শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে কারাবাসে,অপরাধ জগতের উত্থান
সুইডেন আসলাম’ নামের উৎপত্তি, অপরাধের ধারাবাহিকতা এবং কারাবাস
শেখ মো. আসলাম, যিনি অপরাধজগতের আলোচিত নাম ‘সুইডেন আসলাম’ নামে পরিচিত, পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের একজন ছিলেন। ২৭ বছর কারাভোগের পর বুধবার তিনি মুক্তি পেলেন গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের ফলে এ মুক্তি ঘটেছে বলে জানা গেছে।
জেলার লুৎফর রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ৯টায় কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে মুক্তি পান সুইডেন আসলাম। কারাগারের বাইরে অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের সঙ্গে তিনি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন।
শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে কারাবাসে
১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে যুবলীগের এক নেতাকে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার হন সুইডেন আসলাম। গ্রেপ্তারের সময় তিনি ছিলেন ৩৫ বছরের যুবক, যিনি অপরাধ জগতে ‘সুইডেন আসলাম’ নামে সুপরিচিত ছিলেন। রাজধানী ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে নব্বইয়ের দশকে তাঁর নাম ছিল ভীতিকর এবং অপরাধীদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানীয়।
সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি খুন, অপহরণ, এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা ছিল। ফার্মগেইট এলাকা থেকে শুরু করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তাঁর অপরাধ কার্যক্রমের প্রভাব ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। তেজগাঁওয়ের যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান গালিব হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার হন তিনি, যা ছিল তাঁর দীর্ঘ কারাজীবনের সূচনা।
অপরাধ জগতের উত্থান
সুইডেন আসলামের উত্থানের শুরু হয় নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে। আসলামের পরিবার ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার আলগা ইউনিয়নের সাঁথিয়া গ্রামের হলেও, তাঁরা বসবাস করতেন ঢাকার ইন্দিরা রোডে। ফার্মগেইট এলাকার রড-সিমেন্টের ব্যবসায়ী বাবার সন্তান হিসেবে বড় হয়েছিলেন আসলাম। কৈশোরে তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হওয়ার পরপরই তিনি ফার্মগেইটে অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়ে ওঠেন।
অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিক কামরুল হাসান তাঁর একটি লেখায় উল্লেখ করেন, এইচ এম এরশাদের শাসনামলে আসলামের উত্থান শুরু হয়েছিল। ফার্মগেইটের নিউ স্টার হোটেল থেকে আজাদ ও বাপ্পী নামে দুই সহোদরকে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখার পর আসলামের নাম ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে তিনি ঢাকার অপরাধ জগতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন।
‘সুইডেন আসলাম’ নামের উৎপত্তি
আসলামের নাম ‘সুইডেন আসলাম’ হওয়ার পেছনের গল্পও কম রোমাঞ্চকর নয়। ফার্মগেইট এলাকায় তখন আরেক সন্ত্রাসী ‘চাইনিজ’ নামে পরিচিত ছিল, যার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে আসলাম বিয়ে করেন তার সুইডেন প্রবাসী বোন ইতিকে। শাকিল নামে এক কিশোরকে হত্যার পর আসলাম সুইডেনে চলে যান। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি নিজের সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন এবং অপরাধ জগতের শীর্ষে উঠতে শুরু করেন। সুইডেন থেকে আসার কারণে তাঁর নাম হয়ে যায় ‘সুইডেন আসলাম’।
অপরাধের ধারাবাহিকতা এবং কারাবাস
সুইডেন আসলামের অপরাধের ধারাবাহিকতায় রয়েছে একাধিক হত্যা ও অপরাধ। ১৯৯৫ সালে পুরান ঢাকার সন্ত্রাসী আগা শামীমের আস্তানায় মামুনকে হত্যা করেন তিনি। এরপর তিনি একের পর এক হত্যাকাণ্ডে জড়িত হন। সুইডেন আসলামের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বিপুল, কিসলু, আসমা, এবং রানাসহ বিভিন্ন অপরাধীর হত্যাকাণ্ড। নিজের অপরাধ জগতের সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে তিনি কাজ করতেন পিচ্চি হান্নান, সুব্রত বাইন, এবং টিক্কার সঙ্গে।
১৯৯৭ সালে গ্রেপ্তার হলেও কারাগারে থেকেও সুইডেন আসলাম তাঁর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তিনি এসব পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব মামলা ছিল, সেগুলোর সাক্ষীদের হুমকি দেওয়া হত, ফলে বেশিরভাগ মামলাই তিনি খালাস পেয়ে যেতেন।
২৭ বছরের বন্দিদশার সমাপ্তি
১৯৯৭ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগ করেন সুইডেন আসলাম। তেজগাঁওয়ের যুবলীগ নেতা গালিব হত্যাকাণ্ডের মামলায় তিনি আটক ছিলেন। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর এই মামলায় জামিন নিয়ে অবশেষে মুক্তি পেলেন তিনি।
সুইডেন আসলামের মুক্তির ফলে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুরনো দিনের আলোচিত ঘটনাগুলো আবার নতুন করে সামনে এসেছে। ৬২ বছর বয়সে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পর তিনি কী করবেন বা কোথায় যাবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে তাঁর মুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মহলে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে কারাবাসে,অপরাধ জগতের উত্থান
সুইডেন আসলাম’ নামের উৎপত্তি, অপরাধের ধারাবাহিকতা এবং কারাবাস
বৃহস্পতিবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
শেখ মো. আসলাম, যিনি অপরাধজগতের আলোচিত নাম ‘সুইডেন আসলাম’ নামে পরিচিত, পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের একজন ছিলেন। ২৭ বছর কারাভোগের পর বুধবার তিনি মুক্তি পেলেন গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের ফলে এ মুক্তি ঘটেছে বলে জানা গেছে।
জেলার লুৎফর রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ৯টায় কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে মুক্তি পান সুইডেন আসলাম। কারাগারের বাইরে অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের সঙ্গে তিনি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন।
শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে কারাবাসে
১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে যুবলীগের এক নেতাকে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার হন সুইডেন আসলাম। গ্রেপ্তারের সময় তিনি ছিলেন ৩৫ বছরের যুবক, যিনি অপরাধ জগতে ‘সুইডেন আসলাম’ নামে সুপরিচিত ছিলেন। রাজধানী ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে নব্বইয়ের দশকে তাঁর নাম ছিল ভীতিকর এবং অপরাধীদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানীয়।
সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি খুন, অপহরণ, এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা ছিল। ফার্মগেইট এলাকা থেকে শুরু করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তাঁর অপরাধ কার্যক্রমের প্রভাব ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। তেজগাঁওয়ের যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান গালিব হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার হন তিনি, যা ছিল তাঁর দীর্ঘ কারাজীবনের সূচনা।
অপরাধ জগতের উত্থান
সুইডেন আসলামের উত্থানের শুরু হয় নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে। আসলামের পরিবার ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার আলগা ইউনিয়নের সাঁথিয়া গ্রামের হলেও, তাঁরা বসবাস করতেন ঢাকার ইন্দিরা রোডে। ফার্মগেইট এলাকার রড-সিমেন্টের ব্যবসায়ী বাবার সন্তান হিসেবে বড় হয়েছিলেন আসলাম। কৈশোরে তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হওয়ার পরপরই তিনি ফার্মগেইটে অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়ে ওঠেন।
অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিক কামরুল হাসান তাঁর একটি লেখায় উল্লেখ করেন, এইচ এম এরশাদের শাসনামলে আসলামের উত্থান শুরু হয়েছিল। ফার্মগেইটের নিউ স্টার হোটেল থেকে আজাদ ও বাপ্পী নামে দুই সহোদরকে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখার পর আসলামের নাম ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে তিনি ঢাকার অপরাধ জগতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন।
‘সুইডেন আসলাম’ নামের উৎপত্তি
আসলামের নাম ‘সুইডেন আসলাম’ হওয়ার পেছনের গল্পও কম রোমাঞ্চকর নয়। ফার্মগেইট এলাকায় তখন আরেক সন্ত্রাসী ‘চাইনিজ’ নামে পরিচিত ছিল, যার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে আসলাম বিয়ে করেন তার সুইডেন প্রবাসী বোন ইতিকে। শাকিল নামে এক কিশোরকে হত্যার পর আসলাম সুইডেনে চলে যান। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি নিজের সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন এবং অপরাধ জগতের শীর্ষে উঠতে শুরু করেন। সুইডেন থেকে আসার কারণে তাঁর নাম হয়ে যায় ‘সুইডেন আসলাম’।
অপরাধের ধারাবাহিকতা এবং কারাবাস
সুইডেন আসলামের অপরাধের ধারাবাহিকতায় রয়েছে একাধিক হত্যা ও অপরাধ। ১৯৯৫ সালে পুরান ঢাকার সন্ত্রাসী আগা শামীমের আস্তানায় মামুনকে হত্যা করেন তিনি। এরপর তিনি একের পর এক হত্যাকাণ্ডে জড়িত হন। সুইডেন আসলামের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বিপুল, কিসলু, আসমা, এবং রানাসহ বিভিন্ন অপরাধীর হত্যাকাণ্ড। নিজের অপরাধ জগতের সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে তিনি কাজ করতেন পিচ্চি হান্নান, সুব্রত বাইন, এবং টিক্কার সঙ্গে।
১৯৯৭ সালে গ্রেপ্তার হলেও কারাগারে থেকেও সুইডেন আসলাম তাঁর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তিনি এসব পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব মামলা ছিল, সেগুলোর সাক্ষীদের হুমকি দেওয়া হত, ফলে বেশিরভাগ মামলাই তিনি খালাস পেয়ে যেতেন।
২৭ বছরের বন্দিদশার সমাপ্তি
১৯৯৭ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগ করেন সুইডেন আসলাম। তেজগাঁওয়ের যুবলীগ নেতা গালিব হত্যাকাণ্ডের মামলায় তিনি আটক ছিলেন। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর এই মামলায় জামিন নিয়ে অবশেষে মুক্তি পেলেন তিনি।
সুইডেন আসলামের মুক্তির ফলে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুরনো দিনের আলোচিত ঘটনাগুলো আবার নতুন করে সামনে এসেছে। ৬২ বছর বয়সে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পর তিনি কী করবেন বা কোথায় যাবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে তাঁর মুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মহলে উত্তেজনা বিরাজ করছে।