ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং তার স্ত্রী সিতারা আলমগীরের বিরুদ্ধে ‘অর্থ পাচারের’ অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার,(১২ নভেম্বর ২০২৫) দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ বাদী হয়ে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাটি করেছেন। সংস্থার মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য দিয়েছেন।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মহীউদ্দীন খান আলমগীর, তার স্ত্রী ও ছেলে জয় আলমগীরের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এরপর ২৩ অক্টোবর সুলতানা মৎস্য খামার নামে ‘অস্তিত্বহীন’ প্রতিষ্ঠান খুলে ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ‘আত্মসাতের’ অভিযোগে ব্যাংকটির এই সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
এবার ‘অর্থ পাচারের’ অভিযোগে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা হলো। অনুসন্ধানের বরাতে মামলার এজাহারে দুদক বলেছে, আসামিরা ‘ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন’ করার জন্য একাধিক ব্যাংক হিসাবে অর্থ ‘স্থানান্তর ও রূপান্তর’ করেছেন।
২০০৯-২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন হিসাবে মোট ২১৬ কোটি ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪৯ টাকা ২৫ পয়সা এবং ৬ হাজার ১৮৮ মার্কিন ডলার জমা রাখা হয়। এর বিপরীতে তারা ২০৯ কোটি ১৭ লাখ ৬৩ হাজার ৬৪০ টাকা ৮২ পয়সা ও ৬ হাজার ডলার উত্তোলন করেন বলে মামলায় বলা হয়েছে।
দুদক বলেছে, মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও তার স্ত্রী সিতারা আলমগীরের নামে এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে পদ্মা ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে ৭৯টি হিসাব খোলা ছিল। এসব হিসাবের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ ‘জমা, স্থানান্তর ও উত্তোলনের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং’ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
অর্থ জমা হয় মূলত মাহবুবুল হক চিশতী, রাশেদ এন্টারপ্রাইজ, বকশিগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটিজ, বিভিন্ন ব্যক্তির পে-অর্ডার এবং নগদ অর্থের মাধ্যমে। পরে এসব অর্থ স্থানান্তর করা হয় মোহাম্মদ গোলাম রসুল, রাশেদুল হক চিশতী, বকশিগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেড, মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও সিতারা আলমগীরের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, সিতারা আলমগীরের নামে এফডিআর এবং মীর আল আমিনের নামে খোলা হিসাবে।
অনুসন্ধানের বরাতে সংস্থাটি বলছে, আসামিদের সঙ্গে এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোনো ‘বৈধ ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই’ এবং তাদের মধ্যে ‘লেনদেন বা পণ্য কেনাবেচার কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি’। দুদকের ভাষ্য, এসব ‘অর্থ ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে অর্জিত এবং ‘অবৈধ’ উৎস গোপন রাখতে এক হিসাব থেকে অন্য হিসাবে ‘স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং’ করা হয়েছে। সাবেক আমলা মহীউদ্দীন খান আলমগীর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১২-১৩ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১৩ সালে ফারমার্স ব্যাংক অনুমোদন পেলে মহীউদ্দীন খান আলমগীর হন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। নজিরবিহীন ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠার চার বছর না যেতেই মুখ থুবড়ে পড়ে ব্যাংকটি। ধারাবাহিকভাবে গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৭ সালে ফারমার্স ব্যাংকে হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বছরই মহীউদ্দীন খান আলমগীর ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ ছাড়েন। এরপর পুনর্গঠন করা হয় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী গ্রেপ্তার হন। তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীমকেও অপসারণ করা হয়। পরে নাম বদলে ফারমার্স ব্যাংক হয় পদ্মা ব্যাংক।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং তার স্ত্রী সিতারা আলমগীরের বিরুদ্ধে ‘অর্থ পাচারের’ অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার,(১২ নভেম্বর ২০২৫) দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ বাদী হয়ে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাটি করেছেন। সংস্থার মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য দিয়েছেন।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মহীউদ্দীন খান আলমগীর, তার স্ত্রী ও ছেলে জয় আলমগীরের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এরপর ২৩ অক্টোবর সুলতানা মৎস্য খামার নামে ‘অস্তিত্বহীন’ প্রতিষ্ঠান খুলে ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ‘আত্মসাতের’ অভিযোগে ব্যাংকটির এই সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
এবার ‘অর্থ পাচারের’ অভিযোগে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা হলো। অনুসন্ধানের বরাতে মামলার এজাহারে দুদক বলেছে, আসামিরা ‘ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন’ করার জন্য একাধিক ব্যাংক হিসাবে অর্থ ‘স্থানান্তর ও রূপান্তর’ করেছেন।
২০০৯-২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন হিসাবে মোট ২১৬ কোটি ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪৯ টাকা ২৫ পয়সা এবং ৬ হাজার ১৮৮ মার্কিন ডলার জমা রাখা হয়। এর বিপরীতে তারা ২০৯ কোটি ১৭ লাখ ৬৩ হাজার ৬৪০ টাকা ৮২ পয়সা ও ৬ হাজার ডলার উত্তোলন করেন বলে মামলায় বলা হয়েছে।
দুদক বলেছে, মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও তার স্ত্রী সিতারা আলমগীরের নামে এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে পদ্মা ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে ৭৯টি হিসাব খোলা ছিল। এসব হিসাবের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ ‘জমা, স্থানান্তর ও উত্তোলনের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং’ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
অর্থ জমা হয় মূলত মাহবুবুল হক চিশতী, রাশেদ এন্টারপ্রাইজ, বকশিগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটিজ, বিভিন্ন ব্যক্তির পে-অর্ডার এবং নগদ অর্থের মাধ্যমে। পরে এসব অর্থ স্থানান্তর করা হয় মোহাম্মদ গোলাম রসুল, রাশেদুল হক চিশতী, বকশিগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেড, মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও সিতারা আলমগীরের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, সিতারা আলমগীরের নামে এফডিআর এবং মীর আল আমিনের নামে খোলা হিসাবে।
অনুসন্ধানের বরাতে সংস্থাটি বলছে, আসামিদের সঙ্গে এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোনো ‘বৈধ ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই’ এবং তাদের মধ্যে ‘লেনদেন বা পণ্য কেনাবেচার কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি’। দুদকের ভাষ্য, এসব ‘অর্থ ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে অর্জিত এবং ‘অবৈধ’ উৎস গোপন রাখতে এক হিসাব থেকে অন্য হিসাবে ‘স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং’ করা হয়েছে। সাবেক আমলা মহীউদ্দীন খান আলমগীর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১২-১৩ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১৩ সালে ফারমার্স ব্যাংক অনুমোদন পেলে মহীউদ্দীন খান আলমগীর হন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। নজিরবিহীন ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠার চার বছর না যেতেই মুখ থুবড়ে পড়ে ব্যাংকটি। ধারাবাহিকভাবে গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৭ সালে ফারমার্স ব্যাংকে হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বছরই মহীউদ্দীন খান আলমগীর ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ ছাড়েন। এরপর পুনর্গঠন করা হয় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী গ্রেপ্তার হন। তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীমকেও অপসারণ করা হয়। পরে নাম বদলে ফারমার্স ব্যাংক হয় পদ্মা ব্যাংক।