মাউশির প্রতিবেদন
দেশের নিম্ন-মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গড়ে প্রায় ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণী কার্যক্রমে অনুপস্থিত থাকে। প্রায় ৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। শিক্ষার্থীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অনুপস্থিত থাকলেও ৯৭ শতাংশের বেশি শিক্ষকের উপস্থিতির তথ্য পাওয়া গেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে।
প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বিভিন্ন অনিয়মের লাগাম টানা, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ ও নিষিদ্ধ সহায়ক পড়ানো বন্ধের লক্ষ্যে এই প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে বলে মাউশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি বাস্তবায়ন করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মাউশির ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীনে সারাদেশের ৮১১টি প্রতিষ্ঠান ‘পূর্বঘোষণা ব্যতিরেকে তাৎক্ষণিক পরিদর্শন প্রতিবেদন’টি তৈরি করা হয়েছে। সংস্থার ‘মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশান উইং’র অধীনে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা গত ১ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর একমাসে ওইসব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন।
সারাদেশের ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তদারকি করে মাউশি অধিদপ্তর। পরিদর্শনের আওতাভুক্ত ৮১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার লাখ ৯২ হাজার ৮৯৯ জন। এর মধ্যে পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিল তিন লাখ ৪১ হাজার ৮৮৩ জন। এ হিসাবে উপস্থিতির হার ৬৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এই সময়ে এক লাখ ৫১ হাজার ১৬ জন শিক্ষার্থীকে অনুপস্থিত পাওয়া গেছে। এ হিসাবে অনুপস্থিতির হার ৩০ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
জানতে চাইলে মাউশির ‘মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশান উইং’-এর পরিচালক প্রফেসর আমির হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘মূলত শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করা, শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন কি না তা নিশ্চিত করা, সরকার অনুমোদিত বইয়ের বাইরে অতিরিক্ত বই পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে কি না তা দেখা এবং জোরপূর্বক কোচিং করানো হচ্ছে কি না তা নজরদারি করতেই এই প্রতিবেদন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুমোদিত বই পড়লেই যথেষ্ঠ। কিন্তু কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে শিক্ষার্থীদের নোট-গাইড বা সহায়ক বই পড়া এবং কোচিং করতে বাধ্য করে। শিক্ষার নামে এসব বাণিজ্য চলবে না।’
এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সংগীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান নিশ্চিত করতে পরিদর্শন কার্যক্রম চালানো হয় বলে অধ্যাপক আমির হোসেন জানিয়েছেন।
উপস্থিতি বেশি ঢাকায়
পরিসংখ্যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঢাকা অঞ্চলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। এই অঞ্চলের ১৩৮টি প্রতিষ্ঠানে ৭৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বাকি ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষে অনুপস্থিত থাকে।
অনুপস্থিতি বেশি বরিশালে
বরিশাল অঞ্চলে শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পেয়েছে মাউশি অধিদপ্তর। এই অঞ্চলের ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গড়ে ৬০ দশমিক ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি এবং ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থীকে অনুপস্থিত পাওয়া গেছে।
বাকি সাতটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের মধ্যে চট্টগ্রামে ৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে ৬৮ দশমিক ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ও ৩১ দশমিক ১০ শতাংশ অনুপস্থিত; কুমিল্লা অঞ্চলের ৭২টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে ৬৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ উপস্থিতি ও ৩০ দশমিক ৪১ শতাংশ অনুপস্থিত; খুলনা অঞ্চলের ১৮১টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে ৬৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ উপস্থিত ও ৩০ দশমিক ০৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত; ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬৪ দশমিক ৫৬ দশমিক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ও ৩৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থীকে অনুপস্থিত পাওয়া গেছে।
এছাড়া রাজশাহী অঞ্চলের ১০৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬৭ দশমিক ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ও ৩২ দশমিক ৫৮ শতাংশ অনুপস্থিতি; রংপুর অঞ্চলে ১১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে ৬২ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ও ৩৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি এবং সিলেট অঞ্চলের ৩৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে ৭০ দশমিক ১২ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি এবং ২৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্র্থীকে শ্রেণীকক্ষে অনুপস্থিত পাওয়া গেছে।
মাউশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন থেকে নিয়মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ধরনের পরিদর্শন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে পরিদর্শনকালে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে মতাবিনিময় করা হবে। এই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে শিক্ষকদের শ্রেণী কার্যক্রমে ‘ফাঁকি’ দেয়ার প্রবণতা কমে আসার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও নিয়মিত বাড়তে থাকবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ৩২ হাজার নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
মাউশির প্রতিবেদন
রোববার, ১৩ নভেম্বর ২০২২
দেশের নিম্ন-মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গড়ে প্রায় ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণী কার্যক্রমে অনুপস্থিত থাকে। প্রায় ৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। শিক্ষার্থীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অনুপস্থিত থাকলেও ৯৭ শতাংশের বেশি শিক্ষকের উপস্থিতির তথ্য পাওয়া গেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে।
প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বিভিন্ন অনিয়মের লাগাম টানা, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ ও নিষিদ্ধ সহায়ক পড়ানো বন্ধের লক্ষ্যে এই প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে বলে মাউশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি বাস্তবায়ন করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মাউশির ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীনে সারাদেশের ৮১১টি প্রতিষ্ঠান ‘পূর্বঘোষণা ব্যতিরেকে তাৎক্ষণিক পরিদর্শন প্রতিবেদন’টি তৈরি করা হয়েছে। সংস্থার ‘মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশান উইং’র অধীনে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা গত ১ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর একমাসে ওইসব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন।
সারাদেশের ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তদারকি করে মাউশি অধিদপ্তর। পরিদর্শনের আওতাভুক্ত ৮১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার লাখ ৯২ হাজার ৮৯৯ জন। এর মধ্যে পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিল তিন লাখ ৪১ হাজার ৮৮৩ জন। এ হিসাবে উপস্থিতির হার ৬৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এই সময়ে এক লাখ ৫১ হাজার ১৬ জন শিক্ষার্থীকে অনুপস্থিত পাওয়া গেছে। এ হিসাবে অনুপস্থিতির হার ৩০ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
জানতে চাইলে মাউশির ‘মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশান উইং’-এর পরিচালক প্রফেসর আমির হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘মূলত শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করা, শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন কি না তা নিশ্চিত করা, সরকার অনুমোদিত বইয়ের বাইরে অতিরিক্ত বই পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে কি না তা দেখা এবং জোরপূর্বক কোচিং করানো হচ্ছে কি না তা নজরদারি করতেই এই প্রতিবেদন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুমোদিত বই পড়লেই যথেষ্ঠ। কিন্তু কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে শিক্ষার্থীদের নোট-গাইড বা সহায়ক বই পড়া এবং কোচিং করতে বাধ্য করে। শিক্ষার নামে এসব বাণিজ্য চলবে না।’
এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সংগীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান নিশ্চিত করতে পরিদর্শন কার্যক্রম চালানো হয় বলে অধ্যাপক আমির হোসেন জানিয়েছেন।
উপস্থিতি বেশি ঢাকায়
পরিসংখ্যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঢাকা অঞ্চলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। এই অঞ্চলের ১৩৮টি প্রতিষ্ঠানে ৭৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বাকি ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষে অনুপস্থিত থাকে।
অনুপস্থিতি বেশি বরিশালে
বরিশাল অঞ্চলে শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পেয়েছে মাউশি অধিদপ্তর। এই অঞ্চলের ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গড়ে ৬০ দশমিক ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি এবং ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থীকে অনুপস্থিত পাওয়া গেছে।
বাকি সাতটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের মধ্যে চট্টগ্রামে ৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে ৬৮ দশমিক ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ও ৩১ দশমিক ১০ শতাংশ অনুপস্থিত; কুমিল্লা অঞ্চলের ৭২টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে ৬৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ উপস্থিতি ও ৩০ দশমিক ৪১ শতাংশ অনুপস্থিত; খুলনা অঞ্চলের ১৮১টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে ৬৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ উপস্থিত ও ৩০ দশমিক ০৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত; ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬৪ দশমিক ৫৬ দশমিক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ও ৩৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থীকে অনুপস্থিত পাওয়া গেছে।
এছাড়া রাজশাহী অঞ্চলের ১০৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬৭ দশমিক ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ও ৩২ দশমিক ৫৮ শতাংশ অনুপস্থিতি; রংপুর অঞ্চলে ১১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে ৬২ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ও ৩৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি এবং সিলেট অঞ্চলের ৩৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে ৭০ দশমিক ১২ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি এবং ২৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্র্থীকে শ্রেণীকক্ষে অনুপস্থিত পাওয়া গেছে।
মাউশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন থেকে নিয়মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ধরনের পরিদর্শন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে পরিদর্শনকালে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে মতাবিনিময় করা হবে। এই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে শিক্ষকদের শ্রেণী কার্যক্রমে ‘ফাঁকি’ দেয়ার প্রবণতা কমে আসার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও নিয়মিত বাড়তে থাকবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ৩২ হাজার নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।