ভাগ্যের পরিবর্তন করতে নির্যাতন ছাড়া কিছুই মেলেনি
অভাবী সংসারের চাকা সচল করে সুখের আশায় সৌদি আরব গিয়ে নির্যাতনের শিকার দুই নারী। এদের একজন যান ৯ মাস আগে আরেকজন যান ৬ মাস আগে। ঢাকার পল্টনে রিক্রুটিং এজেন্সি মের্সার্স কনকর্ড অ্যাপেক্স এ দুই নারীকে পাঠায় মোটা বেতনে চাকরি দেয়ার কথা বলে। কিন্তু যাওয়ার পরপরই নিয়মিত বেতন না পাওয়া, মারধরসহ শারীরিক নির্যতন ছাড়া এ দুই নারীর ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। সেখানে অন্য বাঙালিদের সহযোগিতায় নিজেদের করুণ পরিণতির কথা দেশের স্বজনদের কোনমতে জানিয়েছিলেন। স্বজনদের অভিযোগের পর র্যাব সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির মালিককে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি দুই নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়।
গতকাল শনিবার (১৩ আগস্ট) রাতে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ওই দুই নারী শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরে। সৌদি জীবনের করুণ পরিণতির কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন। স্বজনদের দেখেই যেন আপন ভুবন তারা ফিরে পান।
র্যাব জানিয়েছে ‘মেসার্স কনকর্ড অ্যাপেক্স’ নামের ওই রিক্রুটিং এজেন্সির বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর সরকারি অনুমোদন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি লাইসেন্সধারী হলেও এর সুযোগ নিয়ে চাকরির নামে প্রতারণা করাই তাদের মূল কাজ। অসহায় নারীদের মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়ে অবৈধকাজ ও নির্যাতন করতো এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তবে তাদের নামে যাতে কেউ কোন অভিযোগ করতে না পারে এ জন্য নারীদের বিদেশে পাঠানোর আগে একটি কাগজে সই করিয়ে নিত এজেন্সি। যাতে লেখা থাকতো- ‘বিদেশ যাওয়ার পর কোথাও কোন অভিযোগ করবো না এবং সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে কোন ক্ষতিপূরণ দাবি করবো না।’ আর এজন্য এজেন্সিটি এমন সব অসহায় মানুষকে টার্গেট করতো যাদের বলার কোন জায়গা নেই। এমনই দুই নারী দেশে ফিরেছে নির্যাতনের শিকার হয়ে যারা কনকর্ড অ্যাপেক্স নামে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরব গিয়েছে।
র্যাব জানায়, দেশে ফেরত আসা ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজনকে ৯ মাস এবং আরেকজনকে ছয় মাস আগে সৌদি আরব পাঠানো হয়। মেসার্স কনকর্ড অ্যাপেক্স এজেন্সির সঙ্গে তাদের চুক্তি ছিল, সৌদি গিয়ে চাকরি পাবেন। কিন্তু সৌদি পৌঁছানোর পর তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়া হয়। কাজের নামে চালে অমানবিক নির্যাতন। এই নারীদের একজন মাত্র তিন মাসের বেতন পেয়েছেন। বাকি মাসগুলো তার ওপর নির্যাতন চলে। আর আরেকজন নারী দুই মাসের বেতন পান।
ভুক্তভোগী একজন নারী বলেন, তাকে আটকে রেখে মারধর ও নির্যাতন করা হয়েছে। পরে একজন বাঙালির সহায়তায় তার স্বামীর কাছে বিষয়টি জানানো হয়। ওই নারী বলেন, অনেক মানুষ নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। আপনারা যদি পারেন তাদের সাহায্য করেন।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, সৌদি আরবে বিক্রির প্রস্তুতি চলছিল ওই নারীদের। ওই দুই নারী র্যাবকে জানিয়েছে তাদের মতো এমন আরও শতাধিক নারী রয়েছে যারা সৌদি আরবে নির্যাতিত হচ্ছে নিয়মিত। ওইসব নারীদের দালাল আটকে রেখেছে। বিষয়টি তদন্ত করবে র্যাব।
র্যাব জানিয়েছে ওই দুই নারীর স্বজনদের অভিযোগের পরিপেক্ষিতে সম্প্রতি রাজধানীর পল্টনে সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্সে অভিযান চালানো হয় রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স কনকর্ড অ্যাপেক্স নামের ওই এজেন্সিতে। পরে এজেন্সির মালিক আবুল হোসেন (৫৪) ও তার সহযোগী আলেয়া বেগমকে (৫০) গ্রেপ্তার করা হয়। আলেয়া বেগম মালিক আবুল হোসেনের সহযোগী হয়ে বিভিন্ন নারীদের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসতো। আর এজেন্সির মালিক এসব নারীদের সৌদি আরবে পাঠাতো।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান কনকর্ড অ্যাপেক্স নামের প্রতিষ্ঠানটি দেশের প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামীর সংসারে নির্যাতিত নারীদের টার্গেট করে বিদেশে ভালো বেতন ও বিনামূল্যে হজ করার প্রলোভন দেখাতো। এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার নারী শ্রমিককে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে তারা। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার পর প্রতিশ্রুতির কোন কিছুই বাস্তবায়ন করা হতো না বরং বিভিন্ন অবৈধকাজে বাধ্য করা হতো নারীদের।
‘কোন ঝামেলা হলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে না এমন চুক্তিও করেছিল ভুক্তভোগীদের সঙ্গে। অবৈধপথে তাদের সৌদি পাঠিয়েছিল লাইসেন্সধারী এজেন্সিটি। এমনিভাবে যেসব নারীদের কাজের কথা বলে সৌদিতে পাঠাতো তাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই করিয়ে নেয়া হতো।’
ভাগ্যের পরিবর্তন করতে নির্যাতন ছাড়া কিছুই মেলেনি
রোববার, ১৪ আগস্ট ২০২২
অভাবী সংসারের চাকা সচল করে সুখের আশায় সৌদি আরব গিয়ে নির্যাতনের শিকার দুই নারী। এদের একজন যান ৯ মাস আগে আরেকজন যান ৬ মাস আগে। ঢাকার পল্টনে রিক্রুটিং এজেন্সি মের্সার্স কনকর্ড অ্যাপেক্স এ দুই নারীকে পাঠায় মোটা বেতনে চাকরি দেয়ার কথা বলে। কিন্তু যাওয়ার পরপরই নিয়মিত বেতন না পাওয়া, মারধরসহ শারীরিক নির্যতন ছাড়া এ দুই নারীর ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। সেখানে অন্য বাঙালিদের সহযোগিতায় নিজেদের করুণ পরিণতির কথা দেশের স্বজনদের কোনমতে জানিয়েছিলেন। স্বজনদের অভিযোগের পর র্যাব সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির মালিককে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি দুই নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়।
গতকাল শনিবার (১৩ আগস্ট) রাতে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ওই দুই নারী শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরে। সৌদি জীবনের করুণ পরিণতির কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন। স্বজনদের দেখেই যেন আপন ভুবন তারা ফিরে পান।
র্যাব জানিয়েছে ‘মেসার্স কনকর্ড অ্যাপেক্স’ নামের ওই রিক্রুটিং এজেন্সির বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর সরকারি অনুমোদন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি লাইসেন্সধারী হলেও এর সুযোগ নিয়ে চাকরির নামে প্রতারণা করাই তাদের মূল কাজ। অসহায় নারীদের মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়ে অবৈধকাজ ও নির্যাতন করতো এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তবে তাদের নামে যাতে কেউ কোন অভিযোগ করতে না পারে এ জন্য নারীদের বিদেশে পাঠানোর আগে একটি কাগজে সই করিয়ে নিত এজেন্সি। যাতে লেখা থাকতো- ‘বিদেশ যাওয়ার পর কোথাও কোন অভিযোগ করবো না এবং সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে কোন ক্ষতিপূরণ দাবি করবো না।’ আর এজন্য এজেন্সিটি এমন সব অসহায় মানুষকে টার্গেট করতো যাদের বলার কোন জায়গা নেই। এমনই দুই নারী দেশে ফিরেছে নির্যাতনের শিকার হয়ে যারা কনকর্ড অ্যাপেক্স নামে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরব গিয়েছে।
র্যাব জানায়, দেশে ফেরত আসা ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজনকে ৯ মাস এবং আরেকজনকে ছয় মাস আগে সৌদি আরব পাঠানো হয়। মেসার্স কনকর্ড অ্যাপেক্স এজেন্সির সঙ্গে তাদের চুক্তি ছিল, সৌদি গিয়ে চাকরি পাবেন। কিন্তু সৌদি পৌঁছানোর পর তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়া হয়। কাজের নামে চালে অমানবিক নির্যাতন। এই নারীদের একজন মাত্র তিন মাসের বেতন পেয়েছেন। বাকি মাসগুলো তার ওপর নির্যাতন চলে। আর আরেকজন নারী দুই মাসের বেতন পান।
ভুক্তভোগী একজন নারী বলেন, তাকে আটকে রেখে মারধর ও নির্যাতন করা হয়েছে। পরে একজন বাঙালির সহায়তায় তার স্বামীর কাছে বিষয়টি জানানো হয়। ওই নারী বলেন, অনেক মানুষ নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। আপনারা যদি পারেন তাদের সাহায্য করেন।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, সৌদি আরবে বিক্রির প্রস্তুতি চলছিল ওই নারীদের। ওই দুই নারী র্যাবকে জানিয়েছে তাদের মতো এমন আরও শতাধিক নারী রয়েছে যারা সৌদি আরবে নির্যাতিত হচ্ছে নিয়মিত। ওইসব নারীদের দালাল আটকে রেখেছে। বিষয়টি তদন্ত করবে র্যাব।
র্যাব জানিয়েছে ওই দুই নারীর স্বজনদের অভিযোগের পরিপেক্ষিতে সম্প্রতি রাজধানীর পল্টনে সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্সে অভিযান চালানো হয় রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স কনকর্ড অ্যাপেক্স নামের ওই এজেন্সিতে। পরে এজেন্সির মালিক আবুল হোসেন (৫৪) ও তার সহযোগী আলেয়া বেগমকে (৫০) গ্রেপ্তার করা হয়। আলেয়া বেগম মালিক আবুল হোসেনের সহযোগী হয়ে বিভিন্ন নারীদের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসতো। আর এজেন্সির মালিক এসব নারীদের সৌদি আরবে পাঠাতো।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান কনকর্ড অ্যাপেক্স নামের প্রতিষ্ঠানটি দেশের প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামীর সংসারে নির্যাতিত নারীদের টার্গেট করে বিদেশে ভালো বেতন ও বিনামূল্যে হজ করার প্রলোভন দেখাতো। এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার নারী শ্রমিককে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে তারা। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার পর প্রতিশ্রুতির কোন কিছুই বাস্তবায়ন করা হতো না বরং বিভিন্ন অবৈধকাজে বাধ্য করা হতো নারীদের।
‘কোন ঝামেলা হলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে না এমন চুক্তিও করেছিল ভুক্তভোগীদের সঙ্গে। অবৈধপথে তাদের সৌদি পাঠিয়েছিল লাইসেন্সধারী এজেন্সিটি। এমনিভাবে যেসব নারীদের কাজের কথা বলে সৌদিতে পাঠাতো তাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই করিয়ে নেয়া হতো।’