alt

নগর-মহানগর

গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব অস্বীকার নয়, রাষ্ট্রীয় দমননীতির অংশ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে গুম: কমিশন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য চার ধরনের পরিণতি হয়েছিল বলে জানিয়েছে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে কমিশনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান কমিশনের প্রধান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কমিশনে জমা অভিযোগগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, গুমের শিকার ব্যক্তিদের চারটি সম্ভাব্য পরিণতি হয়েছে। সেগুলো হলো—ভুক্তভোগীকে হত্যা, বিচারের আগেই গণমাধ্যমে উপস্থাপন করে সাধারণত জঙ্গি তকমা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো, সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা এবং অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া।

৪ জুন প্রধান উপদেষ্টার কাছে কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ও ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও অপরাধীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় বহু প্রমাণ ধ্বংস হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ভীতিকর পরিবেশের মধ্যেও অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা জানাতে সাহস করেছেন। গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব এখন অস্বীকার করা যাচ্ছে না। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা কিছু আটক কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন এবং ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শুনেছেন, যা গণমাধ্যমের কল্যাণে বিশ্ববাসী দেখেছে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর গঠিত গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, শনাক্তকরণ ও পরিস্থিতি নির্ধারণে কাজ করছে। এ পর্যন্ত দেশে ১৬টি গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করেছে কমিশন। বিভিন্ন সময় তথ্য পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক অভিযানও চালানো হয়েছে। অভিযোগ থেকে ১৩১টির বিষয়ে আইন মোতাবেক এফআইআর বা জিডি রেকর্ড করে পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে প্রায় ১ হাজার ৮৫০ অভিযোগ বিশ্লেষণ করে ২৫৩ জন ভুক্তভোগীর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তিনটি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়—গুমের সময় সমসাময়িক প্রমাণ, ফেরার সময় রাষ্ট্রীয় সংস্থার গ্রেপ্তার দেখানো এবং জীবিত ফিরে আসায় গোপন আটক কেন্দ্রের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা। তিনটি পর্যায়ে অকাট্য প্রমাণ মিলেছে।

কমিশনপ্রধান বলেন, ২৫৩ জনের একটি তথ্যভিত্তিক দলিল রয়েছে, যাঁরা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসলেও অভিজ্ঞতায় সাদৃশ্য রয়েছে। এটি কাকতালীয় বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং সাংগঠনিক ও পদ্ধতিগত কাঠামোর ইঙ্গিত দেয়। এতে স্পষ্ট হয়, গুম একটি সুশৃঙ্খল প্রাতিষ্ঠানিক রূপে পরিচালিত হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক দমন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন ও শাসন দীর্ঘায়িত করা। মেধাবী শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ সাধারণ মানুষ এর শিকার হয়েছেন। ফৌজদারি বিচারব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় ভারতীয় বাহিনীর কাছেও তুলে দেওয়া হয়েছে।

২৫৩ জনের অভিজ্ঞতা এক দশকেরও বেশি সময়জুড়ে বিস্তৃত। বয়স, পেশা ও সময়কাল ভিন্ন হলেও অভিজ্ঞতায় সাদৃশ্য রয়েছে। বেশিরভাগই বিরোধী দলের বা ভিন্নমতের সমর্থক ছিলেন। একই ধরনের নির্যাতন, প্রচার, অভিযোগ ও ভাষায় বর্ণনা তাদের অভিজ্ঞতাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে তুলে ধরে। এটি কোনো জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানে বিচ্ছিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক দমনযন্ত্র।

কমিশন জানিয়েছে, তাদের কাছে জমা ৮১ শতাংশ অভিযোগ জীবিত ভুক্তভোগীদের এবং ১৯ শতাংশ অভিযোগ ফেরত না আসা ব্যক্তিদের। এবারের প্রতিবেদনে গুম থেকে না ফেরার ১২ জনের বিষয়ে অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে। তাঁদের গুমের জন্য কারা দায়ী, কমিশন তা প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। আরও অনেক গুমের ঘটনায় অগ্রগতি থাকলেও এখনই তথ্য প্রকাশ সম্ভব নয়। কারণ, কললিস্ট না পাওয়া ও তথ্যের ঘাটতির কারণে বিলম্ব হচ্ছে।

দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে কমিশন দুটি সুপারিশ দিয়েছে। এক, সন্ত্রাসবিরোধী মামলার অপব্যবহার ঠেকাতে সেগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেওয়া। দুই, বর্তমান ‘কাউন্টার টেররিজম মেথড’ ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মতো উপযোগী পদ্ধতি অনুসন্ধান করা।

কমিশনপ্রধান বলেন, সন্ত্রাসবাদ একটি বাস্তব হুমকি। তবে এই হুমকি মোকাবিলায় রাষ্ট্রের উচিত মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি ও আইনসম্মত প্রক্রিয়ায় অটল থাকা। যখন রাষ্ট্র সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারণাকে রাজনৈতিক দমনের ঢাল বানায়, তখন আইনের শাসন, প্রতিষ্ঠান ও জনগণের বিশ্বাস ভেঙে পড়ে।

ছবি

পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবির পর সশস্ত্র হামলায় রক্তাক্ত পল্লবীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

ছবি

পুরান ঢাকার নৃশংস হত্যার পর পল্লবীতেও চাঁদাবাজদের হামলা, আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা

ছবি

যাত্রাবাড়ীতে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ শিশুটিও মারা গেল

ছবি

‘স্বামীর’ অঙ্গ কাটার অভিযোগে গ্রেপ্তার নারী থানায় বিষপান করে মারা গেলেন

ছবি

পুরান ঢাকায় হত্যাকাণ্ড ও অস্ত্র মামলায় মহিন ও রবিনের রিমান্ড

ছবি

ভারত ও বাংলাদেশ অভিন্ন বৌদ্ধ ঐতিহ্যের অধিকারী : প্রণয় ভার্মা

ছবি

শাহজালাল বিমানবন্দরে নেপালগামী ফ্লাইটে বোমার ভুয়া খবর, আতঙ্কের পর স্বাভাবিক উড্ডয়ন

ছবি

সূত্রাপুরে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ একই পরিবারের ৫ জন

ছবি

লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের হাতে নির্যাতিত দুই প্রবাসী, মুক্তিপণে গ্রেপ্তার দুইজন

ছবি

সংখ্যালঘুদের বাদ রেখে সংস্কার কার্যক্রম, সবচেয়ে হতাশাজনক’ — নির্মল রোজারিও

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ক্লাসে ফেরার নির্দেশ, হোস্টেলও খুলছে ১১ জুলাই

ছবি

দ্বিতীয় ধাপের টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ আহতরা, রোববার দেওয়ার আশ্বাস

ছবি

বৃষ্টি-জলে রাজধানীতে ভোগান্তি, জলাবদ্ধতা ঠেকাতে সতর্ক সিটি করপোরেশন

ছবি

গাজীপুরে ভবনের ছাদে পোল্ট্রি খামার: পরিবেশ দূষণের দায়ে দন্ড

ছবি

ডিপজলের বিরুদ্ধে নারীকে নির্যাতন ও অ্যাসিড নিক্ষেপের অভিযোগে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ

যাত্রাবাড়ীতে বৃদ্ধ দম্পতিকে মারধর করে ডাকাতি, স্বামীর মৃত্যু

ছবি

রাজস্ব আহরণে স্থবিরতা কাটাতে কর্মীদের অভয় দিলেন আবদুর রহমান খান

ছবি

হাইকোর্টের বেঞ্চ বিভাগীয় শহরে স্থানান্তরের উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন

ছবি

তিন দাবিতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ঘেরাও ইউনানী শিক্ষার্থীদের

ছবি

কাউকে না জানিয়ে কুয়াকাটায় যাওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা ভোরে বাসায় ফিরলেন

ছবি

খিলক্ষেতে কভার্ড ভ্যানের চাপায় দুই পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিহত

ছবি

জুমার নামাজের কথা বলে বেরিয়ে আর ফেরেননি ব্যাংক কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান

ছবি

নতুন আতঙ্ক ‘মব সন্ত্রাস’, বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে: বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা

ছবি

বনানীতে হোটেলে নারীদের ওপর হামলা, নেতৃত্বে যুবদল নেতা—ভিডিও ভাইরাল

ছবি

বিদেশে নারী পাচারে জালিয়াতি, বিএমইটির কর্মকর্তাসহ ৯ জনের নামে দুদকের মামলা

ছবি

মাদক ও সন্ত্রাসে জড়িত টুন্ডা বাবুর বিরুদ্ধে ১০টির বেশি মামলা

ছবি

আশুরা উপলক্ষে নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের প্রস্তুতি, তাজিয়া মিছিলে কঠোর নজরদারি

ছবি

তেজগাঁওয়ে ছিনতাইয়ের নাটক: মানি এক্সচেঞ্জকর্মীসহ গ্রেপ্তার ৬

ছবি

হাটখোলায় রাসায়নিক গুদামে আগুন, ২ ঘন্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে

ছবি

ডিউটি না করায় ডিআইজি, ডিসিসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

ছবি

ঢাকায় প্রবাসী মনির ও পরিবারের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা, সন্দেহে আত্মীয় গ্রেপ্তার

ছবি

রাজধানীতে সন্ত্রাসী হামলায় বিএনপির ওয়ার্ড নেতার মৃত্যু

ছবি

দুর্নীতির বিরুদ্ধে গ্রীন ফোর্স বাংলাদেশের পথচলা শুরু

ছবি

দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে ডাকা হলো আহমেদ আকবর সোবহানকে, তারিক আহমেদ সিদ্দিকের সম্পদ অনুসন্ধানে নতুন মোড়

ছবি

‘শাটডাউন’ আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

ছবি

কমপ্লিট শাটডাউন’ চলাকালে এনবিআর সেবা অপরিহার্য ঘোষণা

tab

নগর-মহানগর

গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব অস্বীকার নয়, রাষ্ট্রীয় দমননীতির অংশ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে গুম: কমিশন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য চার ধরনের পরিণতি হয়েছিল বলে জানিয়েছে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে কমিশনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান কমিশনের প্রধান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কমিশনে জমা অভিযোগগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, গুমের শিকার ব্যক্তিদের চারটি সম্ভাব্য পরিণতি হয়েছে। সেগুলো হলো—ভুক্তভোগীকে হত্যা, বিচারের আগেই গণমাধ্যমে উপস্থাপন করে সাধারণত জঙ্গি তকমা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো, সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা এবং অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া।

৪ জুন প্রধান উপদেষ্টার কাছে কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ও ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও অপরাধীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় বহু প্রমাণ ধ্বংস হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ভীতিকর পরিবেশের মধ্যেও অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা জানাতে সাহস করেছেন। গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব এখন অস্বীকার করা যাচ্ছে না। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা কিছু আটক কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন এবং ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শুনেছেন, যা গণমাধ্যমের কল্যাণে বিশ্ববাসী দেখেছে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর গঠিত গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, শনাক্তকরণ ও পরিস্থিতি নির্ধারণে কাজ করছে। এ পর্যন্ত দেশে ১৬টি গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করেছে কমিশন। বিভিন্ন সময় তথ্য পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক অভিযানও চালানো হয়েছে। অভিযোগ থেকে ১৩১টির বিষয়ে আইন মোতাবেক এফআইআর বা জিডি রেকর্ড করে পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে প্রায় ১ হাজার ৮৫০ অভিযোগ বিশ্লেষণ করে ২৫৩ জন ভুক্তভোগীর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তিনটি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়—গুমের সময় সমসাময়িক প্রমাণ, ফেরার সময় রাষ্ট্রীয় সংস্থার গ্রেপ্তার দেখানো এবং জীবিত ফিরে আসায় গোপন আটক কেন্দ্রের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা। তিনটি পর্যায়ে অকাট্য প্রমাণ মিলেছে।

কমিশনপ্রধান বলেন, ২৫৩ জনের একটি তথ্যভিত্তিক দলিল রয়েছে, যাঁরা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসলেও অভিজ্ঞতায় সাদৃশ্য রয়েছে। এটি কাকতালীয় বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং সাংগঠনিক ও পদ্ধতিগত কাঠামোর ইঙ্গিত দেয়। এতে স্পষ্ট হয়, গুম একটি সুশৃঙ্খল প্রাতিষ্ঠানিক রূপে পরিচালিত হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক দমন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন ও শাসন দীর্ঘায়িত করা। মেধাবী শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ সাধারণ মানুষ এর শিকার হয়েছেন। ফৌজদারি বিচারব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় ভারতীয় বাহিনীর কাছেও তুলে দেওয়া হয়েছে।

২৫৩ জনের অভিজ্ঞতা এক দশকেরও বেশি সময়জুড়ে বিস্তৃত। বয়স, পেশা ও সময়কাল ভিন্ন হলেও অভিজ্ঞতায় সাদৃশ্য রয়েছে। বেশিরভাগই বিরোধী দলের বা ভিন্নমতের সমর্থক ছিলেন। একই ধরনের নির্যাতন, প্রচার, অভিযোগ ও ভাষায় বর্ণনা তাদের অভিজ্ঞতাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে তুলে ধরে। এটি কোনো জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানে বিচ্ছিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক দমনযন্ত্র।

কমিশন জানিয়েছে, তাদের কাছে জমা ৮১ শতাংশ অভিযোগ জীবিত ভুক্তভোগীদের এবং ১৯ শতাংশ অভিযোগ ফেরত না আসা ব্যক্তিদের। এবারের প্রতিবেদনে গুম থেকে না ফেরার ১২ জনের বিষয়ে অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে। তাঁদের গুমের জন্য কারা দায়ী, কমিশন তা প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। আরও অনেক গুমের ঘটনায় অগ্রগতি থাকলেও এখনই তথ্য প্রকাশ সম্ভব নয়। কারণ, কললিস্ট না পাওয়া ও তথ্যের ঘাটতির কারণে বিলম্ব হচ্ছে।

দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে কমিশন দুটি সুপারিশ দিয়েছে। এক, সন্ত্রাসবিরোধী মামলার অপব্যবহার ঠেকাতে সেগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেওয়া। দুই, বর্তমান ‘কাউন্টার টেররিজম মেথড’ ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মতো উপযোগী পদ্ধতি অনুসন্ধান করা।

কমিশনপ্রধান বলেন, সন্ত্রাসবাদ একটি বাস্তব হুমকি। তবে এই হুমকি মোকাবিলায় রাষ্ট্রের উচিত মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি ও আইনসম্মত প্রক্রিয়ায় অটল থাকা। যখন রাষ্ট্র সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারণাকে রাজনৈতিক দমনের ঢাল বানায়, তখন আইনের শাসন, প্রতিষ্ঠান ও জনগণের বিশ্বাস ভেঙে পড়ে।

back to top