alt

শিক্ষা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি বাড়ছে, ফেরেনি শৃঙ্খলা

রাকিব উদ্দিন : শনিবার, ১১ জুন ২০২২

দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি বাড়ছে। কিন্তু শৃঙ্খলা ফেরেনি শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তিতে। এই কার্যক্রমের বিকেন্দ্রীকরণে ঘুষ, দুর্নীতি-অনিয়ম আরও বেড়েছে। ডিজিটালাইজেশন ‘ফল’ না দেয়ায় এখন ‘র‌্যাপিড ডিজিটালাইজেন’র ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের।

এই অবস্থায় ‘এক সপ্তাহের’ মধ্যে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা আসছে বলে গত ৫ জুন ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী। এরপর পাঁচ দিন পর ১০ জুন তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশ করা হবে।’ এ হিসাবে চলতি সপ্তাহেই নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা আসছে। তবে এবার কত সংখ্যক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি হবে- সেই সংখ্যা জানাতে পারেননি শিক্ষামন্ত্রী।

এমপিওভুক্তিতে হয়রানি বন্ধে এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের সরাসরি এমপিওভুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে পদায়নের চিন্তাভাবনা করছে শিক্ষা প্রশাসন। এ খাতে মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিওভুক্তিতে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয় বলে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বর্তমানে দেশে ৩০ হাজার পাঁচশ’র মতো এমপিওভুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও অর্থাৎ সরকার থেকে পূর্ণ বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এর মধ্যে যারা অবসরে যাচ্ছেন তাদের শূন্য পদে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও দিতে হয়। এই এমপিওভুক্তি নিয়েই শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা চলছে।

শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তিতে বিশৃঙ্খলা, স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ বন্ধের লক্ষ্যে এমপিওভুক্তির পুরো কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ ও ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। এই কার্যক্রমের সাত বছরেও পরিস্থিতির ন্যূনতম উন্নতি হয়নি। এমপিওভুক্তিতে শিক্ষক হয়রানি আরও বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এমপিও খাতে প্রতি মাসে সরকারের প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে জানা গেছে।

ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া সন্তোষজনক ফল না দেয়ায় এখন শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ‘র‌্যাপিড ডিজিটালাইজেশন’র ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। একটি প্রকল্পের আওতায় গত ৮ ও ৯ জুন শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ‘র‌্যাপিড ডিজিটালাইজেশন’র ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত ৫ জুন সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা সব সময় মনে করেছি বিকেন্দ্রীকরণ করাটাই মনে হয় ভালো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিকেন্দ্রীকরণ ভালো কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণে হয়রানি বেড়ে যেতে পারে।’

এমপিওভুক্তি বিকেন্দ্রীকরণে ওই ‘ঘটনাটিই’ (হয়রানি) ঘটেছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘এজন্য এনটিআরসিএ থেকে যাদের নিয়োগ সুপারিশ করা হয়, তারপর অনলাইনে শিক্ষকদের সনদ যাচাই করে ফেলতে পারলে একবারেই শিক্ষকদের এমপিওর জন্য সেটা গ্রহণ করা যাবে।’

জানতে চাইলে সরকার সমর্থক সবচেয়ে বৃহৎ শিক্ষক সংগঠন ‘স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের’ (স্বাশিপ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু সংবাদকে বলেন, ‘বিকেন্দ্রীকরণের কারণে এমপিওভুক্তির জন্য এখন কমপক্ষে তিনস্তরে টাকা দিতে হয়। সম্প্রতি এই হয়রানি বেড়েছে, আমরা ব্যাপকভাবে অভিযোগ পাচ্ছি। সরকারের উচিত বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।’

এমপিওভুক্তির কার্যক্রম অনলাইনে বা ই-নথিতে নিষ্পত্তির জন্য ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর একটি পরিপত্র জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই পরিপত্রে বলা হয়, ‘বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অনলাইন এমপিও বিতরণের বিষয়ে ৩নং ক্রমিকে বর্ণিত ‘সব শিক্ষা অঞ্চলের উপপরিচালক/অঞ্চল প্রধান বিধি-বিধান অনুসারে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও আবেদন নিষ্পত্তি করবেন’ বিষয়টি সুর্নিদিষ্ট না থাকায় এ পরিপত্র জারির তারিখ থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে উপপরিচালক এবং কলেজ পর্যায়ে পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (সংশ্লিষ্ট অঞ্চল) এমপিও কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন মর্মে বিষয়টি সংশোধনপূর্বক সুনির্দিষ্ট করা হলো।’

ওইসব নির্দেশনার পরও অনলাইন এমপিওভুক্তিতে শিক্ষক হয়রানি ও জটিলতা নিরসন হচ্ছে না। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এ সংক্রান্ত এক আদেশে ই-নথি বা অনলাইন কার্যক্রমের হয়রানির কথা উঠে এসেছে।

গত ২৯ মে মাউশির উপপরিচালক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সব শাখা/উইং হতে ই-নথিতে নিষ্পত্তিযোগ্য নথিসমূহ হার্ড ফাইলে নিষ্পন্ন করা হচ্ছে। এতে করে ‘সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি’ অনুযায়ী সেবা প্রদান বিঘ্নিত হচ্ছে। এমতাবস্থায়, মাউশি অধিদপ্তরের সব শাখা/উইংয়ের ই-নথিতে নিষ্পত্তিযোগ্য সব নথি বা সিদ্ধান্ত ই-নথির মাধ্যমে নিষ্পন্ন করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

কুমিল্লার একটি কলেজের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম সংবাদকে জানান, এমপিওভুক্তির সব শর্ত মেনেই তিনি আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাতে কাজ এগোয়নি। এরপরও মাউশির আঞ্চলিক অফিসে (চট্টগ্রাম) যোগাযোগ করলে তাকে তার নিয়োগপত্র ও গভর্নিং বডির রেজ্যুলেশন পুনরায় অনলাইনে আপলোড করতে বলা হয়। এরপর এই এ সংক্রান্ত নথিপত্র আবারও অনলাইনে আপলোড করা হয়। তাতেও কাজ এগোয়নি। পরবর্তীতে ওই শিক্ষক আবারও আঞ্চলিক অফিসে যোগাযোগ করতে থাকেন। এরপর বলা হয়, অনলাইনে যেসব কাগজপত্র আপলোড করা হয়েছে তার ‘স্ক্যানিং অস্পষ্ট’। সর্বশেষ ওই শিক্ষককে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র নিয়ে ঢাকায় মাউশিতে যোগাযোগ করতে বলা হয়। কিন্তু মাউশিতে নানা তদবির করে কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট কর্মীদের দেখালে ওই শিক্ষককে বলা হয়, তার সব নথিপত্র ঠিক আছে। তাকে আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমেই এমপিওভুক্তি হতে হবে। প্রায় দেড় বছর এভাবে হয়রানির শিকার হয়ে ওই শিক্ষক উপলব্ধি করেন ‘টাকা’ ছাড়া কাজ হবে না। এরপর বাধ্য হয়েই তিনি এমপিওভুক্তির জন্য এক লাখ টাকায় আঞ্চলিক অফিসের কর্মচারীর মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ হন। এখন তার নথিপত্র ঠিকমত এগোচ্ছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট ১০৯টি প্রতিষ্ঠানের একজনও পাস করেনি। এর মধ্যে সাধারণ আট বোর্ডের অধীন হাইস্কুল ১৩টি (এমপিওভুক্ত ২/৩টি) এবং মাদ্রাসা বোর্ডের অধীন দাখিল মাদ্রাসা ছিল ৯৬টি। শতভাগ ব্যর্থ এসব মাদ্রাসার ১৯টিই এমপিওভুক্ত। সৃষ্ট পদ অনুযায়ী প্রতিটি দাখিল মাদ্রাসায় ন্যূনতম ১৬ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন। এর বাইরেও অতিরিক্ত শ্রেণীশিক্ষক আছেন, যাদের নিয়োগ দিয়েছে পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা। তারা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকেই বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।

২০১৭ সালে এসএসসি ও সমমানের দাখিল পরীক্ষায় ৮টি শিক্ষা বোর্ডের ৯৩টি প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষার্থীই পাস কারেনি, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাদ্রাসা বোর্ডের ৮২টি। এই ৮২টি প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটি ছিল এমপিওভুক্ত।

জানা গেছে, রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অধিকাংশ মাদ্রাসার অনুমোদন, স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তি করা হয়েছে। এসব অনিয়মের পেছনে মূলত দায়ী শিক্ষা প্রশাসনের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা।

২০১৭ সালে অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় ৫৯টি প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি, যার মধ্যে ২৫টিই মাদ্রাসা বোর্ডের।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, গত বছরের ১০ অক্টোবর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন নেয়া শুরু হয়। এই কার্যক্রম ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

এতে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ও ডিগ্রি কলেজ মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার আবেদন পড়ে। এছাড়া কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে প্রায় তিন হাজার ৯০০ মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন স্তরে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করে।

প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণার পর ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের যাবতীয় সনদ যাচাই-বাছাই শেষে ব্যক্তিগত ‘ইনডেক্স’ নম্বর দিয়ে তাদের এমপিওভুক্তি করবে মাউশি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৩০ হাজার পাঁচশ’টির মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে মোট পাঁচ লাখ দশ হাজারের মতো শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওর মাধ্যমে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এর মধ্যে বেসরকারি স্কুল ও কলেজে তিন লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এবং বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসায় এক লাখ ৬৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও সুবিধা পাচ্ছেন।

২০১৮ সাল থেকে এমপিওভুক্ত ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক দিয়ে আসছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এর আগের এনটিআরসিএ পরীক্ষার মাধ্যমে শুধুমাত্র ‘নিয়োগযোগ্য শিক্ষকের প্যানেল তৈরি করত। ওই প্যানেল থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রশাসন যৌথভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিত।

এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া বা মনোনীত হওয়ার পরও ওইসব শিক্ষকের এমপিওভুক্তিতে ঘাটে ঘাটে নথিপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়েই নানা প্রশ্ন রয়েছে। এমপিওভুক্তিতে এই পরীক্ষা নিরীক্ষার নামেই মাউশির তৃণমূল পর্যায় থেকে ‘ঘুষ’ বা হয়রানির শিকার হতে হয় শিক্ষকদের।

বর্তমানে প্রচলিত এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের আবেদন উপজেলা শিক্ষা অফিস, সেখান থেকে জেলা শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস থেকে আঞ্চলিক কার্যালয় এবং আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে অনুমোদিত হয়ে মাউশি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে আসে।

এমপিওভুক্তির এ প্রক্রিয়ায় ঘুষ ও হয়রানির অভিযোগ স্বীকার করেন শিক্ষামন্ত্রী নিজেও। তিনি ৫ জুন এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা এসব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। এনটিআরসিএর আরও কিছু কিছু সমস্যা আছে। সে সমস্যগুলো আশা করছি এক-দেড় মাসের মধ্যে... বিষয়গুলো সমাধান করতে পারবো।’

২০১৫ সালে শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিওভুক্তি বিকেন্দ্রীকরণ হয়। অর্থাৎ শিক্ষকের প্রতিষ্ঠান যে উপজেলায় অবস্থিত সেখানকার শিক্ষক অফিসেই এমপিওভুক্তির আবেদন করতে হয়। তবে ২০১৫ সালের আগে কেন্দ্রীয়ভাবে শুধুমাত্র মাউশিতে এমপিওভুক্তির আবেদন নেয়া হতো। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টান্যাশনাল বাংলাদেশ শাখার (টিআইবি) এর গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এমপিওভুক্তি, শিক্ষক নিয়োগ ও বদলিতে অনেকক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ঘটেছে। অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সাড়ে তিন থেকে ১৫ লাখ টাকা, এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশকৃতদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা, সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগে দুই থেকে তিন লাখ টাকা, শিক্ষক এমপিওভুক্তিতে পাঁচ হাজার থেকে এক লাখ টাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষায় ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা, পাঠদান অনুমোদন এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা, স্বীকৃতি নবায়ন পাঁচ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং শিক্ষক বদলিতে এক থেকে দুই লাখ টাকা আদায় করা হয়।

নতুন শিক্ষাক্রমে সপ্তম শ্রেণীতে শরীফার গল্প থাকছে

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও দ্রুত সেবা প্রদানে নির্দেশ

তাপদাহের কারণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস , মিডটার্ম পরীক্ষা স্থগিত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ব-শরীরেই চলবে ক্লাস-পরীক্ষা

ছবি

গরমের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সকল কলেজের ক্লাস বন্ধ

ছবি

তৃতীয় দফায় তিনদিন শ্রেণি কার্যক্রম বর্জনে ঘোষণা কুবি শিক্ষক সমিতির

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ১ম বর্ষ ভর্তির আবেদনের ২য় মেধা তালিকা প্রকাশ

ছবি

বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে অব্যাহতি

ছবি

এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু মঙ্গলবার, চলবে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত

ছবি

স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও ঈদ উপহার বিতরন

ছবি

রাবি-চবির অধিভুক্ত হল ৯ সরকারি কলেজ

ছবি

১১ মের মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

নতুন শিক্ষাক্রম : আগের ধাচেই শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি এনটিআরসিএ’র

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টেস্ট পরীক্ষার নামে ফি আদায় করলে ব্যবস্থা

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষা শুরু ৩০ জুন, রুটিন প্রকাশ

ছবি

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলবে : হাইকোর্ট

ছবি

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির দাবিতে দেশব্যাপী মানববন্ধন করবে ছাত্রলীগ

ছবি

তিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে তিন ক্যাম্পাসে চলছে পাল্টাপাল্টি মহড়া

ছবি

৩০টি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব স্থগিত:এনবিআর

ছবি

শিক্ষায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরে পারিবারিক ব্যয় বেড়েছে

শিক্ষায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরে পারিবারিক ব্যয় বেড়েছে

কক্সবাজারে ওয়্যারলেস অডিও ডিভাইসসহ দুইজন আটক

ছবি

মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী কমেছে, বেড়েছে মাদ্রাসায়

ছবি

দুর্নীতির অভিযোগে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বরখাস্ত

ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৬ দিনের ছুটি শুরু

ছবি

শনিবার স্কুল খোলা রাখার ইঙ্গিত: শিক্ষামন্ত্রী নওফেল

উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সমাপনী পরীক্ষা পাঁচ ঘণ্টা করার প্রস্তাব এনসিটিবির

ছবি

ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষা কার কোন কেন্দ্রে, তালিকা প্রকাশ

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের শতাধিক ‘ট্রেড কোর্সের’ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই সংস্থার দ্বন্দ্ব

ছবি

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ২০০ বছর বয়সী ভবন ভাঙার প্রতিবাদে মানববন্ধন

কেমব্রিজ পরীক্ষায় ডিপিএস শিক্ষার্থীদের অনন্য সাফল্য

ছবি

বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে

সিমাগো র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ভর্তির ফল ১৮ মার্চ

tab

শিক্ষা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি বাড়ছে, ফেরেনি শৃঙ্খলা

রাকিব উদ্দিন

শনিবার, ১১ জুন ২০২২

দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি বাড়ছে। কিন্তু শৃঙ্খলা ফেরেনি শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তিতে। এই কার্যক্রমের বিকেন্দ্রীকরণে ঘুষ, দুর্নীতি-অনিয়ম আরও বেড়েছে। ডিজিটালাইজেশন ‘ফল’ না দেয়ায় এখন ‘র‌্যাপিড ডিজিটালাইজেন’র ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের।

এই অবস্থায় ‘এক সপ্তাহের’ মধ্যে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা আসছে বলে গত ৫ জুন ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী। এরপর পাঁচ দিন পর ১০ জুন তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশ করা হবে।’ এ হিসাবে চলতি সপ্তাহেই নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা আসছে। তবে এবার কত সংখ্যক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি হবে- সেই সংখ্যা জানাতে পারেননি শিক্ষামন্ত্রী।

এমপিওভুক্তিতে হয়রানি বন্ধে এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের সরাসরি এমপিওভুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে পদায়নের চিন্তাভাবনা করছে শিক্ষা প্রশাসন। এ খাতে মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিওভুক্তিতে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয় বলে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বর্তমানে দেশে ৩০ হাজার পাঁচশ’র মতো এমপিওভুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও অর্থাৎ সরকার থেকে পূর্ণ বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এর মধ্যে যারা অবসরে যাচ্ছেন তাদের শূন্য পদে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও দিতে হয়। এই এমপিওভুক্তি নিয়েই শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা চলছে।

শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তিতে বিশৃঙ্খলা, স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ বন্ধের লক্ষ্যে এমপিওভুক্তির পুরো কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ ও ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। এই কার্যক্রমের সাত বছরেও পরিস্থিতির ন্যূনতম উন্নতি হয়নি। এমপিওভুক্তিতে শিক্ষক হয়রানি আরও বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এমপিও খাতে প্রতি মাসে সরকারের প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে জানা গেছে।

ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া সন্তোষজনক ফল না দেয়ায় এখন শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ‘র‌্যাপিড ডিজিটালাইজেশন’র ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। একটি প্রকল্পের আওতায় গত ৮ ও ৯ জুন শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ‘র‌্যাপিড ডিজিটালাইজেশন’র ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত ৫ জুন সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা সব সময় মনে করেছি বিকেন্দ্রীকরণ করাটাই মনে হয় ভালো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিকেন্দ্রীকরণ ভালো কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণে হয়রানি বেড়ে যেতে পারে।’

এমপিওভুক্তি বিকেন্দ্রীকরণে ওই ‘ঘটনাটিই’ (হয়রানি) ঘটেছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘এজন্য এনটিআরসিএ থেকে যাদের নিয়োগ সুপারিশ করা হয়, তারপর অনলাইনে শিক্ষকদের সনদ যাচাই করে ফেলতে পারলে একবারেই শিক্ষকদের এমপিওর জন্য সেটা গ্রহণ করা যাবে।’

জানতে চাইলে সরকার সমর্থক সবচেয়ে বৃহৎ শিক্ষক সংগঠন ‘স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের’ (স্বাশিপ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু সংবাদকে বলেন, ‘বিকেন্দ্রীকরণের কারণে এমপিওভুক্তির জন্য এখন কমপক্ষে তিনস্তরে টাকা দিতে হয়। সম্প্রতি এই হয়রানি বেড়েছে, আমরা ব্যাপকভাবে অভিযোগ পাচ্ছি। সরকারের উচিত বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।’

এমপিওভুক্তির কার্যক্রম অনলাইনে বা ই-নথিতে নিষ্পত্তির জন্য ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর একটি পরিপত্র জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই পরিপত্রে বলা হয়, ‘বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অনলাইন এমপিও বিতরণের বিষয়ে ৩নং ক্রমিকে বর্ণিত ‘সব শিক্ষা অঞ্চলের উপপরিচালক/অঞ্চল প্রধান বিধি-বিধান অনুসারে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও আবেদন নিষ্পত্তি করবেন’ বিষয়টি সুর্নিদিষ্ট না থাকায় এ পরিপত্র জারির তারিখ থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে উপপরিচালক এবং কলেজ পর্যায়ে পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (সংশ্লিষ্ট অঞ্চল) এমপিও কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন মর্মে বিষয়টি সংশোধনপূর্বক সুনির্দিষ্ট করা হলো।’

ওইসব নির্দেশনার পরও অনলাইন এমপিওভুক্তিতে শিক্ষক হয়রানি ও জটিলতা নিরসন হচ্ছে না। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এ সংক্রান্ত এক আদেশে ই-নথি বা অনলাইন কার্যক্রমের হয়রানির কথা উঠে এসেছে।

গত ২৯ মে মাউশির উপপরিচালক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সব শাখা/উইং হতে ই-নথিতে নিষ্পত্তিযোগ্য নথিসমূহ হার্ড ফাইলে নিষ্পন্ন করা হচ্ছে। এতে করে ‘সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি’ অনুযায়ী সেবা প্রদান বিঘ্নিত হচ্ছে। এমতাবস্থায়, মাউশি অধিদপ্তরের সব শাখা/উইংয়ের ই-নথিতে নিষ্পত্তিযোগ্য সব নথি বা সিদ্ধান্ত ই-নথির মাধ্যমে নিষ্পন্ন করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

কুমিল্লার একটি কলেজের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম সংবাদকে জানান, এমপিওভুক্তির সব শর্ত মেনেই তিনি আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাতে কাজ এগোয়নি। এরপরও মাউশির আঞ্চলিক অফিসে (চট্টগ্রাম) যোগাযোগ করলে তাকে তার নিয়োগপত্র ও গভর্নিং বডির রেজ্যুলেশন পুনরায় অনলাইনে আপলোড করতে বলা হয়। এরপর এই এ সংক্রান্ত নথিপত্র আবারও অনলাইনে আপলোড করা হয়। তাতেও কাজ এগোয়নি। পরবর্তীতে ওই শিক্ষক আবারও আঞ্চলিক অফিসে যোগাযোগ করতে থাকেন। এরপর বলা হয়, অনলাইনে যেসব কাগজপত্র আপলোড করা হয়েছে তার ‘স্ক্যানিং অস্পষ্ট’। সর্বশেষ ওই শিক্ষককে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র নিয়ে ঢাকায় মাউশিতে যোগাযোগ করতে বলা হয়। কিন্তু মাউশিতে নানা তদবির করে কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট কর্মীদের দেখালে ওই শিক্ষককে বলা হয়, তার সব নথিপত্র ঠিক আছে। তাকে আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমেই এমপিওভুক্তি হতে হবে। প্রায় দেড় বছর এভাবে হয়রানির শিকার হয়ে ওই শিক্ষক উপলব্ধি করেন ‘টাকা’ ছাড়া কাজ হবে না। এরপর বাধ্য হয়েই তিনি এমপিওভুক্তির জন্য এক লাখ টাকায় আঞ্চলিক অফিসের কর্মচারীর মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ হন। এখন তার নথিপত্র ঠিকমত এগোচ্ছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট ১০৯টি প্রতিষ্ঠানের একজনও পাস করেনি। এর মধ্যে সাধারণ আট বোর্ডের অধীন হাইস্কুল ১৩টি (এমপিওভুক্ত ২/৩টি) এবং মাদ্রাসা বোর্ডের অধীন দাখিল মাদ্রাসা ছিল ৯৬টি। শতভাগ ব্যর্থ এসব মাদ্রাসার ১৯টিই এমপিওভুক্ত। সৃষ্ট পদ অনুযায়ী প্রতিটি দাখিল মাদ্রাসায় ন্যূনতম ১৬ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন। এর বাইরেও অতিরিক্ত শ্রেণীশিক্ষক আছেন, যাদের নিয়োগ দিয়েছে পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা। তারা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকেই বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।

২০১৭ সালে এসএসসি ও সমমানের দাখিল পরীক্ষায় ৮টি শিক্ষা বোর্ডের ৯৩টি প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষার্থীই পাস কারেনি, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাদ্রাসা বোর্ডের ৮২টি। এই ৮২টি প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটি ছিল এমপিওভুক্ত।

জানা গেছে, রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অধিকাংশ মাদ্রাসার অনুমোদন, স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তি করা হয়েছে। এসব অনিয়মের পেছনে মূলত দায়ী শিক্ষা প্রশাসনের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা।

২০১৭ সালে অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় ৫৯টি প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি, যার মধ্যে ২৫টিই মাদ্রাসা বোর্ডের।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, গত বছরের ১০ অক্টোবর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন নেয়া শুরু হয়। এই কার্যক্রম ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

এতে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ও ডিগ্রি কলেজ মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার আবেদন পড়ে। এছাড়া কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে প্রায় তিন হাজার ৯০০ মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন স্তরে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করে।

প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণার পর ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের যাবতীয় সনদ যাচাই-বাছাই শেষে ব্যক্তিগত ‘ইনডেক্স’ নম্বর দিয়ে তাদের এমপিওভুক্তি করবে মাউশি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৩০ হাজার পাঁচশ’টির মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে মোট পাঁচ লাখ দশ হাজারের মতো শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওর মাধ্যমে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এর মধ্যে বেসরকারি স্কুল ও কলেজে তিন লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এবং বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসায় এক লাখ ৬৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও সুবিধা পাচ্ছেন।

২০১৮ সাল থেকে এমপিওভুক্ত ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক দিয়ে আসছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এর আগের এনটিআরসিএ পরীক্ষার মাধ্যমে শুধুমাত্র ‘নিয়োগযোগ্য শিক্ষকের প্যানেল তৈরি করত। ওই প্যানেল থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রশাসন যৌথভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিত।

এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া বা মনোনীত হওয়ার পরও ওইসব শিক্ষকের এমপিওভুক্তিতে ঘাটে ঘাটে নথিপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়েই নানা প্রশ্ন রয়েছে। এমপিওভুক্তিতে এই পরীক্ষা নিরীক্ষার নামেই মাউশির তৃণমূল পর্যায় থেকে ‘ঘুষ’ বা হয়রানির শিকার হতে হয় শিক্ষকদের।

বর্তমানে প্রচলিত এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের আবেদন উপজেলা শিক্ষা অফিস, সেখান থেকে জেলা শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস থেকে আঞ্চলিক কার্যালয় এবং আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে অনুমোদিত হয়ে মাউশি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে আসে।

এমপিওভুক্তির এ প্রক্রিয়ায় ঘুষ ও হয়রানির অভিযোগ স্বীকার করেন শিক্ষামন্ত্রী নিজেও। তিনি ৫ জুন এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা এসব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। এনটিআরসিএর আরও কিছু কিছু সমস্যা আছে। সে সমস্যগুলো আশা করছি এক-দেড় মাসের মধ্যে... বিষয়গুলো সমাধান করতে পারবো।’

২০১৫ সালে শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিওভুক্তি বিকেন্দ্রীকরণ হয়। অর্থাৎ শিক্ষকের প্রতিষ্ঠান যে উপজেলায় অবস্থিত সেখানকার শিক্ষক অফিসেই এমপিওভুক্তির আবেদন করতে হয়। তবে ২০১৫ সালের আগে কেন্দ্রীয়ভাবে শুধুমাত্র মাউশিতে এমপিওভুক্তির আবেদন নেয়া হতো। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টান্যাশনাল বাংলাদেশ শাখার (টিআইবি) এর গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এমপিওভুক্তি, শিক্ষক নিয়োগ ও বদলিতে অনেকক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ঘটেছে। অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সাড়ে তিন থেকে ১৫ লাখ টাকা, এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশকৃতদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা, সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগে দুই থেকে তিন লাখ টাকা, শিক্ষক এমপিওভুক্তিতে পাঁচ হাজার থেকে এক লাখ টাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষায় ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা, পাঠদান অনুমোদন এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা, স্বীকৃতি নবায়ন পাঁচ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং শিক্ষক বদলিতে এক থেকে দুই লাখ টাকা আদায় করা হয়।

back to top