নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে শ্রীলঙ্কার সরকারকে
৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা জন্য সমঝোতায় পৌঁছাতে আইএমএফ।
প্রায় এক বছর ধরে আলোচনার পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর কাছ থেকে ঋণ দিতে রাজি রয়েছে।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে লিখেছে, স্বাধীনতার পর সবচেয়ে খারাপ সময়টা পার করতে থাকা শ্রীলঙ্কা এমনিতেই বিপুল ঋণের ভারে জর্জরিত। কিন্তু বিদেশি মুদ্রার সঙ্কটে করুণ দশার মধ্যে আইএমএফ এর ওই ঋণ দেশটির ‘টিকে থাকার সহায়’ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি সাবরি বিবিসিকে বলেছেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন এবং বিমান পরিবহন সংস্থার বেসরকারিকরণের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে সরকার।
তবে, বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এই সংকট উত্তরণে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে শ্রীলঙ্কাকে।
মহামারীর মধ্যে পর্যটন বন্ধ হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি বড় ধাক্কা খায়। বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য চড়া সুদে নেওয়া বিদেশি ঋণ তখন হয়ে ওঠে গলার কাঁটা।
বিদেশি মুদ্রার অভাবে জ্বালানি, খাদ্য, ওষুধসহ জরুরি পণ্যের আমদানিও বন্ধ হয়ে যায় এক পর্যায়ে। মূল্যস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
জনগণকে শান্ত রাখতে শ্রীলঙ্কা সরকার কর কমিয়ে দিয়েছিল, তাতে হিতে বিপরীত হয়, রাজস্ব আদায় কমে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যায়।
এ পরিস্থিতিতে তুমুল জনরোষের মুখে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় সরকারের পতন ঘটে। ওই বছরই মে মাসে ইতিহাসে প্রথমবারের মত ঋণ খেলাপি হয় শ্রীলঙ্কা।
আইএমএফ এর সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর আগে এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাবরি বলেন, “কোনো কিছুই আমাদের সাধ্যের মধ্যে নেই। আমাদের ভালো না লাগলেও এখন কঠিন কিছু পদক্ষেপ নিতে হতে পারে, যেগুলো খুবই অজনপ্রিয় হবে।”
“সৌভাগ্যবশত, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ইউনিয়নগুলো ছাড়া দেশের অধিকাংশ মানুষ পরিস্থিতিটা বুঝতে পেরেছে। আমি জানি তারা খুশি নয়, কিন্তু তারা এটাও বোঝে যে আমাদের কোন বিকল্প নেই।"
রাজস্ব আদায় বাড়াতে এ বছরের শুরুর দিকে শ্রীলঙ্কা পেশাজীবীদের ওপর আয়কর আরোপ করেছে, সেই করের হার ক্ষেত্রবিশেষে ১২.৫ শতাংশ থেকে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত।
জ্বালানি, খাদ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানির খরচ মেটানোর জন্য অন্যান্য করও বাড়ানো হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে ২০১৯ সালে যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তার ঠিক উল্টো পরিস্থিতি এখন। সে সময় তিনি কর হারে বড় ছাড় দিয়েছিলেন, তাতে সরকার বছরে ১.৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি রাজস্ব হারিয়েছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিং এজেন্সির বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু উড বলেন, “সরকারের ব্যালেন্স শিট মেলাতে, ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ফিরতে এবং স্থিতিশীলতা আনতে শ্রীলঙ্কাকে এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
“আমাদের ধারণা, ২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধিতে ফেরার আগে ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি আরও সঙ্কুচিত হবে।"
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এমন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট পড়তে হয়নি দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিকে। জ্বালানি, প্রয়োজনীয় ওষুধ, নিত্য পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতিসহ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এই সংকটের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের সরকারকে দায়ী করে আসছে দেশটির সাধারণ মানুষ।
মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩
নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে শ্রীলঙ্কার সরকারকে
৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা জন্য সমঝোতায় পৌঁছাতে আইএমএফ।
প্রায় এক বছর ধরে আলোচনার পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর কাছ থেকে ঋণ দিতে রাজি রয়েছে।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে লিখেছে, স্বাধীনতার পর সবচেয়ে খারাপ সময়টা পার করতে থাকা শ্রীলঙ্কা এমনিতেই বিপুল ঋণের ভারে জর্জরিত। কিন্তু বিদেশি মুদ্রার সঙ্কটে করুণ দশার মধ্যে আইএমএফ এর ওই ঋণ দেশটির ‘টিকে থাকার সহায়’ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি সাবরি বিবিসিকে বলেছেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন এবং বিমান পরিবহন সংস্থার বেসরকারিকরণের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে সরকার।
তবে, বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এই সংকট উত্তরণে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে শ্রীলঙ্কাকে।
মহামারীর মধ্যে পর্যটন বন্ধ হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি বড় ধাক্কা খায়। বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য চড়া সুদে নেওয়া বিদেশি ঋণ তখন হয়ে ওঠে গলার কাঁটা।
বিদেশি মুদ্রার অভাবে জ্বালানি, খাদ্য, ওষুধসহ জরুরি পণ্যের আমদানিও বন্ধ হয়ে যায় এক পর্যায়ে। মূল্যস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
জনগণকে শান্ত রাখতে শ্রীলঙ্কা সরকার কর কমিয়ে দিয়েছিল, তাতে হিতে বিপরীত হয়, রাজস্ব আদায় কমে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যায়।
এ পরিস্থিতিতে তুমুল জনরোষের মুখে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় সরকারের পতন ঘটে। ওই বছরই মে মাসে ইতিহাসে প্রথমবারের মত ঋণ খেলাপি হয় শ্রীলঙ্কা।
আইএমএফ এর সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর আগে এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাবরি বলেন, “কোনো কিছুই আমাদের সাধ্যের মধ্যে নেই। আমাদের ভালো না লাগলেও এখন কঠিন কিছু পদক্ষেপ নিতে হতে পারে, যেগুলো খুবই অজনপ্রিয় হবে।”
“সৌভাগ্যবশত, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ইউনিয়নগুলো ছাড়া দেশের অধিকাংশ মানুষ পরিস্থিতিটা বুঝতে পেরেছে। আমি জানি তারা খুশি নয়, কিন্তু তারা এটাও বোঝে যে আমাদের কোন বিকল্প নেই।"
রাজস্ব আদায় বাড়াতে এ বছরের শুরুর দিকে শ্রীলঙ্কা পেশাজীবীদের ওপর আয়কর আরোপ করেছে, সেই করের হার ক্ষেত্রবিশেষে ১২.৫ শতাংশ থেকে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত।
জ্বালানি, খাদ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানির খরচ মেটানোর জন্য অন্যান্য করও বাড়ানো হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে ২০১৯ সালে যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তার ঠিক উল্টো পরিস্থিতি এখন। সে সময় তিনি কর হারে বড় ছাড় দিয়েছিলেন, তাতে সরকার বছরে ১.৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি রাজস্ব হারিয়েছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিং এজেন্সির বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু উড বলেন, “সরকারের ব্যালেন্স শিট মেলাতে, ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ফিরতে এবং স্থিতিশীলতা আনতে শ্রীলঙ্কাকে এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
“আমাদের ধারণা, ২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধিতে ফেরার আগে ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি আরও সঙ্কুচিত হবে।"
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এমন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট পড়তে হয়নি দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিকে। জ্বালানি, প্রয়োজনীয় ওষুধ, নিত্য পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতিসহ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এই সংকটের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের সরকারকে দায়ী করে আসছে দেশটির সাধারণ মানুষ।