alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

অনলাইন প্রতারণা

লাখে ১১ হাজার লাভ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৬৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ

বাকী বিল্লাহ : সোমবার, ১৩ মে ২০২৪

এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতি মাসে ১১ হাজার ২০০ টাকা লাভ দেয়া হবে। এই টাকা অটোমেটিক অ্যাকাউন্টে যোগ হবে।

এমন লোভ দেখিয়ে একটি চক্র ইউএস এগ্রিমেন্ট ডট কম নামে অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইন আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে টাকা ইনভেস্টের কথা বলে রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় বাবু হোমিও ফার্মেসির মালিকসহ প্রায় দুই হাজার মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

এখন লাভ তো দূরের কথা মূল টাকা ফেরত চাইতে গেলে উল্টো মামলার বাদীসহ ভুক্তভোগীদেরকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে চক্রের সঙ্গে জড়িতরা। এই পরিপ্রেক্ষিতে টাকা ফেরতের দাবিতে এলাকায় মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজনের দায়ের করা মামলায় আদালতের নির্দেশে তদন্ত করে এই ঘটনায় ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার সত্যতা পেয়েছে পিবিআই।

সম্প্রতি পিবিআইয়ের ধানমন্ডির প্রধান কার্যালয় ও রাজশাহী পিবিআই সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পিবিআই সূত্র জানায়, মামলার বাদী খায়রুজ্জামান মিয়া (৫৫) রাজশাহী জেলার কাশিয়াডাঙ্গা নতুনপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

নালিশি মামলার বিবাদী (অভিযুক্তরা) হলো- ১. মো. ওয়াদেুজ্জামান ওরফে সোহাগ, ঠিকানা ইউএসএগ্রিমেন্ট এর রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান, ২. মোসা. ফাতেমাতুজ জহুরা ওরফে মিলি, ঠিকানা, ইউএসএগ্রিমেন্টের রাজশাহী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক, ৩. মিঠুন মন্ডল। ঠিকানা রাজশাহীর বোয়ালিয়াপাড়া।

ঘটনাস্থল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, কাশিয়াডাঙ্গা থানাদীন ১ নম্বর সাক্ষী আনিসুজ্জামান ওরফে বাবুর হোমিও ফার্মেসি।

আদালতের নির্দেশে পিবিআই গত ২১ মার্চ মামলাটির তদন্তবার গ্রহণ করেন। এরপর পিবিআই গত ২২ মার্চ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সরজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও মামলার অভিযোগকারীর সঙ্গে কথা বলে তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। মামলা তদন্তে মোট ৬জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

পিবিআইয়ের তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণে জানা গেছে, মামলার বাদী মো. খায়রুজ্জামান মিয়া ব্যবসা করেন। আর অভিযুক্ত আসামি ওয়াহেদুজ্জামান ওরফে সোহাগ ইউএস এগ্রিমেন্ট এর রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান বলে জানা যায়। এর আগে অভিযুক্ত সোহাগ ফ্রুট সাপ্লিমেন্টারি উপাদান বিক্রয় করত।

আর ২ নং অভিযুক্ত ফাতেমা ফাতেমাতুজ জহুরা ওরফে মিলি একজন গৃহিণী। সে অভিযুক্ত সোহাগের স্ত্রী। আর ৩ নম্বর অভিযুক্ত আসামি মিঠুন মন্ডল নির্দিষ্টি কোনো পেশার সঙ্গে জড়িত নয়। সে মূলক রাজশাহী অঞ্চলের ইউএস এগ্রিমেন্ট অ্যাপ পরিচালনাকারীদের একজন অন্যতম এজেন্ট বলে জানা গেছে।

অভিযুক্তরা ইউএস এগ্রিমেন্ট ডট কম নামক অ্যাপস এর প্রচার-প্রচারণা সরকারি নির্দেশনা ব্যতীত অর্থাৎ অবৈধভাবে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় প্রচারণা চালাত।

২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বিকেল ৩টার দিকে কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন বাবু হোমিও ফার্মেসিতে সেমিনার ও মিটিং পরিচালনা করে। তারা মামলার বাদি ও সাক্ষীদেরকে জানায়, ইউএস এগ্রিমেন্ট অ্যাপটি সরাসরি আমেরিকা থেকে রিয়েল ফরেক্স ট্রেডিং হাউস এর মাধ্যমে পরিচালিত হয় বলে জানায়।

গ্রাহকরা এই অ্যাপে বিনিয়োগ করলে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত মুনাফার চাইতে কয়েকগুন বেশি মুনাফা বিদেশ থেকে রেমিটেন্স আকারে গ্রাহকের সরবরাহকৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে বলে সবাইকে অনুপ্রাণিত করতে থাকে।

অভিযুক্ত সোহাগ ও মিঠুন মন্ডলসহ অন্যরা পরস্পর যোগসাজশে নিজ নিজ বক্তব্যে বিভিন্নভাবে মামলার বাদী ও সাক্ষীদেরকে প্রলোভনে ফেলে। এরপর নানা কৌশলে তারা তাদের বক্তব্যে বলেছেন, ইউএস এগ্রিমেন্ট অ্যাপে ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতি মাসে ১১ হাজার ২০০ মুনাফা পেতে থাকবে। মূল টাকা হারানোর কোনো ভয় নেই। কারণ ইউএস এগ্রিমেন্ট অ্যাপে বিনিয়োগ করলে সেই টাকা ডলার আকারে নিজ নিজ ইউএস এগ্রিমেন্ট অ্যাপের হিসেবে জমা থাকবে।

বিনিয়োগকারী যখন ইচ্ছা তখনই উত্তোলন করে নিতে পারবে। আর যতদিন কোন গ্রাহক নিজ থেকে বিনিয়োগের টাকা উত্তোলন না করবে ততদিন গ্রাহক প্রতি মাসেই লভ্যাংশ পেতেই থাকবে।

এসব বক্তব্য ও আলোচনার পর মামলার বাদী খায়রুজ্জামান মিয়াসহ অন্যারা সরল বিশ্বাসে এবং প্রতি মাসে লাখে ১১ হাজার ২০০ টাকা দেয়ার কথা শুনে তাদেরকে টাকা দিয়েছেন। এর মধ্যে আনিুসুজ্জামান ও রফে বাবু হোমিও দোকানে বাদীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা, সাক্ষী আনিসুজ্জামান বাবুর কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা, হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। রবিউলের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা, সোমাইয়া আক্তার ওরফে সোমাইয়ার কাছ থেকে নগদ ৫ লাখ টাকাসহ মোট ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। এরপর তাদের মোবাইলে উক্ত অ্যাপের একাউন্ট চালু করে দেয়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামি সোহাগ ও মিঠু মন্ডল মামলার বাদী ও সাক্ষীদের পূর্বপরিচিত ও বিশ্বস্ত হওয়ার সুযোগে খুবই সহজেই ইউএস এগ্রিমেন্ট অ্যাপ নিয়ে প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা বর্ণনা দিয়ে ২০২২ সালের ১০ অক্টেবর বিকেল ৩টার সময় এই সব টাকা একযোগে নিয়েছেন। প্রতারক চক্র টাকা নিয়ে একাধিক অ্যাপ চালু প্রত্যেককে এক বা একাধিক আইডি খুলে দেয়। আইডিতে টাকার হিসাবের জায়গায় কিছু ডিজিট দেখিয়ে দেয়। এরপর টাকা নেয়ার পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও টাকা না পেয়ে তারা যোগাযোগ করলে প্রতারক সোহাগ ও মিঠুন মন্ডল অ্যাপের সার্ভার আপডেটের কাজ চলছে। প্রত্যেককে টাকা দেয়া হবে।

মুনাফার টাকা রেমিট্যান্স আকারে কেন আসবে বললে প্রতারক চক্র বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সমন্বয় চলছে তাই টাকা পেতে একটু দেরি হচ্ছে। এরপর ২০২২ সালে নভেম্বর মাসে তাদের অ্যাপ বন্ধ হয়ে যায়। তখন যোগাযোগ করলে অভিযুক্তরা বলেছে, তাদের অ্যাপে কয়েন আপডেট হচ্ছে। এরপর অভিযুক্তরা পাওয়ানাদার সঙ্গে এক পর্যায়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা গেছে, এই চক্র দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পিবিআইয়ের অনুসন্ধানী টিম তদন্ত করছেন। এই চক্র প্রতারণামূলক কার্যক্রমে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে যারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই চক্রকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুধার্থ ব্যক্তিরা এলাকায় মানববন্ধন করেছে।

পিবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে আসছে, অভিযুক্ত সোহাগ আত্মসাৎকৃত টাকায় রাজশাহীর বোয়ালিয়ায় ২ কোটি ৫০ লাখ ২১ হাজার টাকা ৬০০ টাকার জমি কিনেছে। জমি কেনা বাবদ বায়না দিয়েছে ১ কোটি ১ লাখ ২১ হাজার টাকা। তদন্তকালে এতথ্য জানা গেছে।

অভিযুক্ত সোহাগ ও মিঠুন মন্ডসহ প্রতারকচক্র অবৈধ অ্যাপের বিষয় সরকারের অনুমতি ছাড়াই প্রচার ও প্রচারণা চালিয়ে বাদি ও সাক্ষীদের সঞ্চিত অর্থ প্রতারণামূলকভাবে গ্রহণ করেছে। এভাবে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার সহজ সরল মানুষ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শুধু একটি মামলায় তদন্তে পরস্পর যোগসাজশে অনলাইন আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে টাকা ইনভেস্ট করার প্রলোভন দেখিয়ে ও প্রতারণার প্রচারণা চালিয়ের ১৮৬০ সালের আইনে অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে। মামলার বিবাদী ওয়াহেদুজ্জামান ওরফে সোহাগ ও মিঠুন মন্ডলের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

সোমবার (১৩ মে) রাতে প্রতারণার শিকার আনিসুজ্জামান বাবু সংবাদকে জানান, লোভে পড়ে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা হারিয়েছিল। পরিবার থেকে সবাই এই টাকাটা জমা দিয়েছি। পিবিআই তদন্ত করছে। তারা সত্যতা পেয়েছেন।

সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে আছে। শীঘ্রই আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। এই লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে পিবিআই ঊর্ধ্বতন সূত্র জানিয়েছেন।

ছবি

একাধিক হত্যা মামলার আসামি কাউন্সিলর ফোরকান গ্রেপ্তার

ছবি

এস আলম ও পরিবারের ব্যাংক শেয়ার জব্দের নির্দেশ, দুদককে তদন্তের নির্দেশ

ছবি

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা : হাইকোর্টের রায় রোববার

ছবি

আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন সেই তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি

ছবি

গণহত্যা মামলায় মামুন-জিয়াউলসহ আরও ৬ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার দেখানো হলো

ছবি

জমি নিয়ে বিরোধ: মাদারীপুরে ২ বোনকে লাঠিপেটা, ভিডিও ভাইরাল

ছবি

উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিপণ, নজরদারিতে শিশুটির বাবা

ছবি

প্রতিবেশীর সাথে মুরগী নিয়ে ঝগড়া, সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ২

ছবি

রাজধানীর আজিমপুরে ডাকাতি মালামালের সঙ্গে দুধের শিশুকেও নিয়ে যায় ডাকাতরা

সূত্রাপুরে সাংবাদিকের বাসার গ্রিল কেটে ২০ ভরি স্বর্ণ ও আড়াই লাখ টাকা চুরি

ঝিকরগাছায় যুবদল কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা: ছাত্রদল নেতাসহ গ্রেপ্তার ৪

হাত খরচের টাকার জন্য মাকে খুন, ছেলে গ্রেপ্তার

ছবি

বেক্সিমকো ফার্মায় রিসিভার নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত

ছবি

শরীয়তপুরে সড়কের পাশে পড়ে থাকা দশটি ব্যাগ থেকে ১২৩টি ককটেল বোমা উদ্ধার

ছবি

কেন শিশু মুনতাহাকে হত্যা করে তার গৃহশিক্ষিকা?

ছবি

ঝিকরগাছায় দলীয় প্রতিপক্ষের হাতে যুবদল কর্মী খুন

জামালপুরে সেনা সদস্যের স্ত্রী ধর্ষণসহ হত্যা মামলার পলাতক আসামী গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৪

আরিচা-কাজিরহাট-বাঘাবাড়ী ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ড্রেজিংয়ের নামে ৭০০ কোটি টাকা লোপাট

ছবি

আদালতে আমুর আইনজীবীকে পিটুনি

সিলেটে ভারতীয় বৃহৎ চোরাই চালান জব্দ

নারায়ণগঞ্জে স্কুলছাত্রী হত্যায় যুবকের যাবজ্জীবন

যশোরে ‘বাজার কেন্দ্রীক বিরোধে’ খুন হন ব্যবসায়ী জামায়াত নেতা সজল

হত্যা মামলায় কারাগারে যশোর নগর বিএনপির সভাপতি মুল্লুক চাঁদ

না’গঞ্জে নারী পোশাক কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা, পুলিশ বলছে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’

ছবি

উখিয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, ৩ ব্যবসায়ীকে অর্থদণ্ড

ছবি

গান বাংলার চেয়ারম্যান তাপস গ্রেপ্তার

যশোরে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে ট্রাক হেলপার খুন

ছিনতাই ও চুরি হওয়া ৪৫টি মোবাইল ফোনসেট উদ্ধার

ছবি

সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির ৫ দিনের রিমান্ডে

চৌগাছায় ইউপি চেয়ারম্যান আশা হত্যাকান্ডের ২২ বছর পর তার ভাই খুন

ছবি

মিরপুরের সাবেক ডিসি জসিম গ্রেপ্তার

রাজশাহী নগরীতে যুবলীগ কর্মীকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা

যশোরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ দেশ ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিল ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি

খাগড়াছড়ি বিজিবি’র অভিযানে পানছড়ি সীমান্তে ভারতীয় মালামাল উদ্ধার

ছবি

খুলনায় ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যার দায়ে ২১ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

রংপুরে কিশোরকে চোরের অপবাদে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

অনলাইন প্রতারণা

লাখে ১১ হাজার লাভ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৬৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ

বাকী বিল্লাহ

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪

এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতি মাসে ১১ হাজার ২০০ টাকা লাভ দেয়া হবে। এই টাকা অটোমেটিক অ্যাকাউন্টে যোগ হবে।

এমন লোভ দেখিয়ে একটি চক্র ইউএস এগ্রিমেন্ট ডট কম নামে অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইন আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে টাকা ইনভেস্টের কথা বলে রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় বাবু হোমিও ফার্মেসির মালিকসহ প্রায় দুই হাজার মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

এখন লাভ তো দূরের কথা মূল টাকা ফেরত চাইতে গেলে উল্টো মামলার বাদীসহ ভুক্তভোগীদেরকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে চক্রের সঙ্গে জড়িতরা। এই পরিপ্রেক্ষিতে টাকা ফেরতের দাবিতে এলাকায় মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজনের দায়ের করা মামলায় আদালতের নির্দেশে তদন্ত করে এই ঘটনায় ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার সত্যতা পেয়েছে পিবিআই।

সম্প্রতি পিবিআইয়ের ধানমন্ডির প্রধান কার্যালয় ও রাজশাহী পিবিআই সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পিবিআই সূত্র জানায়, মামলার বাদী খায়রুজ্জামান মিয়া (৫৫) রাজশাহী জেলার কাশিয়াডাঙ্গা নতুনপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

নালিশি মামলার বিবাদী (অভিযুক্তরা) হলো- ১. মো. ওয়াদেুজ্জামান ওরফে সোহাগ, ঠিকানা ইউএসএগ্রিমেন্ট এর রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান, ২. মোসা. ফাতেমাতুজ জহুরা ওরফে মিলি, ঠিকানা, ইউএসএগ্রিমেন্টের রাজশাহী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক, ৩. মিঠুন মন্ডল। ঠিকানা রাজশাহীর বোয়ালিয়াপাড়া।

ঘটনাস্থল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, কাশিয়াডাঙ্গা থানাদীন ১ নম্বর সাক্ষী আনিসুজ্জামান ওরফে বাবুর হোমিও ফার্মেসি।

আদালতের নির্দেশে পিবিআই গত ২১ মার্চ মামলাটির তদন্তবার গ্রহণ করেন। এরপর পিবিআই গত ২২ মার্চ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সরজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও মামলার অভিযোগকারীর সঙ্গে কথা বলে তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। মামলা তদন্তে মোট ৬জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

পিবিআইয়ের তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণে জানা গেছে, মামলার বাদী মো. খায়রুজ্জামান মিয়া ব্যবসা করেন। আর অভিযুক্ত আসামি ওয়াহেদুজ্জামান ওরফে সোহাগ ইউএস এগ্রিমেন্ট এর রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান বলে জানা যায়। এর আগে অভিযুক্ত সোহাগ ফ্রুট সাপ্লিমেন্টারি উপাদান বিক্রয় করত।

আর ২ নং অভিযুক্ত ফাতেমা ফাতেমাতুজ জহুরা ওরফে মিলি একজন গৃহিণী। সে অভিযুক্ত সোহাগের স্ত্রী। আর ৩ নম্বর অভিযুক্ত আসামি মিঠুন মন্ডল নির্দিষ্টি কোনো পেশার সঙ্গে জড়িত নয়। সে মূলক রাজশাহী অঞ্চলের ইউএস এগ্রিমেন্ট অ্যাপ পরিচালনাকারীদের একজন অন্যতম এজেন্ট বলে জানা গেছে।

অভিযুক্তরা ইউএস এগ্রিমেন্ট ডট কম নামক অ্যাপস এর প্রচার-প্রচারণা সরকারি নির্দেশনা ব্যতীত অর্থাৎ অবৈধভাবে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় প্রচারণা চালাত।

২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বিকেল ৩টার দিকে কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন বাবু হোমিও ফার্মেসিতে সেমিনার ও মিটিং পরিচালনা করে। তারা মামলার বাদি ও সাক্ষীদেরকে জানায়, ইউএস এগ্রিমেন্ট অ্যাপটি সরাসরি আমেরিকা থেকে রিয়েল ফরেক্স ট্রেডিং হাউস এর মাধ্যমে পরিচালিত হয় বলে জানায়।

গ্রাহকরা এই অ্যাপে বিনিয়োগ করলে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত মুনাফার চাইতে কয়েকগুন বেশি মুনাফা বিদেশ থেকে রেমিটেন্স আকারে গ্রাহকের সরবরাহকৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে বলে সবাইকে অনুপ্রাণিত করতে থাকে।

অভিযুক্ত সোহাগ ও মিঠুন মন্ডলসহ অন্যরা পরস্পর যোগসাজশে নিজ নিজ বক্তব্যে বিভিন্নভাবে মামলার বাদী ও সাক্ষীদেরকে প্রলোভনে ফেলে। এরপর নানা কৌশলে তারা তাদের বক্তব্যে বলেছেন, ইউএস এগ্রিমেন্ট অ্যাপে ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতি মাসে ১১ হাজার ২০০ মুনাফা পেতে থাকবে। মূল টাকা হারানোর কোনো ভয় নেই। কারণ ইউএস এগ্রিমেন্ট অ্যাপে বিনিয়োগ করলে সেই টাকা ডলার আকারে নিজ নিজ ইউএস এগ্রিমেন্ট অ্যাপের হিসেবে জমা থাকবে।

বিনিয়োগকারী যখন ইচ্ছা তখনই উত্তোলন করে নিতে পারবে। আর যতদিন কোন গ্রাহক নিজ থেকে বিনিয়োগের টাকা উত্তোলন না করবে ততদিন গ্রাহক প্রতি মাসেই লভ্যাংশ পেতেই থাকবে।

এসব বক্তব্য ও আলোচনার পর মামলার বাদী খায়রুজ্জামান মিয়াসহ অন্যারা সরল বিশ্বাসে এবং প্রতি মাসে লাখে ১১ হাজার ২০০ টাকা দেয়ার কথা শুনে তাদেরকে টাকা দিয়েছেন। এর মধ্যে আনিুসুজ্জামান ও রফে বাবু হোমিও দোকানে বাদীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা, সাক্ষী আনিসুজ্জামান বাবুর কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা, হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। রবিউলের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা, সোমাইয়া আক্তার ওরফে সোমাইয়ার কাছ থেকে নগদ ৫ লাখ টাকাসহ মোট ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। এরপর তাদের মোবাইলে উক্ত অ্যাপের একাউন্ট চালু করে দেয়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামি সোহাগ ও মিঠু মন্ডল মামলার বাদী ও সাক্ষীদের পূর্বপরিচিত ও বিশ্বস্ত হওয়ার সুযোগে খুবই সহজেই ইউএস এগ্রিমেন্ট অ্যাপ নিয়ে প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা বর্ণনা দিয়ে ২০২২ সালের ১০ অক্টেবর বিকেল ৩টার সময় এই সব টাকা একযোগে নিয়েছেন। প্রতারক চক্র টাকা নিয়ে একাধিক অ্যাপ চালু প্রত্যেককে এক বা একাধিক আইডি খুলে দেয়। আইডিতে টাকার হিসাবের জায়গায় কিছু ডিজিট দেখিয়ে দেয়। এরপর টাকা নেয়ার পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও টাকা না পেয়ে তারা যোগাযোগ করলে প্রতারক সোহাগ ও মিঠুন মন্ডল অ্যাপের সার্ভার আপডেটের কাজ চলছে। প্রত্যেককে টাকা দেয়া হবে।

মুনাফার টাকা রেমিট্যান্স আকারে কেন আসবে বললে প্রতারক চক্র বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সমন্বয় চলছে তাই টাকা পেতে একটু দেরি হচ্ছে। এরপর ২০২২ সালে নভেম্বর মাসে তাদের অ্যাপ বন্ধ হয়ে যায়। তখন যোগাযোগ করলে অভিযুক্তরা বলেছে, তাদের অ্যাপে কয়েন আপডেট হচ্ছে। এরপর অভিযুক্তরা পাওয়ানাদার সঙ্গে এক পর্যায়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা গেছে, এই চক্র দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পিবিআইয়ের অনুসন্ধানী টিম তদন্ত করছেন। এই চক্র প্রতারণামূলক কার্যক্রমে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে যারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই চক্রকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুধার্থ ব্যক্তিরা এলাকায় মানববন্ধন করেছে।

পিবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে আসছে, অভিযুক্ত সোহাগ আত্মসাৎকৃত টাকায় রাজশাহীর বোয়ালিয়ায় ২ কোটি ৫০ লাখ ২১ হাজার টাকা ৬০০ টাকার জমি কিনেছে। জমি কেনা বাবদ বায়না দিয়েছে ১ কোটি ১ লাখ ২১ হাজার টাকা। তদন্তকালে এতথ্য জানা গেছে।

অভিযুক্ত সোহাগ ও মিঠুন মন্ডসহ প্রতারকচক্র অবৈধ অ্যাপের বিষয় সরকারের অনুমতি ছাড়াই প্রচার ও প্রচারণা চালিয়ে বাদি ও সাক্ষীদের সঞ্চিত অর্থ প্রতারণামূলকভাবে গ্রহণ করেছে। এভাবে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার সহজ সরল মানুষ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শুধু একটি মামলায় তদন্তে পরস্পর যোগসাজশে অনলাইন আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে টাকা ইনভেস্ট করার প্রলোভন দেখিয়ে ও প্রতারণার প্রচারণা চালিয়ের ১৮৬০ সালের আইনে অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে। মামলার বিবাদী ওয়াহেদুজ্জামান ওরফে সোহাগ ও মিঠুন মন্ডলের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

সোমবার (১৩ মে) রাতে প্রতারণার শিকার আনিসুজ্জামান বাবু সংবাদকে জানান, লোভে পড়ে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা হারিয়েছিল। পরিবার থেকে সবাই এই টাকাটা জমা দিয়েছি। পিবিআই তদন্ত করছে। তারা সত্যতা পেয়েছেন।

সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে আছে। শীঘ্রই আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। এই লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে পিবিআই ঊর্ধ্বতন সূত্র জানিয়েছেন।

back to top