‘পাইলটিং’ সম্পন্ন না করেই নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে আগামী শিক্ষাবর্ষে। নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর ডিসেম্বরে একযোগে মাসব্যাপী সারাদেশের ৫২০ উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে ২০২২ শিক্ষাবর্ষ সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন (শুক্র ও শনিবার) রাখা হয়েছে; আর ১২ বছর পূর্ণ না হলে অষ্টম শ্রেণীতে রেজিস্ট্রেশন নয়-এমন শর্ত রাখা হয়েছে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক স্তরের ৬২টি স্কুলে শুধুমাত্র ‘৬ষ্ঠ শ্রেণিতে’ নতুন শিক্ষাক্রমে পাইলটিং বা পরীক্ষামূলক ক্লাস শুরু হয়েছে। একই সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়েও নতুন শিক্ষাক্রমের পরীক্ষামূলক পাঠদান শুরুর পরিকল্পনা ছিল।
কিন্তু প্রাথমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম নয়, বিদ্যমান শিক্ষাক্রমই কিছুটা পরিমার্জন করে ‘পাইলটিং’য়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকের এই পাইলটিং আগামী আগস্টে শুরু করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এখন পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রাথমিকের বই লেখার কাজ চলছে বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শিক্ষাকে আনন্দময় করে তোলা এবং শ্রেণীকক্ষেই পাঠদান সম্পন্ন করার ব্যবস্থা রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন শিক্ষাক্রমের খসড়ায় সায় দিয়েছেন। ৩০ মে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) যৌথ সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়।
পাইলটিং সম্পন্ন না করেই নতুন শিক্ষাক্রমের চূড়ান্ত অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান সংবাদকে বলেন, ‘এখন এটি বাস্তবায়নে আর কোন সমস্যা নেই। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত পাইলটিং চলবে; সেটির ওপর রিপোর্ট হবে; এরপর ডিটেইলড কারিকুলামে যে চেঞ্জ করা দরকার সেটি করব।’
শিক্ষার্থীদের ‘পাইলটিং’ শেষে ডিসেম্বরে একমাস সারাদেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব ‘শিক্ষককে’ নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে ড. মশিউজ্জামান বলেন, ‘এর আগে আমরা মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করব। এরপর সব জেলার ৫২০টি উপজেলায় একযোগে শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু হবে।’
এনসিসিসি অনুমোদনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে আর কোন বাধা নেই উল্লেখ করে অধ্যাপক মশিউজ্জামান জানান, আগামী বছর থেকে ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়ন হবে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে মাধ্যমিক পর্যন্ত কোন বিভাগ-বিভাজন থাকবে না। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর সবাইকে পড়তে হবে ১০টি বিষয়। দশম শ্রেণীর পাঠ্যসূচির ওপর অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ শ্রেণীতে গিয়ে বিভাগ বাছাই করবে শিক্ষার্থীরা। একাদশ শ্রেণী শেষে পরীক্ষা এবং দ্বাদশ শ্রেণী শেষে পরীক্ষা নেয়া হবে। এ দুই পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে তৈরি হবে এইচএসসির ফল।
নতুন কারিকুলামে প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোন পরীক্ষা থাকবে না। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আটটি বই পড়বে হবে। এই স্তরে শিখনকালীন মূল্যায়নেই বেশি জোর দেয়া হয়েছে। বর্তমান পদ্ধতিতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা থাকছে না।
২০২৩ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হবে। ২০২৪ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণীতেও নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান হবে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণী, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে।
৩০ মের সভার বিষয়ে এনসিসিসির এক সদস্য জানিয়েছেন, জাতীয় পর্যায়ের কমিটির সবার সামনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরির ও মাদ্রাসা শিক্ষার নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর দীর্ঘ আলোচনা শেষে সেগুলো বাস্তবায়নে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এর পাইলটিং নিয়ে কেউ বিরূপ মন্তব্য করেনি। তবে সভায় শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরেজমিন পাইলটিং চলা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে মতামত জানার বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে।
২০১২ সালে সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। এর আগে ১৯৯৫ ও ১৯৭৬ সালে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। সরকার ২০১০ সালে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ প্রণয়ন করলেও এর অনেক কিছুই বাস্তবায়নের বাকি রয়েছে।
মঙ্গলবার, ৩১ মে ২০২২
‘পাইলটিং’ সম্পন্ন না করেই নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে আগামী শিক্ষাবর্ষে। নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর ডিসেম্বরে একযোগে মাসব্যাপী সারাদেশের ৫২০ উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে ২০২২ শিক্ষাবর্ষ সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন (শুক্র ও শনিবার) রাখা হয়েছে; আর ১২ বছর পূর্ণ না হলে অষ্টম শ্রেণীতে রেজিস্ট্রেশন নয়-এমন শর্ত রাখা হয়েছে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক স্তরের ৬২টি স্কুলে শুধুমাত্র ‘৬ষ্ঠ শ্রেণিতে’ নতুন শিক্ষাক্রমে পাইলটিং বা পরীক্ষামূলক ক্লাস শুরু হয়েছে। একই সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়েও নতুন শিক্ষাক্রমের পরীক্ষামূলক পাঠদান শুরুর পরিকল্পনা ছিল।
কিন্তু প্রাথমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম নয়, বিদ্যমান শিক্ষাক্রমই কিছুটা পরিমার্জন করে ‘পাইলটিং’য়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকের এই পাইলটিং আগামী আগস্টে শুরু করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এখন পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রাথমিকের বই লেখার কাজ চলছে বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শিক্ষাকে আনন্দময় করে তোলা এবং শ্রেণীকক্ষেই পাঠদান সম্পন্ন করার ব্যবস্থা রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন শিক্ষাক্রমের খসড়ায় সায় দিয়েছেন। ৩০ মে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) যৌথ সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়।
পাইলটিং সম্পন্ন না করেই নতুন শিক্ষাক্রমের চূড়ান্ত অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান সংবাদকে বলেন, ‘এখন এটি বাস্তবায়নে আর কোন সমস্যা নেই। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত পাইলটিং চলবে; সেটির ওপর রিপোর্ট হবে; এরপর ডিটেইলড কারিকুলামে যে চেঞ্জ করা দরকার সেটি করব।’
শিক্ষার্থীদের ‘পাইলটিং’ শেষে ডিসেম্বরে একমাস সারাদেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব ‘শিক্ষককে’ নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে ড. মশিউজ্জামান বলেন, ‘এর আগে আমরা মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করব। এরপর সব জেলার ৫২০টি উপজেলায় একযোগে শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু হবে।’
এনসিসিসি অনুমোদনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে আর কোন বাধা নেই উল্লেখ করে অধ্যাপক মশিউজ্জামান জানান, আগামী বছর থেকে ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়ন হবে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে মাধ্যমিক পর্যন্ত কোন বিভাগ-বিভাজন থাকবে না। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর সবাইকে পড়তে হবে ১০টি বিষয়। দশম শ্রেণীর পাঠ্যসূচির ওপর অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ শ্রেণীতে গিয়ে বিভাগ বাছাই করবে শিক্ষার্থীরা। একাদশ শ্রেণী শেষে পরীক্ষা এবং দ্বাদশ শ্রেণী শেষে পরীক্ষা নেয়া হবে। এ দুই পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে তৈরি হবে এইচএসসির ফল।
নতুন কারিকুলামে প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোন পরীক্ষা থাকবে না। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আটটি বই পড়বে হবে। এই স্তরে শিখনকালীন মূল্যায়নেই বেশি জোর দেয়া হয়েছে। বর্তমান পদ্ধতিতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা থাকছে না।
২০২৩ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হবে। ২০২৪ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণীতেও নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান হবে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণী, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে।
৩০ মের সভার বিষয়ে এনসিসিসির এক সদস্য জানিয়েছেন, জাতীয় পর্যায়ের কমিটির সবার সামনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরির ও মাদ্রাসা শিক্ষার নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর দীর্ঘ আলোচনা শেষে সেগুলো বাস্তবায়নে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এর পাইলটিং নিয়ে কেউ বিরূপ মন্তব্য করেনি। তবে সভায় শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরেজমিন পাইলটিং চলা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে মতামত জানার বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে।
২০১২ সালে সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। এর আগে ১৯৯৫ ও ১৯৭৬ সালে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। সরকার ২০১০ সালে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ প্রণয়ন করলেও এর অনেক কিছুই বাস্তবায়নের বাকি রয়েছে।