলপি গ্যাস) সরবরাহ করতে পারে সরকারি এলপি গ্যাস কোম্পানি। বাকি ৯৮ শতাংশ সরবরাহ ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে।

বাসা-বাড়িতে রান্নার চুলায় পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রেখেছে সরকার। এই কারণে শহরে এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে। গ্রাম পর্যায়েও এখন অনেকেই রান্নার জন্য এলপিজির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া ঢাকাসহ সারাদেশে অসংখ্য রেস্তোরাঁয় রান্না চলছে এই গ্যাস ব্যবহার করে।

২০০৮ সালে দেশে এলপি গ্যাসের মোট ব্যবহার ছিল যেখানে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ মেট্রিক টনে। এখন মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১২ শতাংশ বা ৪০ লাখ পরিবার এলপিজি ব্যবহারকারী।

অন্যদিকে মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৩ শতাংশ রান্নায় পাইপ লাইনের প্রাকৃতিক গ্যাস বা এনজি ব্যবহারকারী। তবে অনেক সময় চাপ কম থাকায় চুলা না জ্বলায় তাদের একটা অংশ ভিন্ন ব্যবস্থায় রান্না করতে বাধ্য হন।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিইআরসি বর্ধিত নতুন দাম ঘোষণা করলেও গত এক সপ্তাহ ধরেই সারাদেশে বেসরকারি খাতের এলপিজি বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে।

১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১৬৫০ থেকে থেকে ১৭০০ টাকায়। ভোক্তাদের অভিযোগ কোথাও কোথও এর চেয়ে বেশি দাম চাইছেন খুচরা দোকানদাররা।

চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বাজারে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে বিপণন কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।

ভোক্তা অধিকার, বিইআরসিসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায় থেকে সীমিত নজরদারি এই খাতের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে। বিপাকে পড়ে বেশি দামে গ্যাস কিনতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

জ্বালানি বিশ্লেষজ্ঞ ও খাত-সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, বাসায় রান্নার কাজে রাষ্ট্রীয় প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা এবং একমাত্র রাষ্ট্রীয় এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেডের সরবরাহ ক্ষমতা দীর্ঘদিন ধরে ২ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা প্রকৃতপক্ষে এ খাতের বেসরকারি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়ার সামিল।

রান্নায় এলপি গ্যাসকে ‘জনপ্রিয়’ করা হবে, সরকারের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জ্বালানি বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে মানুষ বাধ্য হয়ে এই গ্যাস ব্যবহার করছেন।

এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন আমদানি করে বাংলাদেশ। সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো এর দাম নির্ধারণ করে। একে ভিত্তি করে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি।

বিইআরসির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ফ্রেব্রুয়ারিতে সৌদি আরামকো ঘোষিত প্রোপেন ও বিউটেনের প্রতি টনের দাম ৭৯০ ডলার হিসাবে ৩৫:৬৫ অনুপাতে মিশ্রণের মূল্য ৭৯০ ডলার হয়। তাতে প্রতিকেজি এলপিজির খুচরা মূল্য দাঁড়াচ্ছে ১২৪ টাকা ৮৫ পয়সা।

গত জানুয়ারি মাসের জন্য দাম ঠিক করার ক্ষেত্রে প্রতি টন প্রোপেন ও বিউটেনের দাম যথাক্রমে ৫৯০ ডলার ও ৬০৫ ডলার এবং এই দুই উপাদনের ৩৫:৬৫ অনুপাতের দাম ৫৯৯ দশমিক ৭৫ ডলার বিবেচনায় করা হয়েছিল।

বিইআরসি জানায়, মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক) বেসরকারি এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি প্রায় ১২৪ টাকা ৮৫ পয়সা করা হয়, যা এতদিন ১০২ টাকা ৭০ পয়সা ছিল।

নতুন দর অনুযায়ী, সাড়ে ৫ কেজির সিলিন্ডার ৬৮৭ টাকা, সাড়ে ১২ কেজি ১৫৬১ টাকা, ১৫ কেজির সিলিন্ডার ১৮৭৩ টাকা, ১৬ কেজির সিলিন্ডার ১৯৯৮ টাকা, ১৮ কেজি ২২৪৮ টাকা, ২০ কেজি ২৪৯৭ টাকা, ২২ কেজি ২৭৪৭ টাকা, ২৫ কেজি ৩১২১ টাকা, ৩০ কেজি ৩৭৪৫ টাকা, ৩৩ কেজি ৪১২৪ টাকা, ৩৫ কেজি ৪৩৭০ টাকা, ৪৫ কেজি ৫৬১৮ টাকা ঠিক করা হয়েছে।

এক সপ্তাহ আগে যখন ১২ কেজি এলপিজির সিলান্ডারের বিইআরসি নির্ধারিত দাম ১২৩২ টাকা তখন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছিল ১৫০০ থেকে ১৫৫০ টাকায়। তখন খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব জায়গায়ই বেড়েছে এলপি গ্যাসের দাম।

এরপর প্রতিদিনই বাড়তে থাকে গ্যাসের দাম। গত রোববার দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম কোথাও ১৬০০, কোথাও ১৬৫০ আবার কোথায় ১৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বুধবার মফস্বল শহরে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকান দোকানদাররা, এমন অভিযোগও এসেছে।

বসুন্ধরা, যমুনা, বেক্সিমকো, ওরিয়নসহ বর্তমানে ২৯টি সরকারি-বেসরকারি কোম্পানি এলপিজি আমদানি, মজুদকরণ, বিতরণ, সরবরাহের কাজে নিয়োজিত। এলপিজির ডিলার প্রায় ৩ হাজার, আমদানিকারী অপারেটর ২০টি এবং এলপিজি আমদানি টার্মিনাল রয়েছে ১৪টি।

এলপি গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম বৃদ্ধি, ডলারের দাম বৃদ্ধি, আমদানি খরচ বৃদ্ধি এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এ বিষয়গুলো আমলে না নিয়ে বিইআরসি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে। যা প্রকৃত দামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিইআরসি নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি করলে তাদের লোকসান হয়।

দাম বেশি নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বেশ কয়েজন ডিলার বলেন, অপারেটর কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা কমিয়ে দিচ্ছে। এমনও হয়েছে, কোম্পানি এক মাসে তিন দফা মুনাফা কমিয়েছে। সেজন্য তাদের লাভ থাকছে না।

এলপিজির খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা চাহিদা অনুযায়ী কোন কোম্পানি থেকেই সিলিন্ডার পাচ্ছেন না। অনেক কোম্পানি সরবরাহ একদম বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু কোম্পানি সরবরাহ দিলেও দাম বেশি দিয়ে কিনে আনতে হচ্ছে। এ কারণে তারাও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।

সাত মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে তিন হাজার ৬৯ কোটি টাকার

অননুমোদিত পণ্য বিক্রি করায় ক্যারি ফ্যামেলিকে জরিমানা

শেয়ারবাজারে আস্থা তৈরিতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান

ছবি

পদ্মা ব্যাংকে মানুষের আস্থা বাড়ছে : এমডি ও সিইও তারেক রিয়াজ খান

ছবি

বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি: বাণিজ্যমন্ত্রী

ছবি

সাত মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক বেড়েছে দেড় কোটি

আট মাসে রাজস্ব ঘাটতি ২৩ হাজার কোটি টাকা

ছবি

চাহিদা কমায় চালের দাম কমালো ভারত

হিলি স্থলবন্দরে আট মাসে রাজস্ব ঘাটতি ১২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা

খাতভিত্তিক লেনদেনে সেরা খাদ্য ও আইটি খাত

ছবি

শুল্ক কমানোর পরও চিনির দাম বেড়েছে

ছবি

রাজধানীর বাজারে ব্রয়লারের দাম কমল ৩০-৫০ টাকা

ছবি

নিয়ন্ত্রণহীন বাজার : কমেনি ব্রয়লার মুরগির দাম

ছবি

আট মাসে ২১ হাজার কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণ

ছবি

পোলট্রি খাতে ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা লুট

ছবি

বিশ্ব বাজারে স্বর্ণের দাম আরও বাড়তে পারে

ক্যাশলেস কার্যক্রমের ব্যয়কে সিএসআর খাতে দেখানো যাবে

ডিএসইতে মূলধন কমলো ৪৮৩ কোটি টাকা, লেনদেনের ৩৭ শতাংশ দশ কোম্পানির দখলে

ছবি

ব্রয়লারের দাম এখনও ২৫০ টাকার ওপরে

ছবি

পোল্ট্রি থেকে ৯৩৬ কোটি টাকা লুটের অভিযোগ খামারিদের

ছবি

বিদেশের বাজারে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষিপন্য

ছবি

চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বেগুন, বাড়তি চাওয়া হচ্ছে শসা-লেবুতেও

ছবি

রমজানে নিত্যপণ্য : এক বছরে দাম বেড়েছে ১২ থেকে ৭৭ শতাংশ

ছবি

সুদহার দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়ালো ফেডারেল রিজার্ভ

৩৬৭ কোটি টাকার ডিএপি ইউরিয়া সার কিনবে সরকার

১৯৫ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করবে চার প্রতিষ্ঠান

পতনের চেয়ে উত্থান তিনগুণ বেশি, কমেছে লেনদেন

ফেব্রুয়ারিতে করপোরেট আয়কর জমা প্রায় দুই হাজার চারশ’ কোটি টাকা

ছবি

আগামী দু-এক মাসের জন্য মাংস আমদানির অনুমতি চায় এফবিসিসিআই

ছবি

রোজায় ব্রয়লার মুরগি ৩০-৪০ টাকা কমে দেয়ার প্রতিশ্রুতি

ছবি

ফের বাড়লো সোনার দাম

অজ্ঞাত রোগে বাগানের বাউকুল বড়ই নষ্ট, কৃষকের কয়েক লাখ টাকা ক্ষতি

ছবি

বিমানের ই-মেইল সার্ভিস চালু

ছবি

রাজস্ব ব্যবস্থার অটোমেশন, সংস্কার ও সহজীকরণ চায় ব্যবসায়ীরা

শেয়ারবাজারে আবার পতন

ল্যাপটপ ও প্রিন্টার আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি

tab

অর্থ-বাণিজ্য

বাড়লো এলপি গ্যাসের দামও, ২২%

ফয়েজ আহমেদ তুষার

বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

গ্যাস, বিদ্যুতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবার এলপি গ্যাসের দামও বাড়ল। বাসায় রান্নায় বহুল প্রচলিত ১২ কেজি এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম এক লাফে ২৬৬ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা থেকে নতুন মূল্য কার্যকর হবে বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

এখন ফেব্রুয়ারি মাসে ১২ কেজির এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডার কিনতে মূসকসহ ১ হাজার ৪৯৮ টাকা লাগবে। এই গ্যাসের আগের দাম ছিল ১ হাজার ২৩২ টাকা। দাম বাড়ল ২৬৬ টাকা। দাম বেড়েছে ২১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

তবে বিইআরসির ঘোষণার এক সপ্তাহ আগে থেকেই বাজারে এই গ্যাসের দাম অনেকটাই বাড়তি ছিল।

অর্থনীতিবিদের মতে, দেশে চলমান মূল্যস্ফিতিতে এমনিতেই কষ্টে আছে সাধারণ মানুষ। এরমধ্যে নতুন বছরের শুরুতেই দুইবার বিদ্যুতের দাম এবং একবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন এবার এলপি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, সব মিলিয়ে জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়বে।

বিইআরসির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটো গ্যাস) নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার মূসকসহ ৬৯ টাকা ৭১ পয়সা, যা এতদিন ছিল ৫৭ টাকা ৪১ পয়সা। রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে তরল অবস্থায় সরবরাহকৃত এলপিজির দাম ঠিক করা হয়েছে প্রতিকেজি মূসকসহ ১২১ টাকা ৬২ পয়সা, যা এতদিন ছিল ৯৯ টাকা ৪৬ পয়সা।

তবে সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা এলপিজির দাম বাড়ানো হয়নি।

দেশের মোট চাহিদার দুই শতাংশ এলপিজি (এলপি গ্যাস) সরবরাহ করতে পারে সরকারি এলপি গ্যাস কোম্পানি। বাকি ৯৮ শতাংশ সরবরাহ ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে।

বাসা-বাড়িতে রান্নার চুলায় পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রেখেছে সরকার। এই কারণে শহরে এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে। গ্রাম পর্যায়েও এখন অনেকেই রান্নার জন্য এলপিজির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া ঢাকাসহ সারাদেশে অসংখ্য রেস্তোরাঁয় রান্না চলছে এই গ্যাস ব্যবহার করে।

২০০৮ সালে দেশে এলপি গ্যাসের মোট ব্যবহার ছিল যেখানে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ মেট্রিক টনে। এখন মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১২ শতাংশ বা ৪০ লাখ পরিবার এলপিজি ব্যবহারকারী।

অন্যদিকে মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৩ শতাংশ রান্নায় পাইপ লাইনের প্রাকৃতিক গ্যাস বা এনজি ব্যবহারকারী। তবে অনেক সময় চাপ কম থাকায় চুলা না জ্বলায় তাদের একটা অংশ ভিন্ন ব্যবস্থায় রান্না করতে বাধ্য হন।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিইআরসি বর্ধিত নতুন দাম ঘোষণা করলেও গত এক সপ্তাহ ধরেই সারাদেশে বেসরকারি খাতের এলপিজি বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে।

১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১৬৫০ থেকে থেকে ১৭০০ টাকায়। ভোক্তাদের অভিযোগ কোথাও কোথও এর চেয়ে বেশি দাম চাইছেন খুচরা দোকানদাররা।

চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বাজারে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে বিপণন কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।

ভোক্তা অধিকার, বিইআরসিসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায় থেকে সীমিত নজরদারি এই খাতের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে। বিপাকে পড়ে বেশি দামে গ্যাস কিনতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

জ্বালানি বিশ্লেষজ্ঞ ও খাত-সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, বাসায় রান্নার কাজে রাষ্ট্রীয় প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা এবং একমাত্র রাষ্ট্রীয় এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেডের সরবরাহ ক্ষমতা দীর্ঘদিন ধরে ২ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা প্রকৃতপক্ষে এ খাতের বেসরকারি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়ার সামিল।

রান্নায় এলপি গ্যাসকে ‘জনপ্রিয়’ করা হবে, সরকারের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জ্বালানি বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে মানুষ বাধ্য হয়ে এই গ্যাস ব্যবহার করছেন।

এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন আমদানি করে বাংলাদেশ। সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো এর দাম নির্ধারণ করে। একে ভিত্তি করে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি।

বিইআরসির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ফ্রেব্রুয়ারিতে সৌদি আরামকো ঘোষিত প্রোপেন ও বিউটেনের প্রতি টনের দাম ৭৯০ ডলার হিসাবে ৩৫:৬৫ অনুপাতে মিশ্রণের মূল্য ৭৯০ ডলার হয়। তাতে প্রতিকেজি এলপিজির খুচরা মূল্য দাঁড়াচ্ছে ১২৪ টাকা ৮৫ পয়সা।

গত জানুয়ারি মাসের জন্য দাম ঠিক করার ক্ষেত্রে প্রতি টন প্রোপেন ও বিউটেনের দাম যথাক্রমে ৫৯০ ডলার ও ৬০৫ ডলার এবং এই দুই উপাদনের ৩৫:৬৫ অনুপাতের দাম ৫৯৯ দশমিক ৭৫ ডলার বিবেচনায় করা হয়েছিল।

বিইআরসি জানায়, মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক) বেসরকারি এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি প্রায় ১২৪ টাকা ৮৫ পয়সা করা হয়, যা এতদিন ১০২ টাকা ৭০ পয়সা ছিল।

নতুন দর অনুযায়ী, সাড়ে ৫ কেজির সিলিন্ডার ৬৮৭ টাকা, সাড়ে ১২ কেজি ১৫৬১ টাকা, ১৫ কেজির সিলিন্ডার ১৮৭৩ টাকা, ১৬ কেজির সিলিন্ডার ১৯৯৮ টাকা, ১৮ কেজি ২২৪৮ টাকা, ২০ কেজি ২৪৯৭ টাকা, ২২ কেজি ২৭৪৭ টাকা, ২৫ কেজি ৩১২১ টাকা, ৩০ কেজি ৩৭৪৫ টাকা, ৩৩ কেজি ৪১২৪ টাকা, ৩৫ কেজি ৪৩৭০ টাকা, ৪৫ কেজি ৫৬১৮ টাকা ঠিক করা হয়েছে।

এক সপ্তাহ আগে যখন ১২ কেজি এলপিজির সিলান্ডারের বিইআরসি নির্ধারিত দাম ১২৩২ টাকা তখন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছিল ১৫০০ থেকে ১৫৫০ টাকায়। তখন খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব জায়গায়ই বেড়েছে এলপি গ্যাসের দাম।

এরপর প্রতিদিনই বাড়তে থাকে গ্যাসের দাম। গত রোববার দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম কোথাও ১৬০০, কোথাও ১৬৫০ আবার কোথায় ১৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বুধবার মফস্বল শহরে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকান দোকানদাররা, এমন অভিযোগও এসেছে।

বসুন্ধরা, যমুনা, বেক্সিমকো, ওরিয়নসহ বর্তমানে ২৯টি সরকারি-বেসরকারি কোম্পানি এলপিজি আমদানি, মজুদকরণ, বিতরণ, সরবরাহের কাজে নিয়োজিত। এলপিজির ডিলার প্রায় ৩ হাজার, আমদানিকারী অপারেটর ২০টি এবং এলপিজি আমদানি টার্মিনাল রয়েছে ১৪টি।

এলপি গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম বৃদ্ধি, ডলারের দাম বৃদ্ধি, আমদানি খরচ বৃদ্ধি এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এ বিষয়গুলো আমলে না নিয়ে বিইআরসি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে। যা প্রকৃত দামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিইআরসি নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি করলে তাদের লোকসান হয়।

দাম বেশি নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বেশ কয়েজন ডিলার বলেন, অপারেটর কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা কমিয়ে দিচ্ছে। এমনও হয়েছে, কোম্পানি এক মাসে তিন দফা মুনাফা কমিয়েছে। সেজন্য তাদের লাভ থাকছে না।

এলপিজির খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা চাহিদা অনুযায়ী কোন কোম্পানি থেকেই সিলিন্ডার পাচ্ছেন না। অনেক কোম্পানি সরবরাহ একদম বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু কোম্পানি সরবরাহ দিলেও দাম বেশি দিয়ে কিনে আনতে হচ্ছে। এ কারণে তারাও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।

back to top