মাধ্যমিকে পাইলটিং শুরু হলেও প্রাথমিকে তা আগস্টে
নতুন শিক্ষাক্রমে পাকছে তালগোল। প্রায় দুইমাস দেরিতে মাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হয়েছে। শিক্ষাবর্ষের চারমাস গেলেও প্রাথমিকে এর পাইলটিং শুরু করতে পারেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় না করেই ২০১২ শিক্ষাবর্ষের ‘শিক্ষাক্রম’কে কিছুটা পরিমার্জনের মাধ্যমে শিক্ষাক্রম ‘চূড়ান্ত’ করেছে। প্রাথমিকের ৬৫টি বিদ্যালয়ে আগামী আগস্টে পাইলটিংয়ের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এদিকে মাধ্যমিক শিক্ষার স্তরে ‘অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন’ কার্যক্রমের পাইলটিংয়ের পাশাপাশি এখন ‘স্টেম’ভিত্তিক শিখনের পাইলটিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একাধিক সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওইসব সভায় ‘স্টেম’ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর একাধিক ‘প্রেজেন্টেশন’ উপস্থাপন হয়েছে। বিষয়টি এখন আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই দুই ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এর একটি হলো ‘অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন’। অন্যটি হলো- ‘স্টেম বা এসটিইএম; অর্থাৎ ‘সায়েন্স’, ‘টেকনোলজি’, ‘ইঞ্জিনিয়ারিং’ ও ‘ম্যাথমেটিকস’। স্টেম বলতে জ্ঞান, বিজ্ঞান, যুক্তি ও প্রযুক্তিনির্ভর শিখন কার্যক্রমকে বোঝানো হয়েছে।
জানা গেছে, ‘স্টেম’ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের পরীক্ষামূলক পাঠদান শুরুর বিষয়ে গত ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক-৭ এর সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে এই কার্যক্রমের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বিষয়ে একটি ‘গবেষণামূলক প্রেজেন্টেশন’ উপস্থাপন করা হয়।
সভায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশেই স্টেমভিত্তিক শিখন কার্যক্রম চালু আছে। আমাদের দেশেও যেহেতু নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হয়েছে; এর সঙ্গে স্টেমভিত্তিক শিখন কার্যক্রমেরও পাইলটিং করা যায় কি-না সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিষয়টি দেখছে।’
প্রস্তুতির অভাবে সীমিত পাইলটিং
চলতি শিক্ষাবর্ষে ১০০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির ঘাটতি ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণে এই কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। এখন স্কুলের সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি দুই শ্রেণীর পরিবর্তে এক শ্রেণীতে পাইলটিং হচ্ছে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক স্তরের ৬২টি স্কুলে শুধুমাত্র ‘৬ষ্ঠ শ্রেণীতে’ নতুন শিক্ষাক্রমে পাইলটিং বা পরীক্ষামূলক ক্লাস শুরু হয়েছে। একই সময়ে ১০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষামূলক পাঠ্যদান শুরু কথা থাকলেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাবে তা পারেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন করে আগামী আগস্টে প্রাথমিকের ৬৫টি বিদ্যালয়ে পরীক্ষামূলক শিখন কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
২০২২ শিক্ষাবর্ষে পাইলটিং শুরু হয়ে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষাক্রমের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছেন, ২০২৩ সাল থেকে এটি ধাপে ধাপে চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এভাবে দ্বাদশ শ্রেণীতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রমের পূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ পর্ব শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে শিক্ষা প্রশাসনের।
এনসিটিবি জানিয়েছে, ২০১২ সালে সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। এর আগে ১৯৯৫ ও ১৯৭৬ সালে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। সরকার ২০১০ সালে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ প্রণয়ন করলেও এর অনেক কিছুই বাস্তবায়নের বাকি রয়েছে।
প্রাথমিকে নতুন নয়, পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম
শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে ২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন কারিকুলামে (শিক্ষাক্রম) প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান শুরুর পরিকল্পনা নিয়েছিল। এজন্য ২০২০ সালের শুরু থেকেই নতুন কারিকুলাম প্রণয়নের কাজ শুরু করে এনসিটিবি।
করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে প্রায় দুই বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ছিল। তবে এনসিটিবি পুরোদমেই সচল ছিল, প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা পাঠ্যপুস্তক ছেপে বিতরণ করেছে। আটকে যায় শুধুমাত্র নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের কাজ।
পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২ জুন দুই মন্ত্রণালয়ের এক যৌথ সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু সম্ভব নয়।
২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপন বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দেন, ২০২২ শিক্ষাবর্ষ থেকেই নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হবে। এর আলোকেই প্রাথমিক স্তরের ১০০টি বিদ্যালয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী এবং মাধ্যমিকের ১০০টি বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (মাধ্যমিক) সঙ্গে সমন্বয় না করেই এবং পাইলটিংয়ের আগেই প্রাথমিক স্তরের বিস্তারিত শিক্ষাক্রম অনুমোদন দিয়েছে প্রাথমিকের ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি’ (এনসিসিসি)। এ ক্ষেত্রে মাধ্যমিকের শেখানোর প্রক্রিয়া বা শিখনের সঙ্গে প্রাথমিক স্তরে শিখন প্রক্রিয়ায় মিল নেই। কারণ প্রাথমিকের জন্য নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন হয়নি; ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমকেই কিছুটা পরিমার্জন করে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মাধ্যমিকের নতুন শিক্ষাক্রমে ‘অভিজ্ঞতাভিত্তিক’ শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর প্রাথমিকে ‘অ্যাকটিভ লার্নিং’র বা সক্রিয় শিখনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সক্রিয় শিখন শিক্ষার্থীকে শিখনের ওপর আত্মনিয়ন্ত্রণ চর্চার সুযোগ করে দেয়; যা অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন ধারণার একটি উপায় মাত্র। অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনে অনেকগুলো ধাপ অনুসরণ করে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ অর্জন করে তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পায়।
প্রাথমিকের নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান সংবাদকে বলেছেন, ‘আমরা নতুন বলি না, আমরা বলি পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম। পরিমার্জিত হলেও এর পাইলটিং হবে। গত ২৩ মার্চ এটি চূড়ান্ত হয়েছে।’
৬৫টি বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণীতে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের পাইলটিং হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পাইলটিং আগস্টে শুরু করবো। এখন বই লেখার কাজ চলছে। বই হয়ে গেলে আমরা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেব।’
পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে নতুন কী কী বিষয় থাকছে জানতে চাইলে ড. রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘এবার শক্তভাবে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। আমরা যে রূপরেখা তৈরি করেছি সেখানে ২১ শতকের দক্ষতা, যোগ্যতা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এসব বিষয়ের ওপর যোগ্যতা-দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। যাতে বাচ্চারা কোডিং (প্রোগ্রামিং বা সংকেতলিপি) শিখতে পারে। এগুলোই বড় ধরনের পরিবর্তন।’
তিনি বলেন, ‘পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম অ্যাকটিভ লার্নিং হলেও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের সুযোগও রাখা হয়েছে।’
মাধ্যমিকে পাইলটিং শুরু হলেও প্রাথমিকে তা আগস্টে
রোববার, ০৮ মে ২০২২
নতুন শিক্ষাক্রমে পাকছে তালগোল। প্রায় দুইমাস দেরিতে মাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হয়েছে। শিক্ষাবর্ষের চারমাস গেলেও প্রাথমিকে এর পাইলটিং শুরু করতে পারেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় না করেই ২০১২ শিক্ষাবর্ষের ‘শিক্ষাক্রম’কে কিছুটা পরিমার্জনের মাধ্যমে শিক্ষাক্রম ‘চূড়ান্ত’ করেছে। প্রাথমিকের ৬৫টি বিদ্যালয়ে আগামী আগস্টে পাইলটিংয়ের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এদিকে মাধ্যমিক শিক্ষার স্তরে ‘অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন’ কার্যক্রমের পাইলটিংয়ের পাশাপাশি এখন ‘স্টেম’ভিত্তিক শিখনের পাইলটিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একাধিক সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওইসব সভায় ‘স্টেম’ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর একাধিক ‘প্রেজেন্টেশন’ উপস্থাপন হয়েছে। বিষয়টি এখন আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই দুই ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এর একটি হলো ‘অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন’। অন্যটি হলো- ‘স্টেম বা এসটিইএম; অর্থাৎ ‘সায়েন্স’, ‘টেকনোলজি’, ‘ইঞ্জিনিয়ারিং’ ও ‘ম্যাথমেটিকস’। স্টেম বলতে জ্ঞান, বিজ্ঞান, যুক্তি ও প্রযুক্তিনির্ভর শিখন কার্যক্রমকে বোঝানো হয়েছে।
জানা গেছে, ‘স্টেম’ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের পরীক্ষামূলক পাঠদান শুরুর বিষয়ে গত ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক-৭ এর সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে এই কার্যক্রমের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বিষয়ে একটি ‘গবেষণামূলক প্রেজেন্টেশন’ উপস্থাপন করা হয়।
সভায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশেই স্টেমভিত্তিক শিখন কার্যক্রম চালু আছে। আমাদের দেশেও যেহেতু নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হয়েছে; এর সঙ্গে স্টেমভিত্তিক শিখন কার্যক্রমেরও পাইলটিং করা যায় কি-না সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিষয়টি দেখছে।’
প্রস্তুতির অভাবে সীমিত পাইলটিং
চলতি শিক্ষাবর্ষে ১০০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির ঘাটতি ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণে এই কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। এখন স্কুলের সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি দুই শ্রেণীর পরিবর্তে এক শ্রেণীতে পাইলটিং হচ্ছে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক স্তরের ৬২টি স্কুলে শুধুমাত্র ‘৬ষ্ঠ শ্রেণীতে’ নতুন শিক্ষাক্রমে পাইলটিং বা পরীক্ষামূলক ক্লাস শুরু হয়েছে। একই সময়ে ১০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষামূলক পাঠ্যদান শুরু কথা থাকলেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাবে তা পারেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন করে আগামী আগস্টে প্রাথমিকের ৬৫টি বিদ্যালয়ে পরীক্ষামূলক শিখন কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
২০২২ শিক্ষাবর্ষে পাইলটিং শুরু হয়ে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষাক্রমের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছেন, ২০২৩ সাল থেকে এটি ধাপে ধাপে চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এভাবে দ্বাদশ শ্রেণীতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রমের পূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ পর্ব শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে শিক্ষা প্রশাসনের।
এনসিটিবি জানিয়েছে, ২০১২ সালে সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। এর আগে ১৯৯৫ ও ১৯৭৬ সালে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। সরকার ২০১০ সালে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ প্রণয়ন করলেও এর অনেক কিছুই বাস্তবায়নের বাকি রয়েছে।
প্রাথমিকে নতুন নয়, পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম
শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে ২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন কারিকুলামে (শিক্ষাক্রম) প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান শুরুর পরিকল্পনা নিয়েছিল। এজন্য ২০২০ সালের শুরু থেকেই নতুন কারিকুলাম প্রণয়নের কাজ শুরু করে এনসিটিবি।
করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে প্রায় দুই বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ছিল। তবে এনসিটিবি পুরোদমেই সচল ছিল, প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা পাঠ্যপুস্তক ছেপে বিতরণ করেছে। আটকে যায় শুধুমাত্র নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের কাজ।
পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২ জুন দুই মন্ত্রণালয়ের এক যৌথ সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু সম্ভব নয়।
২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপন বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দেন, ২০২২ শিক্ষাবর্ষ থেকেই নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হবে। এর আলোকেই প্রাথমিক স্তরের ১০০টি বিদ্যালয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী এবং মাধ্যমিকের ১০০টি বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (মাধ্যমিক) সঙ্গে সমন্বয় না করেই এবং পাইলটিংয়ের আগেই প্রাথমিক স্তরের বিস্তারিত শিক্ষাক্রম অনুমোদন দিয়েছে প্রাথমিকের ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি’ (এনসিসিসি)। এ ক্ষেত্রে মাধ্যমিকের শেখানোর প্রক্রিয়া বা শিখনের সঙ্গে প্রাথমিক স্তরে শিখন প্রক্রিয়ায় মিল নেই। কারণ প্রাথমিকের জন্য নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন হয়নি; ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমকেই কিছুটা পরিমার্জন করে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মাধ্যমিকের নতুন শিক্ষাক্রমে ‘অভিজ্ঞতাভিত্তিক’ শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর প্রাথমিকে ‘অ্যাকটিভ লার্নিং’র বা সক্রিয় শিখনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সক্রিয় শিখন শিক্ষার্থীকে শিখনের ওপর আত্মনিয়ন্ত্রণ চর্চার সুযোগ করে দেয়; যা অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন ধারণার একটি উপায় মাত্র। অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনে অনেকগুলো ধাপ অনুসরণ করে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ অর্জন করে তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পায়।
প্রাথমিকের নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান সংবাদকে বলেছেন, ‘আমরা নতুন বলি না, আমরা বলি পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম। পরিমার্জিত হলেও এর পাইলটিং হবে। গত ২৩ মার্চ এটি চূড়ান্ত হয়েছে।’
৬৫টি বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণীতে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের পাইলটিং হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পাইলটিং আগস্টে শুরু করবো। এখন বই লেখার কাজ চলছে। বই হয়ে গেলে আমরা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেব।’
পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে নতুন কী কী বিষয় থাকছে জানতে চাইলে ড. রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘এবার শক্তভাবে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। আমরা যে রূপরেখা তৈরি করেছি সেখানে ২১ শতকের দক্ষতা, যোগ্যতা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এসব বিষয়ের ওপর যোগ্যতা-দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। যাতে বাচ্চারা কোডিং (প্রোগ্রামিং বা সংকেতলিপি) শিখতে পারে। এগুলোই বড় ধরনের পরিবর্তন।’
তিনি বলেন, ‘পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম অ্যাকটিভ লার্নিং হলেও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের সুযোগও রাখা হয়েছে।’