প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট কর্মকর্তারা। তার সঙ্গে এক নারীসহ আরও ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। শনিবার (১৪ মে) তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পিকে হালদারের বিরুদ্ধে এনআরবি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে একাধিক মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এর মধ্যে পিকে ভারতে পাচার করেছে ৪০০ কোটির বেশি টাকা।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে কলকাতায় বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন পিকে। সেখানে ৯টি বাড়িসহ বিপুল পরিমাণ জমি ক্রয় করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে ভারতের ইডি। এছাড়া ভারতের আধার কার্ড, রেশন কার্ডসহ নিজের নামে বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরি করেছেন বলে জানা গেছে। কলকাতায় তিনি শিবশঙ্কর হালদার নামে বসবাস করছিলেন। পিকে হালদার বহুদিন ধরেই পলাতক।
শনিবার উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোক নগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়ছে বলে ইডি সূত্র জানায়। এর আগে শুক্রবার (১৩ মে) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোক নগরে সুকুমার মৃধা নামের পিকে হালদারের এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির তিন বাড়িতে অভিযান চালায় ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
অশোক নগরে সুকুমার মৃধার নামে তিনটি বড় ভবন রয়েছে। এলাকাবাসী তাকে মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে চেনেন। তবে সুকুমার মৃধা বাংলাদেশের পিকে হালদারের ঘনিষ্ঠজন বলে ইডি জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে ইডির সদর দপ্তর সিজিও কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করা হলে জনৈক কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার সবাইকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ১০ জায়গায় অভিযানের খবর শুক্রবার ভারতের সংবাদ মাধ্যমে এসেছিল।
ইডি এই অভিযান চালায় পিকে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা, প্রীতিশ কুমার হালদার, প্রাণেশ কুমার হালদার এবং তাদের সহযোগীদের নামে থাকা বাড়ি ও সম্পত্তিতে। তাদের সবাইকে বাংলাদেশি নাগরিক উল্লেখ করে তাদের নামে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে সম্পত্তির খোঁজে পুলিশ ও তার সহযোগী সুকুমার মৃধার কলকাতা ও সংলগ্ন জেলায় বড় ধরনের অর্থ পাচার, বেআইনি আর্থিক লেনদেনসহ একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিস মিলেছে।
পলাতক এই অর্থ পাচারকারীর অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তির খোঁজ অপরাধীদের নাগালে পেতে শুক্রবার ভোরে কলকাতা ও অশোক নগর, দমদম, বাইপাস লাগোয়া মোট ৯টি স্থানে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তল্লাশি চালায় ভারতীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
ইডি সূত্রে জানা গেছে, কলকাতা ও হাওড়ার বড়বাজার দিয়ে বাংলাদেশের টাকা হাওলার হুন্ডি বিভিন্ন জায়গায় লেনদেন করা হচ্ছে এবং কোটি কোটি আর্থিক তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। অশোক নগরে তিনটি জায়গায় একসঙ্গে অভিযান চালান ইডি কর্তারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অশোক নগরের মাছ ব্যবসায়ী সুকুমার মৃধা মূলত বাংলাদেশে থাকেন। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সাতটি ভুয়া সংস্থার নামে টাকা তোলা হতো। ব্যাংক থেকে ৩০০ কোটি টাকা বেআইনি লেনদেন হয় বলে খবর।
ইডি সূত্রে খবর, সুকুমার মৃধা মাছ ব্যবসার আড়ালে হাওলার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে টাকা এনে এদেশে বিভিন্ন জায়গায় জমি কেনে। অশোক নগরে একাধিক বাড়ি ও দোকান রয়েছে সুকুমার মৃধার। এর সঙ্গে যে নাম উঠে আসছে প্রশান্ত হালদার তার মারফত এদেশে টাকা নিয়ে আসে সুকুমার মৃধা। এদিন অশোক নগরে সুকুমার মৃধাসহ প্রণব হালদার ও স্বপন মিশ্রর বাড়িতে একযোগে হানা দেন ইডির আধিকারীকরা।
সুকুমার মৃধার সঙ্গে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তির ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ থেকে হাওয়ালার যে টাকা আসত পাঠানো হতো একাধিক ব্যবসায়। আর এভাবেই পিকের অবৈধ টাকায় এদেশেও জেঁকে ব্যবসা শুরু করেছেন পিকের বিশ্বস্ত সঙ্গী সুকুমার মৃধা। ইডির স্ক্যানারে ধরা পড়েছে সুকুমার ও ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নানা কার্যকলাপ।
জানা গেছে, অশোক নগরে সুকুমারের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশকিছু নথি হাতে পেয়েছেন ইডি আধিকারীকরা। তাতে পিকের যোগের তথ্য রয়েছে।
কৃষক পরিবারে জম্ম নেয়া এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার ভারত ছাড়াও সিঙ্গাপুর, কানাডা এবং মালয়েশিয়াসহ একাধিক দেশে টাকা পাচার করেছেন। পাচার করা অর্থে কানাডার টরোন্টোটে বাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদকের) অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
দুদকের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দেশের যে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে তার মধ্যে সিংহভাগ অর্থ দেশে পিকের বিভিন্ন সহযোগীদের কাছে রয়েছে। পিকে ৫০০ কোটি টাকার মতো দেশের বাইরে পাচার করেছেন। এর মধ্যে ভারতেই পাচার করেছেন ৪০০ কোটি টাকা। ভারতে পাচার করা টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন দেশটির বিভিন্ন এলাকায়।
ভারতের ইডি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, প্রশান্ত কুমার হালদার পশ্চিমবঙ্গে নিজেকে শিবশঙ্কর হালদার নামে পরিচয় দিয়ে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়েছেন। তিনি জালিয়াতি করে রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, প্যান কার্ড ও আধার কার্ড নিয়েছিলেন। তার সহযোগীরাও সেখানে জালিয়াতি করে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৯ সালে কানাডায় পালিয়ে গেলেও পিকে হালদার ভারতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন বলে তারা ধারণা করছেন। স্থায়ীভাবে আত্মগোপন করে থাকার জন্যই তিনি জালিয়াতি করে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন। যাতে কেউ তার কোন খোঁজ না পায়।
২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধান শেষে দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ বাদী হয়ে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলার পর তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চায় দুদক। কিন্তু সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান পিকে হালদার। পরে সেখান থেকে কানাডার টরোন্টোতে গিয়ে উঠেন। কানাডায় যে টাকা পাচার করেছিলেন পিকে হালদার সে টাকায় টরোন্টতে বিলাসবহুল বাড়ি কেনার পাশাপাশি কোম্পানি খুলেন। সেই কোম্পানির মাধ্যমে সেখানে নির্বিঘ্নে ব্যবসা শুরু করেন।
বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার পর প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে পিপল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সকে দেউলিয়া করে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। দেউলিয়া ঘোষণা করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপপরিচালক) গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বাধীন টিম পিকের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপল লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতের অনুসন্ধানে নামে।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, অনুসন্ধানে নেমে দুদকের কাছে তথ্য আসে শুধু পিপলস লিজিংই নয় এরকম আরও ৩টি প্রতিষ্ঠানসহ ৪ প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া করে পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার জানান, ফ্যাইন্যান্স এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং দেউলিয়া করে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেন পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা। প্রথমে পিপল লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতের অনুসন্ধানে নেমে দুদক সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার প্রমাণ পায়। পরে অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেও দেউলিয়া করে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিলে। তার বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি মামলা দায়ের হয়েছে।
শনিবার, ১৪ মে ২০২২
প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট কর্মকর্তারা। তার সঙ্গে এক নারীসহ আরও ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। শনিবার (১৪ মে) তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পিকে হালদারের বিরুদ্ধে এনআরবি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে একাধিক মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এর মধ্যে পিকে ভারতে পাচার করেছে ৪০০ কোটির বেশি টাকা।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে কলকাতায় বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন পিকে। সেখানে ৯টি বাড়িসহ বিপুল পরিমাণ জমি ক্রয় করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে ভারতের ইডি। এছাড়া ভারতের আধার কার্ড, রেশন কার্ডসহ নিজের নামে বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরি করেছেন বলে জানা গেছে। কলকাতায় তিনি শিবশঙ্কর হালদার নামে বসবাস করছিলেন। পিকে হালদার বহুদিন ধরেই পলাতক।
শনিবার উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোক নগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়ছে বলে ইডি সূত্র জানায়। এর আগে শুক্রবার (১৩ মে) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোক নগরে সুকুমার মৃধা নামের পিকে হালদারের এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির তিন বাড়িতে অভিযান চালায় ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
অশোক নগরে সুকুমার মৃধার নামে তিনটি বড় ভবন রয়েছে। এলাকাবাসী তাকে মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে চেনেন। তবে সুকুমার মৃধা বাংলাদেশের পিকে হালদারের ঘনিষ্ঠজন বলে ইডি জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে ইডির সদর দপ্তর সিজিও কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করা হলে জনৈক কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার সবাইকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ১০ জায়গায় অভিযানের খবর শুক্রবার ভারতের সংবাদ মাধ্যমে এসেছিল।
ইডি এই অভিযান চালায় পিকে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা, প্রীতিশ কুমার হালদার, প্রাণেশ কুমার হালদার এবং তাদের সহযোগীদের নামে থাকা বাড়ি ও সম্পত্তিতে। তাদের সবাইকে বাংলাদেশি নাগরিক উল্লেখ করে তাদের নামে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে সম্পত্তির খোঁজে পুলিশ ও তার সহযোগী সুকুমার মৃধার কলকাতা ও সংলগ্ন জেলায় বড় ধরনের অর্থ পাচার, বেআইনি আর্থিক লেনদেনসহ একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিস মিলেছে।
পলাতক এই অর্থ পাচারকারীর অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তির খোঁজ অপরাধীদের নাগালে পেতে শুক্রবার ভোরে কলকাতা ও অশোক নগর, দমদম, বাইপাস লাগোয়া মোট ৯টি স্থানে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তল্লাশি চালায় ভারতীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
ইডি সূত্রে জানা গেছে, কলকাতা ও হাওড়ার বড়বাজার দিয়ে বাংলাদেশের টাকা হাওলার হুন্ডি বিভিন্ন জায়গায় লেনদেন করা হচ্ছে এবং কোটি কোটি আর্থিক তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। অশোক নগরে তিনটি জায়গায় একসঙ্গে অভিযান চালান ইডি কর্তারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অশোক নগরের মাছ ব্যবসায়ী সুকুমার মৃধা মূলত বাংলাদেশে থাকেন। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সাতটি ভুয়া সংস্থার নামে টাকা তোলা হতো। ব্যাংক থেকে ৩০০ কোটি টাকা বেআইনি লেনদেন হয় বলে খবর।
ইডি সূত্রে খবর, সুকুমার মৃধা মাছ ব্যবসার আড়ালে হাওলার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে টাকা এনে এদেশে বিভিন্ন জায়গায় জমি কেনে। অশোক নগরে একাধিক বাড়ি ও দোকান রয়েছে সুকুমার মৃধার। এর সঙ্গে যে নাম উঠে আসছে প্রশান্ত হালদার তার মারফত এদেশে টাকা নিয়ে আসে সুকুমার মৃধা। এদিন অশোক নগরে সুকুমার মৃধাসহ প্রণব হালদার ও স্বপন মিশ্রর বাড়িতে একযোগে হানা দেন ইডির আধিকারীকরা।
সুকুমার মৃধার সঙ্গে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তির ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ থেকে হাওয়ালার যে টাকা আসত পাঠানো হতো একাধিক ব্যবসায়। আর এভাবেই পিকের অবৈধ টাকায় এদেশেও জেঁকে ব্যবসা শুরু করেছেন পিকের বিশ্বস্ত সঙ্গী সুকুমার মৃধা। ইডির স্ক্যানারে ধরা পড়েছে সুকুমার ও ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নানা কার্যকলাপ।
জানা গেছে, অশোক নগরে সুকুমারের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশকিছু নথি হাতে পেয়েছেন ইডি আধিকারীকরা। তাতে পিকের যোগের তথ্য রয়েছে।
কৃষক পরিবারে জম্ম নেয়া এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার ভারত ছাড়াও সিঙ্গাপুর, কানাডা এবং মালয়েশিয়াসহ একাধিক দেশে টাকা পাচার করেছেন। পাচার করা অর্থে কানাডার টরোন্টোটে বাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদকের) অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
দুদকের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দেশের যে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে তার মধ্যে সিংহভাগ অর্থ দেশে পিকের বিভিন্ন সহযোগীদের কাছে রয়েছে। পিকে ৫০০ কোটি টাকার মতো দেশের বাইরে পাচার করেছেন। এর মধ্যে ভারতেই পাচার করেছেন ৪০০ কোটি টাকা। ভারতে পাচার করা টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন দেশটির বিভিন্ন এলাকায়।
ভারতের ইডি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, প্রশান্ত কুমার হালদার পশ্চিমবঙ্গে নিজেকে শিবশঙ্কর হালদার নামে পরিচয় দিয়ে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়েছেন। তিনি জালিয়াতি করে রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, প্যান কার্ড ও আধার কার্ড নিয়েছিলেন। তার সহযোগীরাও সেখানে জালিয়াতি করে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৯ সালে কানাডায় পালিয়ে গেলেও পিকে হালদার ভারতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন বলে তারা ধারণা করছেন। স্থায়ীভাবে আত্মগোপন করে থাকার জন্যই তিনি জালিয়াতি করে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন। যাতে কেউ তার কোন খোঁজ না পায়।
২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধান শেষে দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ বাদী হয়ে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলার পর তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চায় দুদক। কিন্তু সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান পিকে হালদার। পরে সেখান থেকে কানাডার টরোন্টোতে গিয়ে উঠেন। কানাডায় যে টাকা পাচার করেছিলেন পিকে হালদার সে টাকায় টরোন্টতে বিলাসবহুল বাড়ি কেনার পাশাপাশি কোম্পানি খুলেন। সেই কোম্পানির মাধ্যমে সেখানে নির্বিঘ্নে ব্যবসা শুরু করেন।
বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার পর প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে পিপল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সকে দেউলিয়া করে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। দেউলিয়া ঘোষণা করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপপরিচালক) গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বাধীন টিম পিকের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপল লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতের অনুসন্ধানে নামে।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, অনুসন্ধানে নেমে দুদকের কাছে তথ্য আসে শুধু পিপলস লিজিংই নয় এরকম আরও ৩টি প্রতিষ্ঠানসহ ৪ প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া করে পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার জানান, ফ্যাইন্যান্স এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং দেউলিয়া করে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেন পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা। প্রথমে পিপল লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতের অনুসন্ধানে নেমে দুদক সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার প্রমাণ পায়। পরে অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেও দেউলিয়া করে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিলে। তার বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি মামলা দায়ের হয়েছে।