রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট জ্বালানি সংকটে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম একধাপে ৪২-৫২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় দেশীয় খনিজ সম্পদের ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন আলোচকরা। তারা বলেছেন, সমুদ্র জয় হয়েছে। নিজস্ব তেল-গ্যাস উত্তোলন বাড়াতে হবে। কয়লা-গ্যাস অনুসন্ধানেও জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে কমাতে হবে অপচয়।
শনিবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের ‘বিশ্ব জ্বালানি সংকট ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকরা এসব কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল বাবুর সঞ্চালনায় বৈঠকে জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞ এবং এ খাতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশ নেন।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে জ্বালানি উত্তোলন করে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। বাংলাদেশের যে অবস্থা তাতে হতাশ হওয়ার কথা না। আমাদের ল্যাকিংস না থাকলে অনেক এগিয়ে যেতাম। এতদিন আমরা ৯৮টি গ্যাসকূপ খনন করেছি, তাতে ২৮টি গ্যাসফিল্ড পেয়েছি। যে পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন হওয়া দরকার তা হয়নি।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘তেলের বিষয়ে কোন সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে প্রাইসিং। তেলের টাকা অন্য খাতে যাবে কেন? অ্যাডমিনিস্ট্রেট প্রাইস ওভাবে তো হয় না। এখন যে লোডশেডিং হচ্ছে, তাও সিস্টেমিক সমস্যা। দেশের পুরো পাওয়ার সিস্টেম ভুল পথে রয়েছে। বিপিসি যে প্রক্রিয়ায় জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করছে তা সঠিক নয়। প্রাইসিং পলিসি নিয়ে আমি ১০ বছর ধরে কথা বলছি। আমি সরকারকে বলে আসছি আপনারা এমন একটা ‘প্রাইসিং পলিসি’ নির্ধারণ করুন, যেন ভোক্তারা অনুভব করে তারা এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না।’
জবাবে বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ জানান, সরকার যে সিদ্ধান্ত দেয়, সে অনুযায়ী কাজ করে তারা। তিনি বলেন, ‘বিপিসিতে দুর্নীতির কোন সুযোগ নেই। বিপিসি এখন লাভ করছে- অনেকেই এমন কথা বললেও এখনও ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ রয়ে গেছে।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ খন্দকার আবদুস সালেক বলেন, আমাদের চুরি ও জালিয়াতি কমাতে হবে। কয়লা ও সৌর বিদ্যুতের দিকে নজর দিতে হবে। সেই সঙ্গে অপচয়ও কমাতে হবে। এডিটরস গিল্ডের সদস্য এবং পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জির সম্পাদক মোল্লা এম আমজাদ হোসেন বলেন, আমাদের নিজস্ব সম্পদ উত্তোলন করতে হবে। এগুলো উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে হবে। গ্যাস-কয়লার অনুসন্ধানে মনোযোগ দিতে হবে।
অর্থনীতিবিদ ও পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই বাজারদরের সঙ্গে জ্বালানির দাম উঠা-নামা করে থাকে। আমাদের দেশে দাম উঠানামা করবে কি না, এটা নির্ভর করে সরকারের নীতির ওপর। সরকার যদি ঘোষণা দেয় আমরা বিশ্ববাজারের পরিস্থিতির সঙ্গে সাতদিনের গড় হিসাব করে দাম বাড়াবো বা কমাবো, এটা অবশ্যই কার্যকর। বিশ্বের অনেক দেশ এমনটা করছে। তিনি বলেন, যুদ্ধের কারণে তেলের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা আমরা জানি না। তবে প্যানিক হওয়ার কিছু নেই। তিন থেকে চার বছর সতর্কভাবে চলতে হবে।’
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এনার্জির চাহিদাকে অ্যাডজাস্ট করতে হবে। দেশের অনেক জায়গায় বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ থাকে না। লোড ম্যানেজমেন্ট ঠিক রাখতে হবে। তবে সামনে শীত আসছে, ভয়ের কারণ নেই।’
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বাংলাদেশের বাস্তবতায় তেল-গ্যাসের দাম বার বার বাড়ানো-কমানো সম্ভব নয়। বহির্বিশ্বের চেয়ে দেশে দাম কম, সেজন্য এটি করা যাচ্ছে না।’ বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানে ব্যাপকভাবে সৌরবিদ্যুৎ এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শও দেন তিনি।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি গ্যাস এক্সপোর্ট করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু তারা সেটা পারেনি। তাতে আন্তর্জাতিক বাজারে নেতিবাচক বার্তা গেছে। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে, ভারত-মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র জয় করেছি।’
পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বলেন, ‘গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারলে দেশে দাম আরও বাড়বে। উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে অবশ্যই এটি করতে হবে। আমাদের ত্যাগ শিকার করতে হবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, চাহিদাও বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’
শনিবার, ১৩ আগস্ট ২০২২
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট জ্বালানি সংকটে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম একধাপে ৪২-৫২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় দেশীয় খনিজ সম্পদের ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন আলোচকরা। তারা বলেছেন, সমুদ্র জয় হয়েছে। নিজস্ব তেল-গ্যাস উত্তোলন বাড়াতে হবে। কয়লা-গ্যাস অনুসন্ধানেও জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে কমাতে হবে অপচয়।
শনিবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের ‘বিশ্ব জ্বালানি সংকট ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকরা এসব কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল বাবুর সঞ্চালনায় বৈঠকে জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞ এবং এ খাতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশ নেন।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে জ্বালানি উত্তোলন করে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। বাংলাদেশের যে অবস্থা তাতে হতাশ হওয়ার কথা না। আমাদের ল্যাকিংস না থাকলে অনেক এগিয়ে যেতাম। এতদিন আমরা ৯৮টি গ্যাসকূপ খনন করেছি, তাতে ২৮টি গ্যাসফিল্ড পেয়েছি। যে পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন হওয়া দরকার তা হয়নি।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘তেলের বিষয়ে কোন সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে প্রাইসিং। তেলের টাকা অন্য খাতে যাবে কেন? অ্যাডমিনিস্ট্রেট প্রাইস ওভাবে তো হয় না। এখন যে লোডশেডিং হচ্ছে, তাও সিস্টেমিক সমস্যা। দেশের পুরো পাওয়ার সিস্টেম ভুল পথে রয়েছে। বিপিসি যে প্রক্রিয়ায় জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করছে তা সঠিক নয়। প্রাইসিং পলিসি নিয়ে আমি ১০ বছর ধরে কথা বলছি। আমি সরকারকে বলে আসছি আপনারা এমন একটা ‘প্রাইসিং পলিসি’ নির্ধারণ করুন, যেন ভোক্তারা অনুভব করে তারা এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না।’
জবাবে বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ জানান, সরকার যে সিদ্ধান্ত দেয়, সে অনুযায়ী কাজ করে তারা। তিনি বলেন, ‘বিপিসিতে দুর্নীতির কোন সুযোগ নেই। বিপিসি এখন লাভ করছে- অনেকেই এমন কথা বললেও এখনও ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ রয়ে গেছে।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ খন্দকার আবদুস সালেক বলেন, আমাদের চুরি ও জালিয়াতি কমাতে হবে। কয়লা ও সৌর বিদ্যুতের দিকে নজর দিতে হবে। সেই সঙ্গে অপচয়ও কমাতে হবে। এডিটরস গিল্ডের সদস্য এবং পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জির সম্পাদক মোল্লা এম আমজাদ হোসেন বলেন, আমাদের নিজস্ব সম্পদ উত্তোলন করতে হবে। এগুলো উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে হবে। গ্যাস-কয়লার অনুসন্ধানে মনোযোগ দিতে হবে।
অর্থনীতিবিদ ও পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই বাজারদরের সঙ্গে জ্বালানির দাম উঠা-নামা করে থাকে। আমাদের দেশে দাম উঠানামা করবে কি না, এটা নির্ভর করে সরকারের নীতির ওপর। সরকার যদি ঘোষণা দেয় আমরা বিশ্ববাজারের পরিস্থিতির সঙ্গে সাতদিনের গড় হিসাব করে দাম বাড়াবো বা কমাবো, এটা অবশ্যই কার্যকর। বিশ্বের অনেক দেশ এমনটা করছে। তিনি বলেন, যুদ্ধের কারণে তেলের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা আমরা জানি না। তবে প্যানিক হওয়ার কিছু নেই। তিন থেকে চার বছর সতর্কভাবে চলতে হবে।’
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এনার্জির চাহিদাকে অ্যাডজাস্ট করতে হবে। দেশের অনেক জায়গায় বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ থাকে না। লোড ম্যানেজমেন্ট ঠিক রাখতে হবে। তবে সামনে শীত আসছে, ভয়ের কারণ নেই।’
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বাংলাদেশের বাস্তবতায় তেল-গ্যাসের দাম বার বার বাড়ানো-কমানো সম্ভব নয়। বহির্বিশ্বের চেয়ে দেশে দাম কম, সেজন্য এটি করা যাচ্ছে না।’ বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানে ব্যাপকভাবে সৌরবিদ্যুৎ এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শও দেন তিনি।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি গ্যাস এক্সপোর্ট করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু তারা সেটা পারেনি। তাতে আন্তর্জাতিক বাজারে নেতিবাচক বার্তা গেছে। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে, ভারত-মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র জয় করেছি।’
পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বলেন, ‘গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারলে দেশে দাম আরও বাড়বে। উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে অবশ্যই এটি করতে হবে। আমাদের ত্যাগ শিকার করতে হবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, চাহিদাও বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’