দুই মামলায় মৃত্যুদন্ড, ২ টিতে যাব্জীবন সাজা
মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত আসামি জঙ্গি নেতা আব্দুল হাই দেশে বিদেশে জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষণসহ বোমা হামলার নানা কাহিনী স্বীকার করেছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশের (হুজ্জি-বি) এই প্রতিষ্ঠাতাকে গত বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা, ২টি মামলায় মৃত্যুদন্ড ও ২টি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে মোট ১৩টি মামলা রয়েছে।
র্যাব হেডকোয়াটার্সের মিডিয়া শাখা থেকে বলা হয়েছে,র্যাব ফোর্সের জঙ্গি সেল দেশে বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার বিভিন্ন মামলা নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। তারা জঙ্গি হামলার ঘটনায় কয়েকজন পলাতক জঙ্গি নেতার খোজ খবর নিচ্ছিল।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার পলাতক আসামি জঙ্গি ইকবাল রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পলাতক জঙ্গি মুফতি শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভিত্তিতে পলাতক অন্যান্য জঙ্গিদের সম্পর্কে তারা খোজ খবর নেয়া শুরু করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার র্যাব-২ নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থেকে ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুতে রেখে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা ও রমনা বটমুলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত এবং একাধিক মামলার যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল হাই (৫৭) গ্রেফতার করে।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এ জঙ্গি বলেছে, সে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ মাদ্রাসায় ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত হেফজ বিভাগে পড়ালেখা করে। এরপর ১৯৮১ সালে অবৈধ ভাবে পাশ্ববর্তী দেশে গিয়ে দেওবন্ধ দারুল উলুম মাদ্রাসায় লেখাপড়ার জন্য ভর্তি হয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দেওবন্ধে পড়ালেখা করে মাস্টার্স সমতুল্য দাওয়াতে হাদিস সম্পন্ন করে। এরপর দেওবন্ধ থেকে ১৯৮৫ সালের শেষের দিকে ওই দেশের নাগরিক হিসেবে একটি পাসপোর্ট তৈরী করে ওই দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে আসে।
১৯৮৬ সালে পূর্ণরায় ওই দেশে (ভারত) প্রত্যাবর্তন করে। পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পাকিস্তানী ভিসা নিয়ে ট্রেন যোগে পাকিস্তানের করাচীতে যায়। সেখানে একটি মাদ্রাসা থেকে ২ বছরের ইফতা কোর্স সম্পন্ন করে মুফতি টাইটেল অর্জন করে।
১৯৮৯ সালে সেখানে বাংলাদেশের কয়েকজন জঙ্গি সদস্য ও ৩০ থেকে ৩৫ জন পাকিস্তানী নাগরিক একত্রিত হয়ে একটি ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানী এক এক হুজ্জি নেতা এবং বাংলাদেশী এক জঙ্গির নেতৃত্বে অত্যাধুনিক অস্ত্র একে-৪৭ রাইফেল ও থ্রি নট থ্রি রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ নেয়। এরপর আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে। ১৯৯১ সালে সে বাংলাদেশে ফিরে আসে।
দেশে ফিরে হুজ্জি-বি (হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামি বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। ওই সময় আমির হিসেবে নির্বাচিত হয় গ্রেফতারকৃত এই মুফতি আব্দুল হাই। এরপর মুফতি আব্দুল হাই বাংলাদেশে আমির হিসেবে বাংলাদেশে আসে। ১৯৯১ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমের হরকাতুল জিহাদ নামে প্রচারণা শুরু করে।
১৯৯২ সালের প্রথম দিকে গ্রেফতারকৃত আব্দুল হাই কক্্রবাজারের উখিয়া একটি মাদ্রাসায় যায। সেখানে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করে। পাশ্ববর্তী দেশের এক জঙ্গি নেতা ওই ট্রেনিং ক্যাম্পে অস্ত্র সরবরাহ করত। গ্রেফতারকৃত মুফতি আব্দুল হাই ও তার দুই সহযোগী সেখানে প্রশিক্ষণ দিত। টানা ৪ বছর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলে। ১৯৯৬ সালে যৌথবাহিনীর অভিযানে উক্ত ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে ৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত মুফতি আব্দুল হাই জাগো মুজাহিদ নামে মাসিক পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন। পত্রিকাটি ১৯৯১ সালে চালু হয়। তার অফিস রাজধানীর খিলগাও থানাদীন তালতলায় ছিল। ২০০০ সালে সরকার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করে। গ্রেফতারকৃত মুফতি আব্দুল হাই ২০০০ সালে উক্ত পত্রিকা অফিস থেকে গ্রেফতার হয়। দুই মাস কারাভোগ শেষে সে জামিনে মুক্তি পায়।
জঙ্গি আব্দুল হাই ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলে বোমাপুতে রেখে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। ২০০১ সালে রমনাবটমূলে বোমা হামলা,২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা,২০০৫ সালে ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলাসহ নানা অপকর্মে জড়িত।
২০০৬ সালে মুফতি আব্দুল হাই আত্মগোপনে যায়। আর পরিবার নারায়নগঞ্জের বসবাস করত। আর সে কুমিল্লায় গোরিপুরে তার শ্বশুর বাড়িতে আত্মগোপন করে। সেখানে কিছুদিন কেরোসিন ও সোয়াবিন তেলের ডিলাশিপের ব্যবসা করত। আর রাতে দোকানে কাটাত। মাঝে মধ্যে নারায়নগঞ্জের যাতায়াত করত। সে তার সকল ঠিকনা পরিবর্তন করে নারায়নগঞ্জে স্থায়ী ভাবে বসবাস করত। সর্বশেষ র্যাব-২ গত রাতে ফতুল্লা থানার হাজিগঞ্জ এলাকার বর্তমান ঠিকানা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব হেডকোয়াটার্সের মিডিয়া শাখার কর্মকর্তারা বলেন, তারা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে গতকাল পর্যন্ত ২ হাজার ৮শ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছে।
জাঙ্গি আব্দুল হাইয়ের দেয়া তথ্য মতে,পলাতক অন্যদেরকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।
দুই মামলায় মৃত্যুদন্ড, ২ টিতে যাব্জীবন সাজা
বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২
মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত আসামি জঙ্গি নেতা আব্দুল হাই দেশে বিদেশে জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষণসহ বোমা হামলার নানা কাহিনী স্বীকার করেছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশের (হুজ্জি-বি) এই প্রতিষ্ঠাতাকে গত বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা, ২টি মামলায় মৃত্যুদন্ড ও ২টি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে মোট ১৩টি মামলা রয়েছে।
র্যাব হেডকোয়াটার্সের মিডিয়া শাখা থেকে বলা হয়েছে,র্যাব ফোর্সের জঙ্গি সেল দেশে বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার বিভিন্ন মামলা নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। তারা জঙ্গি হামলার ঘটনায় কয়েকজন পলাতক জঙ্গি নেতার খোজ খবর নিচ্ছিল।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার পলাতক আসামি জঙ্গি ইকবাল রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পলাতক জঙ্গি মুফতি শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভিত্তিতে পলাতক অন্যান্য জঙ্গিদের সম্পর্কে তারা খোজ খবর নেয়া শুরু করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার র্যাব-২ নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থেকে ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুতে রেখে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা ও রমনা বটমুলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত এবং একাধিক মামলার যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল হাই (৫৭) গ্রেফতার করে।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এ জঙ্গি বলেছে, সে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ মাদ্রাসায় ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত হেফজ বিভাগে পড়ালেখা করে। এরপর ১৯৮১ সালে অবৈধ ভাবে পাশ্ববর্তী দেশে গিয়ে দেওবন্ধ দারুল উলুম মাদ্রাসায় লেখাপড়ার জন্য ভর্তি হয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দেওবন্ধে পড়ালেখা করে মাস্টার্স সমতুল্য দাওয়াতে হাদিস সম্পন্ন করে। এরপর দেওবন্ধ থেকে ১৯৮৫ সালের শেষের দিকে ওই দেশের নাগরিক হিসেবে একটি পাসপোর্ট তৈরী করে ওই দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে আসে।
১৯৮৬ সালে পূর্ণরায় ওই দেশে (ভারত) প্রত্যাবর্তন করে। পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পাকিস্তানী ভিসা নিয়ে ট্রেন যোগে পাকিস্তানের করাচীতে যায়। সেখানে একটি মাদ্রাসা থেকে ২ বছরের ইফতা কোর্স সম্পন্ন করে মুফতি টাইটেল অর্জন করে।
১৯৮৯ সালে সেখানে বাংলাদেশের কয়েকজন জঙ্গি সদস্য ও ৩০ থেকে ৩৫ জন পাকিস্তানী নাগরিক একত্রিত হয়ে একটি ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানী এক এক হুজ্জি নেতা এবং বাংলাদেশী এক জঙ্গির নেতৃত্বে অত্যাধুনিক অস্ত্র একে-৪৭ রাইফেল ও থ্রি নট থ্রি রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ নেয়। এরপর আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে। ১৯৯১ সালে সে বাংলাদেশে ফিরে আসে।
দেশে ফিরে হুজ্জি-বি (হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামি বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। ওই সময় আমির হিসেবে নির্বাচিত হয় গ্রেফতারকৃত এই মুফতি আব্দুল হাই। এরপর মুফতি আব্দুল হাই বাংলাদেশে আমির হিসেবে বাংলাদেশে আসে। ১৯৯১ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমের হরকাতুল জিহাদ নামে প্রচারণা শুরু করে।
১৯৯২ সালের প্রথম দিকে গ্রেফতারকৃত আব্দুল হাই কক্্রবাজারের উখিয়া একটি মাদ্রাসায় যায। সেখানে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করে। পাশ্ববর্তী দেশের এক জঙ্গি নেতা ওই ট্রেনিং ক্যাম্পে অস্ত্র সরবরাহ করত। গ্রেফতারকৃত মুফতি আব্দুল হাই ও তার দুই সহযোগী সেখানে প্রশিক্ষণ দিত। টানা ৪ বছর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলে। ১৯৯৬ সালে যৌথবাহিনীর অভিযানে উক্ত ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে ৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত মুফতি আব্দুল হাই জাগো মুজাহিদ নামে মাসিক পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন। পত্রিকাটি ১৯৯১ সালে চালু হয়। তার অফিস রাজধানীর খিলগাও থানাদীন তালতলায় ছিল। ২০০০ সালে সরকার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করে। গ্রেফতারকৃত মুফতি আব্দুল হাই ২০০০ সালে উক্ত পত্রিকা অফিস থেকে গ্রেফতার হয়। দুই মাস কারাভোগ শেষে সে জামিনে মুক্তি পায়।
জঙ্গি আব্দুল হাই ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলে বোমাপুতে রেখে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। ২০০১ সালে রমনাবটমূলে বোমা হামলা,২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা,২০০৫ সালে ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলাসহ নানা অপকর্মে জড়িত।
২০০৬ সালে মুফতি আব্দুল হাই আত্মগোপনে যায়। আর পরিবার নারায়নগঞ্জের বসবাস করত। আর সে কুমিল্লায় গোরিপুরে তার শ্বশুর বাড়িতে আত্মগোপন করে। সেখানে কিছুদিন কেরোসিন ও সোয়াবিন তেলের ডিলাশিপের ব্যবসা করত। আর রাতে দোকানে কাটাত। মাঝে মধ্যে নারায়নগঞ্জের যাতায়াত করত। সে তার সকল ঠিকনা পরিবর্তন করে নারায়নগঞ্জে স্থায়ী ভাবে বসবাস করত। সর্বশেষ র্যাব-২ গত রাতে ফতুল্লা থানার হাজিগঞ্জ এলাকার বর্তমান ঠিকানা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব হেডকোয়াটার্সের মিডিয়া শাখার কর্মকর্তারা বলেন, তারা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে গতকাল পর্যন্ত ২ হাজার ৮শ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছে।
জাঙ্গি আব্দুল হাইয়ের দেয়া তথ্য মতে,পলাতক অন্যদেরকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।