alt

ক্যাম্পাস

শাবির সাবেক ৫ শিক্ষার্থী আটক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, ঢাকা ও শাবিপ্রবি প্রতিনিধি, সিলেট : মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২২

শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিচ্ছেন -সংবাদ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক ৫ শিক্ষার্থীকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। আটককৃতদের ঢাকার মালিবাগ সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সিলেটের পুলিশ জানিয়েছে, আটককৃত ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা (মামলা) নেয়া হবে। ‘অপরাধ মূলক ষড়যন্ত্র, অর্থযোগান, উসকানি’ ইত্যাদি অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হবে বলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পযর্ন্ত রাজধানীর উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। আটককৃতদের ঢাকার মালিবাগ সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আটকরা হলেন-বগুড়ার শিবগঞ্জ থানার লক্ষ্মীমোলা গ্রামের মুইন উদ্দিনের ছেলে রেজা নূর মুঈন দীপ (৩১), টাঙ্গাইলের সখিপুরের দারিপাকা গ্রামের মতিয়ার রহমান খানের ছেলে হাবিবুর রহমান খান (২৬), খুলনার সোনাডাঙ্গার মিজানুর রহমানের ছেলে এএফএম নাজমুস সাকিব (৩২), কুমিল্লার মুরাদনগর থানার নিয়ামতপুর গ্রামের সাদিকুল ইসলামের ছেলে ফয়সাল আহমেদ (২৭) ও ঢাকা মিরপুরের মাজার রোডের জব্বার হাউসিং বি-ব্লকের ১৭/৩ বাসার এ কে এম মোশাররফের ছেলে এ কে এম মারুফ হোসেন (২৮)। এদের মধ্যে হাবিবুর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে ২০১২ সালে পাস করেছেন। একই বছর আর্কিটেকচার বিভাগ থেকে পাস করেছেন রেজা নুর মঈন ও নাজমুস সাকিব দ্বীপ।

সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ সংবাদকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অর্থ যোগান দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব অর্থ যোগান তারা কিসের ভিত্তিতে দিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ তবে সিলেটে কোন শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার নেই বলে জানান তিনি।

এদিকে আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সবগুলো মোবাইল অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আর অনশনরত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসকদের দলও আর এই সহায়তা দিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা।

যেভাবে আটক

তাদের মধ্যে হাবিবুর রহমান স্বপন ও রেজা নূর মুঈন দীপকে সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার উত্তরার বাসা থেকে নিয়ে যায় পুলিশ।

ওই ভবনেই থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী (২০০৮-০৯ ব্যাচের) এবং একটি আইটি ফার্মের এমডি শাহ রাজী সিদ্দিকী। সোমবার রাতে তার ফেইসবুক পোস্টেই দুজনকে ‘তুলে নিয়ে যাওয়ার’ খবর পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, ‘(সোমবার) সন্ধ্যার পর উত্তরার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় সিআইডির কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা। ঘণ্টাখানেক তাদের মাইক্রোবাসে রেখে দেওয়া হয়, তখন আমরা কথা বলেছি তাদের সঙ্গে।’

আটকৃত রেজা নূর মঈন দীপের স্ত্রী জাকোয়ান সালওয়া তাকরিম বলেন, ‘রেজা সোমবার সন্ধ্যায় উত্তরার বাসা থেকে বেরিয়ে মুদি দোকানে কেনাকাটার জন্য গিয়েছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাকে সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিট তুলে নেয়। তারা রেজার গাড়ি ফেরত দিতে বাসায় আসে এবং জানায় রেজাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যারা বাসায় এসেছিল তাদের গাড়িতে সিআইডির স্টিকার লাগানো ছিল।’

এ সময় গাড়িতে তিনি হাবিবকে দেখেছেন। রেজার স্ত্রী বলেন, শাবির উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে রেজা ও হাবিব আর্থিক সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ এনে তাদেরকে আটক করা হয়েছে।

সালওয়া তাকরিম নিজেও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং কিছু অর্থ সহযোগিতা করেছি। আমাদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না। শুধু জুনিয়রদের সাহায্য করার জন্য টাকা দিয়েছি।’

সাবেক শিক্ষার্থী শাহ রাজী সিদ্দিক বলেন, ‘আমি আর হাবিবুর রহমান গত প্রায় আড়াই বছর ধরে একসঙ্গে থাকি। হাবিব জার্মানির একটা সফটওয়্যার ফার্মে চাকরি পেয়েছে। মঙ্গলবারই তার ভিসা হয়েছে।’

শাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নানা ভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে। এর আগে আমাদের লেনদেনের সব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে এসব করে আমাদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।’

মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ অহিংস পন্থায় আন্দোলন করছি। অহিংস আন্দোলনের সর্বোচ্চ ধাপ হচ্ছে অনশন। আমরা সাত দিন ধরে অনশন করছি তবুও উপাচার্য পদত্যাগ করছেন না। অনেকের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।’

মোবাইল অ্যাকাউন্ট ‘বন্ধ’

সোমবার রাত আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কয়েকটি মোবাইল অ্যাকাউন্ট কাজ করছে না। সবগুলো অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

একজন শিক্ষার্থী বলেন, “মোট ছয়টি অ্যাকাউন্টে প্রতিদিন টাকা আসত সাবেকদের পক্ষ থেকে। আমাদের অনশনকারী ভাইবোনদের জন্য তারা পাঠাতেন। সোমবার দুপুরের পর থেকে লেনদন করা যাচ্ছে না ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি।”

স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক দল ফিরে গেছে

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনে বসা শিক্ষার্থীদের টানা পাঁচদিন চিকিৎসা সেবা দেওয়া সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশরা সোমবার ফিরে যান। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারীরা।

নাঈম আহমদ নামের এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি মেডিক্যাল টিম চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছিল। তারা সোমবার চলে গেছে। চিকিৎসার অভাবে অনশনকারীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

আন্দোলনকারীদের একজন মুখপাত্র আরিফুল ইসলাম মঙ্গলবার বলেন, ‘অনশনরত শিক্ষার্থীদের সবার অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে। তারা খিঁচুনি, অক্সিজেন ও সুগার লেভেল কমে যাওয়া, ব্লাড প্রেশারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় পড়ছেন।’

শাহজালাল ক্যাম্পাসে ওসমানী মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নেতৃত্বে ছিলেন মো. নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ও আমাদের চিকিৎসকদের মধ্য থেকে কয়েকজনের করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ায় আমরা আপাতত সেবা বন্ধ রেখেছি। পরে আমরা কী করব, সেটা জানিয়ে দেব।’

এখন যারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তাদের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত, ভিসির বাসার সামনে অনশনে ছিলেন নয়জন, আর হাসপাতালে ১৯ জন।

কেন আন্দোলন

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী।

১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আন্দোলন চলাকালে ছাত্রীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে এবং রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

জাবির সিনেট-সিন্ডিকেট নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়

আট বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন নির্বাচন

ছবি

জাবি উপাচার্যের সঙ্গে ইন্ডিয়া মাইক্রোবায়োলজিস্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্টের সৌজন্য সাক্ষাৎ

তীব্র গরমে ঢাবির শতভাগ ক্লাস অনলাইনে

ছবি

জবিতে চলতি সপ্তাহ অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত

ছবি

তীব্র গরমে অনলাইন ক্লাস চায় জবি শিক্ষার্থীরা

ছবি

বুয়েট শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অনড়

‘তোকে সিটে উঠতে না দিলে প্রক্টর-প্রাধ্যক্ষ আসবে’- আবাসিক ছাত্রকে ছাত্রলীগ নেতার হুমকি

ছবি

‘যৌন কেলেংকারিতে’ অভিযুক্ত শিক্ষককে রেজিস্ট্রার নিয়োগ, শিক্ষক সমিতির পাল্টাপাল্টি বিবৃতি

ছবি

জাবিতে বাংলা বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত

ছবি

জবিতে বৈশাখ রাঙায় চারুকলার শিক্ষার্থীদের শৈল্পিক কাজ, বাজেট বৃদ্ধির দাবি

ছবি

ইমতিয়াজ রাব্বিকে হলে সিট ফেরত দেওয়ার নির্দেশ

মতিঝিল আইডিয়ালে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত ছাড়াই ফি ধার্য, অভিভাবকদের ‘অসন্তোষ’

ছবি

ডিমেনশিয়া রোগ নির্ণয়ে জাবি-এনটিইউর যৌথ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ছবি

রিকশাচিত্রে জবিতে বৈশাখের প্রস্তুতি, উদযাপন হবে ১৮ এপ্রিল

ছবি

মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবি জাবি সাংস্কৃতিক জোটের

ছবি

জবি উপাচার্যের নামে ভুয়া ই-মেইল, সতর্ক করলো প্রশাসন

ছবি

জাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সাক্ষাৎকারের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

ছবি

বুয়েটে প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরজি জানালেন ৬ শিক্ষার্থী

যৌন হয়রানির দায়ে জবির এক শিক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত, আরেকজনকে আবারও কারণ দর্শানোর নোটিশ

জাবিতে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কর্মচারীর স্ত্রীর সাথে অশালীন আচরণের অভিযোগ

ছবি

এবার রাজনীতিমুক্ত রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বুয়েট শিক্ষার্থীদের আর্জি

ছবি

জাবিতে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করায় মানহানির মামলা দায়ের

ছবি

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের আদেশ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অমান্য করে লিয়েন ছুটিতে শিক্ষক,তদন্ত কমিটি গঠন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের ছুটি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত

ছবি

ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস দাবিতে অটল বুয়েট শিক্ষার্থীরা

ঢাবি দুই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তি ও যৌন হয়রানির অভিযোগ, তদন্তে কমিটি

ছবি

হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বুয়েটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা

‘ব্যক্তিগত’ কারণ দেখিয়ে কুবি সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক সেবনকালে দুই শিক্ষার্থী আটক

ছবি

কোচিং বাণিজ্য, নির্বাচন ঘিরে আধিপত্যের লড়াই মতিঝিল আইডিয়ালে

ছবি

একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরতে চায় বুয়েটের আন্দোলনকারীরা

ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত থাকলে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবে বুয়েট শিক্ষার্থীরা

ছবি

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা চাইলে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির অনুমতি দেয়া যেতে পারে: উপাচার্যের

ছবি

বুয়েটে প্রবেশ করলো ছাত্রলীগ, দাবি সাংগঠনিক রাজনীতির

tab

ক্যাম্পাস

শাবির সাবেক ৫ শিক্ষার্থী আটক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, ঢাকা ও শাবিপ্রবি প্রতিনিধি, সিলেট

শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিচ্ছেন -সংবাদ

মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২২

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক ৫ শিক্ষার্থীকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। আটককৃতদের ঢাকার মালিবাগ সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সিলেটের পুলিশ জানিয়েছে, আটককৃত ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা (মামলা) নেয়া হবে। ‘অপরাধ মূলক ষড়যন্ত্র, অর্থযোগান, উসকানি’ ইত্যাদি অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হবে বলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পযর্ন্ত রাজধানীর উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। আটককৃতদের ঢাকার মালিবাগ সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আটকরা হলেন-বগুড়ার শিবগঞ্জ থানার লক্ষ্মীমোলা গ্রামের মুইন উদ্দিনের ছেলে রেজা নূর মুঈন দীপ (৩১), টাঙ্গাইলের সখিপুরের দারিপাকা গ্রামের মতিয়ার রহমান খানের ছেলে হাবিবুর রহমান খান (২৬), খুলনার সোনাডাঙ্গার মিজানুর রহমানের ছেলে এএফএম নাজমুস সাকিব (৩২), কুমিল্লার মুরাদনগর থানার নিয়ামতপুর গ্রামের সাদিকুল ইসলামের ছেলে ফয়সাল আহমেদ (২৭) ও ঢাকা মিরপুরের মাজার রোডের জব্বার হাউসিং বি-ব্লকের ১৭/৩ বাসার এ কে এম মোশাররফের ছেলে এ কে এম মারুফ হোসেন (২৮)। এদের মধ্যে হাবিবুর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে ২০১২ সালে পাস করেছেন। একই বছর আর্কিটেকচার বিভাগ থেকে পাস করেছেন রেজা নুর মঈন ও নাজমুস সাকিব দ্বীপ।

সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ সংবাদকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অর্থ যোগান দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব অর্থ যোগান তারা কিসের ভিত্তিতে দিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ তবে সিলেটে কোন শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার নেই বলে জানান তিনি।

এদিকে আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সবগুলো মোবাইল অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আর অনশনরত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসকদের দলও আর এই সহায়তা দিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা।

যেভাবে আটক

তাদের মধ্যে হাবিবুর রহমান স্বপন ও রেজা নূর মুঈন দীপকে সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার উত্তরার বাসা থেকে নিয়ে যায় পুলিশ।

ওই ভবনেই থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী (২০০৮-০৯ ব্যাচের) এবং একটি আইটি ফার্মের এমডি শাহ রাজী সিদ্দিকী। সোমবার রাতে তার ফেইসবুক পোস্টেই দুজনকে ‘তুলে নিয়ে যাওয়ার’ খবর পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, ‘(সোমবার) সন্ধ্যার পর উত্তরার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় সিআইডির কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা। ঘণ্টাখানেক তাদের মাইক্রোবাসে রেখে দেওয়া হয়, তখন আমরা কথা বলেছি তাদের সঙ্গে।’

আটকৃত রেজা নূর মঈন দীপের স্ত্রী জাকোয়ান সালওয়া তাকরিম বলেন, ‘রেজা সোমবার সন্ধ্যায় উত্তরার বাসা থেকে বেরিয়ে মুদি দোকানে কেনাকাটার জন্য গিয়েছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাকে সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিট তুলে নেয়। তারা রেজার গাড়ি ফেরত দিতে বাসায় আসে এবং জানায় রেজাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যারা বাসায় এসেছিল তাদের গাড়িতে সিআইডির স্টিকার লাগানো ছিল।’

এ সময় গাড়িতে তিনি হাবিবকে দেখেছেন। রেজার স্ত্রী বলেন, শাবির উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে রেজা ও হাবিব আর্থিক সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ এনে তাদেরকে আটক করা হয়েছে।

সালওয়া তাকরিম নিজেও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং কিছু অর্থ সহযোগিতা করেছি। আমাদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না। শুধু জুনিয়রদের সাহায্য করার জন্য টাকা দিয়েছি।’

সাবেক শিক্ষার্থী শাহ রাজী সিদ্দিক বলেন, ‘আমি আর হাবিবুর রহমান গত প্রায় আড়াই বছর ধরে একসঙ্গে থাকি। হাবিব জার্মানির একটা সফটওয়্যার ফার্মে চাকরি পেয়েছে। মঙ্গলবারই তার ভিসা হয়েছে।’

শাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নানা ভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে। এর আগে আমাদের লেনদেনের সব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে এসব করে আমাদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।’

মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ অহিংস পন্থায় আন্দোলন করছি। অহিংস আন্দোলনের সর্বোচ্চ ধাপ হচ্ছে অনশন। আমরা সাত দিন ধরে অনশন করছি তবুও উপাচার্য পদত্যাগ করছেন না। অনেকের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।’

মোবাইল অ্যাকাউন্ট ‘বন্ধ’

সোমবার রাত আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কয়েকটি মোবাইল অ্যাকাউন্ট কাজ করছে না। সবগুলো অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

একজন শিক্ষার্থী বলেন, “মোট ছয়টি অ্যাকাউন্টে প্রতিদিন টাকা আসত সাবেকদের পক্ষ থেকে। আমাদের অনশনকারী ভাইবোনদের জন্য তারা পাঠাতেন। সোমবার দুপুরের পর থেকে লেনদন করা যাচ্ছে না ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি।”

স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক দল ফিরে গেছে

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনে বসা শিক্ষার্থীদের টানা পাঁচদিন চিকিৎসা সেবা দেওয়া সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশরা সোমবার ফিরে যান। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারীরা।

নাঈম আহমদ নামের এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি মেডিক্যাল টিম চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছিল। তারা সোমবার চলে গেছে। চিকিৎসার অভাবে অনশনকারীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

আন্দোলনকারীদের একজন মুখপাত্র আরিফুল ইসলাম মঙ্গলবার বলেন, ‘অনশনরত শিক্ষার্থীদের সবার অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে। তারা খিঁচুনি, অক্সিজেন ও সুগার লেভেল কমে যাওয়া, ব্লাড প্রেশারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় পড়ছেন।’

শাহজালাল ক্যাম্পাসে ওসমানী মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নেতৃত্বে ছিলেন মো. নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ও আমাদের চিকিৎসকদের মধ্য থেকে কয়েকজনের করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ায় আমরা আপাতত সেবা বন্ধ রেখেছি। পরে আমরা কী করব, সেটা জানিয়ে দেব।’

এখন যারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তাদের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত, ভিসির বাসার সামনে অনশনে ছিলেন নয়জন, আর হাসপাতালে ১৯ জন।

কেন আন্দোলন

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী।

১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আন্দোলন চলাকালে ছাত্রীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে এবং রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

back to top