সাইনবোর্ডে ‘সাউথ নাম’ চোখে না পড়লেও জ্বলজ্বল করছে নামকরা মেডিনোভার নাম
বরিশাল নগরীতে দেশের নামকরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোগো ব্যবহার করে নতুন প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছে। আর এ কাজে যুক্ত রয়েছে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪ জন কর্মচারী। আর অভিযুক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার হচ্ছে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের বিপরীতে পাশে ‘সাউথ মেডিনোভা সিটি সেন্টার’। সেখানে একটি ব্রান্ড প্রতিষ্ঠানের লোগো সংযুক্ত করা হয়েছে। আর সাউথ কথাটি এমনভাবে লেখা হয়েছে যা কারও চোখে পড়ে না।
জানা গেছে, লোগো প্রতারণার সঙ্গে জড়িতরা হচ্ছে- হাসপাতালের কর্মচারী মেহেদী, রিনা, রানী, রনি, হাফিজ, মুক্তা, শামসুন্নাহার, সহকারী পরিচালকের গাড়ির অতিরিক্ত চালক মেহেদী, সুমন, নুপুর, এ্যানি, মিজান, রুমা-১ ও রুমা-২। এর ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক।
হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, গত বছর আগস্ট মাসে ওই কর্মচারীরা মেডিনোভা ডায়গনস্টিক কেন্দ্রের নাম নকল করে তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম দিয়ে সেটি চালু করে। তবে এ ক্ষেত্রে তারা শুধুমাত্র সাউথ শব্দটি এমনভাবে ব্যবহার করছে যা সাধারণত রোগীর স্বজনদের চোখে পড়ে না। আর ওই ১৪ জন কর্মচারী হাসপাতালে কর্মরত থাকায় তারা সেখানকার রোগীদের মেডিনোভার কথা বলে তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠায়। সেখানে সিটিস্ক্যানসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
কিন্তু যে সিটিস্ক্যান মেশিন এখানে ব্যবহার করা হয় সেটি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা। ওই সিটিস্ক্যানের রিপোর্ট সঠিক না হওয়ায় তারা সেটা দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ করে দেয়। এরপর ওই সব কর্মচারীরা স্বল্পমূল্যে তা কিনে তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেট-আপ করে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু রিপোর্ট নিয়ে রোগীদের স্বজনদের সন্দেহও দেখা দিয়েছে। পরবর্তীতে ওই কেন্দ্রের মালিকেরা রোগীর স্বজনদের টাকা ফেরত দিয়ে রেহাই পায়।
কাঠালিয়ার বাসিন্দা মহিসন সিকদার বলেন, রোগীর সিটিস্ক্যান করতে দিলে হাসপাতালের কর্মচারীরা তাকে মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠায়। তারা আমাকে বুঝায় ওই সেন্টারটি ঢাকার এবং দেশে এর বেশ সুনাম রয়েছে। এখান থেকে সিটিস্ক্যান করলে তা সঠিক রিপোর্ট দেবে। এতে করে আমাদের বিশ্বাস জন্মে। এরপর তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে সিটিস্ক্যান করানোর পর তা চিকিৎসককে দেখানো হয়। সে রিপোর্ট সঠিক নয় বলে আবার করানোর পরামর্শ দেন। এ সময় চিকিৎসক আমাকে বকাঝকাও করেন। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে অন্য একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে সিটিস্ক্যান করানো হয়। বিষয়টি প্রতারণা বুঝে আমি কিছু স্বজন নিয়ে তাদের কাছে এর জবাব চাই। তখন তারা তাদের ভুল স্বীকার করে টাকা ফেরত দেয়। একইভাবে প্রতারণার শিকার হওয়া বানারীপাড়ার ইদ্রিস আলী বলেন, হাসপাতালের আউটডোরে রোগী দেখানোর পরপরই ৪ থেকে ৫ কর্মচারী নিজেদের হাসপাতালের স্টাফ পরিচয় দিয়ে তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে সিটিস্ক্যানসহ অন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। এরপর তাদের পরামর্শ মতো মেডিনোভা সিটি সেন্টারে গিয়ে সিটিস্ক্যান করানো হলে তা চিকিৎসক সঠিক হয়নি বলে আবার অন্যস্থান থেকে করানোর জন্য বলেন। তখন চিকিৎসককে বুঝাতে চেষ্টা করি ভালো ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করানো হয়েছে। তখন তিনি সাউথ লেখাটা দেখিয়ে বলেন এটি ভুয়া মেডিনোভা। পরে মেডিকেলের সামনের অন্য একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে সিটিস্ক্যান করানো হয়। বিষয়টি প্রতারকদের কাছে জানানো হলে তাদের সঙ্গে বাগবিতন্ডা হয়। বিষয়টি সবাই জেনে যাবে এ কারণে তারা আমাদের টাকা ফেরত দেয়। তিনি আরও বলেন, তাদের কথায় কোনভাবে বুঝা যায়নি তারা ওই ভুয়া ডায়গনস্টিক সেন্টারের মালিক। মেডিনোভা বলা হলেও সেটি নাকি মেডিনোভা না। মেডিনোভা কোম্পানির নাম ও লোগো সামনে রেখে তারা দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা করে আসছে। এ ব্যাপারে মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস লি. বাংলাদেশের বরিশাল কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ছানোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি জানার পর জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। আবেদনে ওই ভুয়া সেন্টারে অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা এবং নাম পরিবর্তন না করা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিকে বন্ধ করে দেবার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, আমি বরিশালে নতুন যোগদান করেছি। এখন পর্যন্ত যাচাই-বাছাই করতে পারিনি। বর্তমানে আমি করোনায় আক্রান্ত। বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছি। সুস্থ হয়ে যোগদান করার পর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো।
সাইনবোর্ডে ‘সাউথ নাম’ চোখে না পড়লেও জ্বলজ্বল করছে নামকরা মেডিনোভার নাম
শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২২
বরিশাল নগরীতে দেশের নামকরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোগো ব্যবহার করে নতুন প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছে। আর এ কাজে যুক্ত রয়েছে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪ জন কর্মচারী। আর অভিযুক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার হচ্ছে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের বিপরীতে পাশে ‘সাউথ মেডিনোভা সিটি সেন্টার’। সেখানে একটি ব্রান্ড প্রতিষ্ঠানের লোগো সংযুক্ত করা হয়েছে। আর সাউথ কথাটি এমনভাবে লেখা হয়েছে যা কারও চোখে পড়ে না।
জানা গেছে, লোগো প্রতারণার সঙ্গে জড়িতরা হচ্ছে- হাসপাতালের কর্মচারী মেহেদী, রিনা, রানী, রনি, হাফিজ, মুক্তা, শামসুন্নাহার, সহকারী পরিচালকের গাড়ির অতিরিক্ত চালক মেহেদী, সুমন, নুপুর, এ্যানি, মিজান, রুমা-১ ও রুমা-২। এর ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক।
হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, গত বছর আগস্ট মাসে ওই কর্মচারীরা মেডিনোভা ডায়গনস্টিক কেন্দ্রের নাম নকল করে তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম দিয়ে সেটি চালু করে। তবে এ ক্ষেত্রে তারা শুধুমাত্র সাউথ শব্দটি এমনভাবে ব্যবহার করছে যা সাধারণত রোগীর স্বজনদের চোখে পড়ে না। আর ওই ১৪ জন কর্মচারী হাসপাতালে কর্মরত থাকায় তারা সেখানকার রোগীদের মেডিনোভার কথা বলে তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠায়। সেখানে সিটিস্ক্যানসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
কিন্তু যে সিটিস্ক্যান মেশিন এখানে ব্যবহার করা হয় সেটি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা। ওই সিটিস্ক্যানের রিপোর্ট সঠিক না হওয়ায় তারা সেটা দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ করে দেয়। এরপর ওই সব কর্মচারীরা স্বল্পমূল্যে তা কিনে তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেট-আপ করে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু রিপোর্ট নিয়ে রোগীদের স্বজনদের সন্দেহও দেখা দিয়েছে। পরবর্তীতে ওই কেন্দ্রের মালিকেরা রোগীর স্বজনদের টাকা ফেরত দিয়ে রেহাই পায়।
কাঠালিয়ার বাসিন্দা মহিসন সিকদার বলেন, রোগীর সিটিস্ক্যান করতে দিলে হাসপাতালের কর্মচারীরা তাকে মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠায়। তারা আমাকে বুঝায় ওই সেন্টারটি ঢাকার এবং দেশে এর বেশ সুনাম রয়েছে। এখান থেকে সিটিস্ক্যান করলে তা সঠিক রিপোর্ট দেবে। এতে করে আমাদের বিশ্বাস জন্মে। এরপর তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে সিটিস্ক্যান করানোর পর তা চিকিৎসককে দেখানো হয়। সে রিপোর্ট সঠিক নয় বলে আবার করানোর পরামর্শ দেন। এ সময় চিকিৎসক আমাকে বকাঝকাও করেন। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে অন্য একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে সিটিস্ক্যান করানো হয়। বিষয়টি প্রতারণা বুঝে আমি কিছু স্বজন নিয়ে তাদের কাছে এর জবাব চাই। তখন তারা তাদের ভুল স্বীকার করে টাকা ফেরত দেয়। একইভাবে প্রতারণার শিকার হওয়া বানারীপাড়ার ইদ্রিস আলী বলেন, হাসপাতালের আউটডোরে রোগী দেখানোর পরপরই ৪ থেকে ৫ কর্মচারী নিজেদের হাসপাতালের স্টাফ পরিচয় দিয়ে তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে সিটিস্ক্যানসহ অন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। এরপর তাদের পরামর্শ মতো মেডিনোভা সিটি সেন্টারে গিয়ে সিটিস্ক্যান করানো হলে তা চিকিৎসক সঠিক হয়নি বলে আবার অন্যস্থান থেকে করানোর জন্য বলেন। তখন চিকিৎসককে বুঝাতে চেষ্টা করি ভালো ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করানো হয়েছে। তখন তিনি সাউথ লেখাটা দেখিয়ে বলেন এটি ভুয়া মেডিনোভা। পরে মেডিকেলের সামনের অন্য একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে সিটিস্ক্যান করানো হয়। বিষয়টি প্রতারকদের কাছে জানানো হলে তাদের সঙ্গে বাগবিতন্ডা হয়। বিষয়টি সবাই জেনে যাবে এ কারণে তারা আমাদের টাকা ফেরত দেয়। তিনি আরও বলেন, তাদের কথায় কোনভাবে বুঝা যায়নি তারা ওই ভুয়া ডায়গনস্টিক সেন্টারের মালিক। মেডিনোভা বলা হলেও সেটি নাকি মেডিনোভা না। মেডিনোভা কোম্পানির নাম ও লোগো সামনে রেখে তারা দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা করে আসছে। এ ব্যাপারে মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস লি. বাংলাদেশের বরিশাল কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ছানোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি জানার পর জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। আবেদনে ওই ভুয়া সেন্টারে অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা এবং নাম পরিবর্তন না করা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিকে বন্ধ করে দেবার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, আমি বরিশালে নতুন যোগদান করেছি। এখন পর্যন্ত যাচাই-বাছাই করতে পারিনি। বর্তমানে আমি করোনায় আক্রান্ত। বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছি। সুস্থ হয়ে যোগদান করার পর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো।