alt

ক্যাম্পাস

ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত : তদন্ত কমিটি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় ইবি কর্তৃপক্ষের অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া হলের প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটর দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।

প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর হাইকোর্ট আগামীকাল বুধবার আদেশের জন্য দিন রেখেছেন। পাশাপাশি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও আইনের অধীনে প্রণীত বিধি-প্রবিধানমালা সংগ্রহ করে তা দেখাতে এবং ইবির কোনো আইনজীবী থাকলে তাকে জানাতেও বলেছেন আদালত।

এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ইবির সাবেক শিক্ষার্থী গাজী মো. মহসীন।

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দিয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন, নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ওই নির্যাতনে জড়িত বলে ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তাবাসসুম নামের যে দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে রাখাসহ কয়েক দফা নির্দেশ দেন।

তিন সদস্যের কমিটিতে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা, জেলা জজ মনোনীত বিচার বিভাগীয় একজন কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপককে রাখতে বলা হয়। কমিটির প্রতিবেদন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে জমা দিতে বলা হয়। এ ছাড়া ওই ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ পৃথক প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় আদালতে দাখিল করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। পরে আদালতে প্রতিবেদন দুটির অংশবিশেষ পড়ে শোনান তিনি। রিটের পক্ষে গাজী মো. মহসীন শুনানিতে ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ফুলপরীকে র‍্যাগিং, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নির্দেশদাতা এবং ওই পাশবিক, অমানবিক ও ন্যক্করজনক ঘটনা সংঘটনের হুকুমদাতা। ওই অমানবিক, পাশবিক, ন্যক্করজনক, জঘন্য ঘটনার সঙ্গে হালিমা আক্তার মুন্নী, ইশরাত জাহান মীম, তাবাসসুম ইসলাম, ময়াবিয়া জাহান জড়িত এবং তাঁদের দ্বারা ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে। তাঁরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ফুলপরীকে পাশবিক কায়দায় অমানবিকভাবে নির্যাতন করেন।

ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসেছে। আর বলা হয়, সরাসরি নির্যাতন করেন হালিমা আক্তার মুন্নী, ইশরাত জাহান মীম, তাবাসসুম ইসলাম ও ময়াবিয়া। তাবাসুমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রতীয়মান হয় যে ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ডাইনিংয়ে ফুলপরীর ওপর পাশবিক নির্যাতনের সময় উর্মি ও মীম ভিডিও ধারণ করেন। তবে কোনো ভিডিও রেকর্ড পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গণরুমে উপস্থিত ছাত্রীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আল আমিন কর্তৃক ফুলপরীকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির ভাষ্য, তাবাসসুম ফুলপরীকে ৮ ফেব্রুয়ারি দেখা করতে বলেন। ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে দেখা করে তাবাসসুম এটিকে বেয়াদবি হিসেবে মনে করেন। এ কারণে তাবাসসুম ব্যক্তিগতভাবে ফুলপরীর ওপর রাগান্বিত হন। এটিই তাবাসসুম প্রচার করেন, ফুলপরী সিনিয়রদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছেন। এ থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়।

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, তাবাসসুমের নেতৃত্বে ১০৫ নম্বর রুমে পিংকীর উপস্থিতিতে ফুলপরীকে ১১ ফেব্রুয়ারি রাত আটটায় অন্য মেয়েদের উপস্থিতিতে গণরুমে হেনস্তা করা হয়। আজেবাজে কথা বলা হয়। পরবর্তী সময়ে অন্তরার উপস্থিতিতে রাত নয়টার দিকে ৩০৬ রুমে (ফুলপরীর বক্তব্যে গণরুম) নিয়ে ফুলপরীকে মেয়েদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ গালিগালাজ এবং আজেবাজে কথা বলে মানসিক নির্যাতন করা হয়। এমনকি সেই রাতে ৩০৬ নম্বর রুমে থাকা মেয়েদের প্রত্যেককে ফুলপরীকে একটা করে চড় মারতে নির্দেশ দেন অন্তরা। ফুলপরীর মুঠোফোন কেড়ে নেন লিমা ও তাবাসসুম। নির্যাতনের একপর্যায়ে ফুলপরী অন্তরার পা ধরতে বাধ্য হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফুলপরী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। অন্তরার নির্দেশে তাঁকে পাহারা দিয়ে রাখা হয়।

অন্তরার জোরজবরদস্তির কারণে প্রভোস্ট ফুলপরীকে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেন বলে তিন সদস্যের কমিটির প্রতিবেদনে এসেছে। বলা হয়েছে, এরপর প্রভোস্ট হলে উপস্থিত থাকা অবস্থায়ই অন্তরা, তাবাসসুম, মীম, উর্মি, ময়াবিয়াসহ অন্যান্য মেয়েরা ফুলপরীকে হাত ধরে টানাটানি করে হেনস্থা করেন। পরে ফুলপরীকে প্রভোস্ট শামসুল আলম বরাবর মুচলেখা দিতে বাধ্য করা হয়।

২০ ফেব্রুয়ারি ফুলপরীর জবানবন্দি গ্রহণের সময় তাঁর বাঁ গালে কালো দাগ দেখা যায় বলে প্রতিবেদনে এসেছে। প্রতিবেদনের ভাষ্য, হলের প্রভোস্ট শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্টার আবদুর রাজ্জাক, শাখার কর্মকর্তা হামিদা খাতুন, আয়া, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউস টিউটর মৌমিতা আক্তার ও সহকারী অধ্যাপক ইশরাত জাহানের দায়িত্বে চরম অবহেলা ও ফুলপরী ইস্যুতে গাফলতি ছিল বলে প্রতীয়মান হয়।

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ: বাইন্ডার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

ঢাবিতে ৩ কি.মি. জুড়ে লেখা হয়েছে পাইয়ের মান, বিশ্বরেকর্ডের অপেক্ষা

ছবি

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: নগ্নপদে দাঁড়ালেন রাবি অধ্যাপক

ছবি

শিক্ষার্থীদের মারধর: ইবিতে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ

কাল থেকে ক্লাসে ফিরছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব ছাড়লেন আরও ৩ শিক্ষক

ছবি

রাবিতে সংঘর্ষ, ৩০০ জনকে আসামি করে পুলিশের মামলা

ছবি

স্থানীয়-শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ : ফের উত্তপ্ত রাবি ক্যাম্পাস

ছবি

ছাত্রলীগের সহায়তায় ২ ঘণ্টা পর মুক্ত রাবি ভিসি

ছবি

প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে ভিসির বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা

স্থানীয়দের সঙ্গে রাবি শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত শতাধিক

ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ, দোকানে দোকানে অগ্নিসংযোগ, আহত দুই শতাধিক

এবার বদরুন্নেসায় ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ

ছবি

এবার বদরুন্নেসায় ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ

২৯ কেন্দ্রে ঢাবির রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত

ছবি

ফুলপরীকে নির্যাতন: ছাত্রলীগের সানজিদাসহ ৫ ছাত্রী বহিষ্কার

ছবি

জাবির সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, জানতে চায় ইউজিসি

ছবি

‘আত্মহত্যাচেষ্টা’ ঢাবির ছাত্রলীগ নেতার

ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় তদারকি করতে এসে ছাত্র উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ

ছবি

প্রাধ্যক্ষ, হাউস টিউটরসহ কয়েকজনের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে কমিটি

ছবি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের রাগিংবিরোধী মশাল মিছিল

ছবি

ইবি হলে ছাত্রী নির্যাতন: ছাত্রলীগ নেত্রীসহ ৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার

ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটিকে ফোনে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছি : ফুলপরী

ছবি

এক প্রতিবাদী ফুলপরীর গল্প

ঢাবির বাসে মারধরের শিকার ছাত্রের বিরুদ্ধে উল্টো থানায় অভিযোগের চেষ্টা

ছবি

র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

আমি অভিযুক্তদের চিনিয়ে দিয়েছি প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেবে তাই হবে

ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন : গোপনে ক্যাম্পাসে আসলেন ৫ অভিযুক্ত

তিন দফায় আট ঘণ্টা তদন্তের মুখে অভিযুক্তরা

ছবি

ইবি উপাচার্যের কার্যালয়ে তল্লাশি, কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

সখীপুরে ৫৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

ছবি

ক্যাম্পাসে ফিরেছেন ইবির সেই ভুক্তভোগী ছাত্রী

ছবি

ঢাবিতে ছাত্র অধিকারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ

ছবি

পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজি, হাতেনাতে আটক ঢাবির দুই ছাত্রলীগ নেতা

ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন

ছবি

ঢাবিতে ফারসি ভাষা ও পারস্যের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত

tab

ক্যাম্পাস

ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত : তদন্ত কমিটি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় ইবি কর্তৃপক্ষের অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া হলের প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটর দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।

প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর হাইকোর্ট আগামীকাল বুধবার আদেশের জন্য দিন রেখেছেন। পাশাপাশি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও আইনের অধীনে প্রণীত বিধি-প্রবিধানমালা সংগ্রহ করে তা দেখাতে এবং ইবির কোনো আইনজীবী থাকলে তাকে জানাতেও বলেছেন আদালত।

এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ইবির সাবেক শিক্ষার্থী গাজী মো. মহসীন।

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দিয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন, নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ওই নির্যাতনে জড়িত বলে ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তাবাসসুম নামের যে দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে রাখাসহ কয়েক দফা নির্দেশ দেন।

তিন সদস্যের কমিটিতে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা, জেলা জজ মনোনীত বিচার বিভাগীয় একজন কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপককে রাখতে বলা হয়। কমিটির প্রতিবেদন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে জমা দিতে বলা হয়। এ ছাড়া ওই ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ পৃথক প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় আদালতে দাখিল করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। পরে আদালতে প্রতিবেদন দুটির অংশবিশেষ পড়ে শোনান তিনি। রিটের পক্ষে গাজী মো. মহসীন শুনানিতে ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ফুলপরীকে র‍্যাগিং, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নির্দেশদাতা এবং ওই পাশবিক, অমানবিক ও ন্যক্করজনক ঘটনা সংঘটনের হুকুমদাতা। ওই অমানবিক, পাশবিক, ন্যক্করজনক, জঘন্য ঘটনার সঙ্গে হালিমা আক্তার মুন্নী, ইশরাত জাহান মীম, তাবাসসুম ইসলাম, ময়াবিয়া জাহান জড়িত এবং তাঁদের দ্বারা ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে। তাঁরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ফুলপরীকে পাশবিক কায়দায় অমানবিকভাবে নির্যাতন করেন।

ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসেছে। আর বলা হয়, সরাসরি নির্যাতন করেন হালিমা আক্তার মুন্নী, ইশরাত জাহান মীম, তাবাসসুম ইসলাম ও ময়াবিয়া। তাবাসুমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রতীয়মান হয় যে ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ডাইনিংয়ে ফুলপরীর ওপর পাশবিক নির্যাতনের সময় উর্মি ও মীম ভিডিও ধারণ করেন। তবে কোনো ভিডিও রেকর্ড পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গণরুমে উপস্থিত ছাত্রীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আল আমিন কর্তৃক ফুলপরীকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির ভাষ্য, তাবাসসুম ফুলপরীকে ৮ ফেব্রুয়ারি দেখা করতে বলেন। ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে দেখা করে তাবাসসুম এটিকে বেয়াদবি হিসেবে মনে করেন। এ কারণে তাবাসসুম ব্যক্তিগতভাবে ফুলপরীর ওপর রাগান্বিত হন। এটিই তাবাসসুম প্রচার করেন, ফুলপরী সিনিয়রদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছেন। এ থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়।

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, তাবাসসুমের নেতৃত্বে ১০৫ নম্বর রুমে পিংকীর উপস্থিতিতে ফুলপরীকে ১১ ফেব্রুয়ারি রাত আটটায় অন্য মেয়েদের উপস্থিতিতে গণরুমে হেনস্তা করা হয়। আজেবাজে কথা বলা হয়। পরবর্তী সময়ে অন্তরার উপস্থিতিতে রাত নয়টার দিকে ৩০৬ রুমে (ফুলপরীর বক্তব্যে গণরুম) নিয়ে ফুলপরীকে মেয়েদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ গালিগালাজ এবং আজেবাজে কথা বলে মানসিক নির্যাতন করা হয়। এমনকি সেই রাতে ৩০৬ নম্বর রুমে থাকা মেয়েদের প্রত্যেককে ফুলপরীকে একটা করে চড় মারতে নির্দেশ দেন অন্তরা। ফুলপরীর মুঠোফোন কেড়ে নেন লিমা ও তাবাসসুম। নির্যাতনের একপর্যায়ে ফুলপরী অন্তরার পা ধরতে বাধ্য হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফুলপরী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। অন্তরার নির্দেশে তাঁকে পাহারা দিয়ে রাখা হয়।

অন্তরার জোরজবরদস্তির কারণে প্রভোস্ট ফুলপরীকে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেন বলে তিন সদস্যের কমিটির প্রতিবেদনে এসেছে। বলা হয়েছে, এরপর প্রভোস্ট হলে উপস্থিত থাকা অবস্থায়ই অন্তরা, তাবাসসুম, মীম, উর্মি, ময়াবিয়াসহ অন্যান্য মেয়েরা ফুলপরীকে হাত ধরে টানাটানি করে হেনস্থা করেন। পরে ফুলপরীকে প্রভোস্ট শামসুল আলম বরাবর মুচলেখা দিতে বাধ্য করা হয়।

২০ ফেব্রুয়ারি ফুলপরীর জবানবন্দি গ্রহণের সময় তাঁর বাঁ গালে কালো দাগ দেখা যায় বলে প্রতিবেদনে এসেছে। প্রতিবেদনের ভাষ্য, হলের প্রভোস্ট শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্টার আবদুর রাজ্জাক, শাখার কর্মকর্তা হামিদা খাতুন, আয়া, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউস টিউটর মৌমিতা আক্তার ও সহকারী অধ্যাপক ইশরাত জাহানের দায়িত্বে চরম অবহেলা ও ফুলপরী ইস্যুতে গাফলতি ছিল বলে প্রতীয়মান হয়।

back to top