করোনাভাইরাস ও যুদ্ধের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। উদ্যোক্তারা বলছেন, আগের চেয়ে তৈরি পোশাকের রপ্তানি আদেশ বাড়তে শুরু করেছে। অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অনিশ্চয়তা থাকলেও চীন ও ভিয়েতনামের ‘জিরো কোভিড’ নীতির সুফল পেয়েছে বাংলাদেশ। আর এজন্যই বছর শেষে ভালো প্রবৃদ্ধির আশা তাদের।
নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দিয়ে অর্থবছর শুরু হলেও তা আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ডিসেম্বর রপ্তানি হয়েছে ৫৩৭ কোটি ডলারের পণ্য যা জুলাই মাসের তুলনায় প্রায় ১৪০ কোটি ডলার বেশি। অর্থবছরের প্রথম মাসে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৭৩১ কোটি ডলারের পণ্য যা আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় সাড়ে ১০ শতাংশের বেশি।
মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশই এসেছে পোশাক শিল্প থেকে। তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার ও ওভেন। এ খাতের গড় প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৬ শতাংশ। উদ্যোক্তারা বলছেন আগের চেয়ে বাড়তে শুরু করেছে পোশাকের রপ্তানি আদেশ। জানুয়ারিতে আরও কিছুটা গতি পাবে বলেও আশা তাদের।
এ প্রসঙ্গে গার্মেন্ট বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘ব্যবসা বৃদ্ধির বিষয়টা ক্রিসমাস সেলের পরে তাদের স্টকের কী অবস্থা দাঁড়ায়, তাদের ইনভেন্ট্রির কী অবস্থা দাঁড়ায় তার ওপর নির্ভর করবে। এই মুহূর্তে যে ব্যবসাটুকু আছে আমাদের আমি মনে করি সেটি সঠিক জায়গায় আছে। আমাদের ব্যবসা নিয়ে এখনও উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। বছরের শেষে যে লক্ষ্য আমরা নিয়েছি আমি আশা করি এ লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে পারবো।’
বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, বিগত কয়েক মাসে যে অর্ডার আমাদের কম ছিল এটা জানুয়ারি থেকে বাড়বে বলে আমরা আশা করছিলাম। তবে গত বছরের জানুয়ারিতে যেমন প্রচুর পরিমাণ অর্ডার এসেছিল বা বায়ারদের রিফিউজ করার মতো যে পরিস্থিতি হয়েছিল সেটি হয়তো হবে না।
পোশাক শিল্পের রপ্তানি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। বাংলাদেশ যে মানের পোশাক তৈরি করে তার চাহিদা বিশ্ববাজারে সবসময় থাকবেও বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
গার্মেন্ট বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘বিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষই নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত, যারা ডিসকাউন্টে বাজার করেন। আমরাও মূলত ডিসকাউন্ট স্টোরগুলোর কাছেই আমাদের মাল বিক্রি করি। আমাদের ব্যবসাটা অতটা ক্ষতিকর জায়গায় যাবে এটা আমি মনে করি না।’
এদিকে বৈশ্বিক সংকটে রপ্তানি খাত নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা আছে বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারপরও পোশাকের রপ্তানি বাড়বে। বছর শেষে প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে থাকবে বলেও আশা তাদের।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘চীনে নতুন করে কোভিড বাড়ায় দেশটিতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সে সুবিধা আমরা পাচ্ছিলাম। ভিয়েতনামও জিরো কোভিড নীতি নিয়েছিল, সেটির সুবিধাও আমরা পেয়েছি। সুতরাং অন্যান্য দেশ থেকে আমাদের দেশে অর্ডার রিলোকেট হচ্ছে। সীমিত বৈশ্বিক চাহিদার মধ্যেও আমাদের দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি নিয়ে বছর শেষ করার সুযোগ রয়েছে। জ্বালানি সংকট কমে গিয়ে ইউরোপের বাজারে চাঙ্গাভাব শুরু হলে ইউরোপের বাজারগুলোতেও আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়বে।’
গত রোববার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ইপিবি জানিয়েছে, ডিসেম্বরে সব মিলিয়ে ৪৯০ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যদিও এ মাসের জন্য রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯১ কোটি ২০ লাখ ডলার। এক মাসে এর চেয়ে বেশি মূল্যের পণ্য আগে কখনো বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়নি। এর আগে গত অক্টোবরে সর্বোচ্চ রপ্তানি হয়েছিল। সে সময় এর পরিমাণ ছিল ৪৭২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ডিসেম্বরের রপ্তানি অক্টোবরকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিপুল এ রপ্তানির পেছনে বড় কারিগর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। এ খাতটির হাত ধরেই প্রবৃদ্ধি এসেছে রপ্তানিতে।
চলতি অর্থবছরের জন্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার ধরা হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস পেরোনোর পর দেখা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত রপ্তানি আয় ১৫ শতাংশ বেশি আছে।
শনিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
করোনাভাইরাস ও যুদ্ধের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। উদ্যোক্তারা বলছেন, আগের চেয়ে তৈরি পোশাকের রপ্তানি আদেশ বাড়তে শুরু করেছে। অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অনিশ্চয়তা থাকলেও চীন ও ভিয়েতনামের ‘জিরো কোভিড’ নীতির সুফল পেয়েছে বাংলাদেশ। আর এজন্যই বছর শেষে ভালো প্রবৃদ্ধির আশা তাদের।
নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দিয়ে অর্থবছর শুরু হলেও তা আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ডিসেম্বর রপ্তানি হয়েছে ৫৩৭ কোটি ডলারের পণ্য যা জুলাই মাসের তুলনায় প্রায় ১৪০ কোটি ডলার বেশি। অর্থবছরের প্রথম মাসে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৭৩১ কোটি ডলারের পণ্য যা আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় সাড়ে ১০ শতাংশের বেশি।
মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশই এসেছে পোশাক শিল্প থেকে। তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার ও ওভেন। এ খাতের গড় প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৬ শতাংশ। উদ্যোক্তারা বলছেন আগের চেয়ে বাড়তে শুরু করেছে পোশাকের রপ্তানি আদেশ। জানুয়ারিতে আরও কিছুটা গতি পাবে বলেও আশা তাদের।
এ প্রসঙ্গে গার্মেন্ট বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘ব্যবসা বৃদ্ধির বিষয়টা ক্রিসমাস সেলের পরে তাদের স্টকের কী অবস্থা দাঁড়ায়, তাদের ইনভেন্ট্রির কী অবস্থা দাঁড়ায় তার ওপর নির্ভর করবে। এই মুহূর্তে যে ব্যবসাটুকু আছে আমাদের আমি মনে করি সেটি সঠিক জায়গায় আছে। আমাদের ব্যবসা নিয়ে এখনও উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। বছরের শেষে যে লক্ষ্য আমরা নিয়েছি আমি আশা করি এ লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে পারবো।’
বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, বিগত কয়েক মাসে যে অর্ডার আমাদের কম ছিল এটা জানুয়ারি থেকে বাড়বে বলে আমরা আশা করছিলাম। তবে গত বছরের জানুয়ারিতে যেমন প্রচুর পরিমাণ অর্ডার এসেছিল বা বায়ারদের রিফিউজ করার মতো যে পরিস্থিতি হয়েছিল সেটি হয়তো হবে না।
পোশাক শিল্পের রপ্তানি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। বাংলাদেশ যে মানের পোশাক তৈরি করে তার চাহিদা বিশ্ববাজারে সবসময় থাকবেও বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
গার্মেন্ট বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘বিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষই নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত, যারা ডিসকাউন্টে বাজার করেন। আমরাও মূলত ডিসকাউন্ট স্টোরগুলোর কাছেই আমাদের মাল বিক্রি করি। আমাদের ব্যবসাটা অতটা ক্ষতিকর জায়গায় যাবে এটা আমি মনে করি না।’
এদিকে বৈশ্বিক সংকটে রপ্তানি খাত নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা আছে বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারপরও পোশাকের রপ্তানি বাড়বে। বছর শেষে প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে থাকবে বলেও আশা তাদের।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘চীনে নতুন করে কোভিড বাড়ায় দেশটিতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সে সুবিধা আমরা পাচ্ছিলাম। ভিয়েতনামও জিরো কোভিড নীতি নিয়েছিল, সেটির সুবিধাও আমরা পেয়েছি। সুতরাং অন্যান্য দেশ থেকে আমাদের দেশে অর্ডার রিলোকেট হচ্ছে। সীমিত বৈশ্বিক চাহিদার মধ্যেও আমাদের দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি নিয়ে বছর শেষ করার সুযোগ রয়েছে। জ্বালানি সংকট কমে গিয়ে ইউরোপের বাজারে চাঙ্গাভাব শুরু হলে ইউরোপের বাজারগুলোতেও আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়বে।’
গত রোববার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ইপিবি জানিয়েছে, ডিসেম্বরে সব মিলিয়ে ৪৯০ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যদিও এ মাসের জন্য রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯১ কোটি ২০ লাখ ডলার। এক মাসে এর চেয়ে বেশি মূল্যের পণ্য আগে কখনো বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়নি। এর আগে গত অক্টোবরে সর্বোচ্চ রপ্তানি হয়েছিল। সে সময় এর পরিমাণ ছিল ৪৭২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ডিসেম্বরের রপ্তানি অক্টোবরকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিপুল এ রপ্তানির পেছনে বড় কারিগর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। এ খাতটির হাত ধরেই প্রবৃদ্ধি এসেছে রপ্তানিতে।
চলতি অর্থবছরের জন্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার ধরা হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস পেরোনোর পর দেখা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত রপ্তানি আয় ১৫ শতাংশ বেশি আছে।