৯ বছর আগে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যা মামলায় দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার হওয়া মতিঝিল থানা যুবলীগের সাবেক সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম টিপু একই কায়দায় খুন হলেন। টিপুকে হত্যায় ফের প্রকাশ্যে এলো আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ। একটি অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে, টেন্ডার, চাঁদাবাজি, এলাকা নিয়ন্ত্রণসহ নানা বিরোধের জেরে মিল্কির মতো টিপুও খুন হয়েছেন। এদিকে দুবাই ও ভারতে থাকা দু’জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নির্দেশে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তবে স্ত্রীর অভিযোগ কে বা কারা কয়েকদিন আগে টিপুকে মোবাইলে ফোন করে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন।
এদিকে টিপুকে হত্যার সময় হামলাকারী অস্ত্রধারীদের বেপরোয়া গুলিতে খুন হন সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী। টিপুকে লক্ষ্য করে গুলি করার সময় ওই কলেজছাত্রীর গায়ে গুলি লাগে।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাত সোয়া ১০টার দিকে নিজ গাড়িতে বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞাত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা এলোপাথাড়ি গুলি চালায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে লক্ষ্য করে। টিপুকে যখন হত্যার উদ্দেশে গুলি করে সন্ত্রাসীরা, সে সময় বদরুনন্নেছা কলেজ শিক্ষার্থী সামিয়া আফরান প্রীতিও মারা যান। হত্যায় সংশ্লিষ্টরা মাত্র ২০ সেকেন্ড সময় নিয়েছে এ জোড়া খুনে। মৃত্যু নিশ্চিত করেই অস্ত্রধারীরা পালিয়ে যায়। এ হত্যকান্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন মোড় দেখা দিয়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এ হত্যাকান্ডে ফের প্রকাশ্যে এলো বলেও মনে করছেন অনেকেই।
আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং আধিপত্য বিস্তারের কারণে জাহিদুল ইসলাম টিপু খুন হয়েছেন। যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এজন্য তিনি কারাবরণ করলেও পুলিশের চার্জশিটে তার নাম আসেনি। মিল্কি হত্যাকান্ডের পর তাকে দলীয় পদ হারাতে হয়েছে। কিন্তু প্রভাব কমেনি বরং পদে না থাকলেও আগের মতো সবকিছু ছিল টিপুর নিয়ন্ত্রণে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের নির্বাচনে গভনিং বডির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন টিপু। টিপু স্কুলের ভর্তিবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। এছাড়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে টিপুর ঘনিষ্ট সম্রাট গ্রেপ্তার হওয়ার পর মতিঝিল, খিলগাঁও, পল্টন শাজাহানপুর টিপুর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সবকিছু টিপুর নিয়ন্ত্রণে থাকায় অন্যগ্রুপ টিপুর ওপর ক্ষিপ্ত ছিল।
সূত্র জানিয়েছে, দুবাইয়ে আত্মগোপন করা ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম জিসান আহমেদ মন্টি ওরফে জিসানের নির্দেশেই মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে খুন করা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিকেরও যোগসাজশ রয়েছে। ফ্রিডম মানিক বর্তমানে ভারতে আত্মগোপন করে আছেন। মূলত মতিঝিল এলাকার টেন্ডারবাজি, মার্কেট নিয়ন্ত্রণ ও বাড়ি নির্মাণের চাঁদাবাজির পুরোটাই একক নিয়ন্ত্রণ করতেন টিপু। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারী ও টেন্ডারবাজির অভিযোগে ২০১৯ সালের অক্টোবে যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী স¤্রাট, যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ও ঠিকাদার জিকে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর একক নিয়ন্ত্রণ চলে আসে টিপুর হাতে। এর পাশাপাশি মতিঝিল ও পল্টন এলাকার দুই ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ এবং আবুল হোসেনের সঙ্গে টিপু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের টেন্ডারবাজি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, রেলওয়ে, কমলাপুর আইসিডি ডিপো, বিদ্যুৎ ভবন ও গণপূর্তের টেন্ডারবাজির একটি কমিশন বিদেশে আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও ফ্রিডম মানিককে দিতে হতো। গত ৩ বছর ধরে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কাছে এইসব টেন্ডারবাজির কোন কমিশন দেয়া হয়নি। এর জের ধরে টিপুর প্রতিপক্ষরা শক্তিশালী হয়। ওই শক্তিশালী গ্রুপটিকে দিয়ে জিসান ও ফ্রিডম মানিকের টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয় টিপু।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ২০১৬ সালে মতিঝিল এলাকায় যুবলীগ নেতা রিজভী হাসান বাবু ওরফে বোচা বাবু খুন হয়। বোচা বাবুর বাবা টিপুর ঘনিষ্ট বন্ধু। বোচা বাবু হত্যা মামলায় ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, মিল্কি হত্যা মামলার আসামি সুমনসহ ১০-১২ জন সবাই যুবলীগের নেতা-কর্মী। এই মামলায় ওমর ফারুকসহ সবাই চার্জশিটভুক্ত আসামি। সম্প্রতি একজন মন্ত্রীকে ওমর ফারুক সুপারিশ করান ওই মামলা থেকে তার নাম বাদ দেয়ার। কিন্তু তার নাম বাদ দেয়ায় বাধ সাধেন টিপু। বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান-ফ্রিডম মানিক-মোল্লা মাসুদ-ইখতিয়ার গ্রুপের কাছে যায়। এই শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের পক্ষ থেকে টিপুর সঙ্গে একাধিকবার কথোপথন হয়। টিপুকে অনুরোধ করা হয়, প্রয়োজনে মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য বোচা বাবুর বাবাকে নির্দেশ দেন। টিপু সেই অনুরোধ রাখেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ২০১৩ সালে মতিঝিল এজিবি কলোনির একটি সংযোগ সড়কের দুই পাশে অবৈধভাবে নির্মাণ করা টিনশেড মার্কেটটি সিটি করপোরেশন ভেঙে দেয়। মার্কেটটি সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মির্জা খোকন দেখভাল করতেন। ২০১৯ সালের পর টিপু সেখানে মার্কেট স্থাপন করে প্রায় ১০০ দোকান ভাড়া দেয়। ওই মার্কেটে টিপুর একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্না মাইক্রোবাস নিয়ে রেস্টুরেন্টের উদ্দেশে রওনা হন। মতিঝিল এজিবি কলোনিতে গ্রান্ড সুলতান নামে রেস্টুরেন্টে কাজ শেষে বাসার উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাত সোয়া ১০টার দিকে মানামা ভবনের বাটার দোকানের সামনে মাইক্রোবাসটি থামে। এ সময় রাস্তার বিপরীত পাশে মোটরসাইকেলে দুই জন অপেক্ষা করছিল। হেলমেট পরিহিত এক মোটরসাইকেল আরোহী থেমে থাকা মাইক্রোবাসের বামপাশে গিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। গুলিতে গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়।
যেভাবে হত্যা করা হয় টিপুকে
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত ঠিক ১০টা ২১ মিনিট ২০ সেকেন্ড। আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুর ব্যক্তিগত সাদা রঙের নোয়া মাইক্রোবাসটি যানজটে আটকা পড়ে শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটা শো-রুমের ঠিক সামনে। এটি খিলগাঁও রেলগেট অভিমুখে যাওয়ার রাস্তা। এর ১০ সেকেন্ড আগে বিপরীত দিকের রাস্তা ধরে উল্টোপথে একটি মোটরসাইকেল আসে। মোটরসাইকেলটি শাহজাহানপুর রেলওয়ে হাফেজিয়া সুন্নীয়া আলিম মাদ্রাসা ও এতিমখানার সামনে এসে ঘুরিয়ে আবার রাজারবাগ অভিমুখে দাঁড় করান চালক। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের পেছনে থাকা অস্ত্রধারী সড়ক বিভাজক পার হয়ে রাস্তার মাঝখানে অবস্থান নেন। এ সময় রাস্তায় খুব ধীরগতিতে গাড়ি চলছিল। ১০টা ২১ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে টিপুর গাড়ির বাম দিক দিয়ে একেবারে কাছে গিয়ে প্রথম গুলি ছোড়া হয়। আচমকা আক্রমণ দেখে টিপুর গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন চালক মুন্না। কিন্তু সামনে রিকশার জট থাকায় গাড়িটি বেশি দূর এগোতে পারেনি। গাড়ি থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়ায় হামলাকারী দৌড়ে সামনে এসে খুব কাছ থেকে গাড়ির সামনের আসনে বসে থাকা টিপুকে লক্ষ্য করে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। ওই সময় গাড়ির জানালার কাচ ভেদ করে গুলিবিদ্ধ হন টিপু। এ সময় আশপাশের লোকজন আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন। ১০ সেকেন্ড টিপুকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এরপর আশপাশে এলোপাতাড়ি কয়েকটি গুলি ছুড়তে দেখা যায়। পরে টিপুর গাড়ির সামনে দিয়ে আবার সড়ক বিভাজক পার হয়ে রাস্তার উল্টো পাশে মাদ্রাসার সামনে দাঁড়ানো মোটরসাইকেলের দিকে চলে যান হত্যাকারীরা। রাত ১০টা ২২ মিনিট ১০ সেকেন্ডে দেখা যায়, মাইক্রোবাসের পেছনের আসনে বসে থাকা দুজন গেট খুলে বাইরে এসে মোটরসাইকেলটিকে ধাওয়া দিলে হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়। এরপর মাইক্রোবাসটি ঘিরে ধীরে ধীরে লোকজন জড়ো হতে থাকে।
টিপুকে মারতে গিয়ে কলেজ শিক্ষার্থীকেও গুলি করেছে হামলাকারীরা
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, টিপুকে যখন গুলি করে তখন তার গাড়ির পাশে সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি। প্রীতি ঘটনার সময় তার বান্ধবীকে নিয়ে তিলপাপাড়ায় তাদের বাসায় ফিরছিল। অস্ত্রধারীরা যখন গুলি করে তখন প্রীতিও তার বান্ধবীকে বহনকরা রিকশাটি সামনে আসে। তাদের উপর দিয়ে টিপুকে গুলি চালালে তার একটি গুলি গিয়ে প্রীতির গায়ে লাগে। প্রীতির বান্ধবী রিকশা থেকে লাফিয়ে বাঁচলেও প্রীতি আর বাঁচতে পারেনি। গুলি লাগার কারণে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ সূত্র জানায়, নিহত টিপুর গলার ডান পাশে, বুকের বাম পাশে, বুকের বাম পাশের বগলের কাছাকাছি, পেটের মধ্যে নাভির নিচে, বাম কাঁধের উপরে, পিঠের বাম পাশের মাঝামাঝি স্থানে, পিঠের বাম পাশের কোমর বরাবর ও পিঠের ডান পাশের কোমরের ওপরসহ একাধিক স্থানে গুলির চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তকালে তার শরীরের ভিতর ৭টি গুলির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
ওদিকে শুরুর দিকে ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী প্রীতি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী তার শরীরে একটি গুলি ঢুকে অন্য দিক দিয়ে বের হয়ে গেছে। এতে তিনি নিহত হন।
জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত ১১, ১২, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি। তিনি বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমার মোবাইলে কল আসে। জানানো হয়, কে বা কারা আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে। ওর (টিপু) সঙ্গে ছিল মেরাজ (৫৫), আবুল কালাম (৬০) ও গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্না (৩৪)। গাড়িটা আমাদের নিজেদের। মতিঝিল এজিবি কলোনির গ্র্যান্ড সুলতান রেস্টুরেন্টের কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরছিল সবাই।’ টিপুর স্ত্রী জানান, তার স্বামী গত ১০ বছর ধরে বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে দলীয় কোন্দল ছিল। পাশাপাশি গত ৫ বছর ধরে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গর্ভনিং বডির সদস্য ছিলেন টিপু। মতিঝিল কাঁচাবাজারে গ্র্যান্ড সুলতান নামে তাদের একটি রেস্টুরেন্ট আছে। তার স্বামী ওই রেস্টুরেন্ট দেখাশোনা করতেন। চার-পাঁচদিন আগে টিপুকে মুঠোফোনে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘খিলগাঁও রেলগেটের আগে জাহিদুল ইসলাম টিপুকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি সিগন্যালে ছিল। সেই মুহূর্তে একজন দুষ্কৃতকারী হেলমেট ও মাস্ক পরা অবস্থায় মাইক্রোবাসটির বাম পাশ দিয়ে গুলি চালান। এতে জাহিদুল ইসলাম টিপু ও তার গাড়িচালক গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় মাইক্রোবাসের ডান পাশে রিকশায় প্রীতি নামে এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাদের আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক টিপু ও ওই শিক্ষার্থীকে মৃত ঘোষণা করেন।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় বেশকিছু ফুটপ্রিন্ট, আলামত ও সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছি। এছাড়া বেশকিছু মোটিভ র্যাবের কাছে এসেছে। সেগুলো পর্যালোচনা করছি। যিনি গুলি করেছেন, তাকেও সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। র্যাব ছাড়াও পুলিশের একাধিক ইউনিট কাজ করছে।’
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আ. আহাদ বলেন, ‘নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় তিনি অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করেন। নিহতের স্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে সন্দেহ করছেন না। তিনি শুধু বলেছেন, তার স্বামীকে দুষ্কৃতকারীরা হত্যা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে ১২ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়। ‘চার-পাঁচদিন আগে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে একটি নম্বর থেকে ফোন করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু টিপু কিংবা তার স্ত্রী ডলি পুলিশকে হুমকির বিষয়টি তখন জানাননি। তবে ওই নম্বরের সূত্র ধরে আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি।’ শুক্রবার (২৫ মার্চ) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাদ আছর এজিবি কলোনি মসজিদে টিপুর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে লাশ দাফনের জন্য ফেনীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
শুক্রবার, ২৫ মার্চ ২০২২
৯ বছর আগে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যা মামলায় দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার হওয়া মতিঝিল থানা যুবলীগের সাবেক সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম টিপু একই কায়দায় খুন হলেন। টিপুকে হত্যায় ফের প্রকাশ্যে এলো আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ। একটি অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে, টেন্ডার, চাঁদাবাজি, এলাকা নিয়ন্ত্রণসহ নানা বিরোধের জেরে মিল্কির মতো টিপুও খুন হয়েছেন। এদিকে দুবাই ও ভারতে থাকা দু’জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নির্দেশে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তবে স্ত্রীর অভিযোগ কে বা কারা কয়েকদিন আগে টিপুকে মোবাইলে ফোন করে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন।
এদিকে টিপুকে হত্যার সময় হামলাকারী অস্ত্রধারীদের বেপরোয়া গুলিতে খুন হন সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী। টিপুকে লক্ষ্য করে গুলি করার সময় ওই কলেজছাত্রীর গায়ে গুলি লাগে।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাত সোয়া ১০টার দিকে নিজ গাড়িতে বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞাত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা এলোপাথাড়ি গুলি চালায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে লক্ষ্য করে। টিপুকে যখন হত্যার উদ্দেশে গুলি করে সন্ত্রাসীরা, সে সময় বদরুনন্নেছা কলেজ শিক্ষার্থী সামিয়া আফরান প্রীতিও মারা যান। হত্যায় সংশ্লিষ্টরা মাত্র ২০ সেকেন্ড সময় নিয়েছে এ জোড়া খুনে। মৃত্যু নিশ্চিত করেই অস্ত্রধারীরা পালিয়ে যায়। এ হত্যকান্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন মোড় দেখা দিয়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এ হত্যাকান্ডে ফের প্রকাশ্যে এলো বলেও মনে করছেন অনেকেই।
আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং আধিপত্য বিস্তারের কারণে জাহিদুল ইসলাম টিপু খুন হয়েছেন। যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এজন্য তিনি কারাবরণ করলেও পুলিশের চার্জশিটে তার নাম আসেনি। মিল্কি হত্যাকান্ডের পর তাকে দলীয় পদ হারাতে হয়েছে। কিন্তু প্রভাব কমেনি বরং পদে না থাকলেও আগের মতো সবকিছু ছিল টিপুর নিয়ন্ত্রণে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের নির্বাচনে গভনিং বডির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন টিপু। টিপু স্কুলের ভর্তিবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। এছাড়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে টিপুর ঘনিষ্ট সম্রাট গ্রেপ্তার হওয়ার পর মতিঝিল, খিলগাঁও, পল্টন শাজাহানপুর টিপুর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সবকিছু টিপুর নিয়ন্ত্রণে থাকায় অন্যগ্রুপ টিপুর ওপর ক্ষিপ্ত ছিল।
সূত্র জানিয়েছে, দুবাইয়ে আত্মগোপন করা ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম জিসান আহমেদ মন্টি ওরফে জিসানের নির্দেশেই মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে খুন করা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিকেরও যোগসাজশ রয়েছে। ফ্রিডম মানিক বর্তমানে ভারতে আত্মগোপন করে আছেন। মূলত মতিঝিল এলাকার টেন্ডারবাজি, মার্কেট নিয়ন্ত্রণ ও বাড়ি নির্মাণের চাঁদাবাজির পুরোটাই একক নিয়ন্ত্রণ করতেন টিপু। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারী ও টেন্ডারবাজির অভিযোগে ২০১৯ সালের অক্টোবে যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী স¤্রাট, যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ও ঠিকাদার জিকে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর একক নিয়ন্ত্রণ চলে আসে টিপুর হাতে। এর পাশাপাশি মতিঝিল ও পল্টন এলাকার দুই ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ এবং আবুল হোসেনের সঙ্গে টিপু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের টেন্ডারবাজি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, রেলওয়ে, কমলাপুর আইসিডি ডিপো, বিদ্যুৎ ভবন ও গণপূর্তের টেন্ডারবাজির একটি কমিশন বিদেশে আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও ফ্রিডম মানিককে দিতে হতো। গত ৩ বছর ধরে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কাছে এইসব টেন্ডারবাজির কোন কমিশন দেয়া হয়নি। এর জের ধরে টিপুর প্রতিপক্ষরা শক্তিশালী হয়। ওই শক্তিশালী গ্রুপটিকে দিয়ে জিসান ও ফ্রিডম মানিকের টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয় টিপু।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ২০১৬ সালে মতিঝিল এলাকায় যুবলীগ নেতা রিজভী হাসান বাবু ওরফে বোচা বাবু খুন হয়। বোচা বাবুর বাবা টিপুর ঘনিষ্ট বন্ধু। বোচা বাবু হত্যা মামলায় ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, মিল্কি হত্যা মামলার আসামি সুমনসহ ১০-১২ জন সবাই যুবলীগের নেতা-কর্মী। এই মামলায় ওমর ফারুকসহ সবাই চার্জশিটভুক্ত আসামি। সম্প্রতি একজন মন্ত্রীকে ওমর ফারুক সুপারিশ করান ওই মামলা থেকে তার নাম বাদ দেয়ার। কিন্তু তার নাম বাদ দেয়ায় বাধ সাধেন টিপু। বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান-ফ্রিডম মানিক-মোল্লা মাসুদ-ইখতিয়ার গ্রুপের কাছে যায়। এই শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের পক্ষ থেকে টিপুর সঙ্গে একাধিকবার কথোপথন হয়। টিপুকে অনুরোধ করা হয়, প্রয়োজনে মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য বোচা বাবুর বাবাকে নির্দেশ দেন। টিপু সেই অনুরোধ রাখেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ২০১৩ সালে মতিঝিল এজিবি কলোনির একটি সংযোগ সড়কের দুই পাশে অবৈধভাবে নির্মাণ করা টিনশেড মার্কেটটি সিটি করপোরেশন ভেঙে দেয়। মার্কেটটি সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মির্জা খোকন দেখভাল করতেন। ২০১৯ সালের পর টিপু সেখানে মার্কেট স্থাপন করে প্রায় ১০০ দোকান ভাড়া দেয়। ওই মার্কেটে টিপুর একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্না মাইক্রোবাস নিয়ে রেস্টুরেন্টের উদ্দেশে রওনা হন। মতিঝিল এজিবি কলোনিতে গ্রান্ড সুলতান নামে রেস্টুরেন্টে কাজ শেষে বাসার উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাত সোয়া ১০টার দিকে মানামা ভবনের বাটার দোকানের সামনে মাইক্রোবাসটি থামে। এ সময় রাস্তার বিপরীত পাশে মোটরসাইকেলে দুই জন অপেক্ষা করছিল। হেলমেট পরিহিত এক মোটরসাইকেল আরোহী থেমে থাকা মাইক্রোবাসের বামপাশে গিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। গুলিতে গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়।
যেভাবে হত্যা করা হয় টিপুকে
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত ঠিক ১০টা ২১ মিনিট ২০ সেকেন্ড। আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুর ব্যক্তিগত সাদা রঙের নোয়া মাইক্রোবাসটি যানজটে আটকা পড়ে শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটা শো-রুমের ঠিক সামনে। এটি খিলগাঁও রেলগেট অভিমুখে যাওয়ার রাস্তা। এর ১০ সেকেন্ড আগে বিপরীত দিকের রাস্তা ধরে উল্টোপথে একটি মোটরসাইকেল আসে। মোটরসাইকেলটি শাহজাহানপুর রেলওয়ে হাফেজিয়া সুন্নীয়া আলিম মাদ্রাসা ও এতিমখানার সামনে এসে ঘুরিয়ে আবার রাজারবাগ অভিমুখে দাঁড় করান চালক। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের পেছনে থাকা অস্ত্রধারী সড়ক বিভাজক পার হয়ে রাস্তার মাঝখানে অবস্থান নেন। এ সময় রাস্তায় খুব ধীরগতিতে গাড়ি চলছিল। ১০টা ২১ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে টিপুর গাড়ির বাম দিক দিয়ে একেবারে কাছে গিয়ে প্রথম গুলি ছোড়া হয়। আচমকা আক্রমণ দেখে টিপুর গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন চালক মুন্না। কিন্তু সামনে রিকশার জট থাকায় গাড়িটি বেশি দূর এগোতে পারেনি। গাড়ি থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়ায় হামলাকারী দৌড়ে সামনে এসে খুব কাছ থেকে গাড়ির সামনের আসনে বসে থাকা টিপুকে লক্ষ্য করে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। ওই সময় গাড়ির জানালার কাচ ভেদ করে গুলিবিদ্ধ হন টিপু। এ সময় আশপাশের লোকজন আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন। ১০ সেকেন্ড টিপুকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এরপর আশপাশে এলোপাতাড়ি কয়েকটি গুলি ছুড়তে দেখা যায়। পরে টিপুর গাড়ির সামনে দিয়ে আবার সড়ক বিভাজক পার হয়ে রাস্তার উল্টো পাশে মাদ্রাসার সামনে দাঁড়ানো মোটরসাইকেলের দিকে চলে যান হত্যাকারীরা। রাত ১০টা ২২ মিনিট ১০ সেকেন্ডে দেখা যায়, মাইক্রোবাসের পেছনের আসনে বসে থাকা দুজন গেট খুলে বাইরে এসে মোটরসাইকেলটিকে ধাওয়া দিলে হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়। এরপর মাইক্রোবাসটি ঘিরে ধীরে ধীরে লোকজন জড়ো হতে থাকে।
টিপুকে মারতে গিয়ে কলেজ শিক্ষার্থীকেও গুলি করেছে হামলাকারীরা
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, টিপুকে যখন গুলি করে তখন তার গাড়ির পাশে সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি। প্রীতি ঘটনার সময় তার বান্ধবীকে নিয়ে তিলপাপাড়ায় তাদের বাসায় ফিরছিল। অস্ত্রধারীরা যখন গুলি করে তখন প্রীতিও তার বান্ধবীকে বহনকরা রিকশাটি সামনে আসে। তাদের উপর দিয়ে টিপুকে গুলি চালালে তার একটি গুলি গিয়ে প্রীতির গায়ে লাগে। প্রীতির বান্ধবী রিকশা থেকে লাফিয়ে বাঁচলেও প্রীতি আর বাঁচতে পারেনি। গুলি লাগার কারণে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ সূত্র জানায়, নিহত টিপুর গলার ডান পাশে, বুকের বাম পাশে, বুকের বাম পাশের বগলের কাছাকাছি, পেটের মধ্যে নাভির নিচে, বাম কাঁধের উপরে, পিঠের বাম পাশের মাঝামাঝি স্থানে, পিঠের বাম পাশের কোমর বরাবর ও পিঠের ডান পাশের কোমরের ওপরসহ একাধিক স্থানে গুলির চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তকালে তার শরীরের ভিতর ৭টি গুলির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
ওদিকে শুরুর দিকে ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী প্রীতি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী তার শরীরে একটি গুলি ঢুকে অন্য দিক দিয়ে বের হয়ে গেছে। এতে তিনি নিহত হন।
জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত ১১, ১২, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি। তিনি বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমার মোবাইলে কল আসে। জানানো হয়, কে বা কারা আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে। ওর (টিপু) সঙ্গে ছিল মেরাজ (৫৫), আবুল কালাম (৬০) ও গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্না (৩৪)। গাড়িটা আমাদের নিজেদের। মতিঝিল এজিবি কলোনির গ্র্যান্ড সুলতান রেস্টুরেন্টের কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরছিল সবাই।’ টিপুর স্ত্রী জানান, তার স্বামী গত ১০ বছর ধরে বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে দলীয় কোন্দল ছিল। পাশাপাশি গত ৫ বছর ধরে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গর্ভনিং বডির সদস্য ছিলেন টিপু। মতিঝিল কাঁচাবাজারে গ্র্যান্ড সুলতান নামে তাদের একটি রেস্টুরেন্ট আছে। তার স্বামী ওই রেস্টুরেন্ট দেখাশোনা করতেন। চার-পাঁচদিন আগে টিপুকে মুঠোফোনে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘খিলগাঁও রেলগেটের আগে জাহিদুল ইসলাম টিপুকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি সিগন্যালে ছিল। সেই মুহূর্তে একজন দুষ্কৃতকারী হেলমেট ও মাস্ক পরা অবস্থায় মাইক্রোবাসটির বাম পাশ দিয়ে গুলি চালান। এতে জাহিদুল ইসলাম টিপু ও তার গাড়িচালক গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় মাইক্রোবাসের ডান পাশে রিকশায় প্রীতি নামে এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাদের আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক টিপু ও ওই শিক্ষার্থীকে মৃত ঘোষণা করেন।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় বেশকিছু ফুটপ্রিন্ট, আলামত ও সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছি। এছাড়া বেশকিছু মোটিভ র্যাবের কাছে এসেছে। সেগুলো পর্যালোচনা করছি। যিনি গুলি করেছেন, তাকেও সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। র্যাব ছাড়াও পুলিশের একাধিক ইউনিট কাজ করছে।’
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আ. আহাদ বলেন, ‘নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় তিনি অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করেন। নিহতের স্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে সন্দেহ করছেন না। তিনি শুধু বলেছেন, তার স্বামীকে দুষ্কৃতকারীরা হত্যা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে ১২ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়। ‘চার-পাঁচদিন আগে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে একটি নম্বর থেকে ফোন করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু টিপু কিংবা তার স্ত্রী ডলি পুলিশকে হুমকির বিষয়টি তখন জানাননি। তবে ওই নম্বরের সূত্র ধরে আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি।’ শুক্রবার (২৫ মার্চ) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাদ আছর এজিবি কলোনি মসজিদে টিপুর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে লাশ দাফনের জন্য ফেনীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।